Showing posts with label অনুবাদ কবিতা. Show all posts
Showing posts with label অনুবাদ কবিতা. Show all posts

Sunday 2 April 2023

অনীল করমেলের কবিতা/ অনুবাদক লিপিকা সাহা// হিন্দি কবিতা






কবিতাগুচ্ছ 

নারী 


অনেক কিছু থাকা সত্বেও

ব্রহ্মাণ্ড সুন্দরী
তুমি কার জন্য কী করতে চাও ?
তুমি কার প্রতিনিধি ?
একমাত্র দেহ ছাড়া তোমার কাছে
আর কিছুই তো নেই
আর আমাদের কাছে, আমাদের শরীরটুকুও অবশিষ্ট নেই ।


আর এই সময় তোমার ভগিনীরা

দ্রৌপদী, তারা পাঁচজন আর তুমি একেবারে একলা
তুমি পাঁচজনের সমান ছিলে
তোমার মধ্যে তাদের সমগ্র মান
তাদের সমগ্র মান ছিল তোমার মধ্যে নিহিত

তারা দাঁড়িয়েছিল নগ্ন হয়ে.

দ্রৌপদী, ওরা পাঁচজন তোমারই তো ছিল
আর এই সময় তোমার বোনেরা ?


কোনও নারী তো বলেনি

তসলিমা !
কে বলেছে ঢোল পশু নারী এক সমান
কে বলেছিল শ্রদ্ধা* সবসময়ই নারী
কারা বলেছিল 
ত্রিকালদর্শী ত্রিকালগামীরাও জানে না স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম
কে বলেছে ধর্মের ধ্বজ নারীর যোনিতে পোঁতা হয়

তসলিমা, কারা বলেছিল এই কথাগুলো ?
এটুকু তো নিশ্চিত যে কোনও নারী বলেনি ।
*বৈবস্বত মনুর প্রথম স্ত্রী

তাঁরা রঘুবংশী

সীতা !
সেইদিন কোনও ধনুর্ভঙ্গ হয়নি
সর্বাধিক  দর  হাঁকা হয়েছিল
যুদ্ধ হয়েছিল তোমার দেহকে এসপার-ওসপার করে
তোমার জাতের ছিল কৈকেয়ী আর মন্থরা
ধোপার বউও ছিল তোমারই জাতের
তোমার জাতের ছিল না, তোমার ওই চোখের দুই মণি ।


বড়ই দুর্ধর্ষ প্রাণ তুমি

ভঁওরি !
তুমি এটাই জানতে বেরিয়েছিলে না
কত মেয়েদের রজস্বলা হওয়ার আগেই
বীর্যপাতের সম্মুখীন হতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়

দেখে নিলে তুমি
তোমার বোনেরা উৎসবে কত করে মঙ্গলগান গাইল
তোমাকে তো ধন্য করেছে মন আর শরীরের ওপর 
হতে থাকা গণধর্ষণ
তুমি মরোনি
দাঁড়িয়েছ সেই শিশ্নগুলোতে লাথি মেরে
কোন দুনিয়ায় থাকো তুমি ভঁওরি
বড়ই দুর্ধর্ষ প্রাণ তুমি ।


এখন যেখানে তারা

বেরিয়ে আসবে কতবার
কত দফা পালাবে ঘোর আঁধার থেকে
আর কত পথ চলবে
সন্ত্রস্ত কাঁপতে থাকা হাতে নিজের গোলাপি উষ্ণতাকে জড়ো করে
কত বরফ গলতে থাকে ওতে
কত রাত ঠাণ্ডা পড়ে থাকে
পাথুরে হয়ে যায় কত পথ
কত চোখে ফিরতে থাকো
ঘোরো কত হাতে
 কত হাত ঘোরে এই ছোট্ট বয়সে
ওই ছোট্ট শরীরে

