Showing posts with label তৈমুর খান. Show all posts
Showing posts with label তৈমুর খান. Show all posts

Monday, 4 January 2021

তৈমুর খান,কবিতা,সাহিত্য এখন শীতসংখ্যা ২০২০-২১,

 

 


 

নিজের কথা


 


 রাস্তাঘাট এত অনিশ্চিত

                      চারিদিকে অবিশ্বাস দাঁড়িয়ে আছে

 ধর্মের মহিমা প্রচারের আড়ালে

                                        বসবাস করছে ধর্ষক

 মানুষকে কি মানুষ বলা যাবে এখন?

 ঠিক মতো বোঝাবার কোনো উপমা নেই

 ভাষণ শুনে শুনে আমরা বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি

 পাহারা দিতে দিতে আমরা অসহায়

 প্রতিরাতে আমাদের ফসলের ক্ষেত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে


 কী নিয়ে বাড়ি ফিরব তবে?

 পরকাল সংকেত পাঠাচ্ছে

 ইহকালের ফাঁকা ট্রাকগুলি চলে যাচ্ছে

 বিজ্ঞাপন দেখতে দেখতে

                         আমাদের বয়ঃসন্ধির রোগ বাড়ছে 

 নিজেরা ডাঙার কুমির হয়ে চাঁদ-সূর্যের আলোয়

                                                          গা শুকাচ্ছি

 ধর্মভীরু হাত অন্ধকারের রুমালে ঘন ঘন মুছে নিচ্ছে


 অনিশ্চিত দিন, ধর্ষক লুকিয়ে আছে, ঘাতকও

 ঝলমল করছে পোশাক

 আমরা মোমবাতি কিনছি রাস্তার ধারের নতুন দোকানে



Monday, 6 July 2020

তৈমুর খান, কবিতা, সাহিত্য এখন বর্ষা,২০২০




শ্রীমতী বর্ষা

তৈমুর খান


 'আজি অন্ধকার দিবা, বৃষ্টি ঝরঝর,

 দুরন্ত পবন অতি—আক্রমণ তার

 অরণ্য উদ্যতবাহু করে হাহাকার।

 বিদ্যুৎ দিতেছে উঁকি ছিঁড়ি মেঘভার

 খরতর বক্র হাসি শূন্যে বরষিয়া॥'

        ( 'মেঘদূত': রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

 কতবার দেখা হল তবুও দেখি তাকে। উন্মুখ চেয়ে থাকি। চুল সরাও খোলো আঁখি। ঘন হয়ে এল নীলিমা তোমার। দুলে ওঠে ওই মেঘভার। বৃষ্টি চৈতন্যের ইঙ্গিত বাজে প্রকৃতির চতুর্দিক জুড়ে। হৃদয় উথলে ওঠে। নদীও যৌবনবতী হয়। প্রাণ ভরে পান করে জল। অন্তরঙ্গ কোনো বাউল গেয়ে ওঠে যেন। কতদূর পথ হেঁটে সে ফিরছে এই বৃষ্টির দেশে। গৈরিক ধুলোমাখা শরীর সে জুড়িয়ে নিতে চায়। খোলা আকাশের নিচে তার একতারা তুলে ধরে। আজ মনের মাটি তার ভিজিয়ে নেবার দিন।

       বাউল তো আমরাও। কলমটা তুলে ধরেছি এই জানালার ধারে। বৃষ্টি ও হাওয়া এসে চুলে দিয়ে যাচ্ছে কোমল স্পর্শ। একখণ্ড মেঘের রুমালে মুছে নিচ্ছি মুখ। আজ সব এলোমেলো ভাঙচুর। দূরের পাখিরা দ্রুত উড়ে যাচ্ছে। তারাও কি ভিজিয়ে নিচ্ছে ডানা? আমারও খাতা ভিজে যাচ্ছে। ভিজে যাচ্ছে শব্দও। আজ সব বৃষ্টিমাখা অনুভব।

       দূরে গাছের পাতায় পাতায় কী উচ্ছল হাসি ! মর্মর শব্দে ছড়িয়ে দিচ্ছে কাঁপন।এক একটি  কাঁপন কুড়িয়ে নিচ্ছি নিভৃতে। শব্দ-তরঙ্গে পাঠাতে চাই তাকে। যে আমাকে গাছ হতে বলে চলে গেছে অন্যকোনো পরাগ মিলনে। কেমন আছে ওর বাগান? শুধু মাটির গন্ধ। পাতার গন্ধ আজ প্লাবিত করে।  আত্মাকে মুক্তি দিই আমি ; সে বাগানে যদিও সে নিষিদ্ধ আপেল খেতে চায়।

        কে বাজায় বাঁশি? আমি তার নাম জানি নাকো। শুধু সুর এসে ধাক্কায়। তরঙ্গে তরঙ্গে নাচে জল। জলের লীলায় ভাসি। জলের লীলায় হাসি। জলে জলে বিকেল গড়াই। জগতে আজ শুধুই বাজে জলবাঁশি। হৃদয়ের স্রোতে গঙ্গা-যমুনা জেগে ওঠে। তীরে কি নেমেছে ঈশ্বরী? ভাসিয়ে দিলাম নৌকা তবে। সাবধানে পেরিয়ে যাও। এই স্রোত বড় ভয়ঙ্করী। কেবল উদ্দাম আর উদ্যত উল্লাস। দুই কানা ভাঙতে থাকে জলের বিলাস।

