Monday 19 October 2020

জ্যোতির্ময় মুখার্জি,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


  

 

লক্ষ্য


খুব ভিতরে একটা পাহাড় আছে

আমি টের পাই, আর আছে এক নদী

ঝরনা হয়ে পাহাড় কেটে নামছে

তারপর, সব নদীর মতোই এঁকেবেঁকে

কোথায় যাচ্ছে সে, জানা নেই

শুধু জানি, আজও সে কোনও সমুদ্র খুঁজে পায়নি

পার্থসারথি,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 

 

 অগণতান্ত্রিক


আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যে পথনির্দেশক 

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা পথভ্রষ্ট করে 


আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যা সীমান্তে দেশকে রক্ষার স্বাধীনতা দেয় 

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা ভোটবাক্সে আমাকে পরাধীন করে রাখে 


আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যা এক রাষ্ট্র এক আইন প্রণয়ন করে 

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা দিশাহীন  রাস্তায় হাঁটে ক্ষমতার লোভে 


আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যে দেশদ্রোহীর মাথায় বন্দুকের নল ঠেকায়  

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা মানবাধিকারের নামে দানবদের সুরক্ষা দেয়


আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যে শ্রমিকদের ক্লান্ত পায়ের খবর রাখে

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা আকাশ ছুঁতে চায় 

 

আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যে আমার দেশের স্বাধীনতাকে বিক্রি করে না 

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা আমাকে কিনতে চায়


তবু...



গোপেশ দে, কবিতা , সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


বারান্দায় যখন আমি




বারান্দায় যখন আমি একা একা বসে থাকি
একটা সুতীব্র চিন্তার বাতাস বয়ে যায় মগজে
বড় উদাসীন হয়ে যেতে ইচ্ছে করে

লাইন ধরে কিছু অক্ষর এসে একটা কবিতা বানায়
আমি চেয়ে দেখি তার রূপ
বিমুগ্ধ বিস্ময়ে উন্মাদ হই আপন অভ্যাসে

নিজেকে অহংকারী লাগে, বড় বেশী রাশভারী লাগে
কিছু খন্ড স্মৃতি নীল আকাশে মেঘ নিয়ে আসে
বিড়বিড় করে নিজেকে পরাঙ্মুখ ভেবে রাস্তায় নেমে আসি

চোখে স্বপ্নহীন নেশা নিয়ে উদ্বাস্তুর সাথে নিজেকে তুলনা করি
আর ঠিক তখনই চায়ের তৃষ্ণা পেয়ে যায়...

নিসর্গ নির্যাস মাহাতো, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


 

সুরারোপ


ঝরে পড়া গোধূলি আলোয়
উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ধূসর অশ্রুকণা
বেজে যায় বিষাদের রাগ
সুর বেঁধে টান দেয় ঠোঁটে 
যেন গুনগুন করে ওঠে
মিলনের একতারা সুর
ওপারে সন্ধ্যা নামে, হৃদয়ে অতীত জাগে
ঝরেপড়া কামিনী সুবাসে

 সুর

সমস্ত সৌন্দর্যটুকু রয়েছে লুকানো
একতারা সুরে
বিরহ- মিলনের গান জানে সেই
চিত্রকল্প বেঁধে, তাতে টান দেয় গুণী
এসো বিশ্বাসে বাঁধি সুর
যেমন করে পাখিরা গেয়ে ওঠে
গোধূলি আলোয়-
চুমুতে চুমুর পর


মৌসুমী ভৌমিক,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


ভয় 


এক

শরীরে কাঁটার মত বিঁধে আছে ভয় 
যেন তাল তাল অন্ধকার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে

ছাড়ছেও না যাচ্ছেও না 

শুধু, এগিয়ে চলা প্রতিটি পদক্ষেপে 
একটি পেরেক পুঁতে দিচ্ছে, নিঃশব্দে।

দুই

ভেবে ভেবে ক্লান্ত হয়েছ
অনভ্যস্ত অভ্যাসে

আঁধার দেখে তোমার মুখ 
তলিয়ে যাচ্ছে বিষাদে

জেনো, ভয় পেলে, সে আসবেই।

তিন

কখনও গেয়ে ওঠো
মন স্নাত হয়

কখনও উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান করো 
কবিতার ছন্দতরঙ্গ 

