বন্ধু
শেষরাতের স্বপ্নে দেখা দিলেন নারায়ণ ।
"অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি থেকে তোমাকে দেখা দিচ্ছি কন্যে ! “
" আমি অবাক। জীবনেও উপোস করিনি। দিব্যি হাসপাতালে রুগী দেখার নাম করে ভেগে , ক্যান্টিনে পরোটা আর আলুর দম খেয়ে , বাড়িতে শাশুড়ি মায়ের কাছে শুকনো রুগ্ন মুখোশ নিয়ে জন্মাষ্টমীর অঞ্জলি দিতে বসেছি। ওদিকে উনি কিন্তু নির্জলা উপোস। এক্কেবারে আমার ড্রাইভার ইউনিস এর মতো ।
“ও ইউনিস , এই রোজার সময় গাড়ি চালাবে- থাক না। কটা দিন ছুটি নাও।"
“আমি তো থুতুও গিলি না দিদি , তবে কেন কাজটা কাড়ছেন ? কাজ না থাকলেই আমার খিদা পাবে।"
চুপ করে ভাবলাম মরেছে , এতো সব নিষ্ঠাবান ভক্ত থাকতেও ভগবান আমার কাছে কেন?
প্রভু , আপনি এসেছেন কী সৌভাগ্য ! কী কী যেন চাইতে হবে দ্রুত মনে করতে লাগলাম । কুমারী অবস্থায় একটা সুবিধে হচ্ছে বর চাই প্রশ্নের উত্তরও - বর চাই । এখন কী চাওয়া যায় ?
মোক্ষম আবদারটা করব ?
প্রভু পৃথিবীকে একদম করোনামুক্ত করুন। সেই আগের মতো।
কিন্তু ওদিকে রোজই বিশেষজ্ঞরা বলে চলেছেন যে আগের মতো জীবন নাকি কিছুতেই হবেনা। জীবাণু অস্ত্র এই নতুন টেক স্যাভি যুগের হাতিয়ার ।
আমার অবশ্য বিশেষজ্ঞদের বিশেষভাবে অজ্ঞ মনে হয়। মানুষ যদি ‘কোভিড পরবর্তী’ যুগে বন্ধুর মতো প্রকৃতি ও স্বজাতিকে নিয়ে বাঁচতে চায় , তাহলে পারবেনা কেন ?
বাস্তবে মানুষ জাতটা এতরকমভাবে ধর্ম , জাত পাতের নিরিখে বিভক্ত , যে সে কি চাইবে আদৌ নতুন করে পৃথিবী গড়তে ? এটাই মূল প্রশ্ন।
জিজ্ঞেস করব কি করব না ভাবতে ভাবতে খেই হারিয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম “আপনি কীসে এলেন ? “
“আলোর গতিবেগেরও আগে এলাম বুঝেছো। ঈশ্বর কণার নাম শোনোনি? গড পার্টিকল !”
আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি । "যাক গে তোমার সাধারণ জ্ঞান দেখছি খুব পুওর । কিস্যু পড়োনা। শোনো , হোয়াটস অ্যাপ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করো আর বচ্চনের পুরনো কওন বনেগা ক্রোড়পতি দেখো । বুঝলে?”
“ কিন্তু ঠাকুর আমি যে অনলাইন ক্যুইজ করি, গুগল করি।"
“উঁহু বৎস্যা , তোমার সবেতেই গণ্ডগোল। টিভি সিরিয়াল কি দেখতেই না একেবারে ? দাদাগিরি দ্যাখো । দিদি নাম্বার ওয়ান । সব শিখে যাবে। এবার বুঝলে?"
আমি উত্তেজিত হয়ে বলে ফেললাম "কিন্তু প্রভু ,আমাকে তাহলে কী বর দেবেন?"
এতক্ষণে নারায়ণ মিষ্টি হাসলেন। বুকটা ধ্বক করে উঠল। যা হ্যান্ডসাম!
"দেবো না। চাইবো । এজন্যই তো এতোটা মহাশূন্য বেয়ে এলাম।"
এরপর যেন বোমা ফাটানোর শব্দ শুনে চমকে উঠলাম !
নারায়ণ গদ্গদ হয়ে বলছেন "প্লিজ , প্রভু বোলো না । আমার প্রোফাইলে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাও । কেউ পাঠায় না জানো .....................আমাকে নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাভিচার সব করে ; কিন্তু বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় না। “
আমি তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে বললাম “মানে ? আপনার কোটি কোটি ভক্ত তবু আপনি একা ? “
“বিশ্বাস করো চৈতন্য চলে গিয়ে সেই থেকে আমি বড়ো একা। লোনলি ।"
চৈতন্য মানে নীলাচলের নিমাই নাকি বাঙালির চৈতন্য ? প্রশ্নটা বেয়াড়াভাবে আমার ঠোঁটে ঝুলে রইল।
তারপর নারায়ণ অস্ফুটে বলে চললেন দিস ইজ কলি......কলি..... বন্ধু নেই কোথাও ....
