Showing posts with label কবিতা. Show all posts
Showing posts with label কবিতা. Show all posts

Wednesday 28 February 2024

নিলয় নন্দী

 



কান্ট্রি রোড





জানি না, ফিরছি কার কাছে?
কার জন্য এই ভর সন্ধেবেলা দু'হাত ছড়িয়ে
পেরিয়ে যাচ্ছি জেব্রা ক্রসিং

তাকে চিনি? চিনতাম?
সে-ও বুঝি নদী আঁকে! শহর ছাড়িয়ে বুড়ো বট
ভবঘুরে গিটারের গায়ে থেমে থাকা ট্রাম
খুচরো পয়সা হারানো বাজার সিসিটিভি চোখ
টুপি খুলে বসে আছি প্রিয়তমা ফ্লেক্স
কেউ এসে দিয়ে যায় গান্ধী রুপি, চেরিফুল
ভুলে যাওয়া বাসরুটে পড়ে থাকে অস্তমিত ছায়া
বিকেল ফিরবে কার কাছে?

যতসব দাড়িকমা, দু একটি বিস্ময়
আমি জানালা খুলে দেখি...
নদী পাখি নারী মিছিলের প্রথম পতাকা
ফার্মহাউসের মোড়ে বসন্তের প্রিল্যুড
না বলা কথোপকথন বা নেহাতই চ্যাটজিপিটি
এসবই অলঙ্কার। ফিরে যাওয়ার বাহানা মাত্র।

"টেক মি হোম, কান্ট্রি রোডস..."

Saturday 24 February 2024

অর্ঘ্য কমল পাত্র

 




সফলতা



প্রত্যেকদিন রাত্রে হাতের শিরা কেটে ফেলি। আর গলগল করে শরীরের রক্ত বেরিয়ে যেতে থাকে। ভাবি, এইবার আত্মহত্যা সফল হবে। কিন্তু পরের সকালে অবশ্যম্ভাবী ঘুম ভাঙেই। এভাবে কিছুদিন যেতে না যেতেই, আমি বুঝতে পারি — মৃত্যু আসলে এক স্বপ্নহীন ঘুম। তাই প্রত্যেক সকালে, এই পুনর্জন্ম পেয়ে, আমার মনে হয়— জন্ম এক সহজলভ্য বস্তু। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী মৃত্যু? অগত্যা প্রত্যেকদিন রাত্রে হাতের শিরা কেটে ফেলি ব্লেড দিয়ে। ভাবি, এইবার, ঠিক এইবার…


Sunday 18 February 2024

শুভঙ্কর দাস

 





সাধারণস্য


ভারাক্রান্ত ঈশ্বর সামান্য কীটের চোখরাঙানিতে
বসতবাটি বিক্রি করে দু'কামরার ফ্ল্যাট পেয়েছেন।
একটা রুমে রেখেছেন মরিচাপড়া যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র। আর একটি রুমে দুটি জানালা, একটা দিয়ে ইশারায় রোজ সূর্য ওঠান আর ডোবান। 
অন্যটির পাশে দাঁড়িয়ে হা-হুতাশ করেন।হাহাকার করেন।কাঁদেন।
তারপর জানালা বন্ধ করে দিয়ে 
শ্বেতপাথরের ওপর ধুলো-পাথর ছড়িয়ে শুয়ে পড়েন। 
চোখের জলে সেইসব ধুলো পাথর গ্রহ-নক্ষত্র হয়ে উঠলে কাপড়-মেলা ছাদে গিয়ে মহাশূন্যে সেসব সেঁটে আসেন।
বড্ড গোলমাল হয়ে যায় আজকাল!
বাজার করতে গিয়ে পয়সা নিতে ভুলে যান।
ফুল তুলতে গিয়ে কয়লার খনিতে গিয়ে পৌঁছান।
রাস্তায় চলতে গিয়ে জুতো ছিঁড়ে যায়,কাঁধের ব্যাগ হতে নিয়তির কাগজপত্র সব রাস্তায় পড়ে যায়!

এইভাবে হেঁটে হেঁটে ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন,ঘুমিয়ে পড়েন,তখন ভোররাত... 

শুধু অস্ত্রগুলো জেগে ওঠে,যেভাবে অগ্ন্যুৎপাত...

