Wednesday 7 October 2020

সিলভিয়া প্লাথের কবিতা, অনুবাদ : অশোক কর , সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 

সিলভিয়া প্লাথের কবিতা
অনুবাদ : অশোক কর

সিলভিয়া প্লাথ আমেরিকার উত্তরাধুনিক সাহিত্যধারার বিশিষ্ট কবি, গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক। আধুনিক কাব্যপ্রতিভা ও পাঠকের প্রশংসাধন্য কবি হিসাবে বিংশ শতাব্দীর সাহিত্যধারায় নিজের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সিলভিয়া প্লাথ।  তীব্র হতাশা, উগ্র মানসিক বিকার ও আত্মধ্বংশী মনোবিকলন কবিতায় ব্যাবহার করে উত্তরাধুনিক "কনফেশনাল পোয়েট্রি" এর একজন বিতর্কিত প্রবক্তা কবি হিসাবে বিবেচিত হয়ে ওঠেন। সিলভিয়ার জন্ম ১৯৩২ সালে বোস্টনে, পড়াশুনা করেন আমেরিকার ম্যাসাচুসেটে এবং ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে। তাঁর সহযোগী কবি 'টেড হিউস'কে বিবাহ করেন সিলভিয়া ১৯৫৬ সালে। দুই সন্তানের জন্মের পর পারিবারিক অশান্তির কারনে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয় ১৯৬২ সালে। ব্যাক্তিগত জীবনে সিলভিয়া প্লাথ মানসিক অবদমন রোগাগ্রস্ত ও চিকিৎসাধীনে ছিলেন। কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হবার পর ১৯৬৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ৩০ বছর বয়সে মারা যান আত্মহত্যার মাধ্যমে। তাঁর মৃত্যুর পরে ১৯৮২ সালে প্রকাশিত "কবিতাসমগ্র"এর জন্য আমেরিকার 'পুলিৎজার' পুরস্কার পান সিলভিয়া প্লাথ।

[১] Death & Co.
ডেথ এন্ড কোঃ


দু'জন, নিঃসন্দেহে ওরা দু'জনই।
এখন খুবই স্বাভাবিক বলেই মনে হয় -
একজন, যে চোখ তুলে তাকায়নি কখনো, যার চোখগুলো ঢাকা
আর বিস্ফারিত, ব্লাকি' এর মতো,
তার লোকদেখানো

জন্মদাগ, সেগুলোই তার ট্রেডমার্ক
ছেঁকা, ফোস্কাফাটা জরুল
আব্রুহীন
শকুন গ্রীবা'র তামাটে চামড়ার দলা।
আমি সেই কুৎসিত মাংসপিন্ড। ওর চঞ্চুদুটো

আড়াআড়ি শব্দ করে নড়ে: এখনো ওর হয়ে উঠতে পারিনি আমি।
ও বলে, কি যাচ্ছেতাই ফটোগ্রাফ আমি তুলি।
আমাকে বলে ও, কী মিষ্টি
দেখতে লাগে বাচ্চাদের হাসপাতালের ঐ
বরফ-বাক্সে, একেবারে সাদাসিধে

জামার গলার ঝালর,
তারপর ভাজে ভাজ কুঁচি দিয়ে বানানো
আয়োনিয়ান ডেথ-গাউন,
সবশেষে ছোট্ট দু'টি পা।
ও হাসেও না, ধুমপানও করে না।

অন্যজন কিন্তু এ সবকিছুই করে,
তার লম্বা চুল আর আপাতঃদৃষ্টসঙ্গত
জোড়াগোঁফ
আবেগমৈথুণে ব্যস্ত,
সে প্রেমাস্পদ হতে চায়।

আমি এসবে মাতি না।
তুষারকণা ফুল হয়ে ফোটে,
শিশিরবিন্দু তারা হয়ে জ্বলে,
মৃত্যুর ঘন্টাধ্বনি বাজে,
মৃত্যুর ঘন্টাধ্বনি বাজে।

