Showing posts with label শারদীয় সাহিত্য এখন ১৪২৭. Show all posts
Showing posts with label শারদীয় সাহিত্য এখন ১৪২৭. Show all posts

Tuesday 20 October 2020

শারদীয় সাহিত্য এখন ১৪২৭,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০, সম্পাদকীয়,

 শারদীয় সাহিত্য এখন ১৪২৭

 সম্পাদকীয় 

 




শারদীয় সাহিত্য এখন  ১৪২৭

সম্পাদকীয় 

অক্টোবর কথাটার মধ্য একটা অদ্ভূত পেলবতা আছে। প্যাস্টেল হলুদ রোদ, বুড়ো পরির চুলের মতো মেঘ। অনেক দশক আগে কেউ বুঝি নৌকা থেকে নেমে ছুটিতে বাড়িতে এলো।পায়ে, কাদা, হাতের তোরঙ্গে ভরা নতুন কাপড়। অক্টোবর ঘরে আসার মাস। অক্টোবর কানে ফুস মন্তর। বন্ধুর হাত ধরে মাঠঘাট পার হয়ে ঢাকের শব্দের দিকে ছুট ছুট ছুট… ১৪২৭ সেই রাক্ষস যেন। রাজকন্যাকে ধরে বেঁধে পুরে রেখে দিয়েছে গুহার ভেতরে, অন্ধকারে। আমরা আশায় আছি। সেই অন্ধকারে রাজকন্যার তৃতীয় নয়ন জেগে উঠবে এবার। সোনালি দরজা খুলে সিঁড়ি উঠে যাবে আলোর দিকে।  

সাহিত্য এখন বেশ কিছু নতুন মুখ নিয়ে এল এবার। পড়বেন তাদের। অগ্রজদের আশীর্বাদ এই পত্রিকার স্তম্ভ। তারুণ্যের ভালোবাসা জড়িয়ে রেখেছে বরাবর। আমরা যারা মাঝপথে সেতুর মতোন, তারাও রইলাম নিভৃত অক্ষরমালা নিয়ে। এবারের প্রচ্ছদ এঁকেছে তরুণ শিল্পী মঙ্গলদীপ সর্দার। প্রবীণ ভাস্কর রামকুমার মান্নাও জড়িয়ে রইলেন তাঁর স্নেহচ্ছায়া নিয়ে। শুভ চতুর্থী। সব অন্ধকার কেটে যাক

দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত,গল্প, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০

 



বন্ধু



শেষরাতের স্বপ্নে দেখা দিলেন নারায়ণ ।
              "অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি থেকে তোমাকে দেখা দিচ্ছি কন্যে ! “
" আমি অবাক। জীবনেও উপোস করিনি। দিব্যি হাসপাতালে রুগী দেখার নাম করে ভেগে  , ক্যান্টিনে পরোটা আর আলুর দম খেয়ে , বাড়িতে শাশুড়ি মায়ের কাছে শুকনো  রুগ্ন মুখোশ নিয়ে জন্মাষ্টমীর অঞ্জলি দিতে বসেছি। ওদিকে উনি কিন্তু নির্জলা উপোস। এক্কেবারে আমার ড্রাইভার ইউনিস এর মতো ।

“ও ইউনিস , এই রোজার সময় গাড়ি চালাবে- থাক না। কটা দিন ছুটি নাও।"           

“আমি তো থুতুও গিলি না দিদি , তবে কেন কাজটা কাড়ছেন ? কাজ না থাকলেই আমার খিদা পাবে।"
চুপ করে  ভাবলাম মরেছে , এতো সব নিষ্ঠাবান ভক্ত থাকতেও  ভগবান আমার কাছে কেন? 
প্রভু , আপনি এসেছেন কী সৌভাগ্য ! কী কী যেন চাইতে হবে দ্রুত মনে করতে লাগলাম । কুমারী অবস্থায় একটা সুবিধে হচ্ছে  বর চাই প্রশ্নের উত্তরও - বর চাই । এখন কী চাওয়া যায় ?
মোক্ষম আবদারটা করব ?
প্রভু পৃথিবীকে একদম করোনামুক্ত করুন। সেই আগের মতো।