Friday 16 February 2024

সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়

 



লেখারা যখন পাল্টে যায়



প্রতিটা পর্বের পর নতুন অধ্যায়ে 

অভিজ্ঞতা বদলে দেয় ভাষা।

এ কি স্বঘোষিত মৃত্যুঘোষণা? 


ছটফট করে ধূসরতা,

রোদে ভেজা নিরীহ দুপুর 

ছেঁড়া ঘুড়ি হয়ে গেঁথে আছে।

পর্দার ফুটোয় অপেক্ষা চোখ !


বন্ধ দরজায় টোকা পড়ল?

সাতজন্মের ডাক-

মার্চ শেষ হতে চায় না আর,

আশ্চর্য ফুল হয়ে ফোটে নির্বাক সন্ধেরা। 


ভালোবাসা মরে গেলে যুদ্ধ বাধবে যে…

তুমি আছো তাই কৃষ্ণচূড়ায় ছেয়ে আছে পথ,

কত শান্তি চারদিকে,

কবিতা লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়েছে যেন কোনও কবি!


 

Thursday 15 February 2024

তিলোত্তমা বসু

 



হলুদ পাতা  


বয়স আমাকে এখানে এনেছে 
অস্ত যাচ্ছি ধীরে খুব ধীরে
পৃথিবীর গলা জড়িয়ে ধরেছি 
নরম আবেগে 

এই যে শুনছি ‘ভজ গোবিন্দম্ ’
সর্বগানন্দের কন্ঠে এবং ডুবে আছি খুব !
শ্লোক-পথ ধরে শঙ্কর বুঝি স্বয়ং প্রকট 
মনের গুহায় , হাতে বরাভয়

প্রেম তার রঙ বদলে দিয়েছে
থৈ থৈ করি দারুণ জোয়ারে 
কি যেন কী মায়া টেনে রাখে 
গাঢ় …

‘নির্বাসনা’ শব্দটিকে এত ভালো লাগে !

মেঘ উড়ে আসে 
ঝিঁঝিঁপোকা ডাকে …

Tuesday 13 February 2024

রূপক চট্টোপাধ্যায়

 

 

 
কালান্তরে 
 


কালান্তরে যাই। 
পিছনে পড়ে থাকে সংসারের ঝুঁকি নিয়ে মধ্যবিত্ত কঙ্কাল। যার নখের হাড়ে এখনও 
রোহিণী নক্ষত্র জ্বালানো নাকছাবি। বর্ণময়!

মাথায় বটের চারা চাগিয়ে তুলেছে প্রাগৈতিহাসিক। 
ফাটলে ফাটলে সরীসৃপ ফণায় বিষ জন্মায়,
হেসে ওঠেন নস্ট্রাদামুস!

দুই হাতের তালুতে ভ্রমের মেঘ,
শ্রেণিবিন্যাস ভুলে যাওয়া আঙুল 
আবার একত্রিত হতে চায়।
নাব্যতার বয়স কই?

জগন্ময়ী হোটেলের বেড়ে ওঠা ভাতেই
তিনটে পথশিশু ঐশ্বরিক। যুদ্ধের শঙ্খধ্বনির অপেক্ষায়। তারাও স্থির হয়ে আছে। কৃপানিধি! 

কালান্তর কোথায়?
এই জন্মদোষে ফেরি করি আত্মবিলাপ শুধুই



Sunday 11 February 2024

দেশিক হাজরার কবিতা

 



জ্ঞানেনং গচ্ছামি 


যদি না পায় সে তোমার দেখা যদি না পায় সে তোমার

স্পর্শ। সূর্য প্রণাম সরে বাগিয়ে কাছা দৌড়াতে থাকে 

এদিক ওদিক একা। চুপিসারে যাও, বসো তারই পাশে 

বলো— কী কথা সাজিয়েছ মনে? এরপরে, ইষৎ মুচকি 

হেসে, তাঁর‌ কাঁধে হাত রেখে অতি কিছুক্ষণ থেমে, বলো 

গিয়েছিলে অন্ধকারে, গন্ধ গলির কোনে? তোমায় পেয়ে 

কলরবে বলিলো ধরো, সে সর্বত্র সব জানে। ভয় পেয়ো 

না ধীর করো মন, এ গলি তাঁর মনের মতো নয় এত 

চঞ্চল। বাহ্বা দাও তুলে ধরো আকাশে, উড়িতে দাও 

তাহাকে বলাকার পিছে পিছে। কানের কাছে চুপিসারে 

বলো তুমি যা জানো আমি তা জানিনেকো। মিটে গেলে 

সব, শীতল বাতাসের মতো শান্ত। ছাদ থেকে নেমে একা 

সে একান্তে আরাম কেদারার কোলে, শিশু ঘুমে মত্ত।

ঠিক এমনই সময় ফিরিয়া আসিতে হয় নিজস্থানে...

