Monday, 19 October 2020

অভিজিৎ দাসকর্মকার,শক্তি রূপেন সংস্থিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০

 


কাদের কূলের বউগো তুমি


আমরা সকলেই জানি শারদীয় দুর্গাপূজা অকালবোধন। রাম-রাবণের যুদ্ধের আগে রাম দেবী দুর্গাকে আবাহন করেন,কারণ দেবী দুর্গা শক্তির রূপ এবং একই সাথে অশুভ শক্তিনাশিনী। এই সময়টা ছিলো শরৎকাল। চারিদিক কাশফুলের দোলা।আকাশে পেঁজা তুলোর রূপ এবং বাতাসে শিউলির গন্ধ। এ হলো পুরাণকাহিনি। 

 

 মহিষাসুরমর্দ্দিনী (অর্থাৎ মহিষাসুরকে দমনকারী) হল ১৯৩১ সাল থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আকাশবাণী বা All India Radio-তে  সম্প্রচারিত একটি বাংলা প্রভাতী বেতার অনুষ্ঠান। দেড় ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে রয়েছে শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দুর্গা সপ্তসতী থেকে গৃহীত দেবী চণ্ডীর স্তোত্র বা চণ্ডীপাঠ, বাংলা ভক্তিগীতি, ধ্রুপদী সংগীত এবং পৌরাণিক কাহিনির নাট্যরূপ। অনুষ্ঠানটির একটি হিন্দি সংস্করণও তৈরি করা হয়, এবং বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচার হওয়ার একই সময়ে সারা ভারতের শ্রোতাদের জন্য সম্প্রচার করা হয়। যেহেতু মহালয়ার ভোরে তর্পণ করা হয় বলে, ওইদিন সকলকে ভোরবেলায় যারা তর্পণ করতে যাবেন তাদের জাগানোর উদ্দেশ্যে প্রতি বছর মহালয়ার ভোরে এই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। আর এখনো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ না শুনতে পেলে পুরো ফাঁকা লাগে...

 

"সর্বভূতা যদা দেবী স্বর্গমুক্তি প্রদায়িনী।

ত্বং স্তুতি স্তুতয়ে কা বা ভবন্তি পরমোক্তয়।

সর্বস্য বুদ্ধিরূপেন জনস্য হৃদি সংস্থিতে,

স্বর্গাপবর্গদে দেবী নারায়নী নমোহস্তুতে।

যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃ রূপেন সংস্থিতা।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তি রূপেন সংস্থিতা।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।"

 

   দুর্গাপুজোর অন্যতম আচার নবপত্রিকা স্নান। সপ্তমীর সকালে স্নান করানো হয় নবপল্লব। নবপল্লবের আক্ষরিক অর্থ 'নয়টি পাতা'। এগুলি হল কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, দাড়িম্ব, অশোক, মান ও ধান। একটি কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি গাছের পাতা বা ডাল বেঁধে দেওয়া হয় অপরাজিতা লতা দিয়ে । তার পরে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি বা হলুদ শাড়ি জড়িয়ে তাকে ঘোমটাপরা বৌটির মতো রূপ দেওয়া হয়। সিঁদুর পরানো হয়। নবপত্রিকার প্রচলিত নাম 'কলাবউ' হলেও তিনি আসলেই কারও বউ নন। 

 

শাস্ত্র মতে নবপত্রিকা, ন'জন দেবীর প্রতীক__ কলা রূপে ব্রহ্মাণী, 

কচু রূপে কালিকা, 

হলুদ রূপে উমা, 

জয়ন্তী রূপে কার্তিকী, 

বেল রূপে শিবানী, 

দাড়িম্ব রূপে রক্তদন্তিকা, 

অশোক রূপে শোকরহিতা, 

মান রূপে চামুণ্ডা, এবং 

ধান রূপে লক্ষ্মী। 

শাস্ত্রানুসারে নবপল্লব হলো ৯ টি পাতায় বাস করা "নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা"।