কিন্তু ওদিকে  রোজই বিশেষজ্ঞরা বলে চলেছেন যে  আগের মতো  জীবন নাকি  কিছুতেই হবেনা। জীবাণু অস্ত্র এই নতুন  টেক স্যাভি যুগের হাতিয়ার ।
আমার অবশ্য বিশেষজ্ঞদের বিশেষভাবে অজ্ঞ মনে হয়। মানুষ যদি  ‘কোভিড পরবর্তী’ যুগে বন্ধুর মতো প্রকৃতি ও স্বজাতিকে নিয়ে বাঁচতে চায় , তাহলে পারবেনা কেন  ?
বাস্তবে  মানুষ জাতটা এতরকমভাবে ধর্ম , জাত পাতের নিরিখে  বিভক্ত , যে সে কি চাইবে আদৌ নতুন করে পৃথিবী গড়তে ? এটাই মূল প্রশ্ন।
জিজ্ঞেস করব কি করব না ভাবতে ভাবতে খেই হারিয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম “আপনি কীসে  এলেন ? “
“আলোর গতিবেগেরও আগে এলাম বুঝেছো।  ঈশ্বর কণার নাম শোনোনি?  গড পার্টিকল !”
আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি । "যাক গে তোমার সাধারণ জ্ঞান দেখছি খুব পুওর ।  কিস্যু পড়োনা।  শোনো , হোয়াটস অ্যাপ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করো আর বচ্চনের পুরনো কওন বনেগা ক্রোড়পতি দেখো । বুঝলে?”
“ কিন্তু ঠাকুর আমি যে  অনলাইন ক্যুইজ করি, গুগল করি।" 
“উঁহু বৎস্যা , তোমার সবেতেই গণ্ডগোল।  টিভি সিরিয়াল কি দেখতেই না  একেবারে ? দাদাগিরি  দ্যাখো । দিদি নাম্বার ওয়ান । সব শিখে যাবে। এবার বুঝলে?"
আমি উত্তেজিত হয়ে বলে ফেললাম "কিন্তু প্রভু ,আমাকে তাহলে কী বর দেবেন?"

এতক্ষণে নারায়ণ মিষ্টি হাসলেন। বুকটা ধ্বক করে উঠল। যা হ্যান্ডসাম!
  "দেবো না। চাইবো । এজন্যই তো এতোটা  মহাশূন্য বেয়ে এলাম।" 

এরপর  যেন বোমা ফাটানোর শব্দ শুনে চমকে উঠলাম !
নারায়ণ গদ্গদ হয়ে বলছেন  "প্লিজ , প্রভু বোলো না । আমার প্রোফাইলে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাও । কেউ পাঠায় না জানো .....................আমাকে নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাভিচার সব করে ; কিন্তু  বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় না। “
আমি তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে বললাম “মানে ? আপনার কোটি কোটি ভক্ত তবু আপনি একা ? “

“বিশ্বাস করো চৈতন্য  চলে গিয়ে সেই থেকে আমি বড়ো একা।  লোনলি ।" 
চৈতন্য মানে নীলাচলের নিমাই নাকি বাঙালির চৈতন্য ? প্রশ্নটা বেয়াড়াভাবে আমার ঠোঁটে ঝুলে রইল।

তারপর  নারায়ণ অস্ফুটে বলে চললেন দিস ইজ কলি......কলি..... বন্ধু নেই কোথাও ....
টুক করে  জানলার পর্দা সরিয়ে কে যেন উঁকি মারল।
নারায়ণ বললেন , “কে  ওখানে ,যম ? “
তারপর আমার দিকে ফিরে বললেন , তোমাদের অবশ্য প্রত্যেকেরই  ইচ্ছে বা অনিচ্ছেতে হোক যমের সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে। হবেই। আমার সে উপায়ও নেই।”

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নারায়ণ। আর আমি যমকে  আমার প্রোফাইল থেকে আনফ্রেন্ড করার জন্য প্রাণপন  চেষ্টা করতে লাগলাম।
নারায়ণ ভ্রূভঙ্গী করে বললেন , “উঁহু,
পাসওয়ার্ড  না বদলালে হবেনা ।”
“সেটা কী ? “
“ডেডিকেটেড ভালবাসা , ইয়ার! এর কোনও বিকল্প নেই। হতে পারেনা। সব গ্যালাক্সিতেই তাই।”

আমি গাঢ় ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

প্রভাত চৌধুরী,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


 

৫ টি কুশলসংবাদ

 

১.