হাসতে গিয়ে 
এক টুকরো শব্দ 
হঠাৎ করে বয়ে নিয়ে আসে প্রাণান্তকর ভয়।


মধুসূদন দরিপা,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


সাপ


সাপের গর্ত খুঁড়ে 
ঝাঁপির সাপটি  খোঁজে 
আজও রোদে জলে
 সাপুড়ে  বাবুরাম 
জলে কি জঙ্গলে 
ঝোপে কি কেয়াফুলে 
কোথাও নেই আজ 
সাপের নাম 
ইটের পরে ইট 
মাঝেতে মানুষ কীট 
সাপটি মারা গেছে
 সুনিশ্চিত 
আল্লা সাপ দে 
আল্লা সাপ দে 
শূন্যে কেঁদে মরে
 সাপুড়ে গীত 
সাপকে ডেকে আনা 
গোপন মন্ত্রগুলি 
সঙ্গে নিয়ে গেছে
 মানিকলাল 
একটি সাপ নয়
 এক শো কাজের দিন 
খুঁজছে গুণিন ঘর 
বছর সাল 

নাগিনা  বীন বাজে
 সাপেরা বেঁচে ওঠে 
চমকে দ্যায় এক 
জন্ম লাফ 
সাপের জামাটি  ছেড়ে 
মানুষ জামাটি  পরে 
নতুন জন্ম নেয় 
কুটিল সাপ

দেবেন্দ্র নাথ দাস,অণুগল্প,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

  


ড্রাইভার 

সেদিন সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টি l বাজবিজুলি আর দমকা হাওয়ায় ওলট পালট হচ্ছে গাছগুলো l জৈষ্ঠ্য শেষের দুর্যোগ l উঠোনের সুপুরি গাছ থেকে সপাং করে একটা বড় হলুদ পাতা এসে পড়ল পাতাবাহার গাছটার উপর  l ঝোপ মতো ওই গাছটায় বুলবুলি বাসা বেঁধেছে l এখন তিন তিনটে বাচ্চা l সবেমাত্র চোখ ফুটেছে l ফ্যানফ্যানে চামড়ার ভেতর মাংস দেখা যায় l হাড় সম্বল ডানায় ছোট ছোট কালো লোম l পালক ওঠেনি লেজ ও গজায়নি বিশেষ l  

জানালা দিয়ে  রোজ বুলবুলির আনাগোনা দেখত ছোট্ট সুমিত l সেই বাসা বোনা থেকে l কেমন ঠোঁটে কুটি এনে বাসা বুনেছিল পাখিটা l  এখন ঠোঁটে পোকা ধরে এনে  বাচ্চাগুলোকে খাওয়ায় l দেখতে দেখতে অদ্ভুত প্রশ্ন করে সুমিত,  
-হ্যাঁ মা, এদের বাবা আসে না কেন ! আকাশের তারা হয়ে গেছে ! 
-আসে আসে l তুই কি চিনতে পারবি কোনটা মা আর কোনটা বাবা l
-বা রে চিনবো না কেন একটা পাখিই তো আসে খাওয়ায়, উড়ে যায় আবার আসে l ওটাই মা পাখি l
-তোর সাথে এতো বকতে পারি না বাবা l যা পড়তে বোস l সামনে পরীক্ষা l 

দুর্যোগে খসে পড়া পাতাটার আড়ালে মা, বাচ্ছা কাউকেই দেখা যাচ্ছে না l প্রচন্ড বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় নুয়ে পড়ছে গাছটা l 
- মা, বাচ্চাগুলো মরে যাবে না তো l 
-না রে বাবা,  ওদের মা আগলে রেখেছে বুকের ভেতর l  কিচ্ছু হবে না l 

সেই সুমিত এখন বছর বাইশের l পড়াশুনো বিশেষ হয়ে ওঠেনি  l বাবা নিরুদ্দেশ l কেন আর কোথায় কেউ জানে না l কোন ছেলেবেলায় দেখেছে এক আধবার  l এখন আর জানতেও চায় না l ছোটবেলায় মা'র  মুখে শুনেছিল আকাশের তারা হয়ে গেছে l মনে আছে, সেদিন সুমিতও খুব কেঁদেছিল মায়ের হতভাগ্যের জন্য l

আজও সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি পড়ছে l ওয়াইপারদুটো পেন্ডুলামের মতো অনবরত মুছে দিচ্ছে ফ্রন্টগ্লাসের জল l স্টিয়ারিঙে হাত রেখে সামনের ঝাপসা রাস্তায় সাবধানী নজর l হুটার বাজছে সমানে l  লুকিংগ্লাসে ধরা পড়ছে গাড়ির ভেতর দুই ছেলে  মুমুর্ষ মায়ের মুখে এক ভাবে চেয়ে আছে l ছ্যাঁত করে উঠলো বুকটা l কদিন থেকে তারও মায়ের ধুম জ্বর l বেরনোর সময় বলছিল  আজ আর যাসনি খোকা l শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছে l বেরোনোর ইচ্ছেও ছিল না তবে এম্বুলেন্স ড্রাইভারের কল এলে উপায় থাকে না l মানু পিসি কে মায়ের কাছে রেখে এসেছে সুমিত l 

