Sunday, 18 October 2020

নিলয় নন্দী, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 

 


 

আবারো প্রেমের কবিতা

আমাদের মধ্যে কোন ভালবাসা নেই।

নিম্নবিত্ত সংসারে ভালবাসা থাকে না
উচ্চবিত্তের সংসারেও ভালবাসা থাকে না
প্রবণতা থাকে...
দু একটা অভিমান এসে সে' প্রবণতাকে দূরে
কোন নদীর ধারে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়
সেখানে খিদেও এসে দাঁড়ায়। অন্ত্যজ খিদে।
একে অপরের প্রতিবিম্ব যেন
যেন সমর্পণের পাণ্ডুলিপি...

স্নেহের অভাব নেই
লোভের অভাব নেই
দু এক টুকরো কাদা ছোঁড়াছুড়ির মত
হা রে রে রে ডাকাতিয়া ডাকের মত
যদি ভালবাসা...

নির্লজ্জের মত কেন যে শুধু প্রেমের কবিতা!

পল্লব তেওয়ারী , কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


ফ্যারাও



নিশ্চল পাথরগুলো
মধুর সম্পর্কের আয়োজনে
সাজিয়ে রেখেছে আজও
হৃদপদ্মে স্ফটিকস্মারক
                    শব্দের প্রপঞ্চব্যঞ্জনে।

শোয়ানো মমির পাশে তাজাফুল
ভালোবাসার সব আখরগুলো
জেগে আছে অতীত স্মৃতিতে
সরলশিশুর মতো পাশে শুধু
                   নতজানু তুতেনখামেন।

মারুফ আহমেদ নয়ন, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


অবহেলা



মানুষ বলেই কি এমন। কোনো অবহেলা সহ্য করতে পারি না। যে ঘৃণা করে তার নিকটবর্তী হতে চাই। যে পাথরের গায়ে সূর্যের আলো ধরে না তার কাছে যাই। জলে দু-পা ডুবিয়ে বসে থাকি। মৎস্য শিকারের বাহানায় ছিপ ফেলি। জানি কোন সাড়া শব্দও পাবো না। এখন তোমার থেকে লুকিয়ে থাকার স্বভাব। তোমার নাম নেয়া নিষেধ। নিজেকে এখন ভূতগ্রস্ত বলে মনে হয়। নিবিড় পরিচর্যায় থাকি। খোলা মাঠে বসে থাকি। আয়নার সামনে হাসি-কান্নার অভিনয় করি। 
দেখি আমি কেবল মোমের মতো গলে যাবার সক্ষমতা নিয়ে বেড়ে উঠেছি। মাবুদ আমাকে করুণা করে কেনো মানুষ বানালে।

দীপঙ্কর সরকার , কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 প্রত্যয়   


 সম্ভাবনা জেগে থাকে অলীক হাওয়ায় ওড়ে
দুরন্ত অভিলাষ ।আলসেমি মুছে যায় প্রচণ্ড
রকবাজ । ক্রমে রোদ্দুর ঘনায় মেঘেরা অদৃশ্য
যখন ।উঠোনে আলোক মালা খেলে ডালিম
গাছের ছায়া খাড়া এক পায় , ডাহুক ডাকা দুপুর
যেন অন্তিম শয্যায় । তরূণ কবি শুষে নেয়
সমূহ নির্যাস ,আগামী শতক কবিতা হবে
নিটোল তারুণ্যময় ।

বিবেকানন্দ মণ্ডল, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


অক্ষয় ঠিকানা

   
পিনকোড বদলে 
ঠিকানা বদল করা যেতে পারে
তবু , চিঠির অভিমুখ কিংবা
নিভৃত রাতজাগা কথার গতিমুখ
                           বদলানো যায় কি?

মূর্তির মুখ বদল হলেও
ইষ্ট বদল হয়না কখনো ...

আমাদের অনেক কিছু বদলে যায় --
মনের আকাশ বদলায়
          পাখির উড়ান বদলায়
                     সময়ের চাদর বদলায়
তবু, দু-চার কলি কথা
অক্ষয় হয়ে থেকেই যায়
                   পাতার সবুজে
                              ফুলের অনুরাগে , আর
এলোমেলো ঠোঁটে বোনা পাখির নীড়ে ।

ঠিকানা বদলালে রাস্তার চলন বদলায়,
ছায়া-রোদের রূপরেখাও বদলায় , তবু
হৃদয়ের বাসায় ভালোবাসার আসবাব আর
পিয়ানোয় বুনে ফেলা নিভৃত প্রাণের গজল
                     বদলে ফেলা যায় কি কখনো ?


চিরঞ্জিৎ বৈরাগী, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০

  

 


 

 

তোমার দেখানো আলো

দিন ফুরিয়ে আসছে যখন,
ভেবেই নিয়েছিলাম
আর হয়ত স্টেজে ফেরা হবে না!

একজন ছিল,
যার পাসওয়ার্ড পাওয়ার
জীবনের অপরাহ্নে সাক্ষাৎ ঈশ্বর
যার ঠোঁট ইশারায় পৃথিবীটা আকাশ
নক্ষত্ররা চিরপ্রদীপ!