দ্বারদেশে যিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন , তার কাছে

যে কুশলসংবাদটি আছে , সেটির সঙ্গে

দরোজার কোনো সম্বন্ধ নেই ,পুরোটা-ই

জানলা-সম্পর্কিত , জানলার পর্দার  রং যতই

যতই হলুদ করে রাখো না কেন

জানলার বাইরের বেড়ে ওঠা মাধবীলতার

সবুজ রং ছড়িয়ে পড়ে ঘরের মেজেতে

সেই সবুজজল টলটল করে ঘরময়

 

টমটমে ওঠার আগে চাবুকটির অবস্থান

জেনে নিতে হবে

এই চাবুকটি যতক্ষণ আপনাকে সঙ্গ দেবে

কুশলসংবাদগুলিও সঙ্গে থেকে যাবে

 

 

 

২.

দিকনির্ণয়ের যন্ত্রটির কাছে যে কুশলসংবাদটি

আছ, সে জানিয়ে দেবে

তটরেখা আর কতক্ষণের পথ

আর সেই কুশলসংবাদটি আত্মপ্রকাশের জন্য

ব্যবহার করে একটা ধাতবঘণ্টা

আমরা ধাতুবিদ্যা সম্পর্কে অজ্ঞ হতে পারি

কেননা আমরা জানি অজ্ঞতার অবস্থান বদল

হলে চোখ ফোটে , ফোটা চোখে

সে সব কিছুই নতুন দ্যাখে

 

কুশলসংবাদেরা কখনোই বাদানুবাদে

জড়িয়ে পড়ে না , তারা ভাঙা গ্রামোফোনের মতো

সুখী গৃহকোণে শুয়ে পড়ে

 

 ৩.

কুশলসংবাদটি থেকে যখন কোনো গুরুগম্ভীর

আওয়াজ শুনতে পাবেন কখনোই ' গর্জন '

শব্দটিকে কলমে ঢুকতে দেবেন না

নির্জনে বসে ' দশমূল ' -এর গুণবিচার

করুন আর পাঁচমিশালি চিন্তা নিয়ে

একটি প্রবন্ধ রচনার কথা ভাবুন

আমি পঞ্চব্যঞ্জনেই তৃপ্ত থাকতে চাই

 

' ক ' বর্ণটি কামরাঙা , ' জ ' থেকে জেব্রা ,

' প ' থেকে পুলক , ' ম ' থেকে মাছরাঙা 

এবং ' স ' থেকে সংঘকে গ্রহণ করে

আমি আমার প্রোফাইল দেখিয়ে দিলাম

 

এই দ্যাখোনাটিকে কুশলসংবাদ বলে মেনে নিন

 

৪.

আমরা সম্ভবত জানি না কুশলসংবাদদের রান্নাঘরটি

একান্নবর্তী , আর সেই রান্নাঘরের দরোজায়

একটি ঘণ্টা আছে , খাবার তৈরি হয়ে গেলেই

সে নিজে নিজে বেজে ওঠে

তাকে বাজাতে হয় না , এসব অল্পকথাকে

কেউ যদি গল্পকথা বলেন

কুশলসংবাদ কখনোই প্রতিবাদ করবে না

 

কুশলসংবাদটি বিনাবাক্যব্যয়ে রান্নাঘর থেকে

বেরিয়ে এসে বৈঠকখানাঘরে

সেখানে অনেক গল্পকথার সঙ্গে দূরত্ব বাঁচিয়ে

বসে পড়বে

 

 

 

৫.