আজ থেকে থেকে বড় মনে পড়ছে মায়ের সেই কথা !
"মা আগলে রেখেছে বুকের ভেতর l  কিচ্ছু হবে না খোকা l"

দীপিকা সাহা,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


আবছায়া

                          
বিশ্বাসের গোড়া আগলে যাকে লালন করা যায়
তার গর্ভেই প্রবাহমান জীবনের সূত্র
জন্ম, মৃত্যুর হাত ধরে
                              পথ চলা শুরু করেছে বলে
পরিহাসের পাথর বুকের ওপর স্তুপ হয়ে
জমে থাকতে চায় দীর্ঘকাল।
একটু একটু করে
গোটা সাম্রাজ্যে ভাঙ্গন ধরিয়ে
নিংড়ানো আবেগ নিজের মতো মিশেছে
                                  কোনো মোহনার ভেতর।
তবু নির্বাক আকাশ বয়ে নিয়ে যায়
কোন বিধবার কান্না,
অবৈধ শিশুর আর্তনাদ
যন্ত্রণায় ক্লান্ত হয়ে এখন নিঃশ্বাস দুঃখ খোঁজেনা,
খোঁজে বিদুষীর তাজা রক্ত
যার ফোঁটা ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে                শেষ
বিকেলের ওপর।
একটা শঙ্খচিল পায়ে রক্ত মেখে ছিটিয়ে যায়
সন্ধের কলংক ঘেটে
আর প্রথম ভোরের আলো
বারবার হাত বুলিয়ে মুছে যায়
নিকষ মৃত্যুর ছাপ।



 

অরুণাভ রাহারায়,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


 
 
ব্যাধ


কবিতা তা-থই বাজে জলে, সারাঘরে
উঠোনে বিছায় মায়া দুর্বার কথন
সবুজে-সবুজ খেললো গাছগাছালির
এখন সময় শুধু পাতা ওড়াবার

কী পাতা হাওয়ায় ওড়ে জানো তার নাম?
যোধপুর পার্ক থেকে বাতাসে হাঁটলাম
দু'চোখ উড়েছে শূন্যে রে ঘটনাবলী
নদীতে ভাঙন চলে... শান্ত সরোবর।

সাঁতারে বিষাদ ওঠে, ওঠে বিষোদ্গার
পেয়েছি অকূল ঘূর্ণি, চূর্ণী-জলঙ্গিতে

হাওয়ায় নিষাদ দাও, ওষ্ঠ দাও তুমি
জোনাকির আলো দাও, দাও কষ্ট ঢাকি।

মহম্মদ সামিম, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 

বাকি সব অকিঞ্চিৎ

রক্ত মাংসে, পাপে, অসুখে, নিভৃতে
যতটুকু বেঁচে আছি, বিশ্বাস করো
আগন্তুক কোনও ঘোরের উদ্দীপনায়
বিড়াল তপস্বীর মতো বসে থেকে
কত আর্ত ডাকের সরলতায় সাড়া দিই নি
কত চেনা মুখকে অচেনা করেছি নিমেষে,
বিনিময়ে কি পেয়েছি ?
আত্মসুখ ও রাতের গভীরে স্বৈর-উল্লাস
সবাই আঙুল তুলেছে এমন জীবনের দিকে
ধিক্কার ছুঁড়ে মেরেছে, বলেছে—
পৃথিবী ক্ষমা করবে না এই স্খলন...

খোলা আকাশের নীচে,
বেঁচে আছে সহস্র পথ ও চোরাস্রোত
সমস্ত দংশন-জ্বালা মেখে দাঁড়িয়ে আছি একা
কেউ খোঁজ রাখেনি এইসব যন্ত্রণার
যতটুকু বেঁচে আছি, নির্জন আত্মমগ্নতায়
আঘাতে, নীরবে এবং প্রত্যাখ্যানে।

সুবিৎ, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


সময় 


তারপর সেই প্রায় অন্ধকার কোণটায় আমরা গিয়ে বসতাম। আমি আর আমার বন্ধু। 
আজ যার মনে নেই চোখ , নাক , কান। 

সেখানে শিশুর গায়ের মত নরম সবুজ শ্যাওলা আমাদের পেছন ভিজিয়ে দিত। 
কাছেই জং ধরা রোড-রোলার , ঘটঘটাং। 