এখানে লিপিবদ্ধ আছে  আমার সময়ের গভীর কালো অন্ধকারে
এখন তারা যেখানে আছে ।



Wednesday 7 October 2020

সিলভিয়া প্লাথের কবিতা, অনুবাদ : অশোক কর , সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 

সিলভিয়া প্লাথের কবিতা
অনুবাদ : অশোক কর

সিলভিয়া প্লাথ আমেরিকার উত্তরাধুনিক সাহিত্যধারার বিশিষ্ট কবি, গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক। আধুনিক কাব্যপ্রতিভা ও পাঠকের প্রশংসাধন্য কবি হিসাবে বিংশ শতাব্দীর সাহিত্যধারায় নিজের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সিলভিয়া প্লাথ।  তীব্র হতাশা, উগ্র মানসিক বিকার ও আত্মধ্বংশী মনোবিকলন কবিতায় ব্যাবহার করে উত্তরাধুনিক "কনফেশনাল পোয়েট্রি" এর একজন বিতর্কিত প্রবক্তা কবি হিসাবে বিবেচিত হয়ে ওঠেন। সিলভিয়ার জন্ম ১৯৩২ সালে বোস্টনে, পড়াশুনা করেন আমেরিকার ম্যাসাচুসেটে এবং ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে। তাঁর সহযোগী কবি 'টেড হিউস'কে বিবাহ করেন সিলভিয়া ১৯৫৬ সালে। দুই সন্তানের জন্মের পর পারিবারিক অশান্তির কারনে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয় ১৯৬২ সালে। ব্যাক্তিগত জীবনে সিলভিয়া প্লাথ মানসিক অবদমন রোগাগ্রস্ত ও চিকিৎসাধীনে ছিলেন। কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হবার পর ১৯৬৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ৩০ বছর বয়সে মারা যান আত্মহত্যার মাধ্যমে। তাঁর মৃত্যুর পরে ১৯৮২ সালে প্রকাশিত "কবিতাসমগ্র"এর জন্য আমেরিকার 'পুলিৎজার' পুরস্কার পান সিলভিয়া প্লাথ।

[১] Death & Co.
ডেথ এন্ড কোঃ


দু'জন, নিঃসন্দেহে ওরা দু'জনই।
এখন খুবই স্বাভাবিক বলেই মনে হয় -
একজন, যে চোখ তুলে তাকায়নি কখনো, যার চোখগুলো ঢাকা
আর বিস্ফারিত, ব্লাকি' এর মতো,
তার লোকদেখানো

জন্মদাগ, সেগুলোই তার ট্রেডমার্ক
ছেঁকা, ফোস্কাফাটা জরুল
আব্রুহীন
শকুন গ্রীবা'র তামাটে চামড়ার দলা।
আমি সেই কুৎসিত মাংসপিন্ড। ওর চঞ্চুদুটো

আড়াআড়ি শব্দ করে নড়ে: এখনো ওর হয়ে উঠতে পারিনি আমি।
ও বলে, কি যাচ্ছেতাই ফটোগ্রাফ আমি তুলি।
আমাকে বলে ও, কী মিষ্টি
দেখতে লাগে বাচ্চাদের হাসপাতালের ঐ
বরফ-বাক্সে, একেবারে সাদাসিধে

জামার গলার ঝালর,
তারপর ভাজে ভাজ কুঁচি দিয়ে বানানো
আয়োনিয়ান ডেথ-গাউন,
সবশেষে ছোট্ট দু'টি পা।
ও হাসেও না, ধুমপানও করে না।

অন্যজন কিন্তু এ সবকিছুই করে,
তার লম্বা চুল আর আপাতঃদৃষ্টসঙ্গত
জোড়াগোঁফ
আবেগমৈথুণে ব্যস্ত,
সে প্রেমাস্পদ হতে চায়।

আমি এসবে মাতি না।
তুষারকণা ফুল হয়ে ফোটে,
শিশিরবিন্দু তারা হয়ে জ্বলে,
মৃত্যুর ঘন্টাধ্বনি বাজে,
মৃত্যুর ঘন্টাধ্বনি বাজে।

