ফাঁদ
আজকাল
সপ্তাহে একদিন বাজার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসেন বিকাশ
বাবু। গত এক সপ্তাহ যাবৎ এই বাজার এলাকা কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায় পড়েছে।
সাত সাতখানা সাদা বৃত্ত টপকে হাত দুটো স্যানিটাইজেশনের পর সুনাগরিকের
মত বাজারে প্রবেশ করলেন বিকাশ বাবু। বাজারে সব বিক্রেতাই এই সময় এক তীব্র
প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। কে কার ঝোলায় কত জিনিস গছিয়ে দিতে পারে।
তাদের এই রেষারেষির জেরে বিকাশ বাবুর মত অনেকেরই নাজেহাল অবস্থা। বহু
ক্রেতাকেই দশ বারো কিলো ওজনের ভার বইতে হচ্ছে। আবার অনেকে বাজারে রসদ
ফুরিয়ে যাবার ভয়ে বাড়তি জিনিস সাঁটিয়ে নিচ্ছেন। ফলস্বরূপ ঝোলার ওজনের
গ্রাফ উর্ধমুখী।
দু হাতের দু দুটো ঝোলায় পাহাড়।আর তৃতীয়টায় দু কিলো চারশ গ্রামের মাছ। এই নিয়ে বেরনোর মুখে বাধা পেলেন বিকাশ বাবু।
--- কাকু আপনাকে তিন নম্বর গেট দিয়ে বেরোতে হবে। ফরমান শুনে বুঝলেন,এ
সোশাল ডিস্টেনসিং। অগত্যা প্রায় কিলো বিশেক ওজন নিয়ে তিন নম্বর গেটের
দিকে পা বাড়ালেন। বাজারের ভেতরেই চার পাঁচবার হল্টের পর, বাজারকে আলবিদা
জানিয়ে রাস্তায় পড়লেন তিনি।
--- আরে কাকু
আপনি? কি খুঁজছেন? একজন কম বয়সী ছেলে একেবারে বিকাশ বাবুর মুখোমুখি।
ছেলেটার প্রশ্নে কিছুটা অবাক হয়ে বিকাশ বাবু একটা রিকশা ধরার অভিপ্রায়
জানালেন।
--- কতক্ষণ এই কাঠফাটা রোদে দাঁড়াবেন?
আমি থাকতে আপনার চিন্তা কিসের? দিন আমাকে ব্যাগগুলো,আমি নিয়ে যাচ্ছি।
আপনার বাড়ি খুব ভালো চিনি। আপনি ত রায়পাড়ায় লোকসেবা আবাসনে থাকেন।
আমাকে না হয় রিকশা ভাড়াটা দিয়ে দেবেন।
বিকাশ
বাবুর কোন আপত্তি, দ্বিধাবোধ- কিছুই টিকল না। একরকম জোর করেই তাঁর দু
হাতের দুটো ঢাউস মার্কা ওজনের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে রিকশার চাকার মতই গড়াতে
আরম্ভ করল ছেলেটা। ঠিক সেই মুহূর্তে, বিকাশ বাবুর প্রায় আড়াই কিলো মাছের
ঝোলাটা যেন শাক ভর্তি মনে হতে লাগল। কিছুক্ষণ পর ছেলেটা বাড়ির শর্টকার্ট
রাস্তায় ঢুকে পড়তেই, তিনি বুঝলেন ছেলেটা তার অনেক আগেই বাড়ির গেটে পৌঁছে
যাবে। মনে মনে ভাবলেন,দয়াময় আছেন।
-- একি! দেড় ঘণ্টা বাজার ঘুরে শুধু মাছ নিয়ে ফিরলে?
-- আর বোলো না,তাড়াহুড়োয় আমি টাকা নিতেই ভুলে গেছি। ঘাম মুছতে মুছতে
রান্নাঘরে মাছের ঝোলাটা ফেলে রেখেই , নিজের একরাশ নির্বুদ্ধিতাকে কোনরকমে
আড়াল করে সোজা বাথরুমে ঢুকে পড়লেন বিকাশ বাবু।