এইখানে মাঠ এবড়ো খেবড়ো এসেছে রাস্তায় । দূরে একটিমাত্র গাছ নিয়ে আমাদের , পরিচিত আমের বাগান। 
ভূতুড়ে হস্টেল। স্মিতি শপের প্রাচীন দেয়াল। কিছু বিক্ষিপ্ত ফার্ণ।

তারপর সেই প্রায় অন্ধকার কোণটায় 
বিশ বছর পর গিয়ে বসলাম আবার।

আমার বন্ধুর নাম এখন , নির্জন। 
আলোচনায় বিশুদ্ধ কবিতা , যেমন থাকত।
সঙ্গে কিছু ঠোঙায় দৈন্যের অনুপান 
কালচে বাদামী দুঃখিত কেলাস। 

খুললাম আমার
কালো খাতা , নীল হরফ , হলদে পাতা

আর ওর হাতে কেবল , সেই চিরপরিচিত বই  ....

আনিসুজ্জামান।


দেবযানী বন্যা, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০, ভাস্কর্যে রামকুমার মান্না,

 

 


দৃশ্য


নেভানো  মুঠোর থেকে

কতটুকু  দৃশ্য নিতে পার ! 

এখন যাপনবৃত্তে বাতাসিয়া 

লুপ  -দৃশ্যান্তরে যেতে পারো

কুয়াশা বা রোদ ব্যবধানে।


বটের প্রশস্ততল  জিরেন দুপুরে


যে বাউল নিদাঘ সহনে সুরে সুরে  

বেঁধেছিল পথ, 

দৃশ্যটুকু পড়ে আছে রোদার্ত বিরানে,

সে বৃক্ষ  পাখির ঠোঁটে উড়ে

ছায়াতল রেখে গেছে সন্ততি শরীরে।

 

আমাকে শীতলে রাখো , জলছিন্ন মীন- 

দৃশ্যান্তরে  হিমায়িত হব।

হাতফেরতা অটুট আদলে 

জনৈক অভিজ্ঞ শেফ দ্বিতীয় হননপর্বে এতটুকু  রক্তাভা পাবে না। 


সুদৃশ্য  ডিনারপ্লেটে  শালীন ছুরির চাপে

স্বাদু চোখ প্রেমিকাকে দিও,

বাঁ হাতের চঞ্চল হলে তীব্র জঙ্ঘায় 

অবাধ্য চারণকালে বোলো তাকে -

 ' তুমিই প্রথম.....'


ভাস্কর্যে রামকুমার মান্না

সোনালী মিত্র, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


ভূগোল

আমার পড়ার টেবিলে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত গ্লোব ছিল
চেয়ারে বসলেই ইচ্ছে হত, বিশ্ব জোরসে ঘুরিয়ে দিই ।

সেই ঘূর্ণন শুরু... সময় প্রথম হাত ছুঁইয়ে চিনিয়ে ছিল-
হাভাতে ইথিওপিয়া ,মা সময় পেলেই
বুঝিয়ে দিত গ্লোবের কোথায় থাকে মহাসাগর ।
একটু একটু করে সবে গ্লোবে চড়ে বসতে শিখেছি
সেই মুহূর্তে আমার প্রথম প্রেমিক
এভারেস্ট এ পা রাখা চেনাল..
রেডলাইট অন্ধকার-কন্যা দেখিয়ে দিল আফ্রিকার সিংহ !
আর শেষতম প্রেমিকের কাছে মারিয়ানা খাদে পড়ে
রপ্ত হল না গিরিপথ ভেঙে উঠে আসার কায়দাটা।

এখন আমি ভূগোল পড়াই , পৃথিবীর গঠন আত্মস্থ
গরম-শ্বাসের মুহূর্ততক চোখে থাকে গ্লোব
ক্লাসের মেয়েদের মহাদেশ দেখাই
ভোর রাতে ঘুমের মধ্যে গ্লোবে নিজের গ্রামের নাম খুঁজি...

Sunday 18 October 2020

মানসী কবিরাজ, অণুগল্প, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 

সাহস

 

সবার সব ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু তাই বলে ইচ্ছাও জাগবে না তেমন তো নয় । অনুপমের মনেও  ইচ্ছাটা বাসা বেঁধেছে বেশ কিছুদিন  শুধু অনুপমই  ইচ্ছার গোড়ায় সার জল কিছু দেয়নি। কে আর খাল কেটে কুমীর আনতে চায় যেচে ! প্রথম প্রথম কিন্তু শুভ্রা মানে অনুপমের এক এবং অদ্বিতীয় বউ  বেশ রসেবশেই দাম্পত্যালাপ চালাত । বিয়ে যত পুরানো হচ্ছে  রস তো নয় আস্ত কর্পূরের ড্যালা  উবে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।  শুভ্রার এখন কথায় কথায়  খোঁটা ।  অনুপমের নাসিকা গর্জনের ঠ্যালাই পাড়াতে নাকি চোরের উপদ্রব কমে গেছে , অনুপম প্লেটে ঢেলে বিশ্রী শব্দে চা খায় ( আগে তো এটাই  শুভ্রার জারা হট্ কে টাইপ লাগত ) , বাজারের যত কানা বেগুন পাকা ঢ্যাঁড়স নরম পেটের মাছেরা  অনুপমের থলিতেই ঝাঁপিয়ে এসে পড়ে ! নেহাতই শুভ্রার হাতের ক্যারিশ্মা  রান্নাগুলো এত সুস্বাদু হয় । অভিযোগের তালিকা শ্রাদ্ধের ফর্দের চেয়েও লম্বা ।