প্রতিটি ঝুলবারান্দার কিছু ব্যক্তিগত কুশলসংবাদ

থাকে , তার সন্ধান পাবার জন্য

কোনো টংকারের প্রয়োজন নেই

এমনকী কোনো ধর্মশালাতেও যেতে হবে না

সর্বনামগুলিকে পাশে সরিয়ে রাখুন

লক্ষ রাখুন নির্দিষ্ট সেই প্রতিফলনের দিকে

'মৃদঙ্গ যে একটি যথার্থ বাদ্যভাণ্ড '

এই কুশলসংবাদটিও কিন্তু

ঝুলবারান্দার অজানা নয়

শংকর চক্রবর্তী,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


কল্পলোকে তারা



পকেট ভর্তি মৃত্যুর গন্ধ আর আলো ছায়া নিয়ে

পালাতে পালাতে এক গাছের ওপর উঠে ঘর বানিয়েছ

 নীচে অগুনতি কালো পিঁপড়ের দল

        ছাতা মাথায় দাঁড়ানোর সদাহাস্য জল্লাদের ছেলে

 একটা কাঠবিড়ালি জুলজুল চোখে দেখে নেয় সবকিছু 

স্বর্গ থেকে দূরে ওই চিনতে না পারা নীল পাখির পালক 

বইয়ের ছবি থেকে উঁকি দেয় অশ্রু চিহ্ন আঁকা মুখগুলি

        হে ধূসর প্রিয়ভাজনাসু

গাছের স্তব্ধতা বেঁচে থাকে বুঝতে পেরেছো তুমি

ঘরের স্তব্ধতা গাছ বুঝে নিল আজ

অর্ধেক বানানো এই শহীদ ফলকে 

কিছু আঁকি বুকি দেখেছেও শুধু আগামী আশ্বিনে।

শিবাশিস মুখোপাধ্যায়,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 

 


কফি শপের কবিতা 



 কফির ফেনায় একটা চকোলেটে লাভ সাইন সার্ভ করে এখানে,

 স্ট্র ডুবিয়ে ভেদ করো সে রহস্য, সেই পান পাতা; 

যে জানেনা তার কথা বাদ দাও, যে জানে সে জানে

 কতটা গাঢ় চুমুকে সাড়া দেয় সান্ধ্য  কলকাতা 


সাড়া দেয় ঠোঁটে জিভে, হাতের আঙুলে, সাড়া জেগে ওঠে গাছে বৃন্তে ফুলে।

 উবেরের কালো কাঁচে জুলাইয়ের বৃষ্টি ছোঁড়ে তির 

তারপর থেকে সেই বাড়ি ফেরবার পথে সন্ধ্যেবেলা রোজই ওঠে দুলে 

গরম কফির মতো ধোঁয়া ওঠা দুখানা শরীর।

তুষারকান্তি রায়, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 

সুর


শূন‍্যে ঝুলিয়ে রাখা আশাবরীর কোমল 

আমার হেমন্তের মাঠ 

ভিড় বা কোলাহলের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে চলে যাই 

পলাশ বনের নির্জনে 

আলতো সুরে দুলে ওঠে প্রান্তরের নামাবলি

নিবিড় সুতোর টানে খুলে যায় 

গুটিপোকার উল্লাস


ভুলে যাই অনালাপ,  কুয়াশা, মেট্রোর এসি

 

            

 ধুনি


কয়েক পশলা বৃষ্টির পর আকাশ সহজ হলো  ;  একদল তরুণ পাখির মতো 

হইহই করতে  করতে হঠাৎই 

উড়ে এলো পালক - বাতাস

ছুঁয়ে গেলো জোড়াবট, পাতা, 

নেমে আসা ঝুরি 

নিকোনো মাটির দাগ, ঘন বনভূমি

টুকটুকে রঙ নেচে বেড়ালো 

কিশোরী কুসুমবনে পাতার চিবুকে 

হাওয়া এসে আলগোছে 

উড়ে গেলো বকের পাখায় 

নদীদের চরে চরে,  পাতার মাথায় 

রাতজাগা শ্লোক বলে গেলো আগমনী সুর

তারপর,  আমাদের বাড়ির উঠোনে 

ভোরের পূরবী মাখা 

থোকা থোকা শিউলির ছাপ রেখে

উমা এলো ঘরে 


ধুনি জ্বলে ধিকিধিকি  ---- 

  ঘরে এলো অকাল বোধন 

        

 

