লক্ষ্য
খুব ভিতরে একটা পাহাড় আছে
আমি টের পাই, আর আছে এক নদী
ঝরনা হয়ে পাহাড় কেটে নামছে
তারপর, সব নদীর মতোই এঁকেবেঁকে
কোথায় যাচ্ছে সে, জানা নেই
শুধু জানি, আজও সে কোনও সমুদ্র খুঁজে পায়নি
লক্ষ্য
খুব ভিতরে একটা পাহাড় আছে
আমি টের পাই, আর আছে এক নদী
ঝরনা হয়ে পাহাড় কেটে নামছে
তারপর, সব নদীর মতোই এঁকেবেঁকে
কোথায় যাচ্ছে সে, জানা নেই
শুধু জানি, আজও সে কোনও সমুদ্র খুঁজে পায়নি
অগণতান্ত্রিক
আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই
যে পথনির্দেশক
সেই গণতন্ত্রের থেকে
যা পথভ্রষ্ট করে
আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই
যা সীমান্তে দেশকে রক্ষার স্বাধীনতা দেয়
সেই গণতন্ত্রের থেকে
যা ভোটবাক্সে আমাকে পরাধীন করে রাখে
আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই
যা এক রাষ্ট্র এক আইন প্রণয়ন করে
সেই গণতন্ত্রের থেকে
যা দিশাহীন রাস্তায় হাঁটে ক্ষমতার লোভে
আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই
যে দেশদ্রোহীর মাথায় বন্দুকের নল ঠেকায়
সেই গণতন্ত্রের থেকে
যা মানবাধিকারের নামে দানবদের সুরক্ষা দেয়
আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই
যে শ্রমিকদের ক্লান্ত পায়ের খবর রাখে
সেই গণতন্ত্রের থেকে
যা আকাশ ছুঁতে চায়
আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই
যে আমার দেশের স্বাধীনতাকে বিক্রি করে না
সেই গণতন্ত্রের থেকে
যা আমাকে কিনতে চায়
তবু...
বারান্দায় যখন আমি
সুরারোপ
ড্রাইভার
আবছায়া
বাকি সব অকিঞ্চিৎ
রক্ত মাংসে, পাপে, অসুখে, নিভৃতে
যতটুকু বেঁচে আছি, বিশ্বাস করো
আগন্তুক কোনও ঘোরের উদ্দীপনায়
বিড়াল তপস্বীর মতো বসে থেকে
কত আর্ত ডাকের সরলতায় সাড়া দিই নি
কত চেনা মুখকে অচেনা করেছি নিমেষে,
বিনিময়ে কি পেয়েছি ?
আত্মসুখ ও রাতের গভীরে স্বৈর-উল্লাস
সবাই আঙুল তুলেছে এমন জীবনের দিকে
ধিক্কার ছুঁড়ে মেরেছে, বলেছে—
পৃথিবী ক্ষমা করবে না এই স্খলন...
খোলা আকাশের নীচে,
বেঁচে আছে সহস্র পথ ও চোরাস্রোত
সমস্ত দংশন-জ্বালা মেখে দাঁড়িয়ে আছি একা
কেউ খোঁজ রাখেনি এইসব যন্ত্রণার
যতটুকু বেঁচে আছি, নির্জন আত্মমগ্নতায়
আঘাতে, নীরবে এবং প্রত্যাখ্যানে।
দৃশ্য
নেভানো মুঠোর থেকে
কতটুকু দৃশ্য নিতে পার !
এখন যাপনবৃত্তে বাতাসিয়া
লুপ -দৃশ্যান্তরে যেতে পারো
কুয়াশা বা রোদ ব্যবধানে।
যে বাউল নিদাঘ সহনে সুরে সুরে
বেঁধেছিল পথ,
দৃশ্যটুকু পড়ে আছে রোদার্ত বিরানে,
সে বৃক্ষ পাখির ঠোঁটে উড়ে
ছায়াতল রেখে গেছে সন্ততি শরীরে।
আমাকে শীতলে রাখো , জলছিন্ন মীন-
দৃশ্যান্তরে হিমায়িত হব।
হাতফেরতা অটুট আদলে
জনৈক অভিজ্ঞ শেফ দ্বিতীয় হননপর্বে এতটুকু রক্তাভা পাবে না।
সুদৃশ্য ডিনারপ্লেটে শালীন ছুরির চাপে
স্বাদু চোখ প্রেমিকাকে দিও,
বাঁ হাতের চঞ্চল হলে তীব্র জঙ্ঘায়
অবাধ্য চারণকালে বোলো তাকে -
' তুমিই প্রথম.....'