    যদিও বচনবাগীশ হিসাবে অনুপমের  নামডাক আছে কিন্তু  যাবতীয় পুরুষ- সিংহের মতো অনুপমেরও বউয়ের কাছে সব বোলচাল পুরো ঘেঁটে- ঘ । কিন্তু সহ্যেরও একটা সীমা নিদেনপক্ষে একটা  এক্সপায়ারি ডেট থাকে তাই শেষ অবধি শান্তি চুক্তি ভেঙে অনুপম একদিন বোমাটা ফাটিয়েই ফেলল। স্লগ ওভারে সপাটে ছক্কা হাঁকিয়ে বলে দিল ঘুমের সময় শুভ্রার মুখ বোয়াল মাছের মতো হাঁ হয়ে থাকে , আগে ছিল  আটাশ ইঞ্চির তন্বী কোমর এখন ছেচল্লিশের কুমড়োপটাশ  , গলার স্বর শুনলে রাস্তার কুকুর অবধি ঝগড়া থামিয়ে দেয় আর রান্নার কথা না তোলাই ভালো জেলখানার চেয়েও খারাপ অনুপমের মতো ঋষিতুল্য মানুষ বলেই সেসব গলধঃকরণ করে । অনুপম বেশ আত্মপ্রসাদের সঙ্গে ভাবল জব্বর একখানা চাল দিয়েছি , একেবারে কিস্তিমাৎ ! যাক এবারে আয়েশ করে সিগারেটে একটা টান দেওয়া যাক ।  যেই অনুপম লাইটার জ্বালাতে গ্যাছে ওমনি আঙুলে এক মোক্ষম ছ্যাঁকা , দূর থেকে ভেসে আসছে  অমোঘ বচন ‘ আর কখন ঘুম থেকে উঠবে কুম্ভকর্ণের বংশধর ? বলি এরপর কি দোকান বাজারের ঝাঁপ গুটাতে যাবে !”  ধড়মড় করে উঠে  অনুপম দেখে , কখন যে চায়ের কাপ রেখে গেছিল শুভ্রা ঘুমন্ত অবস্থায় সে ঐ গরম চায়েই আঙুল ডুবিয়েছে

নিলয় নন্দী, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 

 


 

আবারো প্রেমের কবিতা

আমাদের মধ্যে কোন ভালবাসা নেই।

নিম্নবিত্ত সংসারে ভালবাসা থাকে না
উচ্চবিত্তের সংসারেও ভালবাসা থাকে না
প্রবণতা থাকে...
দু একটা অভিমান এসে সে' প্রবণতাকে দূরে
কোন নদীর ধারে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়
সেখানে খিদেও এসে দাঁড়ায়। অন্ত্যজ খিদে।
একে অপরের প্রতিবিম্ব যেন
যেন সমর্পণের পাণ্ডুলিপি...

স্নেহের অভাব নেই
লোভের অভাব নেই
দু এক টুকরো কাদা ছোঁড়াছুড়ির মত
হা রে রে রে ডাকাতিয়া ডাকের মত
যদি ভালবাসা...

নির্লজ্জের মত কেন যে শুধু প্রেমের কবিতা!

পল্লব তেওয়ারী , কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


ফ্যারাও



নিশ্চল পাথরগুলো
মধুর সম্পর্কের আয়োজনে
সাজিয়ে রেখেছে আজও
হৃদপদ্মে স্ফটিকস্মারক
                    শব্দের প্রপঞ্চব্যঞ্জনে।

শোয়ানো মমির পাশে তাজাফুল
ভালোবাসার সব আখরগুলো
জেগে আছে অতীত স্মৃতিতে
সরলশিশুর মতো পাশে শুধু
                   নতজানু তুতেনখামেন।