কারো সব হয়ে গেছে সারা।


[২] Edge
কিনারা


মহিলা পরিপূর্ণ হলেন।
তাঁর মৃত
দেহ অভীষ্টপূরণের সকল সৌরভ মেখে সুরভিত,
কি এক গ্রীক অপরিহার্যতার বিভ্রম

শাস্ত্রপাঠের পুঁথির মোড়ানো পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় যাচ্ছে ছড়িয়ে,
তাঁর নগ্ন
পদযুগল এখনি হয়তো বলে উঠবে:
তোমরা বড় বেশি চলে এসেছো, পরিসমাপ্তি এখানেই।

প্রতিটা মৃতশিশু একেকটা শুভ্র সরীসৃপ, কুণ্ডলী পাকানো,
প্রত্যেকে তারা ছোট্ট এক

দুধপাত্রের পাশে শুয়ে, এখন সেগুলো শূন্য পরিত্যক্ত।
সুন্দর গুছিয়ে নিয়ে তিনি

সারাদেহে ওদেরকে সাজিয়েছেন অস্ফুট গোলাপ
পাপড়ির আদলে, যখন ফুলবাগানে

স্নিগ্ধ রজনীস্ফুট ফুলদের
আড়ষ্ট, গভীর কন্ঠনালী চিরে রক্তগন্ধ ছড়ায়।

চাঁদের কিন্তু তাতে মনোকষ্ট পাবার মতো কিছু নেই
হড়ের অবগুন্ঠনে চন্দ্রালোক ছড়িয়ে

কৃষ্ণপক্ষে রাতে নিজেকে খটমট টেনে-হিঁচড়ে চলে
এমন কাজ সচরাচর করতে অভ্যস্ত চাঁদ


[৩] Kindness
ঔদার্য


ঔদার্য ভেসে বেড়াচ্ছেন আমার ঘরজুড়ে।
দেবী ঔদার্য, কি মহিমান্বিতা তিনি!
তাঁর নীল লাল আঙ্গুরীয় রত্নের ধুম্রজাল
উড়ছে জানালায়, আয়নাগুলোর
প্রতিবিম্ব জুড়ে শুধু তাঁরই স্মিতহাস্যমুখ।

শিশুর কান্নার চেয়ে গূঢ় বাস্তবিক কি হতে পারে?
শশকের কান্না বস্তুতঃ বড্ড আরণ্যক
তাতে আত্মার ক্রন্দন নেই।
শর্করা আরোগ্য দিতে পারে সবকিছুর, তাই ঔদার্যদেবী বলেন,
শর্করা অতীব এক জরুরী পানীয়,

শর্করা দানারা কিছুটা ঔষধি প্রলেপ,
ও ঔদার্য, ঔদার্য
কি মাধুর্যে তুলে নিচ্ছ স্পর্শযোগ্য সবকিছু,
আমার জাপানি সিল্কে, উন্মত্ত প্রজাপতিদের
গেঁথে রাখা হবে যে কোন মুহূর্তে, বেদনা-আসাড় ঔষধ সহযোগে।


[৪] Child
সন্তান


তোমার স্বচ্ছ চোখ কি অবিসংবাদিত সৌন্দর্যমুখর
তাঁকে আমি সাজাতে চাই রঙে আর চাদরে
নতুনের চিড়িয়াখানা

অন্তরজুড়ে কাকে সমর্পণ করো তুমি-
এপ্রিলের তুষারকণা, আদিবাসীর বাঁশি,
ছোট্ট

ছিঁড়ে না তোলা ফুলবৃন্ত,
যে স্বচ্ছ পুস্করনীর জলে প্রতিবিম্বরা
হয়ে ওঠে  অনুপম, ধ্রুপদী মায়াবী