ভাস্কর্যে রামকুমার মান্না
ভূগোল
আমার পড়ার টেবিলে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত গ্লোব ছিল
চেয়ারে বসলেই ইচ্ছে হত, বিশ্ব জোরসে ঘুরিয়ে দিই ।
সেই ঘূর্ণন শুরু... সময় প্রথম হাত ছুঁইয়ে চিনিয়ে ছিল-
হাভাতে ইথিওপিয়া ,মা সময় পেলেই
বুঝিয়ে দিত গ্লোবের কোথায় থাকে মহাসাগর ।
একটু একটু করে সবে গ্লোবে চড়ে বসতে শিখেছি
সেই মুহূর্তে আমার প্রথম প্রেমিক
এভারেস্ট এ পা রাখা চেনাল..
রেডলাইট অন্ধকার-কন্যা দেখিয়ে দিল আফ্রিকার সিংহ !
আর শেষতম প্রেমিকের কাছে মারিয়ানা খাদে পড়ে
রপ্ত হল না গিরিপথ ভেঙে উঠে আসার কায়দাটা।
এখন আমি ভূগোল পড়াই , পৃথিবীর গঠন আত্মস্থ
গরম-শ্বাসের মুহূর্ততক চোখে থাকে গ্লোব
ক্লাসের মেয়েদের মহাদেশ দেখাই
ভোর রাতে ঘুমের মধ্যে গ্লোবে নিজের গ্রামের নাম খুঁজি...
সাহস
সবার সব ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু তাই বলে ইচ্ছাও জাগবে না তেমন তো নয় । অনুপমের মনেও ইচ্ছাটা বাসা বেঁধেছে বেশ কিছুদিন শুধু অনুপমই ইচ্ছার গোড়ায় সার জল কিছু দেয়নি। কে আর খাল কেটে কুমীর আনতে চায় যেচে ! প্রথম প্রথম কিন্তু শুভ্রা মানে অনুপমের এক এবং অদ্বিতীয় বউ বেশ রসেবশেই দাম্পত্যালাপ চালাত । বিয়ে যত পুরানো হচ্ছে রস তো নয় আস্ত কর্পূরের ড্যালা উবে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। শুভ্রার এখন কথায় কথায় খোঁটা । অনুপমের নাসিকা গর্জনের ঠ্যালাই পাড়াতে নাকি চোরের উপদ্রব কমে গেছে , অনুপম প্লেটে ঢেলে বিশ্রী শব্দে চা খায় ( আগে তো এটাই শুভ্রার জারা হট্ কে টাইপ লাগত ) , বাজারের যত কানা বেগুন পাকা ঢ্যাঁড়স নরম পেটের মাছেরা অনুপমের থলিতেই ঝাঁপিয়ে এসে পড়ে ! নেহাতই শুভ্রার হাতের ক্যারিশ্মা রান্নাগুলো এত সুস্বাদু হয় । অভিযোগের তালিকা শ্রাদ্ধের ফর্দের চেয়েও লম্বা ।
যদিও বচনবাগীশ হিসাবে অনুপমের নামডাক আছে কিন্তু যাবতীয় পুরুষ- সিংহের মতো অনুপমেরও বউয়ের কাছে সব বোলচাল পুরো ঘেঁটে- ঘ । কিন্তু সহ্যেরও একটা সীমা নিদেনপক্ষে একটা এক্সপায়ারি ডেট থাকে তাই শেষ অবধি শান্তি চুক্তি ভেঙে অনুপম একদিন বোমাটা ফাটিয়েই ফেলল। স্লগ ওভারে সপাটে ছক্কা হাঁকিয়ে বলে দিল ঘুমের সময় শুভ্রার মুখ বোয়াল মাছের মতো হাঁ হয়ে থাকে , আগে ছিল আটাশ ইঞ্চির তন্বী কোমর এখন ছেচল্লিশের কুমড়োপটাশ , গলার স্বর শুনলে রাস্তার কুকুর অবধি ঝগড়া থামিয়ে দেয় আর রান্নার কথা না তোলাই ভালো জেলখানার চেয়েও খারাপ অনুপমের মতো ঋষিতুল্য মানুষ বলেই সেসব গলধঃকরণ করে । অনুপম বেশ আত্মপ্রসাদের সঙ্গে ভাবল জব্বর একখানা চাল দিয়েছি , একেবারে কিস্তিমাৎ ! যাক এবারে আয়েশ করে সিগারেটে একটা টান দেওয়া যাক । যেই অনুপম লাইটার জ্বালাতে গ্যাছে ওমনি আঙুলে এক মোক্ষম ছ্যাঁকা , দূর থেকে ভেসে আসছে অমোঘ বচন ‘ আর কখন ঘুম থেকে উঠবে কুম্ভকর্ণের বংশধর ? বলি এরপর কি দোকান বাজারের ঝাঁপ গুটাতে যাবে !” ধড়মড় করে উঠে অনুপম দেখে , কখন যে চায়ের কাপ রেখে গেছিল শুভ্রা ঘুমন্ত অবস্থায় সে ঐ গরম চায়েই আঙুল ডুবিয়েছে
আবারো প্রেমের কবিতা
আমাদের মধ্যে কোন ভালবাসা নেই।
নিম্নবিত্ত সংসারে ভালবাসা থাকে না
উচ্চবিত্তের সংসারেও ভালবাসা থাকে না
প্রবণতা থাকে...
