ড্রাইভার
সেদিন
সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টি l বাজবিজুলি আর দমকা হাওয়ায় ওলট পালট হচ্ছে
গাছগুলো l জৈষ্ঠ্য শেষের দুর্যোগ l উঠোনের সুপুরি গাছ থেকে সপাং করে একটা
বড় হলুদ পাতা এসে পড়ল পাতাবাহার গাছটার উপর l ঝোপ মতো ওই গাছটায়
বুলবুলি বাসা বেঁধেছে l এখন তিন তিনটে বাচ্চা l সবেমাত্র চোখ ফুটেছে l
ফ্যানফ্যানে চামড়ার ভেতর মাংস দেখা যায় l হাড় সম্বল ডানায় ছোট ছোট
কালো লোম l পালক ওঠেনি লেজ ও গজায়নি বিশেষ l
জানালা
দিয়ে রোজ বুলবুলির আনাগোনা দেখত ছোট্ট সুমিত l সেই বাসা বোনা থেকে l
কেমন ঠোঁটে কুটি এনে বাসা বুনেছিল পাখিটা l এখন ঠোঁটে পোকা ধরে এনে
বাচ্চাগুলোকে খাওয়ায় l দেখতে দেখতে অদ্ভুত প্রশ্ন করে সুমিত,
-হ্যাঁ মা, এদের বাবা আসে না কেন ! আকাশের তারা হয়ে গেছে !
-আসে আসে l তুই কি চিনতে পারবি কোনটা মা আর কোনটা বাবা l
-বা রে চিনবো না কেন একটা পাখিই তো আসে খাওয়ায়, উড়ে যায় আবার আসে l ওটাই মা পাখি l
-তোর সাথে এতো বকতে পারি না বাবা l যা পড়তে বোস l সামনে পরীক্ষা l
দুর্যোগে খসে পড়া পাতাটার আড়ালে মা, বাচ্ছা কাউকেই দেখা যাচ্ছে না l প্রচন্ড বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় নুয়ে পড়ছে গাছটা l
- মা, বাচ্চাগুলো মরে যাবে না তো l
-না রে বাবা, ওদের মা আগলে রেখেছে বুকের ভেতর l কিচ্ছু হবে না l
সেই
সুমিত এখন বছর বাইশের l পড়াশুনো বিশেষ হয়ে ওঠেনি l বাবা নিরুদ্দেশ l
কেন আর কোথায় কেউ জানে না l কোন ছেলেবেলায় দেখেছে এক আধবার l এখন আর
জানতেও চায় না l ছোটবেলায় মা'র মুখে শুনেছিল আকাশের তারা হয়ে গেছে l
মনে আছে, সেদিন সুমিতও খুব কেঁদেছিল মায়ের হতভাগ্যের জন্য l
আজও
সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি পড়ছে l ওয়াইপারদুটো পেন্ডুলামের মতো অনবরত মুছে
দিচ্ছে ফ্রন্টগ্লাসের জল l স্টিয়ারিঙে হাত রেখে সামনের ঝাপসা রাস্তায়
সাবধানী নজর l হুটার বাজছে সমানে l লুকিংগ্লাসে ধরা পড়ছে গাড়ির ভেতর দুই
ছেলে মুমুর্ষ মায়ের মুখে এক ভাবে চেয়ে আছে l ছ্যাঁত করে উঠলো বুকটা l
কদিন থেকে তারও মায়ের ধুম জ্বর l বেরনোর সময় বলছিল আজ আর যাসনি খোকা l
শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছে l বেরোনোর ইচ্ছেও ছিল না তবে এম্বুলেন্স
ড্রাইভারের কল এলে উপায় থাকে না l মানু পিসি কে মায়ের কাছে রেখে এসেছে
সুমিত l
আজ থেকে থেকে বড় মনে পড়ছে মায়ের সেই কথা !
"মা আগলে রেখেছে বুকের ভেতর l কিচ্ছু হবে না খোকা l"
No comments:
Post a Comment