জাতীয় সঙ্গীত গাইলাম
কিন্তু অতি সুক্ষ পর্দায়
মাথাটা হঠাৎ ঝাঁকুনি দিল

কোথাও শান্তি নেই
একমাত্র তোমার দেখানো আলো, যতটুকু__

তার বাইরে কেউ নেই

রঞ্জন চক্রবর্ত্তী, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০, অঙ্কনে মঙ্গলদীপ সর্দার,

 


একটি রূপকথার জন্ম

   

১.

হয়তো কালের কথকের কথাই সঠিক ছিল -
নুড়ি বিছানো শুকনো নদীর খাতে জলের শীর্ণ রেখা
চকচক করছিল শুক্লা চতুর্দশীর অদ্ভুত মায়াবী রাতে,
তারপর স্বপ্নের মতো কেটেছিল অবশিষ্ট রাত,
একটা খুব চেনা ছবি, একটা খুব পরিচিত মুখ
একটা অচেনা দৃশ্য, একটা অজানা পথ -
এ সবই সত্যি হতে পারত – কিন্তু পারেনি,
তাই একটি রূপকথার জন্ম হয়েছে বিপরীতক্রমে

২.

হয়তো ঝরা সময়ের গান নিছক গান নয় বলেই
দিগন্তরেখার পারে শোনা যায় বাঁশির করুণ সুর
বুকের অর্ধেকটা জুড়ে গোধূলির রঙ – মুছে যেতে যেতে
নিত্যদিনের অভ্যাসমতো ঘরে ফিরে আসি,
আর কোনও কথা নয় – নিঃশব্দ পদসঞ্চারে সন্ধ্যা আসে
আবছা আলোয় মনে ভাসে একটা অন্ধকার মুখ,
জ্যোৎস্নায় থই-থই রাতে পায়ে-পায়ে যাই পদ্মদিঘির ঘাটে
টলটলে স্বচ্ছ জলে দেখা যায় ঝক-ঝকে রুপালি চাঁদ -
এখন মাঝে-মাঝেই ঘুমের মধ্যে ছোটবেলার স্বপ্নে ঢুকে যাই
আবার জেগে ওঠার আগেই ইচ্ছেগুলো ঘুমিয়ে পড়ে

৩.

সারা জীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য হাইওয়ে ধরে
দীর্ঘ পথ হেঁটে গেছি নতুন জনপদের অভিমুখে
অথবা হেঁটেছি বৃথা, ঘুরেছি উদভ্রান্ত একা -

দিনবদলের পালা সকলের অগোচরে ঘটেছে বলেই
দিবা-রাত্রির বিধিবদ্ধ ইতিহাস লেখা যায় না সবিস্তারে,
সেই সব ঘটনা লোকের মুখে মুখে রূপকথার গল্প হয়ে ফেরে

 অঙ্কনে মঙ্গলদীপ সর্দার

গৌতমকুমার গুপ্ত, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


আলোর ভাষা

আলগোছে নামিয়েছো আলো
যেন পড়ে না যায়
আঁচলে বেঁধে রাখো ভাষা
যেন হারিয়ে না যায়

ভালবাসা তেমন কাঁচের ভঙ্গুর হলে
নিম্নবিত্ত হতে হয় নিজস্ব প্রমুখে
লোহার নিরেটে দৃষ্টিটুকু না হয় থাক
শ্রবণের অবিশ্বাস আরো বায়ব হোক

আগোছালো নয় শরীরী কবিতা
অলংকারে সাজানো নখের লাবণ্য
চুলের কৃষ্ণবর্ণ পেশী ঠোঁটের স্থাপত্য
শাড়িতে জমানো থাক পয়স্বিনী সুধা

হুকে গাঁথা অন্তর্বাসে যন্ত্রণা ফুটে থাক
বোতামের পরিধিতে আঙুলের মিহি পেষণ
ভালবাসার সুখ দাহ্য হলে চোখে ঘুম পায়
আলোর ভাষায় একটি সুপুষ্ট চুম্বন রেখে আসে

তীর্থঙ্কর সুমিত, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

  


ভোকাট্টা



হয়তো ভুলে যাবো
টিকে থাকার লড়াইয়ে আমরা সবাই
পা বাড়িয়েছি
হয়তো ভুলে যাবে
জীবনের এক একটা ধাপে
ত্রিভুজ - চতুর্ভুজ - বৃত্ত
সবই হাত ধরে শেখা
অথচ সেই হাতেই আজ ...

