Showing posts with label কেকা সেন. Show all posts
Showing posts with label কেকা সেন. Show all posts

Sunday 28 June 2020

কেকা সেনের গল্প 'জলছবি' , সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা, ২০২০






জলছবি
                কেকা সেন                

--- মা, আর একটু ভাত দিবি? খুব ক্ষিদে পেইচে রে?
লকাই এর কথায় সুবলা হাঁড়ির ভিতর চোখ পাতে। তলায় যেটুকু ভাত পড়ে আছে, সবটুকু দিয়ে দেয়। 
মনে মনে বলে -- খা বাপ, পেট পুরে খা...
তিনদিন ধরে অঝোরে ঝরছে বৃষ্টি রানী। আল বাঁধানো নোনা দেহে যেন জল-তরঙ্গের লহর। গত দুইদিন সুবলা নদীতে মীন ধরতে গেছিল। আজ আর যায়নি।শরীরটা কেমন ম্যাজম্যাজ করছে তার। নয়তো সেই কবে থেকে এই কাজ করছে সুবলা...হাতে পায়ে হাজা ধরা গতরটা এবার যেন বড্ড কাবু হয়েছে! আজ বড্ড বেশী করে নারান এর কথা মনে পড়ছে সুবলার। নারান... তার ভাতার...যেদিন সেই কালো পাহাড়ের মত সুঠাম দেহটা নদীর পেটে তলিয়ে গেল, তখনও এমন একটানা বৃষ্টি ছিল, বাঁধ-ভাঙ্গা বৃষ্টি।

---- মা জানিস ওই মুখুজ্যে বাড়িতে আবার লোক এইচে।

পলকে তাকায় সুবলা।

--- তুই যাসনি তো আবার ওদের ওখ্যানে?

-- না মা, তুই তো বারন করে দিইচিস!

 চোখ দুটো জ্বলে ওঠে সুবলার

-- আচ্ছা মা, বাবা বুঝি ওদের জমিতেই লাঙল দিত?
-- হ্যাঁ বাপ।
-- ওরা তো এখান থ্যাকি চলি গেইল, তবে?

হ্যাঁ মুখুজ্যেরা তো কয়েক বছর আগেই এখানকার পাততারি গুটিয়ে কোলকাতায় চলে গেছে।  অন্তত সুবলা তো তাই জানে। তবে কিএমন হল যে আবার এক্যানে-- মনে ভাবে সে। 
  
মাইকে সমানে হেঁকে চলেছে, আরও দুদিন বৃষ্টির আভাস। সবাইকে বড় ইস্কুলবাড়িতে উঠে যেতে বলছে।নদীর বাঁধন এবারও বুঝি আর থাকবে না। ক্রমশ জনপথে এগোন নদী যেন ভাঙ্গা -গড়ার জীবন রথের জলছবি। একটা কাপড়ের পুটলি আর লকাইকে নিয়ে সুবলা ইস্কুলবাড়িতে উঠে আসে। পাশে বসা সাদা কাপড়ের মুখখানা বড্ড চেনা ঠেকে তার। পাশের সাদা কাপড়ও করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। মুখুজ্যে গিন্নি! 

--- ছেলেরা, কর্তামশাই মারা যাওয়ার পর আবার এখানে পাঠিয়ে দিলে গো বউ।

পাংশু মুখের শীর্ণ বৃদ্ধাকে দেখে সুবলার দয়াই হল।

---- কিছু খ্যায়েছেন বামুনমা।

বৃদ্ধা দুপাশে মাথা নাড়ে। সুবলা তার পুঁটলির ভিতর থেকে  দুটো মুড়ির মোয়া বার করে হাতে দেয়। বৃদ্ধার চোখের কোনে জল দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয় সে। মনে মনে ভাবে -- সেদিন আমাদের মত ছোট জাতকে এট্টু আচরয় দ্যালি, আমার নারানকে বাঁধ ভাঙ্গা জলি ডুবতি হতনি বামুনদি!

কলকল শব্দে নদীর জল এখন অন্যদিকে বইছে।