Showing posts with label কৃষ্ণপাক্ষিক সংখ্যা. Show all posts
Showing posts with label কৃষ্ণপাক্ষিক সংখ্যা. Show all posts

Friday 1 December 2017

সাহিত্য এখন, ডিসেম্বর, প্রথম পক্ষ, বিশেষ আকর্ষণ অনুবাদ সাহিত্য




সম্পাদকীয়
 সাহিত্য এখনের তৃতীয় সংখ্যায় এসে আলাদা কিছু করার কথা মনে হল। একথা আমরা সকলেই জানি যে 'সত্য মাত্রেই সাহিত্য নয়'। হৃদয়ের প্রকৃত অনুভূতি যখন নানান আভরণে ভূষিত হয়ে আমাদের সামনে আবির্ভূত হয়, তাকেই আমরা সাহিত্য বলি। তবু মূল কথাটি হল আমাদের উপলব্ধির কথা। তাই গল্পের বদলে এই সংখ্যায় এমন কিছু উপলব্ধি হাজির করলাম, যা আজকের দিনে অনুভব করা বড় প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
সেই সঙ্গে নিয়ে এলাম এমন কিছু কবিতার ঝাঁপি,যেগুলি সমাজ ও সাহিত্যের নিরিখে বিশ্ব সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই।আমাদের কবি বন্ধুরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং পরিশ্রমের সঙ্গে এই কাজটি সম্পন্ন করেছেন। আশা রাখি, আপনাদের সংখ্যাটি ভাল লাগবে। পড়ুন, আলোচনা ও সমালোচনা করুন, বন্ধুদের কাজকে বেশি করে ছড়িয়ে দিন নতুন নতুন পাঠকের কাছে... এটুকুই অনুরোধ। ভাল থাকবেন।



মনের কথা (১)
বেড়ালের তালব্য শ

অনেকদিন ধরে লিখব ভাবছি। হয়ে উঠছে না। এমনিতে হাসতে ভালোবাসি, অন্যকে হাসাতে পারলে আরো ভালো লাগে। কিন্তু মাঝে মাঝে জংলা রাগ হয়। ঘৃণা। 

আমি খুব প্রোটেক্টেড জীবন যাপন করেছি গড়ে ওঠার সময়টা। ঊর্ধ্বতন চৌদ্দপুরুষে শিক্ষার সংস্পর্শ থেকে আসা উদারমনস্ক কিন্তু ঐতিহ্যবাদী বাবা-মা খারাপ দেখতে, শুনতে, বুঝতে দেন নি। ভুল করেছেন, কিন্তু তা নিয়ে এখন বিচার করতে বসে লাভ নেই। 
খারাপ তো স্কুল কলেজেও দেখিনি। আশেপাশে যেসব ছেলেরা পড়াশোনা খেলাধুলো করত তারা বিচ্ছু বদমাইশ পাজি ন্যাকা আহ্লাদী বা গোঁয়ার ছিল, খারাপ ছিল না; অথবা, খারাপ বলে বুঝতে পারিনি। 

তাই প্রথম যখন খারাপ দেখলাম, চিনতে পারিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় মানে প্রথমে রেডিফ ক্যালকাটা গ্রুপ, পরে অরকুট, তারও পরে ফেসবুক। একটু দেরীতে ঢুকেছিলাম তাই এএসএল দিয়ে আলাপ শুরু হয় কেন বা কারা সেটা করে বুঝতে সময় লাগলো। তারপর যেটা প্রত্যক্ষ করলাম তা হলো একটা সর্বগ্রাসী ক্ষুধা। মেয়ে বলে বুঝতে পারলেই হটচ্যাটের আহ্বান, খিস্তি, প্রেম-প্রেম ভাব এবং হটচ্যাটের আহ্বান, প্রেম-প্রেম ভাব, খিস্তি। যে গ্রুপেই যাই ঐ এক এএসএল। কেউ কথা বলে না, আলোচনা করে না, কারো কোনো প্রশ্ন নেই, শুধু দু'লাইন পর থেকে টেল মী ইয়োর ফ্যান্টাসিজ অ্যান্ড ডার্কেস্ট সিক্রেটস। কেন হে বাপু, তুমি বা তোমরা কে? তোমরা কি আমার কলেজের বন্ধুরা, ছদ্মনামে বুভুক্ষু প্রেতের মতো ঘুরছ? তোমরাই কি আমার সঙ্গে বসে ছবি আঁকা শিখতে? গান গাইতে? তোমাদের সঙ্গেই কি ক'বছর আগে পর্যন্ত ক্রিকেট বা ক্যারম খেলেছি? তখনো কি এটাই ভাবতে যে এই নারীমাংসটার ডিপেস্ট ডার্কেস্ট সেক্স-সিক্রেট কী? 

যে পুরুষ যতো নিজের স্ত্রীকন্যাবোনের প্রতি রক্ষণশীল, সে দেখি ততো অন্য মেয়ের প্রতি হিংস্র, আক্রমণাত্মক। সন্দেহ জাগে, রক্ষণশীলতার উৎস কি তাহলে দ্বিবিধ; আমার সম্পত্তি/ আমার সম্পত্তি নয় এই মেরুকরণ, এবং অপরাপর পুরুষ সম্পর্কে স্বজাত্যবোধ-জাত প্রকৃষ্ট ধারণা, যে রাস্তাঘাটে যারা হাঁটাচলা করছে, বাসে ট্রামে উঠছে তারা ঠিক এই আমারই মতো নারীমাংসলোলুপ? 

এর উত্তর নেই। ইতিহাস বরাবরই his story. মেয়েদের হাতে কলম উঠেছে সে আর কতো বছর? এখনো আমাদের উচ্চারণ নেই, বয়ান নেই, নেই প্রকাশক্ষমতা। এখনো আমরা কীই বা পারি, খুব সাধারণ কিছু নিজস্ব, ব্যক্তিগত প্রতিবাদ-প্রতিরোধ, বিদ্রোহ করা ছাড়া? সেইসব বিদ্রোহের সীমারেখা, অস্ত্রশস্ত্রও আবার নির্ধারণ করে দেয় পিতৃতন্ত্র। কোথায়, কবে, কতোটুকু, কোন রঙের কী পোষাকে কাদের মিছিলে হাঁটবো আমরা, মুখের ভাষা কতোটা "ভদ্রজনোচিত" বা "সাব-অল্টার্ন" হবে; কতোটা সাধারণের বোধগম্য হবে বা কতোটা থাকবে জার্গনের হেঁয়ালির অন্ধকারে। আমরা পড়াশোনা করব কি না, চাকরি করব কি না, কটা বাচ্ছা হবে এবং কবে-কখন হবে, হলে সেই সন্তানদের লিঙ্গ কী হবে, বাচ্ছা জন্মানোর পর আমরা আর চাকরি করব নাকি ফুল টাইম "মা" তথা "গৃহবধূ" হয়ে যাবো, এসবই এখনো ৯৯% ক্ষেত্রে পিতৃতন্ত্রই ঠিক করে দেয়। যেমন ঠিক করে দেয়, অবিবাহিতা, বিধবা, স্বামী-পরিত্যক্তা, ডিভোর্সি মেয়েদের সামাজিক অবস্থান। ধর্ষিতার সংজ্ঞা, ধর্ষণের কারণ। ধর্ষণ, যৌন অত্যাচারের সমূহ সম্ভাবনার সামনে পড়ে অথবা পরবর্তী সময়ে অত্যাচারিতা নারীটি কী ভাববে, কী করবে, তাও সম্পূর্ণভাবে ঠিক করে দেয় সেই পিতৃতন্ত্রই। কারণ, আর কোনোভাবে বাঁচতে তো আমরা শিখিনি! 