কারো সব হয়ে গেছে সারা।


[২] Edge
কিনারা


মহিলা পরিপূর্ণ হলেন।
তাঁর মৃত
দেহ অভীষ্টপূরণের সকল সৌরভ মেখে সুরভিত,
কি এক গ্রীক অপরিহার্যতার বিভ্রম

শাস্ত্রপাঠের পুঁথির মোড়ানো পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় যাচ্ছে ছড়িয়ে,
তাঁর নগ্ন
পদযুগল এখনি হয়তো বলে উঠবে:
তোমরা বড় বেশি চলে এসেছো, পরিসমাপ্তি এখানেই।

প্রতিটা মৃতশিশু একেকটা শুভ্র সরীসৃপ, কুণ্ডলী পাকানো,
প্রত্যেকে তারা ছোট্ট এক

দুধপাত্রের পাশে শুয়ে, এখন সেগুলো শূন্য পরিত্যক্ত।
সুন্দর গুছিয়ে নিয়ে তিনি

সারাদেহে ওদেরকে সাজিয়েছেন অস্ফুট গোলাপ
পাপড়ির আদলে, যখন ফুলবাগানে

স্নিগ্ধ রজনীস্ফুট ফুলদের
আড়ষ্ট, গভীর কন্ঠনালী চিরে রক্তগন্ধ ছড়ায়।

চাঁদের কিন্তু তাতে মনোকষ্ট পাবার মতো কিছু নেই
হড়ের অবগুন্ঠনে চন্দ্রালোক ছড়িয়ে

কৃষ্ণপক্ষে রাতে নিজেকে খটমট টেনে-হিঁচড়ে চলে
এমন কাজ সচরাচর করতে অভ্যস্ত চাঁদ


[৩] Kindness
ঔদার্য


ঔদার্য ভেসে বেড়াচ্ছেন আমার ঘরজুড়ে।
দেবী ঔদার্য, কি মহিমান্বিতা তিনি!
তাঁর নীল লাল আঙ্গুরীয় রত্নের ধুম্রজাল
উড়ছে জানালায়, আয়নাগুলোর
প্রতিবিম্ব জুড়ে শুধু তাঁরই স্মিতহাস্যমুখ।

শিশুর কান্নার চেয়ে গূঢ় বাস্তবিক কি হতে পারে?
শশকের কান্না বস্তুতঃ বড্ড আরণ্যক
তাতে আত্মার ক্রন্দন নেই।
শর্করা আরোগ্য দিতে পারে সবকিছুর, তাই ঔদার্যদেবী বলেন,
শর্করা অতীব এক জরুরী পানীয়,

শর্করা দানারা কিছুটা ঔষধি প্রলেপ,
ও ঔদার্য, ঔদার্য
কি মাধুর্যে তুলে নিচ্ছ স্পর্শযোগ্য সবকিছু,
আমার জাপানি সিল্কে, উন্মত্ত প্রজাপতিদের
গেঁথে রাখা হবে যে কোন মুহূর্তে, বেদনা-আসাড় ঔষধ সহযোগে।


[৪] Child
সন্তান


তোমার স্বচ্ছ চোখ কি অবিসংবাদিত সৌন্দর্যমুখর
তাঁকে আমি সাজাতে চাই রঙে আর চাদরে
নতুনের চিড়িয়াখানা

অন্তরজুড়ে কাকে সমর্পণ করো তুমি-
এপ্রিলের তুষারকণা, আদিবাসীর বাঁশি,
ছোট্ট

ছিঁড়ে না তোলা ফুলবৃন্ত,
যে স্বচ্ছ পুস্করনীর জলে প্রতিবিম্বরা
হয়ে ওঠে  অনুপম, ধ্রুপদী মায়াবী

না, এই প্ররোচনাময়
হাতের সঞ্চালন নয়, এই গাঢ়
ছাদের নিচের নক্ষত্রহীন অন্ধকারও নয়।

No comments:

Post a Comment