Thursday 8 February 2024

অমিতাভ দাশশর্মার কবিতা

 



চলে গেলে! যাও।

দায়ভার তুলে নাও।
তারপর সীমা এসে
কী ভীষণ ভালোবেসে 
জড়িয়ে ধরবে।
আকাশ মরবে।
বাণ্ডাকুয়া নদীগুলো
মনভুলো।
বদলাবে খাত
অকস্মাৎ ।
তোমার সীমানা ঘিরে
কাঁটাঝোপ ফিরে ফিরে
জোনাক জ্বালাবে।
সে আলোর ইশারায়
ভারি জ্বর গায়
আসবে কি, টলেটলে?
পায়ে দলে
সুগন্ধি ঘাস,
যা বারোমাস
ফুটে থাকে।
মাখে
উপেক্ষা দলন।
উচাটন মন
ঘাস ফেলে উড়ে যায়,
পায়,
প্রিয় পরমের গান?
নাকি শুনশান
ঘেরাটোপে
সীমায়িত খোপে
থেকে যাবে বরাবর?
আমার এ ঘর
আজীবন ভর
সাজিয়ে রাখব।
মাখব
স্মৃতি-ধুলো ক্রমাগত
দিন যাবে মত
উড়ে উড়ে
ঘুরে ঘুরে
পরতে পরতে জমে
হৃদয়ের ওমে
হয়ে যাবে প্রস্তর।
আমার সাজানো ঘর
আদরে রাখবে তাকে।
তারপর, কোনো এক ফাঁকে
তুলি ছেড়ে গেছে যাকে

সেই শিল্পীর

স্মৃতি ভিড়
তুলে দেবে তার হাতে
একই সাথে
ছেনি ও হাতুড়ি।
চাঁদবুড়ি
হেসে হেসে
ভালোবেসে
ব'লে দেবে কানে-কানে
"ইজেল-প্যালেট, তুলি ছেড়ে যাওয়া মানে
শিল্পীরা জানে।
ঐ স্মৃতি-পাথরের বুকে
হাতুড়ি ও ছেনি ঠুকে ঠুকে
ভেঙে ফেল আপনার সীমা,
গ'ড়ে তোল পাথর-প্রতিমা"…

Friday 2 February 2024

সোমা দত্তের কবিতা

 

 


নবজাগরণ

  

 

বলেছ অসুর, বলেছ রাক্ষস, বলেছ প্রেত, কালো নিগার–

সেই আঘাতের গর্ত ভরে, হিরণ্ময় আলো জ্বেলে,

হত্যার মন্ত্র গেয়েছ জন্ম থেকে জন্মান্তরে,

এক রং থেকে বর্ণাঢ্য প্রাকৃতিক দৃষ্টিহীনতায়।  

ভুলে গেছ নগর সভ্যতার আদিরস তাণ্ডব...!

অন্ধকার চিরে আলো জালিয়েছ আর্যসভ্যতার...!

ধ্বংসের আস্ফালনে স্ফীত রাজা তুমি

রক্তপথে বিজয়তোরন উড়িয়েছে তোমার মধুযামিনী।

কলিঙ্গফলকে তোমার বিলাপ শুনেছি রেশমের সংলাপে,

চাঁড়াল হৃদয় থেকে সরে গেছে চারণের গান–  

তবু ভালবাসা গাছের বুকে চাঁদের আলোর মতন জ'মে,

তবু ভালবাসা ক্ষীণ হাতে মায়ের শরীর ঢেকেছে কাপড়ে,

তবু ভালোবাসা পণ রাখে মুখোশের মুখটিকে দেবে শেয়ালের মুখে–

অতিগূঢ় লাঞ্ছনায় রক্তাক্ত শরীরে, শুরু হবে কৃষিকাজ।

 

 

Saturday 4 November 2023

সৌ র ভ ব র্ধ ন

 




অতিশিখা

ধরো, এমন দাঁড়িয়ে আছি পাহাড়-প্রমাণ হয়ে!
মাটির মর্মোদ্ধার ----- সেও তো নজিরবর্জিত, স্বল্পপ্রাণ
ছেয়ে গেছে রূপ, তবু নিবেদন, অন্ধেতর পুষ্পের ন্যায়
এই বুঝি, অতিশিখা জ্বলে গেলো জীবনে...