মারুফ আহমেদ নয়ন, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


অবহেলা



মানুষ বলেই কি এমন। কোনো অবহেলা সহ্য করতে পারি না। যে ঘৃণা করে তার নিকটবর্তী হতে চাই। যে পাথরের গায়ে সূর্যের আলো ধরে না তার কাছে যাই। জলে দু-পা ডুবিয়ে বসে থাকি। মৎস্য শিকারের বাহানায় ছিপ ফেলি। জানি কোন সাড়া শব্দও পাবো না। এখন তোমার থেকে লুকিয়ে থাকার স্বভাব। তোমার নাম নেয়া নিষেধ। নিজেকে এখন ভূতগ্রস্ত বলে মনে হয়। নিবিড় পরিচর্যায় থাকি। খোলা মাঠে বসে থাকি। আয়নার সামনে হাসি-কান্নার অভিনয় করি। 
দেখি আমি কেবল মোমের মতো গলে যাবার সক্ষমতা নিয়ে বেড়ে উঠেছি। মাবুদ আমাকে করুণা করে কেনো মানুষ বানালে।

দীপঙ্কর সরকার , কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 প্রত্যয়   


 সম্ভাবনা জেগে থাকে অলীক হাওয়ায় ওড়ে
দুরন্ত অভিলাষ ।আলসেমি মুছে যায় প্রচণ্ড
রকবাজ । ক্রমে রোদ্দুর ঘনায় মেঘেরা অদৃশ্য
যখন ।উঠোনে আলোক মালা খেলে ডালিম
গাছের ছায়া খাড়া এক পায় , ডাহুক ডাকা দুপুর
যেন অন্তিম শয্যায় । তরূণ কবি শুষে নেয়
সমূহ নির্যাস ,আগামী শতক কবিতা হবে
নিটোল তারুণ্যময় ।

বিবেকানন্দ মণ্ডল, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


অক্ষয় ঠিকানা

   
পিনকোড বদলে 
ঠিকানা বদল করা যেতে পারে
তবু , চিঠির অভিমুখ কিংবা
নিভৃত রাতজাগা কথার গতিমুখ
                           বদলানো যায় কি?

মূর্তির মুখ বদল হলেও
ইষ্ট বদল হয়না কখনো ...

আমাদের অনেক কিছু বদলে যায় --
মনের আকাশ বদলায়
          পাখির উড়ান বদলায়
                     সময়ের চাদর বদলায়
তবু, দু-চার কলি কথা
অক্ষয় হয়ে থেকেই যায়
                   পাতার সবুজে
                              ফুলের অনুরাগে , আর
এলোমেলো ঠোঁটে বোনা পাখির নীড়ে ।

ঠিকানা বদলালে রাস্তার চলন বদলায়,
ছায়া-রোদের রূপরেখাও বদলায় , তবু
হৃদয়ের বাসায় ভালোবাসার আসবাব আর
পিয়ানোয় বুনে ফেলা নিভৃত প্রাণের গজল
                     বদলে ফেলা যায় কি কখনো ?


চিরঞ্জিৎ বৈরাগী, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০

  

 


 

 

তোমার দেখানো আলো

দিন ফুরিয়ে আসছে যখন,
ভেবেই নিয়েছিলাম
আর হয়ত স্টেজে ফেরা হবে না!

একজন ছিল,
যার পাসওয়ার্ড পাওয়ার
জীবনের অপরাহ্নে সাক্ষাৎ ঈশ্বর
যার ঠোঁট ইশারায় পৃথিবীটা আকাশ
নক্ষত্ররা চিরপ্রদীপ!

জাতীয় সঙ্গীত গাইলাম
কিন্তু অতি সুক্ষ পর্দায়
মাথাটা হঠাৎ ঝাঁকুনি দিল

কোথাও শান্তি নেই
একমাত্র তোমার দেখানো আলো, যতটুকু__

তার বাইরে কেউ নেই

রঞ্জন চক্রবর্ত্তী, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০, অঙ্কনে মঙ্গলদীপ সর্দার,

 


একটি রূপকথার জন্ম

   

১.

হয়তো কালের কথকের কথাই সঠিক ছিল -
নুড়ি বিছানো শুকনো নদীর খাতে জলের শীর্ণ রেখা
চকচক করছিল শুক্লা চতুর্দশীর অদ্ভুত মায়াবী রাতে,
তারপর স্বপ্নের মতো কেটেছিল অবশিষ্ট রাত,
একটা খুব চেনা ছবি, একটা খুব পরিচিত মুখ
একটা অচেনা দৃশ্য, একটা অজানা পথ -
এ সবই সত্যি হতে পারত – কিন্তু পারেনি,
তাই একটি রূপকথার জন্ম হয়েছে বিপরীতক্রমে

২.