 জল নূপুর


জলপ্রিয়া তুই মল্লার নাচে দক্ষ

লিখে পাঠালাম ছোট ছোট দানা বৃষ্টি 

ভিজে যায় যদি কাগজের আঁকা বিদ‍্যুৎ

কী নিখুঁত দ‍্যাখ অকালবেলার অক্ষর


কবিতার সুরে ভেজা কথা অনুষঙ্গ 

জলের শব্দ  এখনও লিখছে গল্প 

দিগন্ত চিরে ছিটকে পড়ছে বজ্র

শব্দের জল ছুঁয়ে যাক নদী সঙ্গম


চোখের তারায় সংকেতে জ্বলে তিস্তা 

প‍্রতিদিন লিখি শিরোনামহীন ছন্দ 

নদীয়ালি চরে পুরাতন প্রেম বন্দিশ

জল নূপুরের টুং টাং সুর বিস্তার 


       

অমিত সরকার, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 



 তিনটি কবিতা 


বোর্ডগেম

 

মৃত সন্তানদের নিয়েই আমরা এখন খেলা শুরু করতে পারি। এতদিন তো জানতামই না কীভাবে অন্ধকার লাফিয়ে লাফিয়ে উঠে আসে সিঁড়ি বেয়ে শরীরগন্ধ সনেট কীভাবে জুড়ে দেয় নেলকাটার, বেবিসোপ আর পুরনো সোয়েটার ?  এইসব শুধুমাত্র জানতো ধারালো স্ক্যালপেল। এইসব জানতো স্টিলরং মর্গের টেবিল  ছক্কা  আর ঘুঁটিদের নিরুদ্দেশ মিছিল শুধু হেঁটে যেতো স্কাই-ব্লু চাদর থেকে কাচদরজার করিডোর  পেরিয়ে  হাসপাতালের পাশেই তাদের ঘরবসত দেখে ভয়ে জমে যেত মেরুদাঁড়া । ইড়া ও পিঙ্গলা ফেটে শ্যামশ্রী শীত  নামত ভূমিতেজবাকুসুম ড্রিপ নামত টুপটুপ টুপটুপ । আমরা ভুলে  যেতাম আজ শান্তিনিকেতন  শান্তিনিকেতন খেলার দিন । ভুলে যেতাম হলুদ স্কুলবাস আর আশিয়ানার স্টপেজে থামবে না। বরং একটু পরেই মেঘ নামবে টিফিনবক্সের গর্ভে । পর্দায়  লেগে থাকা সন্তানের ময়লা হাতের ছাপেরা নিশান হয়ে  উড়তে   শুরু করবে উদ্ধারণপুরে।  শিকারীদের বর্ণপরিচয় ভুলে,  ছেঁড়া বোর্ড  জুড়ে দলবদ্ধ সাপেরা    পাক খাবে আর বমি করবে সংখ্যাদের আলমারির পাশ থেকে ডানা মেলে উড়ে যাবে লাল বল আর ছেঁড়া ফয়েলের স্ট্রিপ। তিন ছক্কা পুটের সমস্ত  মনোযোগ চুরমার করে একটা ভয়াবহ কণ্ঠস্বর বলে উঠবে,  ‘বাপিএকটা ইঞ্জেকশন দাও। আমি আর সইতে পারছি না।      

 

এসোতোমাকেও চাল দিতে হবে। কারণএতক্ষণে তুমি জেনে গেছ শিশুদের চেয়ে নিষ্ঠুর আর কেউ নেই   


সম্পর্ক 

 

