পাগলটা
রেল বস্তির পাগলটা সেই সন্ধে থেকে বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে । কে যেন
একজন তাড়াতে গেছিল, তাও যায়নি। রূপকবাবুর ছেলের আজ অন্নপ্রাশন । আলোর
বন্যায় ভেসে যাচ্ছে বাড়ির চারদিক । অথচ পাগলটা নিজেকে আড়াল করার জন্য
একটু অন্ধকার খুঁজছে। অকস্মাৎ রূপকবাবুর চোখে পড়ল পাগলটা। একদৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে ভাঁড়ার ঘরের দিকে। রূপকবাবু পাগলটার কাছে গিয়ে কিছুটা বিরক্তির
ভঙ্গিতে বলে উঠলেন , ' এখানে কী চাই রে তোর? সেই থেকে এভাবে কী দেখছিস?
বলি, মানুষকে বিরক্ত করা ছাড়া তোদের কি আর কোন কাজ নেই?'
রূপকবাবুর
মুহুর্মুহু প্রশ্ন শুনে পাগলটা ভয় পেয়ে দু-হাত পিছনে সরে গেল। তারপর
মুহূর্ত খানিক নীরব থেকে শেষে একটু যেন সংকোচের সুরে বলল, ' খুব খিদা
লাগছে। আমারে কিছু খাবার দিবেন?'
'উফ্ জ্বালিয়ে খাস একেবারে! এখানেই দাঁড়া । দেখছি।' কথাটা বলেই দ্রুতপায়ে আবারও বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলেন রূপকবাবু।
খাওয়া-
দাওয়ার লাস্ট ব্যাচ উঠে গ্যাছে। পাগলটাকে এখনও বাড়ির গেটে স্থির
দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রূপকবাবু বললেন, ' ঈশ , একদম ভুলে গেছি রে!'
কিছুক্ষণ
পরই রূপকবাবু একটা থার্মোকলের থালায় কিছু খাবার - দাবার এনে পাগলটার হাতে
তুলে দিলেন। খাবার পেয়ে পাগলটা বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই রূপকবাবু বলে
উঠলেন, ' যাচ্ছিস কেন ,খেয়ে নে!'
'এই খাবারটা ও বাবা- মাকে দিয়ে
খাবে। সব অনুষ্ঠান বাড়ি থেকেই এভাবে ও বাবা- মায়ের জন্য খাবার নিয়ে যায়।'
পাশ থেকে বলে উঠল শুভম ক্যাটারার্সের একটা ছেলে।
ছেলেটার কথা শুনে
বুকের ভিতরটা হঠাৎই মোচড় দিয়ে উঠল রূপকবাবুর। স্ত্রী বৈশালীর চরম
আপত্তিতে শেষ দু-বছর একটা বারের জন্যও বাবা - মায়ের খোঁজ নেয়নি ও। তারা
এখন কী খেয়ে যে ...
............................
No comments:
Post a Comment