Showing posts with label হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়. Show all posts
Showing posts with label হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়. Show all posts

Tuesday 30 June 2020

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা, সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা, ২০২০







দুপুরের থালায় নদী

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


আমরা দুজনেই একটু একটু করে 
খেতে ভুলে যাচ্ছিলাম
তার মানে কিন্তু কখনই এরকম নয়
আমাদের কোনো খিদে ছিল না অথবা
আমরা খাবার চিনতে পারছিলাম না
আমাদের সবই কিন্তু খুব কাছাকাছি ছিল
তবুও খেতে ভুলে যাওয়াটাকে আমরা
জানলা বন্ধের বিপরীত মানে করছিলাম
তাছাড়া খিদেটাকে আমরা দুজনেই 
কেমন যেন কুয়াশা কুয়াশা মনে করতাম
যেন একটা রঙ উঠে যাওয়া কালো পর্দা
সবকিছুর সঙ্গেই জড়ানো আছে

খেতে ভুলে যাওয়ার দ্বিতীয় দিনেই 
আমাদের কেমন যেন দমবন্ধ হয়ে আসছিল
আমরা জানলা খুলতে শিখেছিলাম
আকাশকে দেখে এই প্রথম মনে হয়েছিল
ইজেলে টাঙানো ক্যানভাস
পছন্দমতো যেকোনো রঙে ডুবিয়ে
চোখে টাঙিয়ে নেওয়া যায়
সাদা পাতার মতোই আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে
মনে হয়েছিল আমাদের বুকে কথার পাহাড়
আমরা শুরু করেছিলাম অনর্গল কথার সংলাপ

একসময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের চোখ
অনবরত ঘুরপাক খেত এখানে ওখানে
তাকাতেই হবে এমন কোনো বিষয় নয়
তবুও চোখ যেন কিছুর সন্ধানে ফিরতো
গর্তের চারপাশে অগণন মাথার সঙ্গে
কখন যেন আরও দুটো মাথা যোগ হয়ে যেত
তখন তো আমাদের এক পাহাড় খিদে

ঝড়ের তাণ্ডব, অবিরাম ধারাপাতের মধ্যে
চোখগুলোকে কি করে একজায়গায় টেনে আনব
এই নিয়ে আমাদের মনে কিছু এসে জড়ো হয় নি
চোখকে যে একবিন্দুতে এনে ফেলা যায় 
শুধু চোখ দিয়েই পড়ে ফেলা যায় জলের সমগ্র অধ্যায়
বিন্দুতে আমাদের কোনো বিশ্বাস ছিল না
খিদেই তো আমাদের চড়কির মতো ঘোরাতো 
কাজের শেষে সাইকেল নিয়ে দুজনে হাঁটতে হাঁটতে
বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে দাঁড়িয়ে
আমাদের কোনো আকাশের গল্প ছিল না

জানলা খোলার দিন থেকেই আমাদের সূর্যের গল্প এলো 
বটগাছের পাতায় পাতায় রোদ দেখে মনে হলো
আমরা ভালো করে তাকাতেই শিখি নি
খিদের সঙ্গে সঙ্গে অগণন পোকা
উঠোনে জড়ো হয়ে পৃথিবীর মাটিকে আড়াল করেছিল
আর আমাদের ব্যক্তিগত ইমারতের শোভায়
আমরা ভুলে যাচ্ছিলাম আমাদের দাঁড়ানোর প্রসঙ্গ
এখন বিন্দুর ঔজ্জ্বল্যে আমরা ফিরে পাচ্ছি
নগর সংকীর্তনের ভাষা আর সুর 
পথের দুপাশে সাজানো সবুজ বিন্যাসের সঙ্গে
আমাদের বাপ ঠাকুরদার রক্তের সমীকরণের সাদৃশ্য

প্রতিটি ঘরের কোণেই একটা দুটো তিনটে চারটে
খিদে পরপর শুয়ে থাকে নিজেদের নিয়মে
গায়ে গা লাগিয়ে নয়, খিদের মতোই ছোটো বড় হাঁয়ে
রোদ্দুরে পিঠ দেওয়ার মতো করে মনে হয়
ভিজে লোমগুলো শুকনো হয়ে ফুলে ওঠা দেখে
একটু আগেও ওরা হা-মুখের মধ্যে ডুবে ছিল
ছুঁড়ে দিলেও যারা উড়ে যায় না
ঘুরে ঘুরে ঠিক কোনো পথের মাথায় দেখা হয়ে যায়
তখন আবার সেই শূন্য থেকে শুরু হয়
গোগ্রাসে সবকিছু খেয়ে নেবার প্রাণপণ চেষ্টা

যেদিন বাড়ি থেকে অনেকটা দূর পর্যন্ত 
পায়ে হেঁটে এগিয়ে যেতে পারব
পথের হাজার জিজ্ঞাসাতেও 
আমাদের চোখে ঠিকানা থাকবে না 
দাঁড়াবার জায়গার চারপাশ জুড়ে 
দুপুর পা ছড়িয়ে এসে বসবে
সেদিন দুদিকের দুটো নদীর জলে
আমাদের দুপুরের থালা থই থই করবে ।