আর তাই, ইয়াজিদি মেয়েরা "আমাদের যৌনদাসী ক্যাম্পের ওপর বোমা ফেলে সবাইকে মেরে ফেলো" বলে আবেদন জানালে আমরা তা মিথ্যে বলে নাকচ করে দিই, বা জীবনের চূড়ান্ত দিক-পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা শোনাই; উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বাণী পাঠাই। তাই ২-৪ লক্ষ বাঙালি নারী বারংবার গণধর্ষিত হবার পর তাদের দেশ, সমাজ তাদের কথা সম্পূর্ণ চেপে যায়, তাদের সরকার একবার "বীরাঙ্গনা" উপাধি দিয়ে আর টুঁ শব্দটিও করে না তাদের সম্বন্ধে; তাদের ধর্ষণজাত হাজার কুড়ি "যুদ্ধশিশু" (সরকারি হিসেবে) চ্যারিটির হাত ধরে পৌঁছে যায় ইউরোপ আমেরিকায়; এমনকী তাদের নিয়ে স্বাধীন গবেষকদের লেখাপত্তরকে অগ্রাহ্য এবং ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয় মাত্র চল্লিশ বছরের অন্তরালেই। তাই, মা মেয়েকে নিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়লে সবাই প্রশ্ন করে, জিয়ারপি ডাকেনি কেন, আগের স্টেশনে নেমে যায়নি, যদি মরে যেতো তো মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী হতো কে, মা ছাড়া? তাই চার বছরের শিশুকন্যা যৌনাঙ্গে ক্ষত নিয়ে কাঁদলে তার মা যখন স্কুলের বিরুদ্ধে, নিগ্রহকারী পুংশিশুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তখন দেশ ভেঙে পড়ে ছিছিক্কারে, পুত্রসন্তানের বাবামায়েরা বলেন ছোট্ট মেয়েটি মিথ্যে বলছে, তাকে হয়ত তার বাড়িতেই কেউ অত্যাচার করেছে, তার বাবা-মা প্রচারের আলোয় আসতে চাইছেন, মা "নারীবাদী" তাই "নির্দোষ" পুং-শিশুটির প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন। তাই চাকরি করতে না চাওয়া মেয়েটি আত্মহত্যা করলে আমরা চোখ কপালে তুলে বলি, সে কী! আত্মনির্ভর হওয়া তো সবচেয়ে সুখ ও স্বস্তিদায়ক! এবং ভুলে যাই যে সেই মেয়েটি হয়ত "বাপের বাড়িতে" কোনোদিন জানেইনি, তাকে ভাবতেই দেওয়া হয়নি যে তারও চাকরি করা উচিত, নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত এবং বিশেষজ্ঞরা তাকে, তাদেরকে "দুর্বল মানসিকতার" বলে দেগে দেন। তাই সু-কাই অহিংস বৌদ্ধদের দ্বারা রোহিঙ্গা মেয়েদের নির্যাতনের প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ দেন, আর পৃথিবীর তাবৎ প্রগতিশীলরা সেই রোহিঙ্গাদের দ্বারাই উত্তরপূর্ব বাংলাদেশ এবং ভারতীয় মেয়েদের ওপর চালানো অত্যাচার নিয়ে ততোটাই চুপ করে থাকেন। তাই প্রবাসী "নারীবাদী" বৌদিদি রায় দিয়ে দেন, রাজস্থানী মেয়েরা সবাই স্বামীর ঘরে বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার; তাই বিধর্মী যবনসেনা তুলে নিয়ে গিয়ে গনিমতের মাল হিসেবে গণধর্ষণ করলে, দাসীহাটে বেচে দিলে কীই বা এমন যেতো-আসতো, out of the frying pan into the fire হতো না কী? 

এখনো পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রমাণ থেকে ভৌগোলিক সময়-সারণি অনুযায়ী মানুষ অভিধা দেওয়া যায় এমন প্রাণীর আবির্ভাব মাত্র দু'লাখ বছর আগে। পৃথিবীর বয়েসের (প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর) কাছে এই সময় হলো নস্যি। সময়ের চিরকালীন ছন্দ, বৃহত্তর ছকে তাই হয়ত মানুষীদের এইসব ছোটখাটো দুঃখদুর্দশা, সমুদ্রবক্ষে বুদ্বুদের মতো ক্ষণিক, তুচ্ছ, অর্থহীন। হয়ত এভাবেই লিঙ্গসাম্য আসবে, নারীমুক্তি ঘটবে, অতি ধীরে, অতি মন্থরতায়। ততোদিন এইসব খেলা চলুক। আমরা পিতৃতন্ত্রের শেখানো বুলি দিয়ে, চোখে সেই একই রেফারেন্স ফ্রেমের ঠুলি এঁটে, আলোচনা এবং ক্রিটিক করতে থাকি সেই একই চিন্তাপদ্ধতি থেকে উদ্ভূত শিল্পের, সাহিত্যের, ভাবপ্রকাশের সমস্ত ভঙ্গীমার, যেখানে নাকি "মেয়েদের কথা" বলা হয়েছে। আমাদের সব মেয়েদের সবটুকু বাঁচা এইভাবেই প্রাকনির্ধারিত হতে থাকুক। মরাও, মরাটুকুও। জীবনের ওপর যাদের অধিকার নেই তারা নিজের মতে, স্বেচ্ছায় মরতে পারবে, এ আবার কেমন কথা? তারা মরবে, শান্ত হয়ে, চুপ করে, চুপিচুপি। কম খেয়ে, অপুষ্টিতে, অত্যধিক সন্তান-ধারণ করে, চাকরি এবং সংসারের জাঁতাকলে পিষে,  পুরুষের ঘটানো যুদ্ধে বোমার আঘাতে, দুর্ভিক্ষের সময় তাদের খাদ্য হয়ে, গায়ে বোমা বেঁধে, তাদের যৌনদাসীত্ব স্বীকার করে। এর কোনোটা না হতে চেয়ে মরে গেলেই, মরে নিষ্কৃতি পেতে চাইলেও, সমস্ত রকম ধর্ম, যাদের সব কটাই প্রায় পুরুষ-রচিত, পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত, ছুটে আসবে আত্মহননকারীকে হয় ধিক্কার দিতে। অথবা লোকাচার তাকে বানাবে দেবী, আত্মত্যাগে মহিমান্বিতা। 


