Showing posts with label কী লিখলাম. Show all posts
Showing posts with label কী লিখলাম. Show all posts

Saturday 9 January 2021

কী লিখলাম, কেন লিখলামঃ তুষারকান্তি রায় ,সাহিত্য এখন শীতসংখ্যা ২০২০-২১,

 কী লিখলাম, কেন লিখলাম 

তীর্থংকর মল্লিনাথ: অতীত অনুসন্ধানের আর এক নাম: তুষারকান্তি রায় 


 

তীর্থংকর মল্লিনাথ / তুষারকান্তি রায়  / অভিযান পাবলিশার্স  / দাম – ২০০ টাকা

অতীতের সঙ্গে বর্তমানের আলাপের মধ্য দিয়েই উন্মোচিত হয় ভবিষ্যতের অনন্ত সম্ভাবনা । সম্ভবত সেই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য চিরকালই সমাজ ও ইতিহাসকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে । অতীতের স্বপ্ন – সময়যাত্রা কিংবা পুরাণ – ইতিহাস অথবা কিংবদন্তি থেকে উঠে আসা ঘটনা ও চরিত্রের মধ্য দিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান কোনও এক মহা- ব্যক্তিত্ব । অভিযান পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত আমার ‘ তীর্থংকর মল্লিনাথ ’ আধুনিক অভিঞ্জতার চোখে দেখা প্রাচীন জীবনের অনালোকিত এক কিংবদন্তির বিস্মৃত ইতিহাস । আমার এই উপন্যসটি ( জৈন ধর্ম বিষয়ক প্রথম বাংলা উপন্যাস ) পাঠকের দরবারে হাজির করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।

যদি কেউ প্রশ্ন করেন , ‘ তীর্থঙ্কর মল্লিনাথ ’ লেখার কারণ কী ? আমার উত্তর হবে , অনালোকিত  অতীত অনুসন্ধানের আর এক নাম ‘ তীর্থংকর মল্লিনাথ ’ । সকলেই জানেন , জৈনধর্মের প্রবর্তক মহাবীর এর পূর্বেও তেইশজন তীর্থংকর ছিলেন । যাঁদের হাত ধরে জৈন ধর্মমত গড়ে উঠেছে এবং প্রসারলাভ করেছে । একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে , গৌতমবুদ্ধ এবং মহাবীরজৈন প্রায় সমসাময়িক হলেও ধর্মবিস্তারে বৌদ্ধধর্ম গোটা বিশ্বে যতটা প্রসার লাভ করেছিলো জৈন ধর্মমত সেই জনপ্রিয়তা পায়নি । সম্ভবত পালনীয় কর্তব্য সম্পর্কে অতিরিক্ত সচেতনতা এবং রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এই দায়িত্ব পালন করেছে । যাই হোক , খৃস্টপূর্ব  তৃতীয় শতকেই অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের কারণে ভদ্রবাহুর নেতৃত্বে দিগম্বর এবং স্থূলবাহুর  নেতৃত্বে শ্বেতাম্বর নামে দুটি শাখায় জৈন ধর্মাবলম্বীদের বিভাজিত হতে দেখা যায় । জৈন ধর্মমতের প্রথম তীর্থংকর ঋষভনাথ এর সময় থেকেই দিগম্বর এর ধারণাটি পরিষ্কার হলেও শ্বেতাম্বর মতাম্বলম্বীদের মতাদর্শের সমর্থনে তেমন যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণ পাওয়া যায়না ।

একথা অনস্বীকার্য , জৈনধর্মের  শ্বেতাম্বর শব্দের উৎস সন্ধানে যথাযথ তথ্যের অভাব ছাত্রজীবন থেকেই আমাকে অনুসন্ধানী করেছে । কিন্তু চব্বিশজন তীর্থংকর এর মধ্যে অজিতনাথ থেকে নমিনাথ পর্যন্ত তীর্থংকর এমন সুদূর সময়ের যেখানে শুধু কিংবদন্তি ও শ্রুতিঞ্জান ছাড়া আর কোনও কিছুর উপরই নির্ভর করা যায় না । তবুও সামান্য শাস্ত্রীয় তথ্য পেরিয়ে উনিশতম তীর্থংকর মল্লিনাথ এর কাছে পাওয়া যায় সেই উত্তেজনাময় সন্ধানের উৎস । পাওয়া যায় এক অনালোকিত ইতিহাসের ছোঁয়া। জৈন দিগম্বরদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে চব্বিশজন তীর্থংকরের সকলেই দিগম্বর এবং পুরুষ । অথচ শ্বেতাম্বর মতাবলম্বীরা উনিশতম তীর্থংকর মল্লিনাথের নারীত্বের মর্যাদা স্বীকার করেন । এবং তিনি শ্বেত অম্বর ব্যবহার করতেন । এই সূত্রই আমাকে উসকে দিয়েছে তীর্থংকর মল্লিনাথকে অনুসন্ধানের বিষয়ে ।