দুর্গার ডানদিকে তথা গণেশের পাশে রাখা হয় নবপত্রিকাকে স্নান করিয়ে আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে নিয়ে এসে। কলাবউকে অনেকে গণেশের বউ মনে করলেও সেটা একেবারেই ভুল। পণ্ডিত নবকুমার ভট্টাচার্য তাঁর ‘দুর্গাপুজোর জোগাড়’ বইয়ে লিখেছেন— ‘সমবেতভাবে নবপত্রিকার অধিষ্ঠাত্রী দেবী দুর্গা। নবপত্রিকা দেবী দুর্গারই প্রতিনিধি। দেবী শুম্ভ-নিশুম্ভবধ কালে অষ্টনায়িকার সৃষ্টি করেছিলেন এবং দেবী স্বয়ং ছিলেন।’বাস্তবে অবশ্য ন'টি পাতার সঙ্গে সঙ্গে শিকড়ও থাকে। মহাসপ্তমীর দিন সকালে জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নবপত্রিকাকে। পুরোহিত কাঁধে করে নিয়ে যান বা অনেকে তাঁকে পালকি করে নিয়ে যান। পিছন পিছন ঢাকিরা যায় ঢাক বাজাতে বাজাতে। স্নানের পর নবপত্রিকা বা কলাবউকে লালপেড়ে সাদা শাড়ি বা হলুদ শাড়ি পরানো হয় ও বৌ রূপে সিঁদুর পরানো হয়।

আসলেই নবপত্রিকা মহামায়ার ন'টি রূপ।

 

 "ওঁ কদলীতরুসংস্থাসি বিষ্ণুবক্ষঃ স্থলাশ্রয়ে। 

নমস্যতে পত্রি ত্বং নমস্তে চন্ডনায়িকে।। 

ওঁ হ্রীং রম্ভাধিষ্ঠাত্র্যে ব্রহ্মাণ্যৈ নমঃ।"

 

মনে করা হয়, ন'টি উদ্ভিদের পুজো করা হয়। যেহেতু, ভারতবর্ষ একমাত্র কৃষি প্রধান দেশ, তাই প্রাচীন কৃষি ব্যবস্থার কথাই তুলে ধরা হয়েছে। স্নান করানোর সময় এই মন্ত্রটি পাঠ করা হয় এবং এই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে নবপত্রিকার স্নানকাজ সম্পূর্ণ করা হয়---

“রম্ভা, কচ্বী, হরিদ্রা চ জয়ন্তী বিল্বদাড়িমৌ। অশোক মানকশ্চৈব ধান্যঞ্চ নবপত্রিকা।।"

 

 এঁরাই (কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, দাড়িম্ব, অশোক, মান ও ধান ) আবার নবদুর্গা রূপে পূজিতা হ’ন। 

তাই দুর্গাপূজার মন্ত্রে দেখলে বা শুনলে পাওয়া যাবে ---

 

“ওঁ পত্রিকে নবদুর্গে ত্বং মহাদেব-মনোরমে”। “ওঁং চন্ডিকে চল চল চালয় চালয় শীঘ্রং ত্বমন্বিকে পূজালয়ং প্রবিশ।

ওঁং উত্তিষ্ঠ পত্রিকে দেবী অস্মাকং হিতকারিণি”

আসলে নবপত্রিকাকে জনসমাজের কল্যাণের জন্য পুজা করা হয়। একই সাথে আমাদের জন্মভূমি কৃষিপ্রধান দেশ যাতে শস্যের ফলন ভালো হয়, তাই ন'টি উদ্ভিদের পাতা ও শিকড়কে দেবী রূপে পুজো করা হয়। 

  মার্কণ্ড পুরানে নবপত্রিকা পূজার বিধান কিন্তু নেই । 

দেবী ভাগবতে নব দুর্গার উল্লেখ থাকলেও নবপত্রিকার উল্লেখ নেই । 

কালিকা পুরানে এই নিয়ম না থাকলে সপ্তমীতে পত্রিকা পূজার কথা আছে । 

কৃত্তিবাসী রামায়নে এর উল্লেখ পাওয়া যায় --'বাঁধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস'। 

