Showing posts with label অণুগল্প. Show all posts
Showing posts with label অণুগল্প. Show all posts

Wednesday, 30 August 2023

দেবশ্রী মজুমদারের অণুগল্প



 

 

  ক্রুশবিদ্ধ

 

একভাবে এতটুকু জায়গার মধ্যে কাঁহাতক আর শুয়ে থাকা যায়! এপাশ ওপাশ করলেও সস্তা কাঠের বাক্সটা ক্যাঁচকোঁচ শব্দ করে ওঠে। হাড়ের মধ্যেও ঠকঠক শব্দ হতে থাকে। তার চেয়েও মুশকিল হয়, বৃষ্টি হবার পর। বৃষ্টির জল আস্তে আস্তে মাটি ভিজিয়ে দেয়। কাঠের বাক্সটার উপরটা ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যায়। একটা অদ্ভুত বিদঘুটে দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে। আর কতো ধরণের পোকামাকড় এসে আশ্রয় নেয় সব এখানেই। সব মিলিয়ে কেমন একটা গা ঘিনঘিনে ভাব। তার ভালো লাগে না। কোন কিছুই আর আগের মতো নেই। এই ছয়মাস ধরে এটাই এলিজাবেথের চিরস্থায়ী ঠিকানা। এর থেকে মুক্তির উপায় নেই। নাকি জীবন থেকে চিরতরে মুক্তি পেয়েই তার এই কবরস্থানে ঠাই হয়েছে? সে ভাবে, কিন্তু ভেবেও কূলকিনারা করতে পারে না।

  চার্চ থেকে বাড়ি ফেরার রাস্তা, রাস্তা থেকে পুলিস স্টেশন,সেখান থেকে হাসপাতালের পোস্টমর্টেম ওয়ার্ড। সেখানেও অনেকক্ষণ ধরে কাটাছেঁড়া । তারও একদিন পর তাকে এখানে আনা হয়। আর তারপর থেকেই একটানা এলিজাবেথ এখানেই থাকে।

হোলি ফ্যামিলি চার্চ এর ট্রেজারার ছিল এলিজাবেথ রোজারিও। থাকদাড়ি রোডের উপর মিশন বাজারে ছিল ছোট্ট এই চার্চটা।

সেদিনটার কথা এখনও মনে পড়ে তার। সেদিন পাম স্যাটারডের আগের দিন । ইস্টার, ক্রিসমাস এর আগে সব সময়ই এলিজাবেথের কাজের চাপ বেড়ে যেত। নতুন করে সব কিছু রঙ করা, সাজানো গোছানো, লাইট, ক্যাণ্ডেল কেনা সব খাতেই অনেক খরচ এবং একইসাথে চার্চের সদস্যদের চাঁদার হিসাব মেলাতে মেলাতে চার্চ থেকে বেরোতেই প্রায় দশটা বেজে গেছিল। একটু রাত হয়ে গেলেও সেদিন সে ভয় পায়নি। ছোটবেলাতেই যারা মা বাবাকে হারায়, তাদের বোধহয় কোন কিছু নিয়েই আর চিন্তা ভাবনা হয় না। জমা খরচের হিসাব মিলিয়ে মনের আনন্দে বাড়ি ফিরছিল সে। বাড়ি ফিরে চিকেন স্যুপ বানাবে,আর তার সাথে ভালো জমবে বলে একটা গার্লিক ব্রেড কেনার জন্য মিশন বাজারের কিন্স বেকারিতে ঢুকেছিল এলিজাবেথ।

তেত্রিশ বছরের যুবতী এলিজাবেথের মনটা সেদিন অকারণেই একটু বেশি রকমের ফুরফুরে ছিল। ইস্টারে তার কাজিন ভাই বোনদের জন্য কি কি কিনবে,মনে মনে সেই সব প্ল্যান করছিল। আচমকা তার খুব কাছ ঘেঁসে একটা আকাশী রঙের মারুতি ওমনি এসে দাঁড়াল। গাড়ির পেছনের দরজাটা খুলে দু-তিন জন মত্ত যুবক তাকে এক ঝটকায়  চলন্ত গাড়ির মধ্যে টেনে নিল।  এলিজাবেথ জীবনে প্রথমবার সেদিন একসাথে যৌবন আর মৃত্যুর স্বাদ পেল। তার মরে যাবার শেষ এক ঘণ্টার কথা সে আর মনে করতে চায় না। বেঁচে থাকতে মরণ যন্ত্রণা পাওয়া যেমন দুর্বিষহ, মরে গিয়েও জীবন যুদ্ধের তীব্র কিছু বেদনা ভুলে যাওয়াই ভালো।