ঘুড়ি উড়ছে

আমরা সমস্বরে ভোকাট্টা ___

মৃত্তিক গোপী, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 রাঙাবউ



কিছু শালিক এসে রোদের ঘ্রাণ নিয়ে যায় আউশ ধানের ভিতর থেকে,,
কিছু ঘুম ছুটি নিয়ে বিশ্রামে এলিয়ে দিচ্ছে গা
এ দুপুর বিবর্ণ রঙ মেখে রাঙাবউ হাঁটে দূরের দিগন্তে 
কাছে আসে গন্ধময় একপশলা সোহাগ নিয়ে।
চৈত্রের দুঃখগুলোকে কাছে নিতে গিয়ে, 
আমরা ভাগাভাগি করেছি কতক নিবিড় কথোপকথন ।
বেলাশেষে মেঘটুকু আকাশে শুয়ে  বিভোর হয়ে যায় ভীষণ 
সূর্যের রঙ মেখে গাঢ় লাল হোক এ সন্ধ্যার আকুতি,সুখ, প্রেম।
আধো আধো স্পর্শে বিলীন হয়ে যাও , ঘনতর ছায়ায়, মায়ায়।
রাঙাবউ, শালিকজন্ম পান করো,শালিক হও
আমাকে ঘ্রাণ ভেবে ভালোবেসে যাও।
চঞ্চুবিলাসী হলুদ মেখে দাও, নিগূঢ় সঙ্গোপনে।


নতুন লেখা নতুন কবিতা, বই আলোচনা, পৃথা চট্টোপাধ্যায়, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 




যে কবিতা জলোচ্ছ্বাসে আছড়ে পড়ে বহুরৈখিক বিচ্ছুরণে উজ্জ্বল (কিছু বই কিছু কথা )



এই বছর (অর্থাৎ 2020) কলকাতা বইমেলায় সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ও মল্লসাহিত্য -ই-পত্রিকার সম্পাদক অভিজিৎ দাস কর্মকার আমাকে পড়তে দিয়েছিল এই বইমেলায় প্রকাশিত তার তিনটি কবিতার বই 'জিরো দশমিক', '১টি অরাজনৈতিক স্টালিনসন্ধ্যা', ও 'বিবস্ত্র শব্দের Soliloquy'। কবিতা লেখার সুবাদেই অভিজিতের সঙ্গে আমার পরিচয়। আমি কবিতা পড়তে ভালোবাসলেও এই বই তিনটি পাওয়ার সাথে সাথেই এর কবিতাগুলি পড়ে ফেলতে পারি নি। ধীরে ধীরে পড়েছি। কারণ 'অক্লান্ত ব্যাকরণ শাড়ির কুঁচির শিউলি গন্ধে প্রত্যয় প্রত্যাশা আর প্রতীক্ষার অব্যক্ত কথা' বলে অভিজিতের কবিতা। তার কবিতার রূপ, শব্দের ব্যবহার, উপস্থাপনা ভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের । তার কবিতা পড়ে সাধারণ আধুনিক চিন্তাধারার কবিতা পাঠের পাঠককে থমকে যেতে হয়। 'সমস্ত দুপুর থেকে অভিসন্ধি ব্যাসার্ধ ক্রমশই নাব্যস্রোতা।/ শ্বাসকষ্ট দরজায় knock করছে , কদর দান may I come in?' কবিতাগুলিতে এই সময়ে দাঁড়িয়েও তথাকথিত আধুনিকতা নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু সে বলতে চেয়েছে বলে আমার মনে হয় যখন পড়ি 'ঝড়ের পরে আলো ফুটলো ব্ল্যাকস্টোন আগরবাতির গন্ধে' অথবা 'নগ্ন নারীরাও সোহাগিনী/ঈশ্বর আসেন, পকেটে খুচরো সময়/এক একটি বীজ মধুমেহ/ সমাজ রোগ'... , স্থিতাবস্থার প্রথা ভেঙে কবিতার শব্দগুলি চেতন ও চিন্তনের ক্ষেত্রে ক্রমাগত সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসের মতো আছড়ে পড়ে বহুরৈখিক ভাবনার বিচ্ছুরণ ঘটায়। 'মে মাসের বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে... অক্ষরবৃত্তের আহ্নিকতায় অভিযোজিত হচ্ছে বয়স' তা সে স্পষ্ট দেখতে পায় । '৬৮০৪৪ আপ খড়গপুর ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার ' এবং তার 'জামার মাননীয় সাদা রংটি অভিমানে ক্রিয়ার কাল' হয়ে দাঁড়ায়। 'ধ্রুবতারার সমকক্ষ একটি ফড়িং' একথা অনায়াসে লিখে ফেলতে পারে সে। তার কবিতার শব্দ ও চিহ্নগুলি মনের মধ্যে এক দীর্ঘ চিন্তার সূত্রপাত ঘটায়। চিত্রকল্প তৈরি হয় এবং তা খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে এক নতুন চিত্রকল্পের সৃষ্টি হয় । 'কয়েকটি বিষয় আর পরিপূরক বৃষ্টিগুলো শিল্পবোধসম্পন্ন', 'কাশির সাথে মিশছে লুব্ধকের ছায়াপথ', 'এরপরও কাল বিকালটা পিথাগোরাসের সাথে কাটাবো ' অভিজিতের কবিতার এই ধরনের পঙক্তিগুলি পড়লে মনের মধ্যে এক নতুন অনুভবের অনুরণন সৃষ্টি হয় ।

