Sunday 18 October 2020

রাখী সরদার , গল্প, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


 

বাস্তসাপ

     

মণিপুরের রায়বাড়ির সেই ঐতিহ্য ময় শ্রীপাট আর নেই ,কিন্তু  কর্তা সুন্দর রায় ও তার ভাই সন্দীপ রায়ের  দাপট এতটুকু কমেনি।বাইরের মানুষজনের উপর না পারলেও  সুন্দর রায়ের স্ত্রী সুরমা ,ও দুই
মেয়ে ঋতু ও নীতুর উপর এখনো দুভাই বলপূর্বক দাপট দেখাতে ছাড়ে না।সেই সন্ধ্যা থেকেই দুই ভাই মদ নিয়ে  বসেছে।সুরমা ঘরের কাজে ব্যস্ত।এমন সময় সুন্দর রায় এর  চিৎকার --

"সুরমা আ-আ-এই সুরমা ।আর কটা মাছ ভাজা দিয়ে যাও।"

"এত চিৎকার করছো কেন? কাল ঋতুর পরীক্ষা, পড়তে দাও।"

"কী হবে এত পড়ে ব‌উদি।সেই তো গুচ্চের টাকা দিয়ে বিদায় করতে হবে।"

"ভাই তোর এত চিন্তা করতে কে বলেছে?শালী তো আমাকে একটা বংশধর এনে দিলো না, দু দুটো নাগিনীর জন্ম দিয়ে আমার মাথা কিনে নিয়েছে মনে করে। ফণা তোলার আগেই ওদের বিষ দাঁত ভেঙে দেব।টাকা তো এমনিই পায়ে হেঁটে আমাদের কাছে আসবে, তিতলি মাসির কাছে সপ্তাহে দু একদিন পাঠালেই..."


" তোমার লজ্জা করেনা!ও তোমার মেয়ে।"


"গায়ে ফোস্কা পড়লো ব‌উদি? খাবেটা কী?আমি আর খরচ করতে পারব না।"


"চুপ।যা বলছি করো।আমার মেয়ে আমি বুঝব।"


সুরমা আর দাঁড়ায় না।এদের মতো অমানুষ সে দুটো দেখেনি।নিজের মেয়েকে কিনা ...


গভীর রাতে সুরমা একটা গোঁ গোঁ শব্দে উঠে বসে।পাশে ঋতুর ঘর থেকেই আসছে বুঝতে পেরে ছুটে গিয়ে সুরমা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।দেখে,
বিছানায় ঋতু যন্ত্রণায় ছটফট করছে,মুখ দিয়ে গাঁজা আসছে,সারা শরীরে নখের আঁচড়।পাশে একটা শিশি পড়ে আছে।


"একি! কী হয়েছে?কী খেয়েছিস?"


"মা আ আ...ছোটকাকু..."

ঋতু আর কিছু বলতে পারে না।শরীরটা যন্ত্রণায় বেঁকে যাচ্ছে।


"ওগো শুনছো! শিগগির এসো।"


সুরমার চিৎকারে সুন্দর রায় ছুটে আসে।


"দেখো তোমার ভাই কী অবস্থা করেছে!লজ্জায় মেয়েটা বিষ খেয়েছে।শিগগির ডাক্তার ডাকো।"


"না। আমাদের বাড়ির একটা সম্মান আছে।"

"কী বলছো!"

সুরমার কান্না শুনে আটবছরের ছোট্ট  নীতু ঘুম থেকে উঠে এসে ভয়ার্ত গলায় বলে ওঠে --


"মা দিদির কী হয়েছে?"


"ওকে বাস্তসাপ ছোবল মেরেছে রে।সাপটা আশপাশেই ঘুরছে। তোকেও  সাবধানে থাকতে হবে।"


বলেই সুরমা নীতুকে জড়িয়ে ধরে  কাঁদতে থাকে ...

No comments:

Post a Comment