না, এই প্ররোচনাময়
হাতের সঞ্চালন নয়, এই গাঢ়
ছাদের নিচের নক্ষত্রহীন অন্ধকারও নয়।

Sunday 5 July 2020

পাওলো পাসোলিনি-র কবিতা, সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা, ২০২০, অনুবাদঃ হিন্দোল ভট্টাচার্য


পাওলো পাসোলিনি-র কবিতা 
অনুবাদ- হিন্দোল ভট্টাচার্য

যুদ্ধের দিনগুলির কবিতা

পৃথিবীর সমস্ত অস্ত্র যত রক্তহীন তত ঠান্ডা। যেন মর্গ থেকে উঠে এসেছে। যেন তাদের কোনও ঈশ্বর নেই, মা-বাবা নেই, প্রেমিক-প্রেমিকাও অপেক্ষা করছে না। পৃথিবীর সমস্ত অস্ত্রের ভিতর ঘাপটি মেরে বসে থাকে আদিম সরীসৃপ। তাদের শীতল জিভে কী প্রবল খিদে! মানুষ নিজের ছায়ার উপরে ঢেলে দেয় প্রতিহিংসাগুলো। আমরা অপেক্ষা করি।

আমাদের চোখের সামনে থেকে সরে গেল পর্দা। জ্বলে উঠল আলো। আমরা সেই আলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম। কী ঠান্ডা আলো! যেন যুদ্ধের সার্চলাইট। আজ সমস্ত ক্ষুধার্ত নেকড়ের মুখ আমি মানচিত্রের মতো দেখি। কে এক এসেছে আমাদের শহরে আজ, নরকের আত্মা থেকে কী বিশাল হাঁমুখ এক আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। আমাদের চোখের সামনে এত আলো! এত আলো, তবু তার অন্ধকার তত বেশি উজ্জ্বল এখন!

অপমানগুলোর কথা মনে রেখো। মনে রেখো, আমরা কেউ সৈন্য হয়ে জন্মাইনি। একটি ফুলের কথাও মনে রেখো। মনে রেখো, ঘাসের লনের কথা। পাহাড়ের গায়ে এঁকে বেঁকে উঠে যাওয়া রাস্তাটির কথা। মেয়েটার কথাও মনে রেখো, যার একটা বাচ্চা ভেড়া ছাড়া আর কেউ নেই।

বিশ্বাস করি না তবু, নতমস্তকে স্বীকার করি, তুমিই ঈশ্বর। বলি, তুমিই ঈশ্বর। আরও চিৎকার করে বলি, হ্যাঁ, তুমিই ঈশ্বর। নিজের গলা নিজেই দুহাতে চেপে ধরে বলি, হ্যাঁ হ্যাঁ তুমিই ঈশ্বর। আত্মহত্যা করতে করতে বলি, তুমিই একমাত্র ঈশ্বর। বিশ্বাস করি না, তবু,মৃত্যুর আগের মুহূর্তেও বলি, হে ঈশ্বর, আমাকে বাঁচাও। ঈশ্বর মৃদু হাসেন। সেফটি ক্যাচের শব্দ হয় ঘড়ির ভিতর।