১| কাব্যগ্রন্থ -জিরো দশমিক (প্রকাশক :বইতরণী, মূল্য ৬০ টাকা) কবি -অভিজিৎ দাস কর্মকার
২| কাব্যগ্রন্থ- ১টি অরাজনৈতিক স্টালিনসন্ধ্যা ( মল্লসাহিত্য প্রকাশনা, মূল্য ৪০টাকা)
৩| কাব্যগ্রন্থ -বিবস্ত্র শব্দের Soliloquy( প্রকাশক ৯নং সাহিত্য পাড়া লেন, মূল্য ২০ টাকা)

শীলা বিশ্বাস , গদ্যকবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


বিষাদতারা ও সহিস

                  

বল্গা খুলে দিতেই ঘোড়া দুটি গিরিখাত পেরিয়ে সেরিঙ্গিটির জঙ্গলে মিলিয়ে গেলো। খুরের শব্দে খোয়াবনামা লেখে ছায়াঘূর্ণি যেখানে আড়াই চালের কোনও কোর্ট নেই। আস্তাবলের দিকে তাকিয়ে থাকে সহিস। ঘোড়া ছুটিয়ে কেউ এলে নাম দেয় চেঙ্গিস খাঁ। হ্রেষার ভিতর মিশে থাকে হাসি ও হাহাকার। নালের কাঠিন্যে শক্ত হয়ে ওঠে চোয়াল। ঘাসের সবুজ ক্রমশ ফ্যাকাসে হয়ে আসে। মৃত ঘোড়ারা মধ্য যামে বিষাদতারা হয়ে জ্বলে নিভে যায়। ঘোড়াকাতর সহিস পরিখাহীন নীল রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে ছুঁয়ে দেয় আকাশ।

অনুপম দাশশর্মা , কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


একান্ত পাহারায়

কেউ কি থেকে গেছে অদৃশ‍্য পাহাড়ের পিছনে
লোকালয়ের নিত‍্য কোলাহল এখন যন্ত্রণায় কাতর
চেয়ে আছে অগণিত চোখ মাটির ঈশ্বরের দিকে
একাকী নির্জনে ডুবে যাচ্ছে চেনা অচেনা কথাগুলো।
ঝরে পড়ছে অশ্রুজল, ঢেউ ভিজিয়ে দিচ্ছে 
সাবধানতার ভুল-ত্রুটি
ডুবে গেছে যে সমস্ত শরীর তার সামনে দাঁড়িয়ে
নতমস্তকে ইহলোক
চারদিকে বেড়ে চলেছে দগদগে অন্ধকার
আর্ত-কে টেনে তোলার ব‍্যর্থ প্রয়াস জাগ্রত 
সাথে অকপটে অসংযমের স্বীকারোক্তি।
নির্বান্ধব সাঁকোগুলোয় নতুন করে সাজছে
প্রাসঙ্গিকতা, আত্মরক্ষার নয়া নীতি বিলি হয়েছে
গোটা ব্রহ্মান্ডে।

এখন শুধুই আত্মখনন সকল স্পর্শের বাইরে
অনিত‍্যের শর্ত মেনে সবাই নিজেকে রেখেছে
নিজেদের একান্ত পাহারায় সংগোপনে।