        নিসর্গের ভাষা জেনে নেয় আজ কত কালিদাস। যক্ষপুরীর দিকে চলে যাচ্ছে মেঘ। চিরন্তন এ পৃথিবী মেঘের শতক। বিরহ লেখা কালের নিয়মে যক্ষ সবাই। প্রিয়ার কাছে তাদেরও বাণী পৌঁছে দিতে চায়। হে বিরহ কাল, হে বিরহ বাণী, আমরাও দূত চিনি। আমাদের এসএমএস নিয়ে যায় মেঘ। আমাদের টাওয়ার ওই  বিশাল উঁচু গাছ। বৃষ্টির অক্ষরে  মেশাই অশ্রুজল। তারপর শব্দ-বাক্য-পদ…. সর্বনাম-ক্রিয়া-অব্যয়। তারপর আমাদের ক্ষমা করে আকাশ :

'Only a Cock stood on the rooftree

    co co rico co co rico

In a flash of lighting then a damp gust

         Bringing rain.'

                              ( T.S.  Eliot)

    কালো মেঘ। সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির কণ্ঠস্বর। আমাদের পাপ ধুয়ে দেয়। নেমে আসে ধারাবর্ষণ। যে ধারায় আজও আমরা স্নাত, পবিত্র এবং উৎফুল্ল। সেই বৃষ্টি তো ভিত্-হারাও করে। ঘরে ঘরে বন্যা পাঠায়। ঘরে ঘরে হাহাকার তোলে। পাপের মুক্তি এবং মুক্তির পাপ দুইই আমাদের প্রার্থনা করতে শেখায়। প্রণাম করতে শেখায়। তখন তো সেকথাও লিখতে হয়:

 'ঘোররাতে আমাদেরই শুধু

 বারেবারে করো  ভিৎহারা ?

 সকলেই আছে বুকজলে

 কেউ জানে কেউ বা জানে না

 আমাকে যে সহজে বোঝালে

 প্রণাম তোমাকে বৃষ্টিধারা।'

       ( 'বৃষ্টিধারা': শঙ্খ ঘোষ)

       সৃষ্টির, মুক্তির, সাম্যের প্রতীক হে বৃষ্টিধারা, আজ শুধু তোমার ভাষায় তোমাকেই ডাকি। বৃষ্টি হোক অন্তরে বাহিরে। আর ভিজতে ভিজতে আমাদের দিন, আমাদের রাত। আর ভিজতে ভিজতে তুলে নিই কোলে ভেজা দুই হাত। সেইতো চিরন্তনি! ঘোরের ভেতর জেগে ওঠে তার মুখ। ঠোঁটের পাপড়ির কী স্নিগ্ধতা! স্ফুরিত ব্যাকুল! আর নীলশাড়ি ভেজা নিঙাড়ি নিঙাড়ি একাকী চলেছে পথে। আজ তার অভিসার। বৈষ্ণব যুগ থেকে এই মোবাইল যুগ— দীর্ঘ রাস্তায় তার পায়ের চিহ্ন পড়ে আছে। এলোমেলো চূর্ণ কুন্তলে ঢেকে আছে মুখ। তবু তার ফর্সা হাত, কী সুন্দর গভীর কালো চোখ আর উজ্জ্বল শ্বেত-শুভ্র দাঁতের ঝিকিমিকি দেখতে পাই। আলতা কি ধোয়া গেল তোমার? শুধু পা, পায়ের ওঠানামা। বৃষ্টির অঙ্গনে শুধু তোমার পদধ্বনি!

'হৃদয়-রূপক কিছু নেই, কিছু নেই,

নেই বেলফুল, রজনীগন্ধা, জুঁই,

চুপ করে শুধু চেয়ে থাকি তার মুখে,

চোখ দিয়ে শুধু কালো চোখ দুটি ছুঁই।

চিরন্তনীর অলক্ষ্য অভিসার 

পার হয়ে এসে তুচ্ছের বঞ্চনা

বলে কানে কানে, 'আমার অঙ্গীকার

ভুলবো না আমি, কোনোদিন ভুলবো না!'

       ('বর্ষার দিন' : বুদ্ধদেব বসু)

     অবশেষে অন্ধকারে ফিরে আসা বাসার পাখি। প্রদীপ জ্বেলে মুখ দেখা। শূন্য মনে স্বপ্নের রেখাপাতে রাঙিয়ে দেওয়া। সুপ্তির গহীনে তলিয়ে যাওয়া। বর্ষা মানে সেই ইচ্ছে, হৃদয় দিয়ে হৃদয় নিচ্ছে। পালিয়ে যাচ্ছে, ফিরেও আসছে। যন্ত্রণায় আনন্দ পাচ্ছে। সীমার মাঝে অসীম হচ্ছে। আর অসীম এসে সীমায় ঢুকছে। বাংলার কদম্ব বনে বনে চলো খুঁজে আনি বর্ষাকে। শ্রীমতী বর্ষা আজ নামুক ঘরে ঘরে।