তবু, সময়ের এই তাৎক্ষণিকতায় দাঁড়িয়ে মনে হয়, উপকথার রাণী পদ্মিনী ষোল হাজার রাজপুত মেয়েকে নিয়ে জওহরব্রত করে ভুল করেছিলেন কি না তা বাংলাদেশের "বীরাঙ্গনা"দের দিকে তাকালেও হয়ত কিছুটা বোঝা যায়। সেই তারা, যাদের খবর তাদের পরিবার, সমাজ, দেশ, কাল কেউই রাখেনি, রাখতে চায়নি। সেই তারা, রেপ ক্যাম্পে যাদের ব্যবহার করা হয়েছিল একটা জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেবার জন্য। শত্রুপক্ষের জেনারাল টিক্কা খান যাদের গর্ভবতী করে রেখে যেতে নিজের সৈন্যবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে পরের প্রজন্ম হয় "পিতৃভূমি"র প্রতি উদ্বেল। আজকের বাংলাদেশে পাকিস্তান-প্রীতি দেখলে আমার সত্যিই মনে হয়, পদ্মাবতীর পিতৃতন্ত্র কতোটা ভুল জানি না, তবে তার জায়গায় থাকলে আমিও পুড়ে মরতেই চাইতাম, মেয়ের হাত ধরে ঝাঁপ দিতাম চলন্ত ট্রেন থেকে, ইয়াজিদি ভাইঝির মুখে মাখিয়ে দিতাম ব্যাটারি অ্যাসিড। মেরে মরতে না পারলে অন্ততঃ দিনের পর দিন relentless অত্যাচারের সামনে নিরুপায় হয়ে পড়ে না থেকে মরে যাবার চেষ্টা করতাম, কারণ সেই মৃত্যুও একরকম মুক্তিই। এই সিস্টেমে জীবনটা আমার নয় যখন, মৃত্যুটা ক্ষমতায় কুলোলে অন্ততঃ নিজের করে নিতাম, নিতামই।



 মনের কথা(২)
দেবশ্রী  মিত্র

সম্প্রতি অন্তত দুটি ঘটনায় দু'জন নববিবাহিতা মহিলা আত্মহত্যা করেছেন কারণ শ্বশুরবাড়ি থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিলো চাকরি করার জন্য। রিলেটেড অন্যান্য কারণও থাকতে পারে, কেস শেষ না হওয়া অবধি কিছুই বলা যায় না। তবে, আমি শুধু মা হিসেবে দু'চারটে কনসার্ন রেখে যাই। আমরা সন্তানদের ঠিকমতো মানুষ করছি তো? কোথাও কোন বড় ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো? আরও মেয়েকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়, এমন ভবিষ্যৎ তৈরি করে যাচ্ছি না তো? 

ছেলে সন্তান আর মেয়ে সন্তানের মধ্যে "আপব্রিংগিং" এ তফাত করাটা একটা সুপরিচিত নিয়ম আমাদের সমাজে। যে বাড়ি মেয়েকে স্বাবলম্বী বানায়, তারাও দুধের গ্লাস আর মাছের বড় টুকরো ছেলেকে দেয়। কথায় কথায়, মেয়ে যখন বাড়ির কাজটাও সাথে শিখুক, বলে। "আমার মেয়ে রাঁধতেও পারে" বলে প্রতিবেশীর কাছে গর্ব করে, ছেলের জন্য কিন্তু করে না। এই যে তফাতটা, অতি সূক্ষ্ম তফাতটা, এটাই কিন্তু একটা মেয়ের "ছেলে আর মেয়ে আলাদা" এই মানসিকতা গড়ে দেয়। বিয়ের পরেও তারই প্রতিফলন ঘটে। স্বামী খানিক হুকুম করতে পারে, আয়েশ করতে পারে, অন্যায় জুলুমও করতে পারে। কারণ সে পুরুষমানুষ। এই মানসিকতা তো আমরাই তৈরী করে পাঠাই মেয়ের মধ্যে। 

দুই, স্বাবলম্বী হওয়া। অর্থনৈতিক এবং মানসিক, দুভাবেই। বেঁচে থাকতে গেলে টাকা লাগে এবং সেটা রোজগার করতে হয়, এটা একটা কঠিন সত্য। প্রত্যেক সুস্থ মানুষের উচিত একটা বয়সের পর নিজের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়া। চাকরি করার জন্য কেউ চাপ দিক বা না দিক। শ্বশুরবাড়ি অবধি যাওয়ার কী দরকার, মেয়েকে এই সহজ সত্যি কথাটা কেন শেখাবো না? যে মেয়ে চাকরি করে না, ঘরে শ্রম দেয়, তাকে কোনরকম ছোট না করেও বলা যায়, কেন সে একা শুধু ঘরে শ্রম দেবে এবং বাইরে যাবে না? কেন? ঘর এবং বাইরে, বিয়েতে দুজায়গাতেই দুজনের সমান দায়িত্ব, যদি না কোন শারীরিক অসুস্থতা থাকে। আমি নিজেই যদি নিজের আর্থিক দায়িত্ব নিতে না চাই, অন্য কেউ কেন নিতে বাধ্য থাকবে? প্রচুর মেয়ে সন্তান জন্মের পর চাকরি ছেড়ে দেয়, এই বলে যে সন্তান কে দেখবে? হাজার হাজার লাখ লাখ মহিলা সন্তানকে ডেকেয়ারে রেখে চাকরি করেন। তাদের সন্তানরা সবাই অমানুষ হচ্ছে কি? স্বাবলম্বী হওয়াটা বেসিক প্রয়োজনীয়তার মধ্যে গণ্য হওয়া উচিত। ও লাজুক, এ কথা কম বলে, এসব কোন যুক্তি না। যে লাজুক তাকে কেউ ফ্রন্ট ডেস্কে কাজ করতে বলে নি। পৃথিবীতে আরও হাজারটা কাজ আছে করার। 

তিন, যদিও দ্বিতীয়টা করলে এইটা করতে লাগবে বলে আমার মনে হয় না, তবুও বাবা মা দয়া করে বিয়ের আগে মেয়েকে একটু বলবেন কি যে বাবার বাড়িতেও তার একটু কদিনের জন্য জায়গা হবে, খুব অসুবিধা হলে, যতই তার বিয়ে হয়ে যাক না কেন? বলবেন কি যে পাশের বাড়ির কাকিমার তির্যক দৃষ্টির চেয়ে মেয়ে তাঁর কাছে দামী? মেয়ে যাবে কোথায়? এই প্রশ্ন শুনে শুনে কানে ব্যথা হয়ে গেছে। আর শুনতে ইচ্ছা করে না। অত্যাচারিত মেয়েকে দু'দিন আশ্রয় দিলে যাদের মান যায়, তারা মেয়ে সন্তান জন্মালে মেরে ফেলেন না কেন আমি বুঝি না! বাঁচিয়ে রেখে কী হবে যদি এই পরিণতির দিকেই ঠেলে দিতে হয়? 