হয়তো ঝরা সময়ের গান নিছক গান নয় বলেই
দিগন্তরেখার পারে শোনা যায় বাঁশির করুণ সুর
বুকের অর্ধেকটা জুড়ে গোধূলির রঙ – মুছে যেতে যেতে
নিত্যদিনের অভ্যাসমতো ঘরে ফিরে আসি,
আর কোনও কথা নয় – নিঃশব্দ পদসঞ্চারে সন্ধ্যা আসে
আবছা আলোয় মনে ভাসে একটা অন্ধকার মুখ,
জ্যোৎস্নায় থই-থই রাতে পায়ে-পায়ে যাই পদ্মদিঘির ঘাটে
টলটলে স্বচ্ছ জলে দেখা যায় ঝক-ঝকে রুপালি চাঁদ -
এখন মাঝে-মাঝেই ঘুমের মধ্যে ছোটবেলার স্বপ্নে ঢুকে যাই
আবার জেগে ওঠার আগেই ইচ্ছেগুলো ঘুমিয়ে পড়ে

৩.

সারা জীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য হাইওয়ে ধরে
দীর্ঘ পথ হেঁটে গেছি নতুন জনপদের অভিমুখে
অথবা হেঁটেছি বৃথা, ঘুরেছি উদভ্রান্ত একা -

দিনবদলের পালা সকলের অগোচরে ঘটেছে বলেই
দিবা-রাত্রির বিধিবদ্ধ ইতিহাস লেখা যায় না সবিস্তারে,
সেই সব ঘটনা লোকের মুখে মুখে রূপকথার গল্প হয়ে ফেরে

 অঙ্কনে মঙ্গলদীপ সর্দার

গৌতমকুমার গুপ্ত, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


আলোর ভাষা

আলগোছে নামিয়েছো আলো
যেন পড়ে না যায়
আঁচলে বেঁধে রাখো ভাষা
যেন হারিয়ে না যায়

ভালবাসা তেমন কাঁচের ভঙ্গুর হলে
নিম্নবিত্ত হতে হয় নিজস্ব প্রমুখে
লোহার নিরেটে দৃষ্টিটুকু না হয় থাক
শ্রবণের অবিশ্বাস আরো বায়ব হোক

আগোছালো নয় শরীরী কবিতা
অলংকারে সাজানো নখের লাবণ্য
চুলের কৃষ্ণবর্ণ পেশী ঠোঁটের স্থাপত্য
শাড়িতে জমানো থাক পয়স্বিনী সুধা

হুকে গাঁথা অন্তর্বাসে যন্ত্রণা ফুটে থাক
বোতামের পরিধিতে আঙুলের মিহি পেষণ
ভালবাসার সুখ দাহ্য হলে চোখে ঘুম পায়
আলোর ভাষায় একটি সুপুষ্ট চুম্বন রেখে আসে

তীর্থঙ্কর সুমিত, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

  


ভোকাট্টা



হয়তো ভুলে যাবো
টিকে থাকার লড়াইয়ে আমরা সবাই
পা বাড়িয়েছি
হয়তো ভুলে যাবে
জীবনের এক একটা ধাপে
ত্রিভুজ - চতুর্ভুজ - বৃত্ত
সবই হাত ধরে শেখা
অথচ সেই হাতেই আজ ...

ঘুড়ি উড়ছে

আমরা সমস্বরে ভোকাট্টা ___

মৃত্তিক গোপী, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 রাঙাবউ



কিছু শালিক এসে রোদের ঘ্রাণ নিয়ে যায় আউশ ধানের ভিতর থেকে,,
কিছু ঘুম ছুটি নিয়ে বিশ্রামে এলিয়ে দিচ্ছে গা
এ দুপুর বিবর্ণ রঙ মেখে রাঙাবউ হাঁটে দূরের দিগন্তে 
কাছে আসে গন্ধময় একপশলা সোহাগ নিয়ে।
চৈত্রের দুঃখগুলোকে কাছে নিতে গিয়ে, 
আমরা ভাগাভাগি করেছি কতক নিবিড় কথোপকথন ।
বেলাশেষে মেঘটুকু আকাশে শুয়ে  বিভোর হয়ে যায় ভীষণ 
সূর্যের রঙ মেখে গাঢ় লাল হোক এ সন্ধ্যার আকুতি,সুখ, প্রেম।
আধো আধো স্পর্শে বিলীন হয়ে যাও , ঘনতর ছায়ায়, মায়ায়।
রাঙাবউ, শালিকজন্ম পান করো,শালিক হও
আমাকে ঘ্রাণ ভেবে ভালোবেসে যাও।
চঞ্চুবিলাসী হলুদ মেখে দাও, নিগূঢ় সঙ্গোপনে।