সমাজ বসু, অণুগল্প, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


ফাঁদ

আজকাল সপ্তাহে একদিন বাজার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসেন বিকাশ বাবু। গত এক সপ্তাহ যাবৎ এই বাজার এলাকা কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায় পড়েছে।
       সাত সাতখানা সাদা বৃত্ত টপকে হাত দুটো স্যানিটাইজেশনের পর সুনাগরিকের মত বাজারে প্রবেশ করলেন বিকাশ বাবু। বাজারে সব বিক্রেতাই এই সময় এক তীব্র প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। কে কার ঝোলায় কত জিনিস গছিয়ে দিতে পারে। তাদের এই রেষারেষির জেরে বিকাশ বাবুর মত অনেকেরই নাজেহাল অবস্থা। বহু ক্রেতাকেই  দশ বারো কিলো ওজনের ভার বইতে হচ্ছে। আবার অনেকে বাজারে রসদ ফুরিয়ে যাবার ভয়ে বাড়তি জিনিস সাঁটিয়ে নিচ্ছেন। ফলস্বরূপ ঝোলার ওজনের গ্রাফ উর্ধমুখী।
         দু হাতের দু দুটো ঝোলায় পাহাড়।আর তৃতীয়টায় দু কিলো চারশ গ্রামের মাছ। এই নিয়ে বেরনোর মুখে বাধা পেলেন বিকাশ বাবু।
     ---  কাকু আপনাকে তিন নম্বর গেট দিয়ে বেরোতে হবে। ফরমান শুনে বুঝলেন,এ সোশাল ডিস্টেনসিং। অগত্যা প্রায় কিলো বিশেক ওজন নিয়ে তিন নম্বর গেটের দিকে পা বাড়ালেন। বাজারের ভেতরেই চার পাঁচবার হল্টের পর, বাজারকে আলবিদা জানিয়ে রাস্তায় পড়লেন তিনি।
     --- আরে কাকু আপনি? কি খুঁজছেন? একজন কম বয়সী ছেলে একেবারে বিকাশ বাবুর মুখোমুখি। ছেলেটার প্রশ্নে কিছুটা অবাক হয়ে বিকাশ বাবু একটা রিকশা ধরার অভিপ্রায় জানালেন।
    --- কতক্ষণ এই কাঠফাটা রোদে দাঁড়াবেন? আমি থাকতে আপনার চিন্তা কিসের? দিন আমাকে ব্যাগগুলো,আমি নিয়ে যাচ্ছি। আপনার বাড়ি খুব ভালো চিনি। আপনি ত রায়পাড়ায় লোকসেবা আবাসনে থাকেন। আমাকে না হয় রিকশা ভাড়াটা দিয়ে দেবেন।
      বিকাশ বাবুর কোন আপত্তি, দ্বিধাবোধ- কিছুই টিকল না। একরকম জোর করেই তাঁর দু হাতের দুটো ঢাউস মার্কা ওজনের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে রিকশার চাকার মতই গড়াতে আরম্ভ করল ছেলেটা। ঠিক সেই মুহূর্তে, বিকাশ বাবুর প্রায় আড়াই কিলো মাছের ঝোলাটা যেন শাক ভর্তি মনে হতে লাগল। কিছুক্ষণ পর ছেলেটা বাড়ির শর্টকার্ট রাস্তায় ঢুকে পড়তেই, তিনি বুঝলেন ছেলেটা তার অনেক আগেই বাড়ির গেটে পৌঁছে যাবে। মনে মনে ভাবলেন,দয়াময় আছেন।

     -- একি! দেড় ঘণ্টা বাজার ঘুরে শুধু মাছ নিয়ে ফিরলে?
    -- আর বোলো না,তাড়াহুড়োয় আমি টাকা নিতেই ভুলে গেছি। ঘাম মুছতে মুছতে রান্নাঘরে মাছের ঝোলাটা ফেলে রেখেই , নিজের একরাশ নির্বুদ্ধিতাকে কোনরকমে আড়াল করে সোজা বাথরুমে ঢুকে পড়লেন বিকাশ বাবু।



অঙ্কুশ ভৌমিক , কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০, ভাস্কর্যে রামকুমার মান্না

 


 

নির্মম




বৃষ্টি
বিকেল
মৃত্যু
প্রেম
পরাজয়

আমি বাগান থেকে আগাছা তুলে
একটা বাহারি গাছ বসাই।



(২)

কবিতা


কিছু শব্দ
হয়তো একটু গোছানো
কিংবা কিছুটা ছড়ানো
নোংরা, বিচ্ছিরি, যাচ্ছেতাই

কয়েকটা খিস্তি
আর,
কয়েকটা
হেরে যাওয়া মাতালের সংলাপ

কখনও আমি জিতে যাই
কখনও কবি
 
 ভাস্কর্যে রামকুমার মান্না

রাখী সরদার , গল্প, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


 

বাস্তসাপ

     

মণিপুরের রায়বাড়ির সেই ঐতিহ্য ময় শ্রীপাট আর নেই ,কিন্তু  কর্তা সুন্দর রায় ও তার ভাই সন্দীপ রায়ের  দাপট এতটুকু কমেনি।বাইরের মানুষজনের উপর না পারলেও  সুন্দর রায়ের স্ত্রী সুরমা ,ও দুই
মেয়ে ঋতু ও নীতুর উপর এখনো দুভাই বলপূর্বক দাপট দেখাতে ছাড়ে না।সেই সন্ধ্যা থেকেই দুই ভাই মদ নিয়ে  বসেছে।সুরমা ঘরের কাজে ব্যস্ত।এমন সময় সুন্দর রায় এর  চিৎকার --

"সুরমা আ-আ-এই সুরমা ।আর কটা মাছ ভাজা দিয়ে যাও।"

"এত চিৎকার করছো কেন? কাল ঋতুর পরীক্ষা, পড়তে দাও।"

"কী হবে এত পড়ে ব‌উদি।সেই তো গুচ্চের টাকা দিয়ে বিদায় করতে হবে।"

"ভাই তোর এত চিন্তা করতে কে বলেছে?শালী তো আমাকে একটা বংশধর এনে দিলো না, দু দুটো নাগিনীর জন্ম দিয়ে আমার মাথা কিনে নিয়েছে মনে করে। ফণা তোলার আগেই ওদের বিষ দাঁত ভেঙে দেব।টাকা তো এমনিই পায়ে হেঁটে আমাদের কাছে আসবে, তিতলি মাসির কাছে সপ্তাহে দু একদিন পাঠালেই..."