বাবা মায়েরাও একটু মানুষ হোন দয়া করে। খালি খুনীকে দোষ দিয়ে লাভ কী, যদি আপনি একজন ভালনারেবেল, আত্মসম্মানহীন, নিজেকে রক্ষা করতে অসমর্থ, ভীতু পোটেনশিয়াল ভিক্টিম তৈরী করে তাকে খুনীর কাছে পাঠান? আপনি তো জেনেশুনেই মেয়েকে মরতে পাঠিয়েছেন, অভিযোগের চারটে আঙুল তো আসলে আপনারই দিকে।



জেলখানার থেকে
কবিতা: সামি আল-কাশিম (প্যালেস্টাইন)

অনুবাদ:চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য
.
বন্ধু আমার
ওরা আমার দরজায় কড়া নাড়লে
তুমি নাছোড় কান্নায় ভেঙে পড়ো।
কখনও ফুঁপিয়ে, গুমরে কখনও,
কখনও বুকফাটা বিলাপী চিতকারে।
.
মা আমার, মাগো,
শুধু তোমার চোখের জল
বুকচাপা পাথরের বেদনা দেয়।
.
মা, জানো এই গরাদের আড়ালেই
আমি অনুভব করছি বোধের আশ্চর্য
অনুপম চেতনা আর
প্রগাঢ় অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করছি।
.
আমি ঠিক জানি,
আমার শেষ দর্শণপ্রার্থী হয়ে আসবে
কোনও লোহার ঠোট আর লম্বা ডানার
কোনও কুতসিত অন্ধ বাদুড় নয়!
আসবে আমার স্বাধীনতা,
আমার আজন্মলালিত স্বপ্ন!
.
মা আমার, তুমি দেখো,
আমার বিশ্বাস, সেই উজ্জ্বল দিন
আসবেই, আসবেই, আসবেই...


ওয়েস্ট রাইডিং (পশ্চিমের পথে সওয়ারী )
ইয়ান এম্বারসন
অনুবাদ:গোপেশ দে

আঁধারের রাস্তায় উজ্জ্বল শাড়ি
ইয়র্কশায়ারের আকাশে ধূসরতা
ধ্বংসপ্রাপ্ত কারখানার জন্য স্তব
কারলেওয়ার কান্না খোঁজ নিচ্ছে বারংবার।

কোনদিন জেন এই মইয়ে বসে বসে
চাঁদটাকে খড়ে ডুবে যেতে দেখেছিল
একটা কুকুরও ছিল,আর একটা ঘোড়া
ধাতব শব্দে হেঁটে পার হয়েছিল এ ধূসর রাত


এরপরে শুধু তুমি অপেক্ষায় রত
(কুকুরেরা  বন্ধুকে স্বাগত জানাতে দৌড়ে আসেনা)
রক্তাভ সূর্য পড়ন্ত বিকেলে ডুবে যায়
হতাশার লাল ডিসেম্বরে।

এবং পৃথিবীরা এখনও  আঙুলে ভর করে তাদের তারাদের প্রদক্ষিণ করে
যখন মঞ্চে তরুণ অভিনেতারা দেখা সাক্ষাৎ করে
সোনালী ফ্রেমে এক অষ্পষ্ট ছবি
উজ্জ্বল শাড়ি আঁধারের রাস্তায়।



সিজফায়ার(যুদ্ধবিরতি)
মাইকেল ল্যাংলি
অনুবাদঃ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়


বাবার কথা মনে করে
অ্যাকিলিস কান্নায় ভেঙে পড়ল
হাত ধরে আস্তে করে এগিয়ে নিয়ে গেল বৃদ্ধ রাজাকে।

প্রায়াম তারই পায়ে কান্নায় লুটিয়ে পড়ল
বিষন্ন বাতাসে প্রাসাদ না ভরে যাওয়া পর্যন্ত
চোখের জলে ভিজে গেল দুজনেই।

হেক্টরের নিষ্প্রাণ দেহটা হাতে নিয়ে
বৃদ্ধ রাজার কাছে উপস্থিত হল
যেন সব ধুয়ে মুছে গেছে।
যুদ্ধসাজে সাজিয়ে প্রায়ামের হাতে তুলে দিল
যেন ট্রয়ের যুদ্ধবিরতির দিনে
বাড়িতে এক উপহার নিয়ে চলেছে।

তারা যখন একসাথে খেতে বসেছিল
প্রেমিকের দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল পরস্পরের দিকে
অ্যাকিলিসের শরীরটা ছিল দেবতার মত
প্রায়ামকেও সুন্দর মানিয়েছিল
পারস্পরিক কথাবার্তার মাঝপথেই
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলেছিলঃ

“আমি নতজানু হই। আমি তাই করি
যা আমার করা উচিত।
আমি অ্যাকিলিসের হাতে চুমু খাই
সেই তো আমার সন্তানের খুনী”।  




সেন্ট্রিফিউজ(কেন্দ্রাতিগ)
ডিন ইয়ং
অনুবাদঃ পিনাকী দত্তগুপ্ত


সম্ভবত সেটি ছিলো মধ্যরাত যখন ম্যাপেল গাছটার নিচে
শেষবার আমরা কথা বলেছিলাম, যেখান থেকে কবিতাটির
জন্ম হল। তোমার শরীরের দুর্বার চুম্বকীয় আকর্ষণ, সোঁদা
গন্ধ, উড়ন্ত উত্তরীয় , কিংবা এক দীর্ঘ চুম্বন উপেক্ষা করেও
কোনো এক অনতিক্রম্য টানে আমার কবিতা উড়ে যাচ্ছে
মহাজাগতিক দুর্গম উচ্চতা ভেদ করে। আর সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে
চূড়ান্ত উৎকন্ঠায় চেয়ে আছে দুর্বৃত্ত ছায়াপথ।  এসো, রক্ষা
করো, যাতে ঐ কৃষ্ণগহ্বর থেকে আমরা বিচ্ছেদের অতল
গভীরে তলিয়ে না যাই। শীতের লাল আপেলের মিষ্টি গন্ধ
আর দুর্বিনীত ছাই এর মন্দবাসের তীব্র যুগপৎ আকর্ষণে,
আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি একা, আজও ম্যাপেল গাছটার নিচে। 