নতুন লেখা নতুন কবিতা, বই আলোচনা, পৃথা চট্টোপাধ্যায়, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 




যে কবিতা জলোচ্ছ্বাসে আছড়ে পড়ে বহুরৈখিক বিচ্ছুরণে উজ্জ্বল (কিছু বই কিছু কথা )



এই বছর (অর্থাৎ 2020) কলকাতা বইমেলায় সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ও মল্লসাহিত্য -ই-পত্রিকার সম্পাদক অভিজিৎ দাস কর্মকার আমাকে পড়তে দিয়েছিল এই বইমেলায় প্রকাশিত তার তিনটি কবিতার বই 'জিরো দশমিক', '১টি অরাজনৈতিক স্টালিনসন্ধ্যা', ও 'বিবস্ত্র শব্দের Soliloquy'। কবিতা লেখার সুবাদেই অভিজিতের সঙ্গে আমার পরিচয়। আমি কবিতা পড়তে ভালোবাসলেও এই বই তিনটি পাওয়ার সাথে সাথেই এর কবিতাগুলি পড়ে ফেলতে পারি নি। ধীরে ধীরে পড়েছি। কারণ 'অক্লান্ত ব্যাকরণ শাড়ির কুঁচির শিউলি গন্ধে প্রত্যয় প্রত্যাশা আর প্রতীক্ষার অব্যক্ত কথা' বলে অভিজিতের কবিতা। তার কবিতার রূপ, শব্দের ব্যবহার, উপস্থাপনা ভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের । তার কবিতা পড়ে সাধারণ আধুনিক চিন্তাধারার কবিতা পাঠের পাঠককে থমকে যেতে হয়। 'সমস্ত দুপুর থেকে অভিসন্ধি ব্যাসার্ধ ক্রমশই নাব্যস্রোতা।/ শ্বাসকষ্ট দরজায় knock করছে , কদর দান may I come in?' কবিতাগুলিতে এই সময়ে দাঁড়িয়েও তথাকথিত আধুনিকতা নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু সে বলতে চেয়েছে বলে আমার মনে হয় যখন পড়ি 'ঝড়ের পরে আলো ফুটলো ব্ল্যাকস্টোন আগরবাতির গন্ধে' অথবা 'নগ্ন নারীরাও সোহাগিনী/ঈশ্বর আসেন, পকেটে খুচরো সময়/এক একটি বীজ মধুমেহ/ সমাজ রোগ'... , স্থিতাবস্থার প্রথা ভেঙে কবিতার শব্দগুলি চেতন ও চিন্তনের ক্ষেত্রে ক্রমাগত সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসের মতো আছড়ে পড়ে বহুরৈখিক ভাবনার বিচ্ছুরণ ঘটায়। 'মে মাসের বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে... অক্ষরবৃত্তের আহ্নিকতায় অভিযোজিত হচ্ছে বয়স' তা সে স্পষ্ট দেখতে পায় । '৬৮০৪৪ আপ খড়গপুর ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার ' এবং তার 'জামার মাননীয় সাদা রংটি অভিমানে ক্রিয়ার কাল' হয়ে দাঁড়ায়। 'ধ্রুবতারার সমকক্ষ একটি ফড়িং' একথা অনায়াসে লিখে ফেলতে পারে সে। তার কবিতার শব্দ ও চিহ্নগুলি মনের মধ্যে এক দীর্ঘ চিন্তার সূত্রপাত ঘটায়। চিত্রকল্প তৈরি হয় এবং তা খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে এক নতুন চিত্রকল্পের সৃষ্টি হয় । 'কয়েকটি বিষয় আর পরিপূরক বৃষ্টিগুলো শিল্পবোধসম্পন্ন', 'কাশির সাথে মিশছে লুব্ধকের ছায়াপথ', 'এরপরও কাল বিকালটা পিথাগোরাসের সাথে কাটাবো ' অভিজিতের কবিতার এই ধরনের পঙক্তিগুলি পড়লে মনের মধ্যে এক নতুন অনুভবের অনুরণন সৃষ্টি হয় ।

১| কাব্যগ্রন্থ -জিরো দশমিক (প্রকাশক :বইতরণী, মূল্য ৬০ টাকা) কবি -অভিজিৎ দাস কর্মকার
২| কাব্যগ্রন্থ- ১টি অরাজনৈতিক স্টালিনসন্ধ্যা ( মল্লসাহিত্য প্রকাশনা, মূল্য ৪০টাকা)
৩| কাব্যগ্রন্থ -বিবস্ত্র শব্দের Soliloquy( প্রকাশক ৯নং সাহিত্য পাড়া লেন, মূল্য ২০ টাকা)