জৈন সাহিত্যপাথেদেখা যায় , খৃস্টপূর্ব  ভারতে পুরুষের মতো নারীরাও শিক্ষা – শাস্ত্র – শস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হতেন ।  ভারত সংস্কৃতির সেইসব আখ্যান সাহিত্যে প্রায় উপেক্ষিতই রয়ে গেছে । আমার অনুসন্ধিৎসার মেটাতে গিয়ে জৈন মঠ – মন্দির – লাইব্রেরী ( আমার নাগালের মধ্যে ) থেকে পেলাম প্রচলিত কিংবদন্তি ( মল্লিনাথ সম্পর্কে ) এবং অতিরঞ্জিত ভক্তিমূলক কাহিনি । হতাশ হলাম । জৈন তীর্থংকরদের বিষয়ে সর্বপ্রাচীন  কল্পসূত্রেও প্রকৃতসত্য বা বিশ্বাসযোগ্য জীবনচিত্র পাওয়া যায় নি । অথচ আমি চেয়েছি ধর্মীয় ধর্মীয় ভাবাবেগে মোহাবিষ্ট পঁচিশ ধনুষ উচ্চতা সম্পন্ন পঁয়তাল্লিশ হাজার বয়স্ক কলসলাঞ্ছন মল্লিনাথের বর্ণনাকে এড়িয়ে গিয়ে সেই সময়ে ভারতের সমাজে এক নারীর তীর্থংকর হয়ে ওঠার প্রকৃত সত্যকে উদ্ঘাটন করতে । ফলে আমার উপন্যাসে উঠে এসেছে তৎকালীন ভারতবর্ষের ধর্মীয় চেতনা ও যুক্তিগ্রাহ্য ভাবনার বিকাশ । আর , সেই আর্থ – সামাজিক প্রেক্ষাপটে সেই সময়ের রাজনৈতিক ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের অবস্থান । সর্বোপরি ষোড়শমহাজনপদ গড়ে ওঠার প্রাক্কালে ভারতীয় সমাজে নারীদের অবস্থান ।

জৈন ধর্মবিশ্বাস ( শেত্বাম্বর ) অনুসারে উনিশতম তীর্থংকর মল্লিনাথ ইক্ষাকু কুলসম্ভুত মিথিলারাজ কুম্ভের কন্যা মল্লিকা । কিংবদন্তি অনুসারে শাপগ্রস্ত ইক্ষাকু বংশীয় রাজা মহাবল জন্মান্তরে নারী রূপ পরিগ্রহ করেন এবং তিনিই তীর্থংকর মল্লিনাথ হিসেবে পরিচিত হন ।  প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে , তীর্থংকর মল্লিনাথ জৈনধর্মের আত্মাতত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা । যিনি বলেছেন , আত্মার বিনাশ নেই , এবং আত্মার  কোনও লিঙ্গ নেই , যেকোনো রূপেই তার প্রকাশ ঘটতে পারে । পরবর্তীকালে প্রবর্তিত  জৈনধর্মমতে এই তত্ত্বটি বিশেষ ভূমিকা পায় । সুতরাং জৈন ধর্মতত্ত্ব নয় কুম্ভরাজকন্যা মল্লিকার মল্লিনাথ হয়ে ওঠার কাহিনিই আমার ‘ তীর্থংকর মল্লিনাথ ’ । তাই এই উপন্যাসে কেবল আত্মাতত্ত্ব নয় প্রাচীন ভারতবর্ষের সার্বিক পরিচয়টিও পাওয়া যাবে । কিংবদন্তি ও জৈন পরম্পরায় বর্ণিত বৈশিষ্ট্যগুলিকে অক্ষুন্ন রেখে পাঠকের হাতে তুলে দিতে চেয়েছি জৈন সংস্কৃতির এক অনালোকিত ইতিহাস ।

                                                     সমাপ্ত  

তথ্যসুত্রঃ ভারতীয় ধর্মের ইতিহাস – নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য / কল্পসুত্র -  বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত/ শ্রমণ ( পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা ) / kalpasutra : Trans & Ed . by Herman Jacobi / A Competitive History of Jainism – A Chatterjee / মহাভারত / মহাভারতের সমাজ – শ্রী সুখময় ভট্টাচার্য্য শাস্ত্রী সপ্ততীর্থ /  Jain Jarnal  / Political Histry of Ancient India – H . Roychowdhury / Comprehensive Histry of Jainsm – A Chatterjee / ইন্টারনেট এর বিভিন্ন লিঙ্ক

যোগাযোগঃ তুষারকান্তি রায় , ‘ তুলিতোড়া ’ , সুভাষ বাগ , বিরাটি , কোলকাতা ৭০০০৫১ ।

মোবাইল – ৮০১৭৯৬৫৬০৪ / ৯৪৩৩৫৫৬৪০৩