Saturday, 3 October 2020

সঞ্জয় কর্মকার , অণুগল্প, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

  


 

 

পাগলটা

                                                                                

রেল বস্তির পাগলটা সেই সন্ধে থেকে বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে । কে যেন একজন তাড়াতে গেছিল, তাও যায়নি। রূপকবাবুর ছেলের  আজ অন্নপ্রাশন । আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে বাড়ির  চারদিক । অথচ পাগলটা নিজেকে আড়াল করার জন্য একটু অন্ধকার খুঁজছে। অকস্মাৎ  রূপকবাবুর  চোখে পড়ল পাগলটা। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ভাঁড়ার ঘরের দিকে। রূপকবাবু পাগলটার কাছে গিয়ে কিছুটা বিরক্তির ভঙ্গিতে বলে উঠলেন , ' এখানে কী চাই রে তোর? সেই থেকে এভাবে কী দেখছিস? বলি, মানুষকে বিরক্ত করা ছাড়া তোদের কি আর কোন কাজ নেই?'

রূপকবাবুর মুহুর্মুহু প্রশ্ন শুনে পাগলটা ভয় পেয়ে   দু-হাত পিছনে সরে গেল। তারপর মুহূর্ত খানিক নীরব থেকে শেষে একটু যেন  সংকোচের সুরে বলল, ' খুব খিদা লাগছে। আমারে কিছু খাবার দিবেন?'

'উফ্ জ্বালিয়ে খাস একেবারে! এখানেই দাঁড়া । দেখছি।' কথাটা বলেই দ্রুতপায়ে আবারও বাড়ির  ভিতরে ঢুকে গেলেন রূপকবাবু।

খাওয়া- দাওয়ার লাস্ট ব্যাচ উঠে গ্যাছে। পাগলটাকে এখনও  বাড়ির গেটে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রূপকবাবু বললেন, ' ঈশ , একদম ভুলে গেছি রে!' 

কিছুক্ষণ  পরই রূপকবাবু একটা থার্মোকলের থালায় কিছু খাবার - দাবার এনে পাগলটার হাতে তুলে দিলেন। খাবার পেয়ে পাগলটা বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই রূপকবাবু বলে উঠলেন, ' যাচ্ছিস কেন ,খেয়ে নে!'

'এই খাবারটা ও বাবা- মাকে দিয়ে খাবে। সব অনুষ্ঠান বাড়ি থেকেই এভাবে ও বাবা- মায়ের জন্য  খাবার নিয়ে যায়।' পাশ থেকে বলে উঠল শুভম ক্যাটারার্সের একটা ছেলে।

ছেলেটার কথা শুনে বুকের ভিতরটা  হঠাৎই মোচড় দিয়ে উঠল রূপকবাবুর। স্ত্রী বৈশালীর চরম আপত্তিতে শেষ দু-বছর একটা বারের জন্যও  বাবা - মায়ের খোঁজ নেয়নি ও। তারা এখন কী খেয়ে যে ...  
                      ............................

No comments:

Post a Comment