   মনে করা হয়, সম্ভবত শবর জাতিরা ৯টি গাছ দিয়ে নব দুর্গার পুজো শুরু করেছিলেন ৷ সেই থেকেই নবপত্রিকা দুর্গাপুজোর সঙ্গে মিশে যায় ৷ আসলে দেবী দুর্গার সঙ্গে শস্য দেবীকে মিলিয়ে দেওয়ার রীতিই এই পুজো ৷ এটি কিন্তু গণেশের বউ নয় দুর্গারই এক মূর্তি — ধরিত্রীমাতা বা শস্যবধূর প্রতীক | পত্রিকাকে স্থাপন করে পুরোহিত আচমনাদি সমাপ্ত করে মণ্ডপের প্রতিমায় বা ঘটে দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন | এক্ষেত্রে যোদ্ধা হিসেবে দুর্গার আত্মাকে জাগানো হয় | 

 

দুর্গাপূজার মন্ত্রে আছে---

 

“ওঁ পত্রিকে নবদুর্গে ত্বং মহাদেব-মনোরমে”

ভবিষ্যপুরাণে পাওয়া যায়..

"অথ সপ্তম্যং পত্রিকাপ্রবেশন বিধিঃ"

 

কৃত্তিবাসী  রামায়ণে পাওয়া যায়---

"অথ সপ্তম্যং পত্রিকাপ্রবেশন বিধিঃ"

 

কিন্তু বাল্মীকির রামায়ণে নবপত্রিকা পুজোর কোনো উল্লেখ নেই।

অষ্টকলসের মন্ত্রপূত জল দিয়ে দেবীর স্নানাভিষেকের সময় এই গানগুলি সেযুগেও ব্যাবহৃত হত এবং এখনো হয়। কালিকাপুরাণেই এর উল্লেখ রয়েছে।

 

প্রথমে "মালবরাগং বিজয়বাদ্যং কৃত্বা গঙ্গাজলপূরিতঘটেন " এই মন্ত্র বলে গঙ্গাজল পূর্ণ ঘট দ্বারা অভিষেক হয়। তখন বিজয়বাদ্য বা কাঁসা-পিতল দ্বারা নির্মিত বাদ্য যন্ত্র অর্থাৎ কাঁসরঘন্টা সহযোগে  গাওয়া হয়। গান গুলি মালব রাগের উপর তৈরি  এবং চৌতাল তালে বাজনা বাজানো হয়। 

 

এরপর "ললিতরাগং দুন্দুভিবাদ্যং কৃত্বা বৃষ্টিজলপূরিতঘটেন " এই মন্ত্র বলে বৃষ্টিরজল পূর্ণ ঘট দিয়ে অভিষেক কালে দুন্দুভির সাথে গান গুলি গাওয়া হয় ললিত রাগে এবং চৌতাল তালে বাজনা বাজানো হয় ।  

 

এবার "বিভাসরাগং দুন্দুভিবাদ্যং কৃত্ব সরস্বতী-জলপূরিতঘটেন" এই মন্ত্র বলে সরস্বতী নদীর জলপূর্ণ ঘট দিয়ে স্নানাভিষেক হয় এইসময়ের গান গুলি বিভাস রাগে গাওয়া হয় এবং চৌতাল তালে দামামা জাতীয় রণ দুন্দুভি বাজানো হয় ।

 

এরপর "ভৈরবরাগং ভীমবাদ্যং কৃত্বা সাগরোদকেন" এই মন্ত্র বলে ভীম বাদ্য বা ভেরী বা চামড়ার তৈরী ঢাকের আওয়াজের সাথে সাগরের জল দ্বারা স্নানের সময় গান গুলি ভৈরবী রাগে চৌতাল তালে বাজনা বাজে ।

 