ব্রিজের উপরে ঠান্ডা মেয়েটি

একটা গাঢ় অন্ধকার বাড়ি থেকে সে বেরিয়ে আসত প্রতিদিন। কী শীতল যে তার চোখদুটি! ভাগ্যিস তুমি নিজের দিকে তাকাওনি কোনওদিন, বলতাম। সে হেসে ফেলত। তার হাসির সঙ্গে সঙ্গে ঝরে পড়ত বিষাক্ত হেমন্ত। আমি বলতাম, আমি তো সুন্দরের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সে একটা আগুনের পরিখার মধ্যে দিয়ে এসে দাঁড়াত এই ব্রিজে। যার তলা দিয়ে বয়ে গেছে রক্তাক্ত এক নদী। আমি বলে উঠতাম কেন আমার দুঃস্বপ্ন হয়েই থেকে গেলে! সে এসব শুনে আমাকে চুমু খেতে এগিয়ে আসত। আমি তার মুখের ভিতর ঢুকে পড়তাম। সে আমাকে শুষে নিত এক ভেজা অন্ধকারের ভিতর। আলো ছিল না কোনও। আর তার পর হো হো করে হেসে আমাকে শূন্যে ছুঁড়ে দিত। আমি শ্বাস নিতাম। আমি দেখতাম একটা খেলনার পৃথিবী তার খেলনার মতো মানুষজন নিজেদের দিকে বেয়নেট উদ্যত করে আছে। কেউ ভালো নেই, কেউ ভালো থাকবে না, এমন তো কথা ছিল না বিয়াত্রিচে! সে ফিরে যেত তার অদ্ভুত বাড়ির দিকে। অন্ধকার বাড়ি। চারিদিকে আশ্চর্য বাগান। সেখানে কিছু অন্তর্বাস হাওয়ায় উড়ছে। আমি চেষ্টা করেও এই ব্রিজ পেরোতে পারিনি। সেও এপারে আসেনি কখনও। একটি গাঢ় অন্ধকার বাড়ি আমাদের অন্ধকার রাস্তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে প্রতিদিন।


(পাওলো পাসোলিনি একজন ইতালিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক। ১৯২২-১৯৭৫। চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও তিনি লিখেছিলেন প্রচুর প্রবন্ধ, কবিতা এবং গল্প। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।)
  

Tuesday 30 June 2020

গ্রিক কবি কিরিয়াকা কারসাম্বার কবিতা ,অনুবাদক উজ্জ্বল ঘোষ ,সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা,২০২০





এখন আর

কিরিয়াকি কারসাম্বা

এখন আর কিছুই আশা করি না আমি।
মন দিয়ে শুনি সব।
জীবন সামনে আসে হাজার রূপে:
প্রকৃতি, মানুষ, জীবজন্তু, পাখি,
সুগন্ধী, সূর্য, বৃষ্টি আরও কত কী!

নানা তথ্য, কান্না, হাসি
অপরিচিতের চোখে ঐশ্বরিক ঝলক,
ঘাতক, বিচারকের অপ্রত্যাশিত করুণা,
প্রিয় কিছু চিরতরে হারিয়ে ফেলা,
ব্যাখ্যাতীত ঘটনাসমূহ,
সহযাত্রীর মুখ-ঝামটা—
এ সবই জীবনের ভিন্ন ভিন্ন রূপ।
হীন ও মহান প্রিয় সব মানব,
ভালোবাসা, নৈঃশব্দ্য—
সকলই কড়া নাড়ে জীবনের দ্বারে।



একমাত্র সাক্ষী

কিরিয়াকি কারসাম্বা

সন্দেহ-সংকটের উৎসে পৌঁছাতে
আমাকে সবকিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
নিজেকে যথাযথ সম্মান জানাতে
এছাড়া উপায় ছিল না আর!
যদিও তুমি জানতে, আমিই ছিলাম
সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষী, আর
আমাকে ছাড়া শেষ সিদ্ধান্ত
থেকে যেত অধরা।
অন্য কেউ উপলব্ধিই করতে পারবে না
আমার কাছে এই যাত্রা কতটা আত্মমর্যাদার ছিল।


(গ্রন্থ: প্রায় সত্যের মতো উলঙ্গ, আথিনা ২০১৮)