মহান ধর্মযাজক বসে আছেন উচ্চ আসনে। আর যিনি তার
পদতলে, তিনিও মহান ধর্মযাজক। পাখিদের বহিরঙ্গে নরম
পালক, অস্থির গভীরে বুদবুদ। সম্মুখে আঁধি ও বৃষ্টি, তবুও
মেটাতে হবে ঋণ। উল্কার মতো ঝ’রে পড়া ধন ভান্ডারে মৃত্যু
নিশ্চিৎ জেনেও তুমি যেন প্রবেশ করে চলেছ এক অপার্থিব
আকর্ষণে। আর মনে পড়ছে সেই অনুবাদকের কথা যে বিষন্ন
ক্লান্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে একটি ব্রাজিলিয়ান কবিতার
বইএর  পিছনের মলাটে,, যেন এক অশ্বেতরের পিছনে ছুটতে
ছুটতে নিজের অজান্তেই সে প্রবেশ করেছে একবিংশ শতকের
অনভিপ্রেত সন্ধিক্ষণে। ছুটতে ছুটতে হঠাৎই পিট্সবার্গের বিবর্ণ
পথে পশমের জ্যাকেটের নিচে তাঁর নিঃশ্বাস হালকা হয়ে আসছে।
মনে করো,  ধুলোয় ঢাকা রাজপথ, একটু উত্তাপের আশায়  জড়ো
করেছে অবিন্যস্ত আণবিক হাসি। তারপর, বিস্মৃত প্রেমিকার কথা
ভেবে, দাগলাগা জীর্ণ পাতলুন পরিপাটি করে জড়িয়ে নিয়েছে তার
অমলিন দেহে।

আমরা হয়ত এভাবেই অরণ্যের সুগভীরে কোণে হেঁটে চলছিলাম
আগামীকে অতিক্রম করে আরো কিছু বেশি পান করার মায়াবী
নেশায়। দুহাত নাড়িয়ে, ভেঙচি কেটে,  সেই আগামী নিশ্চিৎ
করছিল আমাদের বিচ্ছেদ। যদিও আমি নিঃশব্দে তোমায় অপহরণ
করতে চেয়েছিলাম। তবু জেনো আমি উৎকণ্ঠিত নই। অবশেষে,
আমার বিষাক্ত নখ ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে আমারই হৃৎপিন্ডের 
 নরম চাদরে। আমি আবিষ্কার করতে চাই স্বেচ্ছামৃত্যুর সুখ। আমি
যেন অবিন্যস্ত হয়ে যাই যখন সে আলোর কথা বলে রাত্রির কাছে, 
যখন অজাতশত্রু মেঘ তার ভয়ঙ্কর ছায়ার আড়ালে গল্প করে চাঁদের
সাথে,, কিংবা যখন তুমি তোমার বিবাহিত রাতের একান্ত মুহূর্তগুলি
তুলে ধরো আমার সামনে দ্বিধাহীন ভাবে। অথচ আমার ইন্দ্রিয় সাড়া
দেয়না, কিংবা হয়ত দিতে পারে না। এমনকি মুখোশের আড়ালেও
ওরা জাগ্রত হয় না।


আমি কিছু দুর্বোধ্য নামের লাল, কালো ফলের ঝোপ থেকে উঠে দাঁড়াই।
তারপর স্যাঁতসেঁতে  পশ্চাৎদেশ শুকিয়ে নিতে নিতে আবার মদে ডুবে
যাই। আমি ক্রমাগত নিজেকে ভাঙতে থাকি। যদিও জানি কালের অসুখ
আমাদের নিকট হতে দেবেনা, তবুও ওরা আমাদের অদৃশ্য হতে সাহায্য
করে অনেকটা রাত্রির অন্ধকারে কালো বস্ত্র পরিহিতের মতন। আমি
আবর্তিত পৃথিবীর মাটি আঁকড়ে ধ’রে  শুয়ে থাকি। আমি কাঁদতে
থাকি এক আবর্তিত পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ তীব্র আকর্ষণে।

ড্রিমস(স্বপ্ন)
ল্যাংস্টন হিউস
অনুবাদ: প্রত্যূষ  কান্তি কর্মকার

স্বপ্নগুলো আগলে রেখো,
স্বপ্ন যেন হারায় না কক্ষনো 
স্বপ্নবিহীন জীবন দিশাহারা 
ডানাভাঙা পাখির মতই,জানো?

স্বপ্নগুলো জড়িয়ে ধরো জোরে,
স্বপ্ন যদি হারিয়ে ফেলো তুমি-
রুক্ষ কঠিন বাস্তবেরই মত

উষর হবে জীবনযাপন জমি। 



বন্দী পাখি(কেজড বার্ড)
মায়া এঙ্গেলো(মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)
 অনুবাদঃশ্যামশ্রী রায় কর্মকার

স্বাধীন পাখি লাফ দিল ঐ
মুক্ত হাওয়ার পিঠে
ভাসতে ভাসতে পৌঁছে গেল
স্রোতের সীমানায়
ডুবিয়ে দিয়ে পাখনাদুটি
সূর্য আগুন রঙে
ছিনিয়ে নিল আকাশ মালিকানা।

বন্দী পাখি দৃপ্ত পায়ে
হাঁটল খাঁচা জুড়ে
গরাদগুলো আটকেছে তার
দৃষ্টিগাড়ীর পথ
পাখনা জুড়ে বাঁধন আঁটা
পায়ে লোহার বেড়ি
অবাধ কণ্ঠে তবুও সপ্ত স্বর।

বন্দী পাখি গাইছে এখন
বুক কাঁপানো সুরে
অজানা সব দেশের কথা
দীর্ঘ যে তার শ্বাস
সুরের খেলা পৌঁছে গেছে
দূর পাহাড়ের দেশে
পাখির গলায় শুনছে সবাই
শিকল ছেঁড়ার গান।

ভাবল পাখি ভাবল এবার এক পশলা হাওয়া
আয়ন বাতাস মিলিয়ে গেল দুঃখী গাছের ফাঁকে
পৃথুল পোকা বসল এসে সবুজ রোদের ঘাসে
আকাশপটের দলিল জুড়ে সেই পাখিটার নাম।

বন্দী পাখির স্বপ্ন ঘুমায় কোন কবরের নীচে
ছায়াটি তার গর্জে ওঠে কোন বিপদের ভয়ে
পাখনা জুড়ে বাঁধন যে তার,পায়ে লোহার বেড়ি
মুক্ত কণ্ঠে গাইছে তবু স্বাধীন হবার গান।

বন্দী পাখি গাইছে এখন
বুক কাঁপানো সুরে
অজানা সব দেশের কথা
দীর্ঘ যে তার শ্বাস
সুরের খেলা পৌঁছে গেছে
দূর পাহাড়ের দেশে
পাখির গলায় শুনছে সবাই
শিকল ছেঁড়ার গান।