এবার "কেদাররাগং ইন্দ্রাভিষেকং বাদ্যং কৃত্বা পদ্মরজমিশ্রিতজলেন" এই মন্ত্র বলে পদ্মরজ বা পদ্মফুলের রেণু মিশ্রিত জল দিয়ে, বীণার সাহায্যে উৎপন্ন ধ্বনিতে  কেদাররাগে গান গাওয়া হয় এবং স্নানাভিষেকের বাজনা বাজে চৌতাল তালে।

 

তারপর "বরাড়ীরাগং শঙ্খবাদ্যং কৃত্বা নির্ঝরোদকপূরিতঘটেন"  এই মন্ত্র বলে, শঙ্খধ্বনি, তূর্য, বাঁশী, সানাই ইত্যাদির সাথে ঝর্ণার জল দিয়ে স্নান এবং সংগীত গাইতে হয় বৈরাটি রাগে ও চৌতাল তালে বাজনা।

 

এবার "বসন্তরাগং পঞ্চশব্দবাদ্যং কৃত্বা সর্বতীর্থাম্বুপূর্ণেন ঘটেন" এই মন্ত্র বলে মানুষের সম্মিলিত ঐক্যতানের সঙ্গে পাঁচ রকমের ধ্বনি, সর্বতীর্থের জল দিয়ে স্নান হয়। গান গুলি গাওয়া হয়  বসন্তরাগে ও চৌতাল তালে বাজনা ।

 

সবশেষে "ধানশ্রীরাগং বিজয়বাদ্যং কৃত্বা শুদ্ধ জলপূরিত ঘটেন" এই মন্ত্র বলে শীতল ও শুদ্ধ জল পূর্ণ ঘটের জল দিয়ে স্নানের সময় গান হয় ধানশ্রী রাগে ও চৌতাল তালে বাজনা বাজানো হয়।  এই সুর বিজয়বাদ্যের সুর।

 অর্থাৎ কাঁসরঘণ্টা দিয়ে শুরু ও শেষ হয় এই মহাস্নান।

 

এই যে বিশেষ সমস্ত বিধি আমরা আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে পালন করি, মেনে চলি, এতে আর যাইহোক কোন ক্ষতি কারো হয় না। বরং মনোবল  বেড়ে যায়। জীবনী-শক্তিকে এগিয়ে নিয়ে চলে। আর একটা বিষয় নারীশক্তি--- এই নারীই শক্তির প্রধানমূল। কারণ পুরুষকে মানতেই হবে নারী ছাড়া তার জন্ম থেকে তাকে inspiration দেবার কোন মাধ্যম নাই,তার যতই inner power থাকুক না কেনো একটি নারী ছাড়া সেই পুরুষ কিন্তু সম্পূর্ণ হতে পারে না। তাই সমস্ত প্রজাতিরই উচিত নারীকে সম্মান করা,তাকে তার যোগ্যতা দেয়া। কারণ আমরা বাস্তবে এমনকি  অনেক গল্প বা সিনেমায় (বাস্তবে যা ঘটে তাই তো লেখা বা দ্যাখানো হয়) দেখে থাকি যে ছেলে মেয়েদের পেট ভরে মা, নিজেকে অভুক্ত রেখে। আবার অন্যদিকে স্বামীর বিপদে বা খারাপ সময়ে  একমাত্র স্ত্রীই নিষ্ঠার  সাথে পাশে থেকে উদ্ধার  করে বা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে সেই খারাপ সময়, যাকে বলে ঢাল হয়ে সামনে দাঁড়ায়। যতই তার স্বামী তার প্রতি অনীহা দেখাক,তবুও। সংসার সামলানোতেও এতোটাই পারদর্শী হয়ে ওঠে, দেখে মনে হয় যেন অন্নপূর্ণা, লক্ষী এবং সরস্বতী একসাথে। তাই সবশেষে বলি, নারী শক্তি জিন্দাবাদ ।  নারী পুরুষ একে অপরকে সম্মান দিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে চলুক।

 