[ কবি পরিচিতি: পেলোপনিসসের (দক্ষিণ গ্রিস) কালামাতা শহরে ১৯৪৬ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি এশিয়া মাইনর (বর্তমানে তুরস্ক) থেকে আগত এক উদ্বাস্তু গ্রিক পরিবারে জন্ম কবি কিরিয়াকি কারসাম্বা-র (Κυριακή Καρσαμπά)। গ্রিসের আরিস্ততেলিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি চিকিৎসা-বিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। গত ৩৪ বছর ধরে তিনি চিকিৎসা করে চলেছেন গ্রিসের নানা প্রতিষ্ঠানে। রক্ত-বিজ্ঞান (Hematology) নিয়ে তাঁর লেখা গবেষণা-গ্রন্থ অনূদিত হয়েছে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়। তাঁর মানুষ তথা জীবন দেখার চোখ স্বভাবতই আমাদের থেকে একটু আলাদা। এসব অভিজ্ঞতার আলোকেই রচিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "প্রায় সত্যের মতো উলঙ্গ" (Σχεδόν Γυμνή Σαν Την Αλήθεια / স্খেদন গিমনি সান তিন আলিথিয়া) প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে।]

Saturday 27 June 2020

লুইস গ্লাকের কবিতাঃ সুজিত মান্না

লুইস গ্লাকের কবিতা


ভাষান্তরঃ সুজিত মান্না



প্রতিধ্বনি

১.

এই প্রাণটাকে কল্পনা করতে পারলেই আমি আমার মৃত্যুকে অনুমান করতে পারি
যখন মৃত্যুকে কল্পনা করেছিলাম
আমার প্রাণের মৃত্যু হয়ে গেছে। সে কথা 
আমি স্পষ্ট ভাবে মনে করতে পারি।

আমার দেহ জেদ ধরে বসে থাকে।
এগোয় না, শুধু জেদ ধরেই বসে থাকে
কেন আমি জানবো না।

২.

আমার বয়স যখন খুব অল্প, মনে আছে বাবা-মা পাহাড় ঘেরা একটি ছোট উপত্যকায় স্থানান্তরিত হয়ে গেল
হ্রদের দেশ নাম ছিল জায়গাটির।
রান্নাঘরের জানালা থেকে অনায়াসেই পাহাড়গুলিকে দেখতে পাওয়া যেত মেঘে ঢাকা হয়ে আছে
এমনকী গ্রীষ্মের দিনেও।
এখনো মনে করতে পারি শান্তি যে এরকমও হতে পারে
আগে অনুভব করিনি কোনদিন।

পরে শিল্পী হওয়ার জন্য এগুলি নিজের হাতে তুলে দিয়েছিলাম, এইসব অনুভবকে শুধুমাত্র ভাষা দেওয়ার জন্য।

৩.

বাকিটা ইতিমধ্যেই তোমায় আমি জানিয়েছি…
কয়েক বছরের অনর্গল যাপন এবং তারপর লম্বা নীরবতা, ঠিক কোন এক উপত্যকায় প্রকৃতির দ্বারা পরিবর্তিত তোমার স্বর সামনের পাহাড়টি প্রতিধ্বনি করে ফিরিয়ে দেওয়ার আগের মুহূর্তের নীরবতার মত।

এইসব নীরব মুহূর্ত এখন আমার সঙ্গী হয়ে গেছে।
জিজ্ঞেস করিঃ আমার সত্তার মৃত্যু ঘটলো কীসে
এবং এইসব নীরবতা উত্তর দেয়
যদি তোমার সত্তার মৃত্যু ঘটেই থাকে, তাহলে কার জীবন নিয়ে বেঁচে আছো এবং  কখনই বা তুমি সেই মানুষটি হয়ে গেছ?



পরিচিতি : লুইস এলিজাবেথ গ্লাক ( জন্ম এপ্রিল 22, 1943 ) – গ্লাক ছিলেন পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত একজন আমেরিকান কবি ও প্রাবন্ধিক। পেশায় অধ্যাপিকা। তার কবিতার একটি অংশ আত্মজৈবনিক। তার কবিতায় বারবার উঠে ইতিহাস পৌরাণিক উপকথা প্রকৃতি এবং মানুষের আধুনিক জীবন। নিচের তিনটি কবিতা তার Averno থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।