" তোমার লজ্জা করেনা!ও তোমার মেয়ে।"


"গায়ে ফোস্কা পড়লো ব‌উদি? খাবেটা কী?আমি আর খরচ করতে পারব না।"


"চুপ।যা বলছি করো।আমার মেয়ে আমি বুঝব।"


সুরমা আর দাঁড়ায় না।এদের মতো অমানুষ সে দুটো দেখেনি।নিজের মেয়েকে কিনা ...


গভীর রাতে সুরমা একটা গোঁ গোঁ শব্দে উঠে বসে।পাশে ঋতুর ঘর থেকেই আসছে বুঝতে পেরে ছুটে গিয়ে সুরমা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।দেখে,
বিছানায় ঋতু যন্ত্রণায় ছটফট করছে,মুখ দিয়ে গাঁজা আসছে,সারা শরীরে নখের আঁচড়।পাশে একটা শিশি পড়ে আছে।


"একি! কী হয়েছে?কী খেয়েছিস?"


"মা আ আ...ছোটকাকু..."

ঋতু আর কিছু বলতে পারে না।শরীরটা যন্ত্রণায় বেঁকে যাচ্ছে।


"ওগো শুনছো! শিগগির এসো।"


সুরমার চিৎকারে সুন্দর রায় ছুটে আসে।


"দেখো তোমার ভাই কী অবস্থা করেছে!লজ্জায় মেয়েটা বিষ খেয়েছে।শিগগির ডাক্তার ডাকো।"


"না। আমাদের বাড়ির একটা সম্মান আছে।"

"কী বলছো!"

সুরমার কান্না শুনে আটবছরের ছোট্ট  নীতু ঘুম থেকে উঠে এসে ভয়ার্ত গলায় বলে ওঠে --


"মা দিদির কী হয়েছে?"


"ওকে বাস্তসাপ ছোবল মেরেছে রে।সাপটা আশপাশেই ঘুরছে। তোকেও  সাবধানে থাকতে হবে।"


বলেই সুরমা নীতুকে জড়িয়ে ধরে  কাঁদতে থাকে ...

নির্মাল্য ঘোষ , কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


অবয়ব 


রাত যখন গভীর হয়...
একটানা ঝিঁঝি পোকার শব্দ নাকি 
ব্রহ্মাণ্ডের কলরব..
আমি নীরবে মাথা ঢোকাই...
তারপর ব্রহ্মাণ্ড হয়ে ঘুরে বেড়াই 
দেশে বিদেশে...
যদিও ওরা তখনো ব্যস্ত আরো কিছু 
পাবার আশায়...
ঠিক তক্ষুনি কোথায় যেন একটা 
শারদ উৎসবের ঢাক বাজে...
আমি কাশবনে ধুনুচির ধোঁয়ায় তোমার 
অবয়ব দেখি...


Saturday, 17 October 2020

অর্ঘ্য কমল পাত্র , কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

  


ঘুমোতে বাধা দিস না


১.
সমস্ত অস্থায়ী ব্যাকুলতার উপর
আলো এসে পড়লে মুশকিল! 
উন্মুক্ত হয়ে যাবে অহং,
নোংরামো আর লুকানো
শামিয়ানা...
কেন তবে অনর্থক এ ডুবে থাকা?
জং ধরা নখে বইয়ের পাতা উল্টানো?
আলো এসে পড়লে মুশকিল 
ভীষণ মুশকিল...

২.
এই অসময়ে যারা চক্ষু থেকে
তেজ নিক্ষেপ করে 
তারা সব বড় বড় পিন্ডাকার সমুদ্র।

আমিও তৃণ থেকে হালকা করে
সরিয়ে রাখি শিশির।
আমি ছিলাম বহুবর্ণ ভাগীরথ
এই অসময়ে এসে শুকিয়ে গেছি
—উল্টানো টবের মতোই

৩.
এসো প্রিয়,রচনা করি সম্পর্কের শীত।
রচনা করি লেখার অযোগ্য কিছু 
সনাতন ইশারা।
তারপর আমরা বেড়াতে বেরোবো।
দিশেহারা চাঁদের আলোয় 
আমরা আরও সামান্য হবো।
লিখে ফেলব—দীর্ঘ এক মৃত্যুকাব্য।
আর
জলরঙ দিয়ে গেঁথে দেবো
তোমার বিজয়মাল্য।

৪.
জীবন কী করে আমার কথা শোনে?
নীরবতার মধ্যে দিয়ে
যেসব ফুল ফুটতে চায়
সেসব ফুলকে বিক্ষত করে চলে যায়
কবির স্নেহের গুটিপোকা। 
তোমারও শরীর খারাপ এ সময়ে 
স্বর্গের বাগানে এখন
নিষিদ্ধ হয়ে গেছে স্যারিডন

বাঁচতে না দিস
ঘুমোতে মানা করিস না...


