Saturday 27 June 2020

মধুবনী চ্যাটার্জী , কবিতা , সাহিত্য এখন বর্ষা, ২০২০




নীলকণ্ঠ

মধুবনী চ্যাটার্জী

আকাশের গায়ে বড়ো বড়ো ফাটল ধরেছে । 
খরায় যেমন মাটি ফেটে   শুকিয়ে আসা শিরা উপশিরার মতো 
এঁকেবেঁকে বয়ে চলে 
রুক্ষতা নিয়ে , 
 ঠিক তেমন ফাটল আকাশের গায়ে ।  
মাঝেমাঝে মনে হয় পলেস্তারা খসে পড়বে বুঝি ! 
হঠাৎ একদিন দেখা যাবে সমস্ত সভ্যতার গায়ে গুঁড়ো গুঁড়ো শুকনো আকাশ ! 
তাকে দুই হাতে বড়ো অযত্নে 
ঝেড়ে ফেলে আমরা চলে যাচ্ছি নিত্যদিনের কাজে ! 
মেঘেরা আজকাল জমাট বাঁধেনা , ঘর বাঁধে না , 
ঘনিয়ে ওঠে না আর । 
তারা এখন 
আধুনিক জীবনে আধুনা সম্পর্কের মতো  হালকা , অগভীর , ভেসে যাওয়া । 
আকাশের দিকে চোখ 
রাখতে ইচ্ছে হয় না । 
বড়ো মিথ্যে ওই নীল  , মিথ্যে ওই শরৎ চুঁইয়ে আসা আলো ! 
এই গভীর শ্রাবণে এমন আলোর  অশনিসংকেত , 
এমন আগুনে নিঃশ্বাস 
 ঘোষণা করছে আকাশের গায়ে ফাটল ধরেছে ! 
পাহাড়ের দেশে মেঘেরা নেমেছে সারে সারে
  বৃষ্টিদের সঙ্গে নিয়ে  ।  সেখানে একটা বিরাট জলাশয় তৈরী করেছে বৃষ্টি দিয়ে  !  তার উঁচু উঁচু প্রাকার , সেও মেঘেদেরই  । সেখানেই আষাঢ় শ্রাবণ অবিরাম ডুবসাঁতারের 
সুখ বিলাসে মগ্ন । 
আর এদিকে জ্বলন্ত ফুটিফাটা আকাশ নিঃস্ব দুহাত তুলে অভিশাপ দিচ্ছে প্রেমহীন বিশ্বচরাচর কে! 
কোনদিন তার গায়ের ওই ফাটল বেড়ে বেড়ে অন্তরীক্ষকে উন্মুক্ত করে দেবে , আর সেখান দিয়ে শত শত নক্ষত্র , জ্যোতিকণা , গ্রহ উপগ্রহ অবিশ্রান্ত ঝরে পড়ে ভাঙা কাঁচের মতো চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেঁথে যাবে পৃথিবীর দেহে !  ফালা ফালা হয়ে যাবে বসুন্ধরার  দেহ , যন্ত্রণায় চিৎকার করবে সে , যেমন করে চলেছে 
প্রতি নিয়ত ! 
বধির সভ্যতা নির্লিপ্ত মুখে 
তারার খণ্ডগুলি ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে চলে যাবে নিত্যদিনের কাজে ! 
তারা একে অন্যকে বুঝিয়ে নেবে কাল থেকে নক্ষত্র বিহীন ফাটল ধরা আকাশের নিচের এই মৃতপ্রায় পৃথিবীই তাদের ঘর ! 
সমস্ত অভিশাপকে বিষের মতো ধারণ করে নীলকণ্ঠ হয়ে বাঁচতে শিখেছি আমরা 
লোহিত আকাশের নিচে সদর্পে দাঁড়িয়ে  সভ্যতার জয়ধ্বনির উন্মত্ত প্রলাপে ।

2 comments:

  1. খুব সুন্দর লিখেছেন ম্যাম। ভালো থাকবেন।

    ReplyDelete
  2. অসাধারণ লাগলো.. Evabei মেতে থাকুন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে...

    ReplyDelete