একদিন ভালোবাসায়, ক্ষণকাল দীপ্ত মেধায়
আবদ্ধ পাগল হয়েছে গাছটা, এতো বাষ্পায়ন!
পরিচয় সেখানে বাহুল্য, বেদনা সেখানে উন্মুক্ত তার 
সশব্দ ঝরনার মতো অলকাবলি হৃদয়
কাঁপে, কাঁপে আর বিপাকে পড়ে যায় পড়ন্ত যুবক
তাকে ভালোবাসো, তার ভাবনার বীজ বড় গূঢ়
তার স্তনে ঠোঁট রেখে দ্যাখো 
সে পুরুষ এলোমেলো কিনা
কোন তলানিতে অধঃক্ষিপ্ত হয়ে সে আশায় আছে
এই বুঝি অতিশিখা ফ'লে গেলো জীবনে... 




Thursday 2 November 2023

অমিতাভ দাশশর্মা

 



এলোমেলো 


মধ্যবর্তী আমাদের

তিরিশটি বছরের

ট্র্যাজেডি, তার

বিপুল ডানার

ঝাপটায়, মরু দ্বার খুলে,

 ধুলোঝড় তুলে

ঢেকে দিয়েদিল পথ,

আর--- ছোঁয়ার শপথ।

অনুভব--- শুধু অনুভবে

অরবে 

অনর্গল করে চৈতন্যের দ্বার।

তোমার --- আমার


লাবন্যের সংসারে

শিশু ও কিশোরে

ছিল সোনাঝরা

মধুক্ষরা 

দিন ও রজনী।

কিন্তু, প্রেমমণি?

খুঁজে ফিরে ফিরে যাকে

বাতুলতা পাকে

জড়িয়েছি নিজেকে নিজেই,

তার নাম গন্ধ নেই

সংসার লাবন্যে।

এ জন অরন্যে

নিজের জন্যে 

বাঁচা খুব প্রয়োজন।

তাই ,

তোমাকে পাবার এত

আয়োজন।


বুঝলে না!

ফেলে দিলে!

বিশ্বাস হয় না।

উপেক্ষা গয়না

যত পরাও আমাকে---

বাঁধো পাকে পাকে

প্রেমের বাঁধনে।

জানে

মন , যথাযথ জানে,

প্রেম কাকে বলে, তার মানে।






Thursday 3 August 2023

কাজরী বসুর কবিতা

 





চিঠি আর গিনি


খুলি না সে এঁটে রাখা মুখ।
সত্যি তো চিঠি নয়,যেহেতু জানি
তুমি ভাবো ছুঁড়ে দেওয়াটুকু খানদানি
জলসাঘরের মতো ঠিক
মোহর গিনি ও কিছু পারিপার্শ্বিক... 
আজন্ম ভাঁজে ভাঁজে ধুকপুক আর ধুকপুক।

ভাবি তাই,যদি
পরিচয় বদলেই নামহীন নদী...
নদীরাই যেতে পারে বয়ে
ফুলপ্রুফ গর্ভিণী বেনিয়া না হয়ে।

পাশাপাশি আরও কথা, বাদবাকি সব
বলে ফেলি যতটুকু বলা সম্ভব...
তোমার আর তোমাদের ক্ষয়
জলসাঘরের মতো হয়।
হারিয়েছে দু হাতের জোর
ছুঁড়ে দেওয়া সোনা রঙ গিনি ও মোহর।

খামেরাও উড়ে যায় ফের
আজও বুঝি পথ চেনে ডাকবাক্সের...
অথচ সে জরা আর খরা...
ইদানীং অদৃশ্য  ডাকহরকরা। 

চিঠি আসে,ফের ফিরে যায়।
বদল লিখেছে তার নাম ঠিকানায়।

Sunday 16 April 2023

মিঠুন চক্রবর্তীর কবিতা

 





একটি স্বপ্ন এবং বসন্ত


অনুপমা, শ্বাপদের নখে তোলপাড় হয়ে ওঠা
রাতের  সেই লালডিহি অরণ্যের ঘন বুকে 
যেমন করে জেগে ছিল পূর্ণিমার নীল চাঁদ

তেমনি কাল সারারাত তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি....