নীপবীথি ভৌমিক, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


 

গল্পের মতো

মিথ্যেকেই আজকাল ছায়া বলেই সাজিয়ে নিই।
  জানি, যারা সব সত্য বলে হারিয়ে গিয়েছিল প্রাচীন প্রবাদ-অরণ্যে, 
 তাঁরা ঘুমিয়ে আছে কেউ বা
  ফুল হয়ে, কেউ আবার নদী হয়ে।

    আজকাল হেমন্তকে বড় অদ্ভূত লাগে জানো!
      পাখিরা আসে না এপথে।‌ 
     বিসমিল্লার নহবত ও 
        বসে না পড়ন্ত রোদের গায়ে।
   
  তাই বলি, আমাকে ভুলতে দাও বরং নিজেকেই...
        
        শীত আসুক শীত !
    গল্পের গায়ে লেখা হোক নতুন উপন্যাস ।

দিশারী মুখোপাধ্যায়, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


 

মরণকূপ 



চুপচাপ পড়ে আছে
সৃষ্টিকর্তা তাকে যেরকম গায়ের রঙ দিয়েছে
প্রায় সেরকমই নিয়ে 
নার্ভের রোগীর মতো (যদি কোনো রোগবালাই না থাকে ) মাঝেমাঝে 
পিটপিট করে তাকায় , ফের ঘুমিয়ে পড়ে
হাত পা তো নেই যে ছুঁড়বে

মানুষেরা, আজকাল , বাচ্চা কাঁদলেও
ততটা ব্যস্ত হয়না 
আর সে তো কাঁদে না, শুধু জানান দেয় , তাও
দূর থেকে কারো খোঁচায় 

আর কে না জানে 
চরিত্র বলে তার কিছু নেই 
যখনতখন সে অফিসের বস থেকে সুপ্রিমকোর্ট
ধর্ষিত , পরকীয়া কিংবা 
ডোবার-ম্যান হয়ে উঠতে পারে 
ওঠেও 







জীবন 


কখন শুরু হয়েছিল জানি না 
কখন শেষ হবে 
মধ্যখানটুকু নিয়ে মগ্ন হয়ে আছি 

শুরুতে ছিলাম না
সগর রাজার ছেলেরা পানে ব্যস্ত ছিল
চিল এসেছিল মেঘের আড়াল থেকে
ছোঁঁ একমাত্র ছিল তারই 

হর্ম্যরাজি ভেঙে পড়ার কথা 
বলাবলি করছে লোকেরা 
চাপা না পড়ার উপায় আছে কিনা জানে না 
চেষ্টাও নেই 
টেবিলে এখনো অনেক আহার আর পানীয় 

আমি তো লীন হতেই চেয়েছিলাম , চাইনি কখনো
শরীরে ব্লটিং 





মন্দিরা ঘোষ, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

  


দেওয়াল ঘড়ি



গভীররাতে সবকিছু  থেমে যাওয়ার পরও দেওয়াল ঘড়িটার 

খসখস  আওয়াজ আমাকে জাগিয়ে রাখে।
কাঁটা গেঁথে গেঁথে ফুটো করে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ। মাছের পেট থেকে বের হয় 
স্কুলবেঞ্চের রঙিন শব্দরূপ, চক ডাস্টারে মুছে ফেলা খয়েরি খেয়াঘাট।
মাটির পুতুল, একার কার্ণিশ,ভরদুপুর, চুড়িওয়ালার ডাক,আতাফুলের বিকেলে
 ঝাঁকা মাথা আকাশ থেকে নিচু হয়ে আসা পরীদের ডানা।
রেশম গুটির বাসায় লুকোনো মাছবেলা।
মাঝে মাঝে ডানার বদলে আকাশ রঙের তুঁতেগাছ, পকেটভর্তি মার্বেল আর
 ক্যাডবেরির ভুলচুক।
ভাঙাকাচ জলপুকুর রক্তারক্তি।
রূপোর আংটির ভিতর ঘোরেফেরে বড়বেলার আঁশটে গন্ধ।
কুহুডাক  জ্যান্তো রূপকথার যাদুঘর আর নিশুতিপাপের কাছে
 পোঁতা  মাছের আঁশ,ছেঁড়া ফড়িংয়ের ডানা,ঘুঘু পাখির ডিম।

নিছকই সেসব পুতুলখেলার নাম।
পুতুলখেলায় আঁশবঁটি থাকে না।

বৈজয়ন্ত রাহা, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 



ও শ্যামলস্যার



ও শ্যামলস্যার আজকেও বাংলার ক্লাসে আসিনিতো ও শ্যামল স্যার বাংলাতো চক ডাস্টারে খসে খসে পড়ে দেখো দেখো জানলার পাশে স্কুলবাড়ি ঘাস হয়ে নেমে বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে পাঁচিলের খাঁজ যেনো চিঠিহীন খামে শব্দেরা থেমে গেছে ভিতর বাইরে যত সুতোহীন ঘুড়ি লাট খায় আচারের বয়ামেরা জড়ো হয়ে স্তব্ধের বেড়া ভেঙে কার ঐ চুড়ি ভাঙা কাঁচ ডিঙ্গোলেই কান ধরে না পড়ার অশালীন মতি চক ডাস্টারে বাংলার কোনো ক্লাস ও শ্যামলবাবু ধিক্কার ধিক্কার নীল ডাউনের বেঞ্চিরা জড়ো হয়ে প্রজাপতি - মাপে এঁকে রাখে পৃথিবীর অবসন্ন দাড়ি কমা ওং মাথার ভিতরে শব্দের বুনো গাছে ফুল ভেঙে  নদীমাতৃক্রোড়ে যুগ যুগ কেটে গেলে ভাঙচুর মিথের পাহাড় গড়ে  কলঙ্কের আদিম অক্ষরে দাম্ভিক বেয়াদব বোকা জেদী বসে না কখনও যে ঘাসে ঘাসে জলফড়িঙেরা গড়ে রাখে বেদী বাংলার ক্লাসে আর যাবোনা কখনও ও স্যার কবিতার মতো একা একা ফুলতোলা মাঠে... কবিতার মতো...ঘুমিয়ে পড়েছি কবে...