Sunday 5 November 2017

সাহিত্য এখন, নভেম্বর প্রথম পক্ষ


সম্পাদকীয়

এখন কার্তিক মাস। হাওয়ায় হিমেল গন্ধ ভেসে আসছে। গ্রামবাংলার ভরন্ত বুকে  ধানগাছের সারি আমার আপনার ঘরের সন্তানের মতই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে কৈশোরের ঔৎসুক্যে আর কোমল দৃপ্ততায়। মানুষের মনে নতুন সাধ, নতুন আশা ভরসা। 'সাহিত্য এখন' পাক্ষিক অনলাইন পত্রিকা হিসাবে পা বাড়াবে, এমন একটা আশা সুপ্ত হয়ে ছিল অনেক দিন ধরেই। আজ তাই সে পথে পা বাড়ালাম। ভরসা রাখি আপনাদের পাশে পাব। আমাদের এই পত্রিকা নতুন ধানের মতই উজ্জ্বল আশ্বাস নিয়ে আসুক, এটুকুই প্রার্থনা।


দুটি অনু গল্প
গোপেশ দে

পরিবর্তন
বিরাটের ভেতরে বেশ কিছুদিন ধরে একটা আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করছে ওর বন্ধুরা।বাড়িতে সারাদিন একা একা বসে থাকে ও।দুচারটে গান শোনে তাও আবার রবীন্দ্রসঙ্গীত।অথচ এই সেদিনও হিন্দি ডিজে গানে গা ভাসিয়ে দিতো।এই পরিবর্তন বাড়ির লোককেও কিছুটা চমকে দিয়েছে।গৌরব প্রায়ই ওর বাড়িতে আসে।বিকেলে বেরুতে বলে।ক্লাবে ক্যারাম খেলার জন্য আসতে বলে,রাতে মদের জলসা।কোনো কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছেনা ও।অথচ এই সেদিনও ও বন্ধুদের সাথে হৈ হুল্লোর,রকে বসে মেয়ে দেখলে শিটি, রাতে ভদকা,রামে মাতোয়ারা,উৎসর বাইকে করে অনেকদূরে চরুইভাতি করেছে।বন্ধুদের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।শুধু একটি কাজ ও খুব মন দিয়ে করছে।ওদের পাড়ার দীপ্তিকে ফেসবুকে সকালে গুড মর্নিং রাতে গুড নাইট এসব দিতে ভুলে না ও।ওর ভেতরে এতোটা পরিবর্তনের কারণ অবশ্য আছে।দীপ্তিকে ও যেদিন প্রপোজ করে মেয়েটা এক রাশ ঘৃণা এনে বলে,লজ্জা করেনা আমাকে প্রপোজ করতে।নিজে কতটা খারাপ একবার ভেবে দেখেছো?চায়ের দোকানে বসে মেয়ে দেখলে বাজে আচরণ,শিটি,রাতভর মদ গেলো।আবার আমার পেছনে এখন লেগেছো?এই কথাগুলোর পর ও দীপ্তিকে আর সামনা সামনি বিশেষ কিছু বলার সাহস পায়নি।সেদিন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওসব ছেড়ে দেবে।দীপ্তিকে যে সত্যিকারের ভালোবাসে ও।শুধু ফেসবুকে রোজই একটা কথাই বলে,আমি ওসব খারাপ অভ্যেস ছেড়ে দিয়েছি।আমাকে আর ওসব করতে কখনই দেখবেনা তুমি।সারাদিন বাড়িতেই বসে থাকি।শুধু তোমার ভালোবাসার জন্যই আমি সব কিছু ছাড়তে রাজি আছি।একটিবার বলো ভালোবাসি।এসব ন্যাকা কথায় দীপ্তির মন কিছুতেই গলে না।সে বলে দিয়েছে,কুকুরের লেজ কখনই সোজা হয়না।এভাবেই দিন চলল।কিন্তু একদিন বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছু দূর আসতেই দেখতে পেল দীপ্তি ঠিক ওর সামনে দিয়েই অয়নদার বাইকের পেছনে বসে কোথায় যেন যাচ্ছে।ওর সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।অয়নদা!দীপ্তি কি অয়নদার ব্যাপারখানা জানেনা।আসলে বিরাট অয়নদাকে দুমাস আগে অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে দেখেছে।একদিন না বেশ কিছুদিন।সেও মদ,সিগারেট সবই খায়।আর মেয়ে দেখলে জিভ লকলক করে।কিন্তু দীপ্তি এটা কী করল।রাতে দীপ্তিকে ফেসবুকে অয়নদার প্রসঙ্গটা বলতেই দীপ্তি লিখে দেয়,অয়ন আমার বয়ফ্রেন্ড।তুমি আর আমায় ডিস্টার্ব করবেনা।বিরাট ফেসবুক থেকে বেরিয়ে এসে নিজের মনেই বলে,এই তাহলে সমাজ!কিছুক্ষণ পর ও গৌরবকে ফোন করে বলে,ভদকার পাঁইট রেডি কর।আজ সারারাত আড্ডা হবে,ডিজে হবে।বলেই ফোনটা কেটে দিল আর বিড়বিড় করে বলল,কুকুরের লেজ সত্যিই সোজা হয়না!

এক্কাদোক্কা
সায়নীর ছোট্ট সংসার।একমাত্র ছেলে বয়স ১০ ক্লাস ফাইভে পড়ে।বর মাল্টিন্যাশনাল জব করে।ওদের বাড়িটি অনেক বনেদিআনা।চারপাশেই ঘর আর মাঝখানে একটা উঠোন সাথে তুলসীমঞ্চ।ওর জা ভাসুর সবাই একই বাড়িতে থাকে।ওর বর নীলাদ্রি চার ভাই।নীলাদ্রি সবার ছোটো।বাকি তিনজনের মেঝজন বিহারে একটা ব্যবসা করে।বাকি দুই দাদা এই বাড়িতেই থাকে।তবে সবাই আলাদাভাবে থাকে।একান্নবর্তী ব্যপারটা নেই।নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি।ভরদুপুরে প্রায় সময়ই একা একা বসে টিভি সিরিয়াল দেখে সায়নী।ছেলে স্কুলে,ছেলের বাবা অফিসে।আজ হঠাৎ দুপুরে লোডশেডিং হওয়ায় ঘরের পেছনের জানলাটা খুলে বসল ও।শীতের দিন।পেছনের জানলা দিয়ে হালকা রোদ এসে পড়ছে।বেশ ভালোই লাগছে।হঠাৎ চোখ গেল দূরের একটা বাড়ির ছাদে।একটা বাচ্চা মেয়ে ছাদের ওপর  কি যেন খেলছে।সায়নী একবার চোখ ফেলেই বুঝে নিল খেলাটা এক্কাদোক্কা।হঠাৎ ওর ভেতর সোনালী স্মৃতি চকচক করে উঠল যেন চোখের সামনে এইচডি পর্দা।সে ও তারসাথে আরো তিন চারটে মেয়ে রাস্তার পাশে দাগ টেনে খেলা শুরু করল।গ্রামের সহজ সাদামাটা রাস্তা।মাটির ওপর আয়তকার দাগ টেনে তারপর ঘরের ভেতরে আড়াআড়িভাবে সরল রেখা টেনে ছয়টি খোপ করে ভাঙা কলসীর চাড়া নিয়ে সেই ছোটোবেলার খেলা।অনেক দিন পর সায়নী নস্টালজিক হয়ে গেল।সত্যি কী আনন্দের দিনই না গেছে ওদের!এখন সবাই যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত।এক্কাদোক্কা খেলা কোনো গ্রামের বাড়ি কি রাস্তায় আর দেখা মেলেনা।সায়নী এখনও একনজরে বাচ্চা মেয়েটির খেলা দেখছে।