এই ভরা গ্রীষ্মের দুপুরেও তাই
শুকনো ঠোঁটের পাতাতে আমার
                         লেগে আছে জ্যোৎস্নার মায়া স্বাদ

আমি তো গাছের কাছে শিখেছি
শীতের রুক্ষতা আর গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যিখানে
বুকের ভেতর যত্নে ভাঁজ করে রাখা একচিলতে বসন্ত
সবারই থাকে, আমারও আছে.... আমারও আছে....

কেবল সব জায়গার মাটিতে রাঙা পলাশ ফোটে না। 



Friday 7 April 2023

দেবদাস রজকের কবিতা

 



প্রেত




আজ কি প্রেতেদের সম্ভাষণ হবে?

আমি এসেছি ভোররাত্রে হৃদয় অকেজো হয়ে।


দেহ এখনও কবরের নিচে, শিয়াল কুকুরে খায়নি সবটা

মায়া নেই কোনও, যাক ছিঁড়ে পিত্তথলি, গুঁড়োহাড়, যাক সব


আজ কি প্রেতেদের সম্ভাষণ হবে? 

আমি এসেছি ভোররাত্রে নিজের এলাকায় 


শুধু দেখি দূরে বহুদূরে কেউ টেবিলল্যাম্প জ্বালিয়ে

কবিতা লিখছে যার আয়নার ভেতর কোনও দেহ নেই 

Monday 6 March 2023

সুবিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

 




হড়কা বান


তোকে দেখলেই বোঝা যায় 

তুই অচানক বৃষ্টি নামাস পাহাড়ভাসি ঝোরায়।


মেঘ! 


ভাই প্লিজ রাগ কর আর ঝাল

এখনই সটান ভারত ভেঙে ভাগ কর দেখি

কন্যাকুমারিকার থেকে ভোপাল।




বিমান কুমার মৈত্র

 



বসন্ত বন্দনা

মাত্র কয়েকটি বৌদ্ধিক শব্দের 
দরোজায় সারারাত কড়া নাড়া
এক টুকরো সাদা রঙ নিয়ে 
হে আমার আজন্ম লালিত 
ক্ষুধার্ত বসন্তবন্দনা
তোমার অ-বন্দিত আকাঙ্খার

নিবেদন ---ওই দেখো  
ক্রমশ নির্বাণগামী নিস্পৃহ গ্রাহক 
এখনও তোমার জন্য 
ভিখারি-ক্ষুধায় অস্থির 
তোমার বেলাগাম প্রত্যঙ্গগুলিকে 
এখানে দাঁড়াতে বল 

হে বসন্ত, তুমি না দাঁড়ালে 
সেই আরবাঁক কথাগুলির 
চতুর্মাত্রিক দর্পণবিদ্ধ বর্ণমালারা 
উন্মোচিত হবে না কখনও।


Thursday 17 November 2022

subodh sarkar সুবোধ সরকার

 


 
সুবোধ সরকার
 
তিন ইঁটের উনুন

রাজা রামমোহন সরণি ঠিক যেখানে 
ট্রামলাইনে গিয়ে পড়ছে
তার ঠিক আগে
মেয়েটি থাকে।

মেয়েটির কাঁখে গত দশ বছর
আমি সবসময় 
একটি দুধের বাচ্চাকে দেখেছি। 

তার চারটে দুরন্ত ছেলেমেয়ে  
দিনে একশবার 
রাস্তার এপার ওপার করছে
একটাও চাপা পড়েনি। 

সন্ধ্যা আটটায় তাদের ডিনার। 
তিন ইঁটের উনুনে ভাত ফুটছে
তিন ইঁটের উনুনে মসুর ডাল ফুটছে
কী অপূর্ব তার গন্ধ।পুজো আসছে।

