কবিতাগুচ্ছ
নারী
অনেক কিছু থাকা সত্বেও
ব্রহ্মাণ্ড সুন্দরী
তুমি কার জন্য কী করতে চাও ?
তুমি কার প্রতিনিধি ?
একমাত্র দেহ ছাড়া তোমার কাছে
আর কিছুই তো নেই
আর আমাদের কাছে, আমাদের শরীরটুকুও অবশিষ্ট নেই ।
আর এই সময় তোমার ভগিনীরা
দ্রৌপদী, তারা পাঁচজন আর তুমি একেবারে একলা
তুমি পাঁচজনের সমান ছিলে
তোমার মধ্যে তাদের সমগ্র মান
তাদের সমগ্র মান ছিল তোমার মধ্যে নিহিত
তারা দাঁড়িয়েছিল নগ্ন হয়ে.
দ্রৌপদী, ওরা পাঁচজন তোমারই তো ছিল
আর এই সময় তোমার বোনেরা ?
কোনও নারী তো বলেনি
তসলিমা !
কে বলেছে ঢোল পশু নারী এক সমান
কে বলেছিল শ্রদ্ধা* সবসময়ই নারী
কারা বলেছিল
ত্রিকালদর্শী ত্রিকালগামীরাও জানে না স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম
কে বলেছে ধর্মের ধ্বজ নারীর যোনিতে পোঁতা হয়
তসলিমা, কারা বলেছিল এই কথাগুলো ?
এটুকু তো নিশ্চিত যে কোনও নারী বলেনি ।
*বৈবস্বত মনুর প্রথম স্ত্রী
তাঁরা রঘুবংশী
সীতা !
সেইদিন কোনও ধনুর্ভঙ্গ হয়নি
সর্বাধিক দর হাঁকা হয়েছিল
যুদ্ধ হয়েছিল তোমার দেহকে এসপার-ওসপার করে
তোমার জাতের ছিল কৈকেয়ী আর মন্থরা
ধোপার বউও ছিল তোমারই জাতের
তোমার জাতের ছিল না, তোমার ওই চোখের দুই মণি ।
বড়ই দুর্ধর্ষ প্রাণ তুমি
ভঁওরি !
তুমি এটাই জানতে বেরিয়েছিলে না
কত মেয়েদের রজস্বলা হওয়ার আগেই
বীর্যপাতের সম্মুখীন হতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়
দেখে নিলে তুমি
তোমার বোনেরা উৎসবে কত করে মঙ্গলগান গাইল
তোমাকে তো ধন্য করেছে মন আর শরীরের ওপর
হতে থাকা গণধর্ষণ
তুমি মরোনি
দাঁড়িয়েছ সেই শিশ্নগুলোতে লাথি মেরে
কোন দুনিয়ায় থাকো তুমি ভঁওরি
বড়ই দুর্ধর্ষ প্রাণ তুমি ।
এখন যেখানে তারা
বেরিয়ে আসবে কতবার
কত দফা পালাবে ঘোর আঁধার থেকে
আর কত পথ চলবে
সন্ত্রস্ত কাঁপতে থাকা হাতে নিজের গোলাপি উষ্ণতাকে জড়ো করে
কত বরফ গলতে থাকে ওতে
কত রাত ঠাণ্ডা পড়ে থাকে
পাথুরে হয়ে যায় কত পথ
কত চোখে ফিরতে থাকো
ঘোরো কত হাতে
কত হাত ঘোরে এই ছোট্ট বয়সে
ওই ছোট্ট শরীরে
এখানে লিপিবদ্ধ আছে আমার সময়ের গভীর কালো অন্ধকারে
এখন তারা যেখানে আছে ।