অন্য কাউকে নয়তোমাকেই বলছি শোনো। আমি এইমাত্র নেমে এলাম অন্ধকার সম্পর্কের ভেতরে। কালো খনিসুড়ঙ্গের  মধ্যে গতকাল হঠাৎই ফেটে গিয়েছিল আষাঢ়স্য প্রশম দিবসের মেঘ। হিংস্র বৃষ্টিরা দলবেঁধে বেরিয়ে এসেছিল পঙ্গু  জন্তুদের     লালা থেকে। আমার সামনে কোন দরজা নেইজানলা নেইশুধু ঢালু জঙ্গল থেকে শোনা যাচ্ছে তীব্র ডাইনোসরদের  শীৎকার। সেই ক্ষত বন্ধ করতে আজ আমি নেমে এসেছি হরিণদের ভেতরে। সেই ক্ষত উন্মোচন করতে আমি আজ নেমে  এসেছি কচি বৈষ্ণবীদের অলকাতিলকায়। এখন আমার সামনে শুধু দুলক্ষ বছর ধরে বয়ে চলা গর্ভভার। সৌরঝড়ের ক্রমশ ফুলে ওঠা। ভবিষ্যৎ অক্ষরদের দিকে ঈশ্বরের চোখের মত তাকিয়ে রয়েছে হেলমেটে লাগানো হলুদ আলো। চারপাশ ক্রমশ  চেপে ধরছে মধ্যবিত্ত জল। বেলজারের মধ্যে থেকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সিলভিয়া প্ল্যাথ। দূর থেকে ভেসে আসছে  খোলামুখ বার্নারের সোঁসোঁ আওয়াজ। গুঁড়িয়ে যাচ্ছে আমার সমস্ত পাথর-ডায়েরি আর ট্যালিসম্যান। ডাকিনীবিদ্যা ভুলে তুমি কী এইমাত্র হেসে উঠলে একতারায়গৌড় মলহারে ? দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে অক্সিজেন আর আমি ছটফট করছি আঁখিপাতে।  কফিকাপ থেকে উঁকি মারছে তেকোনা পাখনা আর বলির আরতি। এইবার চার্চের গং ঘোষণা করবে জিরো আওয়ার আর আমাকে হত্যা করবে তোমার চোখের স্ট্রিকনিন। 

কেননা একমাত্র আমাকেই তুমি একদিন প্রকৃত ভালবেসেছিলে    


পাসওয়ার্ড

 

পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে গেলে

পুরনো ছবিদের ধারণা বদলে যায় 

বীজকোশ খুঁজতে খুঁজতে 

রাফখাতায় উছলে ওঠে প্রজাপতিদের লাশ 

গা ছমছম মেয়েমাছেদের কাছে গেলে দেখি

দুপুরের ছেঁড়া বোতামঘরে আটকানো আলোর সেফটিপিন    

 

চাবি খুঁজতে খুঁজতে উঁকি দিই ভ্রমরকৌটোয়

দেখি স্বপ্নের রেলিং ধরে নেমে যাচ্ছে ধারাবাহিক পাথরেরা

হাওয়াদের ভারী পাছা জড়িয়ে চেক চেক শিফন

রোদের লটকন ঝুলছে একচিলতে ব্লাউজের পিঠে   

 

সনাক্তকরণের মন্ত্র কোথায় যে লুকিয়ে রেখেছি   

নিঃসঙ্গ নদীদের ডানা

অথবা মীনরাশির জানলায়  

আজ আর কিছুতেই মনে পড়ছে না…      



Monday 19 October 2020

মাধবী দাস,কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 



রক্তপাত


তোমার চোখের জল আমার বুকের রক্তপাত 

বট-ঝুরিটির পাশে রিদমিক আলো ফেলে ফেলে

উদাস কোরো না 

বুক পোড়া ঘুড়িটি তো ইমোশন ছিঁড়ে 

কবে উড়ে গেছে...


ঝলসানো আয়নার ঠোঁটে লাইট ক্যামেরা ফেলে ফেলে 

টিউলিপ আঁকার দিনে ঘন হয়ে আসে মিড-শট

জিরাফের মতো মাথা তুলে

বিবর্ণ ক্যানভাসে দেখি বিষণ্ন ফানুস


আলোর আন্দাজ ভুলে গিয়ে

অবিভক্ত দূরত্বের মানচিত্র আঁকি


মরতে মরতে বলে যেতে চাই

বন্ধ হোক গণ্ডিবাঁধা জীবনের সব রক্তপাত

সার্থকতা পাক এ মানুষ-জন্ম।


শ্যামশ্রী রায় কর্মকার, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


নাম

শ্যামশ্রী রায় কর্মকার 


মানুষ চেনার চিহ্ন খুঁজে খুঁজে বেলা বয়ে যায় 

কী দিয়ে চিনব তাকে

নাম?