জ্যোতির্ময় মুখার্জি,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


  

 

লক্ষ্য


খুব ভিতরে একটা পাহাড় আছে

আমি টের পাই, আর আছে এক নদী

ঝরনা হয়ে পাহাড় কেটে নামছে

তারপর, সব নদীর মতোই এঁকেবেঁকে

কোথায় যাচ্ছে সে, জানা নেই

শুধু জানি, আজও সে কোনও সমুদ্র খুঁজে পায়নি

পার্থসারথি,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 

 

 অগণতান্ত্রিক


আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যে পথনির্দেশক 

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা পথভ্রষ্ট করে 


আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যা সীমান্তে দেশকে রক্ষার স্বাধীনতা দেয় 

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা ভোটবাক্সে আমাকে পরাধীন করে রাখে 


আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যা এক রাষ্ট্র এক আইন প্রণয়ন করে 

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা দিশাহীন  রাস্তায় হাঁটে ক্ষমতার লোভে 


আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যে দেশদ্রোহীর মাথায় বন্দুকের নল ঠেকায়  

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা মানবাধিকারের নামে দানবদের সুরক্ষা দেয়


আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যে শ্রমিকদের ক্লান্ত পায়ের খবর রাখে

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা আকাশ ছুঁতে চায় 

 

আমি সেই স্বৈরতন্ত্র কে অনেক বেশি প্রাধান্য দেই

যে আমার দেশের স্বাধীনতাকে বিক্রি করে না 

সেই গণতন্ত্রের থেকে 

যা আমাকে কিনতে চায়


তবু...



গোপেশ দে, কবিতা , সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


বারান্দায় যখন আমি




বারান্দায় যখন আমি একা একা বসে থাকি
একটা সুতীব্র চিন্তার বাতাস বয়ে যায় মগজে
বড় উদাসীন হয়ে যেতে ইচ্ছে করে

লাইন ধরে কিছু অক্ষর এসে একটা কবিতা বানায়
আমি চেয়ে দেখি তার রূপ
বিমুগ্ধ বিস্ময়ে উন্মাদ হই আপন অভ্যাসে

নিজেকে অহংকারী লাগে, বড় বেশী রাশভারী লাগে
কিছু খন্ড স্মৃতি নীল আকাশে মেঘ নিয়ে আসে
বিড়বিড় করে নিজেকে পরাঙ্মুখ ভেবে রাস্তায় নেমে আসি

চোখে স্বপ্নহীন নেশা নিয়ে উদ্বাস্তুর সাথে নিজেকে তুলনা করি
আর ঠিক তখনই চায়ের তৃষ্ণা পেয়ে যায়...

নিসর্গ নির্যাস মাহাতো, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


 

সুরারোপ


ঝরে পড়া গোধূলি আলোয়
উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ধূসর অশ্রুকণা
বেজে যায় বিষাদের রাগ
সুর বেঁধে টান দেয় ঠোঁটে 
যেন গুনগুন করে ওঠে
মিলনের একতারা সুর
ওপারে সন্ধ্যা নামে, হৃদয়ে অতীত জাগে
ঝরেপড়া কামিনী সুবাসে

 সুর

সমস্ত সৌন্দর্যটুকু রয়েছে লুকানো
একতারা সুরে
বিরহ- মিলনের গান জানে সেই
চিত্রকল্প বেঁধে, তাতে টান দেয় গুণী
এসো বিশ্বাসে বাঁধি সুর
যেমন করে পাখিরা গেয়ে ওঠে
গোধূলি আলোয়-
চুমুতে চুমুর পর


মৌসুমী ভৌমিক,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


ভয় 


এক

শরীরে কাঁটার মত বিঁধে আছে ভয় 
যেন তাল তাল অন্ধকার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে

ছাড়ছেও না যাচ্ছেও না 

শুধু, এগিয়ে চলা প্রতিটি পদক্ষেপে 
একটি পেরেক পুঁতে দিচ্ছে, নিঃশব্দে।

দুই

ভেবে ভেবে ক্লান্ত হয়েছ
অনভ্যস্ত অভ্যাসে

আঁধার দেখে তোমার মুখ 
তলিয়ে যাচ্ছে বিষাদে

জেনো, ভয় পেলে, সে আসবেই।

তিন

কখনও গেয়ে ওঠো
মন স্নাত হয়

কখনও উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান করো 
কবিতার ছন্দতরঙ্গ 

হাসতে গিয়ে 
এক টুকরো শব্দ 
হঠাৎ করে বয়ে নিয়ে আসে প্রাণান্তকর ভয়।


মধুসূদন দরিপা,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


সাপ


সাপের গর্ত খুঁড়ে 
ঝাঁপির সাপটি  খোঁজে 
আজও রোদে জলে
 সাপুড়ে  বাবুরাম 
জলে কি জঙ্গলে 
ঝোপে কি কেয়াফুলে 
কোথাও নেই আজ 
সাপের নাম 
ইটের পরে ইট 
মাঝেতে মানুষ কীট 
সাপটি মারা গেছে
 সুনিশ্চিত 
আল্লা সাপ দে 
আল্লা সাপ দে 
শূন্যে কেঁদে মরে
 সাপুড়ে গীত 
সাপকে ডেকে আনা 
গোপন মন্ত্রগুলি 
সঙ্গে নিয়ে গেছে
 মানিকলাল 
একটি সাপ নয়
 এক শো কাজের দিন 
খুঁজছে গুণিন ঘর 
বছর সাল 

নাগিনা  বীন বাজে
 সাপেরা বেঁচে ওঠে 
চমকে দ্যায় এক 
জন্ম লাফ 
সাপের জামাটি  ছেড়ে 
মানুষ জামাটি  পরে 
নতুন জন্ম নেয় 
কুটিল সাপ

দেবেন্দ্র নাথ দাস,অণুগল্প,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

  


ড্রাইভার 

সেদিন সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টি l বাজবিজুলি আর দমকা হাওয়ায় ওলট পালট হচ্ছে গাছগুলো l জৈষ্ঠ্য শেষের দুর্যোগ l উঠোনের সুপুরি গাছ থেকে সপাং করে একটা বড় হলুদ পাতা এসে পড়ল পাতাবাহার গাছটার উপর  l ঝোপ মতো ওই গাছটায় বুলবুলি বাসা বেঁধেছে l এখন তিন তিনটে বাচ্চা l সবেমাত্র চোখ ফুটেছে l ফ্যানফ্যানে চামড়ার ভেতর মাংস দেখা যায় l হাড় সম্বল ডানায় ছোট ছোট কালো লোম l পালক ওঠেনি লেজ ও গজায়নি বিশেষ l  

জানালা দিয়ে  রোজ বুলবুলির আনাগোনা দেখত ছোট্ট সুমিত l সেই বাসা বোনা থেকে l কেমন ঠোঁটে কুটি এনে বাসা বুনেছিল পাখিটা l  এখন ঠোঁটে পোকা ধরে এনে  বাচ্চাগুলোকে খাওয়ায় l দেখতে দেখতে অদ্ভুত প্রশ্ন করে সুমিত,  
-হ্যাঁ মা, এদের বাবা আসে না কেন ! আকাশের তারা হয়ে গেছে ! 
-আসে আসে l তুই কি চিনতে পারবি কোনটা মা আর কোনটা বাবা l
-বা রে চিনবো না কেন একটা পাখিই তো আসে খাওয়ায়, উড়ে যায় আবার আসে l ওটাই মা পাখি l
-তোর সাথে এতো বকতে পারি না বাবা l যা পড়তে বোস l সামনে পরীক্ষা l 

দুর্যোগে খসে পড়া পাতাটার আড়ালে মা, বাচ্ছা কাউকেই দেখা যাচ্ছে না l প্রচন্ড বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় নুয়ে পড়ছে গাছটা l 
- মা, বাচ্চাগুলো মরে যাবে না তো l 
-না রে বাবা,  ওদের মা আগলে রেখেছে বুকের ভেতর l  কিচ্ছু হবে না l 