দু একটা অভিমান এসে সে' প্রবণতাকে দূরে
কোন নদীর ধারে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়
সেখানে খিদেও এসে দাঁড়ায়। অন্ত্যজ খিদে।
একে অপরের প্রতিবিম্ব যেন
যেন সমর্পণের পাণ্ডুলিপি...
স্নেহের অভাব নেই
লোভের অভাব নেই
দু এক টুকরো কাদা ছোঁড়াছুড়ির মত
হা রে রে রে ডাকাতিয়া ডাকের মত
যদি ভালবাসা...
নির্লজ্জের মত কেন যে শুধু প্রেমের কবিতা!
প্রত্যয়
তোমার দেখানো আলো
দিন ফুরিয়ে আসছে যখন,
ভেবেই নিয়েছিলাম
আর হয়ত স্টেজে ফেরা হবে না!
একজন ছিল,
যার পাসওয়ার্ড পাওয়ার
জীবনের অপরাহ্নে সাক্ষাৎ ঈশ্বর
যার ঠোঁট ইশারায় পৃথিবীটা আকাশ
নক্ষত্ররা চিরপ্রদীপ!
জাতীয় সঙ্গীত গাইলাম
কিন্তু অতি সুক্ষ পর্দায়
মাথাটা হঠাৎ ঝাঁকুনি দিল
কোথাও শান্তি নেই
একমাত্র তোমার দেখানো আলো, যতটুকু__
তার বাইরে কেউ নেই
একটি রূপকথার জন্ম
১.
হয়তো কালের কথকের কথাই সঠিক ছিল -
নুড়ি বিছানো শুকনো নদীর খাতে জলের শীর্ণ রেখা
চকচক করছিল শুক্লা চতুর্দশীর অদ্ভুত মায়াবী রাতে,
তারপর স্বপ্নের মতো কেটেছিল অবশিষ্ট রাত,
একটা খুব চেনা ছবি, একটা খুব পরিচিত মুখ
একটা অচেনা দৃশ্য, একটা অজানা পথ -
এ সবই সত্যি হতে পারত – কিন্তু পারেনি,
তাই একটি রূপকথার জন্ম হয়েছে বিপরীতক্রমে।
২.
হয়তো ঝরা সময়ের গান নিছক গান নয় বলেই
দিগন্তরেখার পারে শোনা যায় বাঁশির করুণ সুর
বুকের অর্ধেকটা জুড়ে গোধূলির রঙ – মুছে যেতে যেতে
নিত্যদিনের অভ্যাসমতো ঘরে ফিরে আসি,
আর কোনও কথা নয় – নিঃশব্দ পদসঞ্চারে সন্ধ্যা আসে
আবছা আলোয় মনে ভাসে একটা অন্ধকার মুখ,
জ্যোৎস্নায় থই-থই রাতে পায়ে-পায়ে যাই পদ্মদিঘির ঘাটে
টলটলে স্বচ্ছ জলে দেখা যায় ঝক-ঝকে রুপালি চাঁদ -
এখন মাঝে-মাঝেই ঘুমের মধ্যে ছোটবেলার স্বপ্নে ঢুকে যাই
আবার জেগে ওঠার আগেই ইচ্ছেগুলো ঘুমিয়ে পড়ে।
৩.
সারা জীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য হাইওয়ে ধরে
দীর্ঘ পথ হেঁটে গেছি নতুন জনপদের অভিমুখে
অথবা হেঁটেছি বৃথা, ঘুরেছি উদভ্রান্ত একা -
দিনবদলের
পালা সকলের অগোচরে ঘটেছে বলেই
দিবা-রাত্রির বিধিবদ্ধ ইতিহাস লেখা যায় না সবিস্তারে,
সেই সব ঘটনা লোকের মুখে মুখে রূপকথার গল্প হয়ে ফেরে।
অঙ্কনে মঙ্গলদীপ সর্দার
ভোকাট্টা
হয়তো ভুলে যাবো
টিকে থাকার লড়াইয়ে আমরা সবাই
পা বাড়িয়েছি
হয়তো ভুলে যাবে
জীবনের এক একটা ধাপে
ত্রিভুজ - চতুর্ভুজ - বৃত্ত
সবই হাত ধরে শেখা
অথচ সেই হাতেই আজ ...
ঘুড়ি উড়ছে
আমরা সমস্বরে ভোকাট্টা ___
রাঙাবউ
যে কবিতা জলোচ্ছ্বাসে আছড়ে পড়ে বহুরৈখিক বিচ্ছুরণে উজ্জ্বল (কিছু বই কিছু কথা )