লক্ষ্মী , লিলিথ, জন , মুহাম্মদ, রাম

নামের গোপন ভারে কারো কারো পিঠ ভেঙে পড়ে 

কারো কারো জাদু আয়নায় 

পলকে  বদলে যায় চেনা অবয়ব 


নামের শিকড় 

বেয়ে বেয়ে নেমে যাই অতীত গহ্বরে

একেকটি ইশারা  যেন

কালখণ্ড, স্রোত 

একেকটি শব্দের কাছে বারবার ফিরে যাই

শুনি

অহম, ঝড়ের রাগ, বিষাদ ও বিদ্যুৎ 









 

 

বিকাশ দাশ, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


বীর্য পুরুষ


 

যজ্ঞের অগ্নি থেকে

বেরিয়ে আসছে যে পবিত্র শব্দের উচ্চারণ

তাকে ধারন করার মতো দীক্ষিত মানব নেই দেখে

যিনি এগিয়ে এলেন তিনি এক বীর্যবান কবি।

এই বিরাট ভুবনের দায়ভার নিয়ে

বেদ ব্রাহ্মণ রূপে জাগ্রত হলেন সমাজে।

 

অথচ যিনি মহামন্ত্রোচ্চারণে কমণ্ডলু হাতে  

প্রলয় ওঙ্কার হয়ে দাঁড়াতে পারতেন

তিনি মৌনব্রতে ব্রহ্মকে তেজ রূপে ধারনে ব্যস্ত।

দধীচির যে হাড়, একদা যে সত্য রচনা করেছিল

সে বজ্র সংকল্পচ্যুত হয়ে

ভেসে যাচ্ছে অনন্তের গভীরে 

বহু বীর্যবান হারিয়ে যাচ্ছে ভুল ঠিকানায় ।   

 

অথচ একমাত্র বীর্যবানের বসার কথা ছিল পদ্মবেদীতে

আসন্ন যজ্ঞের পুরোহিত হয়ে ; 

সেই সংকল্পের চুল্লিতে এখন আগুন নির্বাপিত।  

 

যার ধীরজ কণ্ঠের মন্ত্রোচ্চারণে সমুদ্র থেকে

সজল শরীরে উঠে আসত মৎস্যগন্ধা ; 

অনুত সুখের ভেতর কবিতার বর্ণগুলি

দম্ভের সৌন্দর্য হয়ে ফুটে উঠত দু- একটি তারায় ; 

তিনি " জবা কুসুম সংকাশ্যং " - মন্ত্রোচ্চারণের আরম্ভ ছুঁয়ে

শব্দকোষ সাজাচ্ছেন চটুল ইস্তাহারে ; 

অবশেষে নতজানু হয়ে

আস্বীকার করলেন সমস্ত দায়ভার ।  

 

 

আগুন মায়ায় ছায়া ফেলে


কুসুম
  নিও না  কেউ  হাতে 
এখানে
  চুলের ঢেউয়ে কুসুম ভাসানো মানা 
আমাদের কুসুমিত মেয়েরা
 
বহুকাল
  পুষ্পরাগে সাজিয়েছিল দেহ 
মুখে লোধ্র রেণু ; হাতে লীলাপদ্ম
  ;
সেই শৃঙ্গার দেখে সাদা দেবলোকের ছিল অপাবৃত লোভ ।

আমাদের পুরুষেরা কুসুমের আগুনকে
 
বহুকাল বুক পেতে নিয়েছিল
 
আগুনের মশালকে হাতে নিয়ে হেমন্তের যুবকেরা
 
অরণ্যে অরণ্যে জ্বেলেছিল হা-হা দাবানল।
 

আমাদের মেয়েরা দেবদাসী ছিল না কখনো
আমাদের পুরুষেরা আসলে মর্ত্য দেবদূত।
 
ওদের নিহিত প্রেম কুসুমকে ঘিরে
ওদের নিহিত
  প্রেম আগুনকে ঘিরে 
এখানে কুসুম ফোটে না তারপর।
 

এখানে আগুন নেই জেনো
আগুনের গোধূলি আলোয় কিছু মায়া জেগে থাকে
ছায়ার মতন চিরন্তন।