শুধু নিজের চার দুরন্তকে নিয়ে নয়
ফুটপাথের সমস্ত ছেলেমেয়েদের বসিয়ে যে মা আজ
খাওয়াচ্ছে 

সেই মা রাজা রামমোহনের মা 
সেই মায়ের নাম দুর্গা।

পবিত্র সরকার

 

 


পবিত্র সরকার 

ভুল
 

হেঁটেছি কত নিঝুম পথে, 
গুনিনি দিন-রাত;
স্বপ্ন ছুঁতে চেয়েছি কিছু, 
বাড়িয়ে দিয়ে হাত।
দু-পাশে ফুটে ছিল সে বুঝি 
নয়নতারা ফুল, 
তাদের নমস্কার জানাতে
করিনি কোনো ভুল। 
দেখিনি তবু পাতায়, মূলে
অরণ্যে সব গাছে
পৃথিবী-জোড়া সন্ত্রাসের 
রক্ত লেগে আছে।

শ্যামলকান্তি দাশ

 

 


 

 

 

 শ্যামলকান্তি দাশের কবিতা 



পোকা

ছাত্রাবস্থায় হস্টেলে একটা পোকা মেরেছিলাম
গোলাপি-নীলের মিশেলে অনির্বচনীয় একটা পোকা
কীটপতঙ্গের জগতে এরকম পোকা কোনোদিন দেখিনি
সেই হিসেবে এটা একটা বিরল অভিজ্ঞতা বটে

এত এত বছর বাদে মরে যাওয়া সেই পোকাটা 
আবার জেগে উঠেছে
আমার শয়নকক্ষের চারপাশে বনবন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে
ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের মধ্যে মুহুর্মুহু আমাকে ভয় দেখাচ্ছে
দিগন্তের ওপারে উড়িয়ে দেওয়ার ভয়
ওই যে যেখানে জমাট বেঁধে আছে প্রকৃতির শ্যামলিমা,
ধোঁয়ার পুঞ্জ, কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে মেঘ,
ছ্যাদরা ভ্যাদরা হয়ে গেছে আকাশ- ওখানে
একবার আটকে গেলে আর কোনোদিন বেরোতে পারব না
পোকাটাকে তাচ্ছিল্য করলে সে আমার দিকে তেড়ে আসে
অনুশোচনা করলে সে আমার দিকে কঠিন চোখে তাকায়
মিলনের সময় আমার সমস্ত মনোযোগ কেড়ে নেয়
আমার শিহরণ আর সুখানুভূতিকে সে কিছুতেই
প্রকাশ করতে দেয় না
আমার দম আটকে যায়, আমরা এই অবরুদ্ধ ঘর থেকে
কিছুতেই বেরোতে পারি না। 

সেই মরে যাওয়া গোলাপি-নীল পোকাটা মশারির ভিতর
আমাকে সারারাত জ্বালিয়ে মারে
উড়িয়ে দেওয়ার মারাত্মক ভয় দেখায়
হায় রে অর্গলবদ্ধ জীবন, আমি আর কোনোদিনই
পোকার চোখ এড়িয়ে অন্য কোনো হস্টেলে 
পালাতে পারব না। 






Sunday 1 August 2021

তুলসীদাস ভট্টাচার্য, কবিতা,

 




কাগজের নৌকা


কাগজের নৌকা ছেড়ে দিয়েছি নদীর বুকে 
সে জানে ঢেউয়ের মতই ক্ষণস্থায়ী নৌকাবিহার।

ভিজতে ভিজতে যখন ভারী হয়ে ওঠে পাটাতনের খোল
মাস্তুলও ডুবে যায় জলের গভীরে ,
দু-চারটে বুদ্বুদ্ ওঠে মিলিয়ে যাবার জন্যই 
নদী বয়ে চলে যতদিন ভেজা থাকে উৎসমুখ।

তারপর একদিন নদীকেও হারিয়ে যেতে হয় 
ফেলে রাখে বালির পৃথিবী ।

সবুজ পাতার নিচে ডাহুকের চোখে 
অজানা আশঙ্কার ছবি ।

চাঁদ ঝেড়ে ফেলে সব সোনালি অক্ষর 
কামরাঙা বিকেলে কবির ব্যাকুলতা হাস্যকর।