অনুগল্প 
অতনু টিকাইৎ


রাজনীতি 

'এতো তাড়াতাড়ি হারামির বাচ্চাগুলো মুখ ফিরিয়ে নেবে ভাবা যায়!' --- বলেই পার্টি অফিসে ঢোকে স্থানীয় যুব নেতা বিপ্লব দাস। স্থানীয় MLA এর ডাকে আজ আলোচনা সভা বসেছে পার্টি অফিসে। সামনেই বিধানসভা ভোট। কিভাবে এই ভোটে জয়লাভ করা যায় তাই এই আলোচনা সভার প্রধান বিষয়। আলোচনায় উপস্থিত MLA সহ স্থানীয় প্রথম সারির কয়েকজন দাপুটে নেতা।
বিপ্লব দাসের এমন উক্তির কারন বর্তমানে স্থানীয় মানুষদের আচার ব‍্যবহার যাতে স্পষ্ট হয় বেশিরভাগ মানুষজন তাদের পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এই পাঁচ বছরের মধ‍্যেই অথচ একটা সময় এই মানুষরাই একত্রিত হয়ে তাদের পার্টিকে বিপুল ভোটে জিতিয়েছিল, পার্টির নেতাদের তাদের হৃদয়ে জায়গা দিয়েছিল।
মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারন অবশ‍্য  স্বয়ং MLA থেকে স্থানীয় নেতা কারুরই অজানা নয়।
যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের পার্টি ক্ষমতায় এসেছিল, যেমন স্থানীয় পাকা রাস্তা, পর্যাপ্ত পানীয় জল, বেকার সমস‍্যা দুরীকরন এর মতো অনেকগুলি স্থানীয় সমস‍্যা তার কোনটারই সুফল পায়নি জনগন।
রাস্তাটা যদিওবা করা হয়েছিল কিন্তু কয়েকমাস এর মধ‍্যেই তা নষ্ট হয়ে যায়, জলের সমস‍্যার কোন সমাধান হয়নি এবং স্থানীয় বেকার যুবকদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। রাগটা আরও চরমে উঠেছে যখন দেখেছে নেতা ঘনিষ্ট যোগ‍্যতা না থাকা ব‍্যক্তিদের চাকরি হয়েছে।
'কিচ্ছু চিন্তা করবেন না দাদা, আমরা আছি তো। কাজ আগের পার্টি'ই বা কি করেছিল তবু তো তারা এতোগুলো বছর ছিল ক্ষমতায়, নেতা মানে কি ভগবান নাকি যে মানুষ যা চাইবে তাই করে দিতে পারবো আমরা, আর এসব মানুষ বোঝে। কিচ্ছু চিন্তা করবেননা। আমরাই আছি, আমরাই থাকবো।' --- এই বলে MLA এর চিন্তা কমানোর চেষ্টা করেন স্থানীয় দাপুটে নেতা অরিন্দম চ‍্যাটার্জ্জী।
পাশের আরেক নেতা এই শুনে বলে ওঠে --- 'দুই পরিস্থিতি এক নয় অরিন্দমদা। ওই পার্টিতে কালু মস্তানরা ছিল, আমাদের পার্টিতে আছে এমন কেউ যারা ভোটের আগের রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ধমক দিয়ে আসবে, ভোট লুটবে? আর ভোট না লুট করে মানুষের ভরসায় ভোট হলে আগের পার্টিও ওতোদিন থাকতোনা আর আমরাও থাকবোনা।
বিশ্বাস করুন বা না করুন বাসুদেবদাদা, এটাই fact।'
কালিপদ দাস ওরফে কালু মস্তান। আগের পার্টির শেষ অস্ত্র ছিল এই কালু। কিন্তু আগেরবার বিধানসভা ভোটে সাধারন মানুষ বর্তমান MLA বাসুদেববাবুর নেতৃত্বে একজোট হয়ে স্থানীয় নেতা ও কালুর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করে। এরজন‍্য বাসুদেববাবুকে কম কাঠ্-খড় পোড়াতে হয়নি। দিনের পর দিন মানুষের মধ‍্যে থেকেছেন, অসুবিধায় পাশে দাঁড়িয়েছেন, মানুষকে বুঝিয়েছেন ঘুরে দাড়ালেই সুদিন নিশ্চিত, আস্থা দিয়েছেন যেমন পাশে রয়েছেন কিন্তু ক্ষমতা না থাকায় চেয়েও করতে পারছেননা অনেক কিছুই, ক্ষমতা পেলেই সেসব কাজ করে দেবেন চুটকি মেরে। মানুষও সেইসময়কার পার্টির নেতাদের এবং সাথে কালু মস্তানদের নানান দুষ্কৃতিমুলক কাজের থেকে রেহাই পেতে পথ খুঁজতে জড়িয়ে ধরেন বাসুদেববাবুকে। জয়লাভ করে বাসুদেববাবুর দল। জয়লাভের সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ব পার্টির বহু স্থানীয় নেতার সাথে কালু মস্তানও ঘরছাড়া। এই পাঁচ বছর কালু কোথায় আছে, কি করছে কেউ জানেনা। স্থানীয় মানুষজন তার ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ভোটের রেজাল্ট বেরোনোর দিন'ই।
তারপর অনেক জল গড়িয়ে গেছে। এক বিধানসভা ভোটের পেরিয়ে আরেক বিধানসভা ভোট এসেছে। মানুষের বিশ্বাস গড়েছে ভেঙেছে। মুখোশ খুলেছে অনেকের। দুরত্ব বেড়েছে বাসুদেববাবুর সাথে মানুষের।
এতোদিন সব ঠিক থাকলেও ভোটের নির্ঘন্ট বাজার সাথে সাথেই কপালে ভাঁজ দীর্ঘ হয়েছে পার্টির স্থানীয় নেতা সহ স্বয়ং MLA এর।
ভাবুক প্রত‍্যেকেই, চিন্তিতও। অবশেষ আলোচনা সভার নীরবতা ভেঙ্গে বাসুদেববাবু জানতে চান --- 'কালু এখন কোথায় থাকে কেউ জানিস?'
'শুনেছিলাম ওর শ্বশুরবাড়ির গ্রামে ঘর বানিয়ে থাকছে।' --- উত্তর আসে।
---- 'ওকে বল গিয়ে বাসুদেবদা ডেকেছে। দরকার আছে।'


কবিতা 

প্রবেশ নিষেধ
দেবাশীষ সান্যাল

পদ্মা কিংবা গঙ্গা
ঢাকা থেকে কোলকাতা
কোথাও তোমার চাকরী নেই যুবক!