টুক করে জানলার পর্দা সরিয়ে কে যেন উঁকি মারল।
নারায়ণ বললেন , “কে ওখানে ,যম ? “
তারপর আমার দিকে ফিরে বললেন , তোমাদের অবশ্য প্রত্যেকেরই ইচ্ছে বা অনিচ্ছেতে হোক যমের সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে। হবেই। আমার সে উপায়ও নেই।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নারায়ণ। আর আমি যমকে আমার প্রোফাইল থেকে আনফ্রেন্ড করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করতে লাগলাম।
নারায়ণ ভ্রূভঙ্গী করে বললেন , “উঁহু,
পাসওয়ার্ড না বদলালে হবেনা ।”
“সেটা কী ? “
“ডেডিকেটেড ভালবাসা , ইয়ার! এর কোনও বিকল্প নেই। হতে পারেনা। সব গ্যালাক্সিতেই তাই।”
আমি গাঢ় ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
বেশ ভালো লাগলো। একটা নতুনত্বের স্বাদ পেলাম। অভিনন্দন।
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deleteহাসির মোড়কে জীবনের নীতিকথা। খুব সুন্দর
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deleteদারুন লাগলো...এরকম আরো অনেক চাই কিন্তু..
ReplyDeleteধন্যবাদ । চেষ্টা করব। রম্যরচনা আমার অন্যতম প্রিয় চর্চার বিষয়
Deleteনতুন চিন্তা নতুন ভাবনা.... খুব ভালো লাগলো ।।.... সুজিত সেনগুপ্ত
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deleteবাহ্ । খুব ভালো লাগলো
ReplyDeleteধন্যবাদ স্মরণ
Deleteবাহ্ । খুব ভালো লাগলো
ReplyDeleteExcellent.nice blending of Science, spirituality. Good sense of humour with a good message
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ
DeleteBah daroon
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deleteবেশ ভালো লাগল রচনাশৈলী৷ অন্তর্নিহিত অর্থটাও শিক্ষণীয়৷ খুব সুন্দর অণুগল্প৷
ReplyDeleteধন্যবাদ সুদেষ্ণা
Deleteলক্ষী নির্ঘাত রাত দিন শাহরুখ রিত্বিক দের সাথে chat এ
ReplyDeleteথাকে- বেচারা লোনলি নারায়ন ;) খুব ভাল লাগল দোলন।
ছোট পরিসরে সুন্দর লেখা।
ঠিক বলেছেন। লক্ষ্মী তাই ওদের ঘরে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য
DeleteKhub sundar
ReplyDeleteBhalo.
Password change with 💘
Khub sundar
ReplyDeleteBhalo.
Password change with 💘
Khub sundar
ReplyDeleteBhalo.
Password change with 💘
Thank you
Deleteরম্যরচনার স্বাদ পেলাম । ভালো লেগেছে
ReplyDeleteধন্যবাদ অশেষ।
DeleteKhub bhalo laglo. New idea, excellent.
Deleteগল্প বলায় লেখিকার ধর্মকর্মের ইঙ্গিত পাওয়া গেল!
ReplyDeleteসাধন-ভজন বিনে এমন লেখার রসদ মিলে না যে!
😆 তা বটে। ভক্ত ছাড়া যেমন ভগবানের অস্তিত্ব নেই , রসিক পাঠক ছাড়া লেখকের অস্তিত্বও নেই। ধন্যবাদ
ReplyDeleteআহা,দারুণ লাগলো.. ভিন্ন স্বাদের..
ReplyDeleteধন্যবাদ
DeleteBaah... Besh toh.....
ReplyDeleteধন্যবাদ
ReplyDeleteহেইডা কিন্তু নারান ঠিক কইছে, ডেডিকেটেড ভালোবাসা ক্যাবল যমের সাথেই হয় .... 😂😂😂
ReplyDelete😂 ধইন্যবাদ
Deleteভাল লাগল।
ReplyDeleteধন্যবাদ
DeleteKhub bhalo laglo
ReplyDeleteThank you
Deleteভক্তের দরজায় ভগবান এসে দাঁড়িয়েছেন, এ স্বপ্ন আমিও দেখি। আমার কবিতায় লিখেছি। রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন, স্বর্ণরথে করে এসে ভক্তের দ্বারে তাঁর ভিক্ষে চাওয়ার কথা। আসলে, আমরা তাঁকে যা দিই, তা যে নিজেরাই ফিরে পাই, সেটা ভুলে যাই বারবার। আমাদের মনই ভগবান, মনই শয়তান।অবচেতনে যাকে লালন করব, সেই ফিরে আসবে আমাদের ঘরে।
ReplyDeleteবড় ভালো লিখেছ। ডেডিকেটেড ভালোবাসা নাও– তোমার এই ভক্তের।
Hashtey hashtei onek kichu abar mone koriye dile! Tomar lekhar modhye ekta jadu ache!
ReplyDeleteVery contemporary blending with the past!