Tuesday 20 October 2020

অমিত সরকার, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 



 তিনটি কবিতা 


বোর্ডগেম

 

মৃত সন্তানদের নিয়েই আমরা এখন খেলা শুরু করতে পারি। এতদিন তো জানতামই না কীভাবে অন্ধকার লাফিয়ে লাফিয়ে উঠে আসে সিঁড়ি বেয়ে শরীরগন্ধ সনেট কীভাবে জুড়ে দেয় নেলকাটার, বেবিসোপ আর পুরনো সোয়েটার ?  এইসব শুধুমাত্র জানতো ধারালো স্ক্যালপেল। এইসব জানতো স্টিলরং মর্গের টেবিল  ছক্কা  আর ঘুঁটিদের নিরুদ্দেশ মিছিল শুধু হেঁটে যেতো স্কাই-ব্লু চাদর থেকে কাচদরজার করিডোর  পেরিয়ে  হাসপাতালের পাশেই তাদের ঘরবসত দেখে ভয়ে জমে যেত মেরুদাঁড়া । ইড়া ও পিঙ্গলা ফেটে শ্যামশ্রী শীত  নামত ভূমিতেজবাকুসুম ড্রিপ নামত টুপটুপ টুপটুপ । আমরা ভুলে  যেতাম আজ শান্তিনিকেতন  শান্তিনিকেতন খেলার দিন । ভুলে যেতাম হলুদ স্কুলবাস আর আশিয়ানার স্টপেজে থামবে না। বরং একটু পরেই মেঘ নামবে টিফিনবক্সের গর্ভে । পর্দায়  লেগে থাকা সন্তানের ময়লা হাতের ছাপেরা নিশান হয়ে  উড়তে   শুরু করবে উদ্ধারণপুরে।  শিকারীদের বর্ণপরিচয় ভুলে,  ছেঁড়া বোর্ড  জুড়ে দলবদ্ধ সাপেরা    পাক খাবে আর বমি করবে সংখ্যাদের আলমারির পাশ থেকে ডানা মেলে উড়ে যাবে লাল বল আর ছেঁড়া ফয়েলের স্ট্রিপ। তিন ছক্কা পুটের সমস্ত  মনোযোগ চুরমার করে একটা ভয়াবহ কণ্ঠস্বর বলে উঠবে,  ‘বাপিএকটা ইঞ্জেকশন দাও। আমি আর সইতে পারছি না।      

 

এসোতোমাকেও চাল দিতে হবে। কারণএতক্ষণে তুমি জেনে গেছ শিশুদের চেয়ে নিষ্ঠুর আর কেউ নেই   


সম্পর্ক 

 

অন্য কাউকে নয়তোমাকেই বলছি শোনো। আমি এইমাত্র নেমে এলাম অন্ধকার সম্পর্কের ভেতরে। কালো খনিসুড়ঙ্গের  মধ্যে গতকাল হঠাৎই ফেটে গিয়েছিল আষাঢ়স্য প্রশম দিবসের মেঘ। হিংস্র বৃষ্টিরা দলবেঁধে বেরিয়ে এসেছিল পঙ্গু  জন্তুদের     লালা থেকে। আমার সামনে কোন দরজা নেইজানলা নেইশুধু ঢালু জঙ্গল থেকে শোনা যাচ্ছে তীব্র ডাইনোসরদের  শীৎকার। সেই ক্ষত বন্ধ করতে আজ আমি নেমে এসেছি হরিণদের ভেতরে। সেই ক্ষত উন্মোচন করতে আমি আজ নেমে  এসেছি কচি বৈষ্ণবীদের অলকাতিলকায়। এখন আমার সামনে শুধু দুলক্ষ বছর ধরে বয়ে চলা গর্ভভার। সৌরঝড়ের ক্রমশ ফুলে ওঠা। ভবিষ্যৎ অক্ষরদের দিকে ঈশ্বরের চোখের মত তাকিয়ে রয়েছে হেলমেটে লাগানো হলুদ আলো। চারপাশ ক্রমশ  চেপে ধরছে মধ্যবিত্ত জল। বেলজারের মধ্যে থেকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সিলভিয়া প্ল্যাথ। দূর থেকে ভেসে আসছে  খোলামুখ বার্নারের সোঁসোঁ আওয়াজ। গুঁড়িয়ে যাচ্ছে আমার সমস্ত পাথর-ডায়েরি আর ট্যালিসম্যান। ডাকিনীবিদ্যা ভুলে তুমি কী এইমাত্র হেসে উঠলে একতারায়গৌড় মলহারে ? দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে অক্সিজেন আর আমি ছটফট করছি আঁখিপাতে।  কফিকাপ থেকে উঁকি মারছে তেকোনা পাখনা আর বলির আরতি। এইবার চার্চের গং ঘোষণা করবে জিরো আওয়ার আর আমাকে হত্যা করবে তোমার চোখের স্ট্রিকনিন। 

কেননা একমাত্র আমাকেই তুমি একদিন প্রকৃত ভালবেসেছিলে    


পাসওয়ার্ড

 

পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে গেলে

পুরনো ছবিদের ধারণা বদলে যায় 

বীজকোশ খুঁজতে খুঁজতে 

রাফখাতায় উছলে ওঠে প্রজাপতিদের লাশ 

গা ছমছম মেয়েমাছেদের কাছে গেলে দেখি

দুপুরের ছেঁড়া বোতামঘরে আটকানো আলোর সেফটিপিন    

 

চাবি খুঁজতে খুঁজতে উঁকি দিই ভ্রমরকৌটোয়

দেখি স্বপ্নের রেলিং ধরে নেমে যাচ্ছে ধারাবাহিক পাথরেরা

হাওয়াদের ভারী পাছা জড়িয়ে চেক চেক শিফন

রোদের লটকন ঝুলছে একচিলতে ব্লাউজের পিঠে   

 

সনাক্তকরণের মন্ত্র কোথায় যে লুকিয়ে রেখেছি   

নিঃসঙ্গ নদীদের ডানা

অথবা মীনরাশির জানলায়  

আজ আর কিছুতেই মনে পড়ছে না…      



No comments:

Post a Comment