কাঁধে বন্দুক
পশ্চাতে ১৪ প্ল্যাটুন তীরন্দাজ
রাষ্ট্রনায়ক এখন দেশ শাসনে বিভোর।
ওখানে তোমার প্রবেশ নিষেধ!
যতই চাও না স্বীকৃতি
বেকারত্বের অভিশাপ
তোমার পিঠে শতাব্দীর দগদগে ঘা হে যুবক!
যতই তোমার চোখে জাগুক বিস্ময়।
জেনে রেখো
এই জনমে তোমাকেই বেঁধে রেখে দেবে
বিপুল কংকালসার দেহ!
তোমার চেতনার দৈন্যতায়
কখনোই জেগে উঠবে না
পথভ্রষ্ট মহাকাল!
হায় অমানিশা কৃষ্ণপক্ষ
তোমাকে আর কে শেখাবে বলো
কার্ল মার্ক্সের অ আ ক খ?




নিবিড়  থেকে থেকে নির্জনে
পিনাকী দত্তগুপ্ত

একা থাকার উপহার তুমি ফিরিয়ে নিয়েছো
অতঃপর। আমি প্রতিবাদ করিনি; কারণ,
তুমি জানতে, যত কাছে আসবো প্রতিদিন,
ততটাই একা হয়ে যাবো দুইজনে। নির্জনে ।

রাতের অন্ধকারে ছায়া মাখে হেমন্তের বক।
ঝাপসা কুয়াশা নামে অবসন্ন আমনের মাঠে।
অচেনা নারীর খোঁজে ঝরে পড়ে চেনা লুব্ধক;
দীর্ঘশ্বাস জমে শেষ প্রহরের খেয়া-ঘাটে।

তবুও যখন তুমি ফিরিয়ে নিয়েছো তানপুরা,
জানাইনি দাবি, জানি ওই সুর বাজবেনা আর।
কারণ আমি জানতাম, আমরা ঠিক ততটাই
দূরে সরে যাচ্ছি প্রতদিন, যতটা নিবিড় হয়েছি
“চেতনে কিংবা অচেতনে”।


ফিনিক্স পাখি
মতিউল ইসলাম

"ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচি-
ন্নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে" ||

ফিনিক্স পাখির ঠোঁটে এক টুকরো আগুন,
নতুন জীবনের জন্য মৃত্যু চাই,
পোড়া অস্থি আর বাসস্থানের মধ্যে থেকে
জন্ম নেবে নবজাতক.
চলো পবিত্র হওয়ার জন্য
আগুন জ্বালি,
পুড়ে যাক বাক্সবন্দী অহং,
দিগন্ত বিস্তৃত আমিত্ব,
চলো পুড়িয়ে ফেলি লালসার বীজ.
যমদূত আসার আগেই
আত্মায় আগুন দিই,
যমদূতের বিস্ফারিত চোখের সামনে-
নগণ্য মানুষ থেকে চলো
ফিনিক্স পাখি হয়ে যাই.

মিছিল
বিশ্বজিৎ মাইতি

পৃথিবীর ব্যাস বরাবর চলো আমরা মোমবাতি মিছিল করি-
জানি অন্ধকারে শুয়ে আছে আমাদের আত্মীয় স্বজন তবু
কুচকাওয়াজ থামাও প্রিয়তম
যুদ্ধ থেমে গেছে,
আমি দিয়ে এসেছি একশত গোলাপের চারা
যুদ্ধবাজের হাতে।
চলো এবার ভোরের রোদে ডুব দিয়ে আসি,
দিগন্তে মুখোমুখি বসব এসে আমরা
তারপর,
কে আছো কাঁটাতার গুটিয়ে নাও-
এখুনি মাটি ভেদ করে জন্ম নেবে উদ্ভিদ,
রঙচটা কফিনের পাশে।

 ক্যানভাস
সুশান্ত ভট্টাচার্য 

 উকুন এক প্রাণী বিশেষ

চুলের গভীরে
দ্রুত ফেলে শ্বাস

আমার ঝাঁকড়া চুল
আলতো চিরুণী চালাই

উকুন কি কবির বাহন
জল রঙে যাকে আঁকতিস।


যাবো ভেবে  
প্রত্যূষ কান্তি কর্মকার  

যাবো ভেবে যেতে পারিনি এখনও
যাওয়া মানে সমূহ অন্ধকার
স্তব্ধ হয়েছে সব তরবারি
বাঁচা মরা সনাতন ঘর বার
তরল হাওয়ায় ভেসেছে সব গান
আগুনের পরিপাটি সাধনার ভোর
বেঁচে থাকা ভেবে ছুঁয়ে গেছি যত মূল
তার সবটাই শুধু ঘন হয়ে থাকা ঘোর
রাত্রি নিবিড় হলে জোনাকিরা কথা বলে
আলোর বিন্দু প্রান্তরে যায় ভেসে
শরীর থেকে ঝরে পড়ে যায় বিপন্নতার পালক
আগুন শিখর ছাইয়ে ডোবে অবশেষে
মুঠোয় থাকা লাভার বিচ্ছুরণ
টেবিলের কোণে মাথা নুয়ে পড়ে আছে
ভুলে গেছি তার আপামর প্রবণতা,
কুহকের চোখ সংকেতে কাছে ডাকে


অক্ষর লিখি চল
শ্যামশ্রী রায় কর্মকার

আঁকড়ে ধরেছি স্মৃতির দরজাখানা 
পুরনো সময় হাসছে সকৌতুক 
অবাক হচ্ছ? তোমারও কি আছে জানা 
কোন দিকে যাবে জীবনের অভিমুখ? 

ভাতের থালায় জ্যোৎস্না ফুটতে দেখি 
খালের শরীরে ভাসে রূপবতী মাছ 
কিভাবে লিখব এইসব ভালোলাগা 
কিভাবে লিখব এত স্নেহময়ী গাছ?

আরও কিছু আছে এসময়কার কথা 
সব কথা নয় বৃষ্টি রৌদ্র মেঘ 
আরও কিছু আছে লজ্জিত শব্দাদি 
বোবা চীৎকার ঝলসানো উদ্বেগ 

নতুন কবিতা পাশ ফিরে শুয়ে আছে 
পুরনো কবিতা গায়ে লিখে দেয় ঋণ 
যেসব দশক আঁকড়ে ধরেছি আমি 
খুন হয়ে গেছে তাদের সোনালি দিন 

অক্ষর লিখি বাঁধভাঙা বিন্যাসে 
অক্ষর লিখি আগুন এবং জল 
ফুরিয়ে যাচ্ছে যেসব শিশু ও পাখী 
আজ সেইসব অক্ষর লিখি চল।