নীলকণ্ঠ
মধুবনী চ্যাটার্জী
মধুবনী চ্যাটার্জী
আকাশের গায়ে বড়ো বড়ো ফাটল ধরেছে ।
খরায় যেমন মাটি ফেটে শুকিয়ে আসা শিরা উপশিরার মতো
এঁকেবেঁকে বয়ে চলে
রুক্ষতা নিয়ে ,
ঠিক তেমন ফাটল আকাশের গায়ে ।
মাঝেমাঝে মনে হয় পলেস্তারা খসে পড়বে বুঝি !
হঠাৎ একদিন দেখা যাবে সমস্ত সভ্যতার গায়ে গুঁড়ো গুঁড়ো শুকনো আকাশ !
তাকে দুই হাতে বড়ো অযত্নে
ঝেড়ে ফেলে আমরা চলে যাচ্ছি নিত্যদিনের কাজে !
মেঘেরা আজকাল জমাট বাঁধেনা , ঘর বাঁধে না ,
ঘনিয়ে ওঠে না আর ।
তারা এখন
আধুনিক জীবনে আধুনা সম্পর্কের মতো হালকা , অগভীর , ভেসে যাওয়া ।
আকাশের দিকে চোখ
রাখতে ইচ্ছে হয় না ।
বড়ো মিথ্যে ওই নীল , মিথ্যে ওই শরৎ চুঁইয়ে আসা আলো !
এই গভীর শ্রাবণে এমন আলোর অশনিসংকেত ,
এমন আগুনে নিঃশ্বাস
ঘোষণা করছে আকাশের গায়ে ফাটল ধরেছে !
পাহাড়ের দেশে মেঘেরা নেমেছে সারে সারে
বৃষ্টিদের সঙ্গে নিয়ে । সেখানে একটা বিরাট জলাশয় তৈরী করেছে বৃষ্টি
দিয়ে ! তার উঁচু উঁচু প্রাকার , সেও মেঘেদেরই । সেখানেই আষাঢ় শ্রাবণ
অবিরাম ডুবসাঁতারের
সুখ বিলাসে মগ্ন ।
আর এদিকে জ্বলন্ত ফুটিফাটা আকাশ নিঃস্ব দুহাত তুলে অভিশাপ দিচ্ছে প্রেমহীন বিশ্বচরাচর কে!
কোনদিন
তার গায়ের ওই ফাটল বেড়ে বেড়ে অন্তরীক্ষকে উন্মুক্ত করে দেবে , আর সেখান
দিয়ে শত শত নক্ষত্র , জ্যোতিকণা , গ্রহ উপগ্রহ অবিশ্রান্ত ঝরে পড়ে ভাঙা
কাঁচের মতো চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেঁথে যাবে পৃথিবীর দেহে ! ফালা ফালা হয়ে
যাবে বসুন্ধরার দেহ , যন্ত্রণায় চিৎকার করবে সে , যেমন করে চলেছে
প্রতি নিয়ত !
বধির সভ্যতা নির্লিপ্ত মুখে
তারার খণ্ডগুলি ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে চলে যাবে নিত্যদিনের কাজে !
তারা একে অন্যকে বুঝিয়ে নেবে কাল থেকে নক্ষত্র বিহীন ফাটল ধরা আকাশের নিচের এই মৃতপ্রায় পৃথিবীই তাদের ঘর !
সমস্ত অভিশাপকে বিষের মতো ধারণ করে নীলকণ্ঠ হয়ে বাঁচতে শিখেছি আমরা
লোহিত আকাশের নিচে সদর্পে দাঁড়িয়ে সভ্যতার জয়ধ্বনির উন্মত্ত প্রলাপে ।