প্রত্যূষ কর্মকার, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 



দু'একটা রঙিন শব্দ


একটা কবিতা লেখা কঠিন কিছু নয়,

এই রূপালি বৃষ্টি থেকে ওই গহীন খাত

এই সম্পর্ক থেকে ওই গভীর স্বপ্নে ডুবে যাওয়া

এই প্রিয় মুখ থেকে দুটো রঙিন শব্দ শোনা

এইটকু কুড়োতে কুড়োতে

এ বারান্দা ও বারান্দা, দরদালান পেরোতে পেরোতে 

কখন যে দিন পেরিয়ে যায় উঠোনের জ্বলে যাওয়া ঘাসে,

পুরনো স্মৃতির মত এক চিলতে রোদের আলো 

পর্দার ফাঁক দিয়ে ঘরের মেঝেটিতে পড়ে

তুলসীতলায় নৈবেদ্যর থালায় ফুটে ওঠে সন্ধ্যের পয়ার

শালের বনে গর্ভিনী সন্ধ্যা নেমে আসে শুধু একটা কবিতার জন্ম দেবে বলে

অনেক গোলাপি সাদা মাধবীলতার পর এবার হাওয়ায় হাওয়ায় ফুটে উঠছে হেমন্তের ছড়

তুমি টুকরো টাকরা আলো, সাঁঝের শঙ্খধ্বনি  ভোরের শিউলি এমন ভাবে আঁকড়ে ধরে আছো যেন এক মন্থন প্রাপ্ত শপথ

এর থেকে বেশি কিছু বলা অনধিকার প্রবেশের মত,

দু হাতে দড়ির দাগ-

কবি গোপনে এঁকে রাখছে অনাগত শ্রাবণের রথ

Friday, 16 October 2020

সুমন দিন্ডা , কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


নিঃসঙ্গ

কী চেয়েছিলাম আমরা?
কিছু ঘাস চিরদিন পায়ের নীচে থেকে যাবে
কিছু আকাশ উড়ে যাবে নীল মোহনায় 
আর কোনো কোনো শঙ্খলাগা ভোর
বিছানা জুড়ে নামিয়ে আনবে গনগনে আঁচ।

এর বাইরে দু একটা খাতায় কালো পেন্সিল 
ঠোঁট বুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিপ্রতীপ আমাকে,
অবসন্ন স্বপ্ন আর ব্যর্থ সঙ্গমের রাত
কখনও কি আয়না রেখেছে সামনে? 

কী চেয়েছিলাম আমরা? কী চেয়েছিলাম? 
মাখামাখি বাতাস আর মৌসুমি ফলন
একটা একটা করে সম্পর্ক পেরিয়ে যাবে,
সূর্য মনে করে আগুন পোহানোর জন্য কেউ এলে
আলিঙ্গনে নিশ্চিত হবে ভবিষ্যতের উত্থান। 

আমাকে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী করে কী লাভ
যখন পেরিয়েই গেছো পরিতৃপ্তির জলসীমা? 




পৃথা চট্টোপাধ্যায় , কবিতা , সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 

স্বপ্ন মিছিলে এস্রাজের সুর
 

বিপর্যয়ের রাতে ভাষার গভীরে পথ খুঁজি

জন্মান্তর থেকে জেগে উঠে সময়
সাবেকি খোলস ফেলে যে বেরিয়ে এল সে এক অন্য নারী
ভোরের আলোয় সব দৃশ্যই অরণ্যমথিত সবুজ ফ্রেমে বন্দী হলেও
পৃথিবী ঢেকেছে মুখ নীলাভ মুখোসে
ক্রমাগত রূপান্তরিত হচ্ছে মানবতা

এ বছর বর্ষার কোনো মেঘ রাজহংস হতে পারে নি
সময়ের কুণ্ডলিতে জেগে আছে শুধু অনন্ত শোক
শূন্য আঁচলে উড়ে যাচ্ছে পাখির দল
তবু দ্বিধাহীন স্পর্ধায় সূর্যের গা ঘেঁষে জ্বলছে এক অজানা নক্ষত্র
ময়ূরের গ্রীবায় ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে সব বিপর্যয়
আমি স্বপ্ন মিছিলে এস্রাজের সুর শুনেছি