  এলিজাবেথ ভাবল, এখন সে অনেক ভালো আছে। তার শরীরে এখন আর কোন মাংস নেই, মেদ নেই, স্তন নেই, যোনি নেই। শুধু আবছা আলো আঁধারে ঘেঁটে যাওয়া চেতনা বেঁচে আছে। সেজন্যই এখনও মাঝে মাঝে তার মন কেমন করে। অন্য কবরের সামনে যখন সে দেখে তাদের প্রিয়জনেরা এসে দুদণ্ড বসে, ভালোবাসে, চোখের জল ফেলে,কবরের সামনে ফুল রেখে চলে যায়,নির্জীব  হাড় সর্বস্ব এলিজাবেথের শরীরটার তখন কান্না আসে। শোভাহীন হয়ে পড়ে থাকে সে।

এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে এলিজাবেথ টের পায় হঠাৎ আকাশ কালো করে প্রবল ঝড়।  ঝড়ের তাণ্ডবে এলিজাবেথের কফিনটাতেও যেন কাঁপন লেগে যায়। কাছেই ছিল একটা তালগাছ । সেটার কয়েকটা তালপাতা এসে পড়ে এলিজাবেথের কবরের কাছে। পরম আনন্দে এবং দুঃখে এলিজাবেথের মনটা কানায় কানায় ভরে ওঠে। পাম সানডেতেই সে যে এখানে প্রথম এসেছিল।  

__________________________

 

 

 

 

Saturday, 3 October 2020

সঞ্জয় কর্মকার , অণুগল্প, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

  


 

 

পাগলটা

                                                                                

রেল বস্তির পাগলটা সেই সন্ধে থেকে বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে । কে যেন একজন তাড়াতে গেছিল, তাও যায়নি। রূপকবাবুর ছেলের  আজ অন্নপ্রাশন । আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে বাড়ির  চারদিক । অথচ পাগলটা নিজেকে আড়াল করার জন্য একটু অন্ধকার খুঁজছে। অকস্মাৎ  রূপকবাবুর  চোখে পড়ল পাগলটা। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ভাঁড়ার ঘরের দিকে। রূপকবাবু পাগলটার কাছে গিয়ে কিছুটা বিরক্তির ভঙ্গিতে বলে উঠলেন , ' এখানে কী চাই রে তোর? সেই থেকে এভাবে কী দেখছিস? বলি, মানুষকে বিরক্ত করা ছাড়া তোদের কি আর কোন কাজ নেই?'

রূপকবাবুর মুহুর্মুহু প্রশ্ন শুনে পাগলটা ভয় পেয়ে   দু-হাত পিছনে সরে গেল। তারপর মুহূর্ত খানিক নীরব থেকে শেষে একটু যেন  সংকোচের সুরে বলল, ' খুব খিদা লাগছে। আমারে কিছু খাবার দিবেন?'

'উফ্ জ্বালিয়ে খাস একেবারে! এখানেই দাঁড়া । দেখছি।' কথাটা বলেই দ্রুতপায়ে আবারও বাড়ির  ভিতরে ঢুকে গেলেন রূপকবাবু।

খাওয়া- দাওয়ার লাস্ট ব্যাচ উঠে গ্যাছে। পাগলটাকে এখনও  বাড়ির গেটে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রূপকবাবু বললেন, ' ঈশ , একদম ভুলে গেছি রে!' 

কিছুক্ষণ  পরই রূপকবাবু একটা থার্মোকলের থালায় কিছু খাবার - দাবার এনে পাগলটার হাতে তুলে দিলেন। খাবার পেয়ে পাগলটা বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই রূপকবাবু বলে উঠলেন, ' যাচ্ছিস কেন ,খেয়ে নে!'

'এই খাবারটা ও বাবা- মাকে দিয়ে খাবে। সব অনুষ্ঠান বাড়ি থেকেই এভাবে ও বাবা- মায়ের জন্য  খাবার নিয়ে যায়।' পাশ থেকে বলে উঠল শুভম ক্যাটারার্সের একটা ছেলে।

ছেলেটার কথা শুনে বুকের ভিতরটা  হঠাৎই মোচড় দিয়ে উঠল রূপকবাবুর। স্ত্রী বৈশালীর চরম আপত্তিতে শেষ দু-বছর একটা বারের জন্যও  বাবা - মায়ের খোঁজ নেয়নি ও। তারা এখন কী খেয়ে যে ...  
                      ............................