সেই সুমিত এখন বছর বাইশের l পড়াশুনো বিশেষ হয়ে ওঠেনি  l বাবা নিরুদ্দেশ l কেন আর কোথায় কেউ জানে না l কোন ছেলেবেলায় দেখেছে এক আধবার  l এখন আর জানতেও চায় না l ছোটবেলায় মা'র  মুখে শুনেছিল আকাশের তারা হয়ে গেছে l মনে আছে, সেদিন সুমিতও খুব কেঁদেছিল মায়ের হতভাগ্যের জন্য l

আজও সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি পড়ছে l ওয়াইপারদুটো পেন্ডুলামের মতো অনবরত মুছে দিচ্ছে ফ্রন্টগ্লাসের জল l স্টিয়ারিঙে হাত রেখে সামনের ঝাপসা রাস্তায় সাবধানী নজর l হুটার বাজছে সমানে l  লুকিংগ্লাসে ধরা পড়ছে গাড়ির ভেতর দুই ছেলে  মুমুর্ষ মায়ের মুখে এক ভাবে চেয়ে আছে l ছ্যাঁত করে উঠলো বুকটা l কদিন থেকে তারও মায়ের ধুম জ্বর l বেরনোর সময় বলছিল  আজ আর যাসনি খোকা l শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছে l বেরোনোর ইচ্ছেও ছিল না তবে এম্বুলেন্স ড্রাইভারের কল এলে উপায় থাকে না l মানু পিসি কে মায়ের কাছে রেখে এসেছে সুমিত l 

আজ থেকে থেকে বড় মনে পড়ছে মায়ের সেই কথা !
"মা আগলে রেখেছে বুকের ভেতর l  কিচ্ছু হবে না খোকা l"

দীপিকা সাহা,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


আবছায়া

                          
বিশ্বাসের গোড়া আগলে যাকে লালন করা যায়
তার গর্ভেই প্রবাহমান জীবনের সূত্র
জন্ম, মৃত্যুর হাত ধরে
                              পথ চলা শুরু করেছে বলে
পরিহাসের পাথর বুকের ওপর স্তুপ হয়ে
জমে থাকতে চায় দীর্ঘকাল।
একটু একটু করে
গোটা সাম্রাজ্যে ভাঙ্গন ধরিয়ে
নিংড়ানো আবেগ নিজের মতো মিশেছে
                                  কোনো মোহনার ভেতর।
তবু নির্বাক আকাশ বয়ে নিয়ে যায়
কোন বিধবার কান্না,
অবৈধ শিশুর আর্তনাদ
যন্ত্রণায় ক্লান্ত হয়ে এখন নিঃশ্বাস দুঃখ খোঁজেনা,
খোঁজে বিদুষীর তাজা রক্ত
যার ফোঁটা ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে                শেষ
বিকেলের ওপর।
একটা শঙ্খচিল পায়ে রক্ত মেখে ছিটিয়ে যায়
সন্ধের কলংক ঘেটে
আর প্রথম ভোরের আলো
বারবার হাত বুলিয়ে মুছে যায়
নিকষ মৃত্যুর ছাপ।



 

অরুণাভ রাহারায়,কবিতা,সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


 
 
ব্যাধ


কবিতা তা-থই বাজে জলে, সারাঘরে
উঠোনে বিছায় মায়া দুর্বার কথন
সবুজে-সবুজ খেললো গাছগাছালির
এখন সময় শুধু পাতা ওড়াবার

কী পাতা হাওয়ায় ওড়ে জানো তার নাম?
যোধপুর পার্ক থেকে বাতাসে হাঁটলাম
দু'চোখ উড়েছে শূন্যে রে ঘটনাবলী
নদীতে ভাঙন চলে... শান্ত সরোবর।

সাঁতারে বিষাদ ওঠে, ওঠে বিষোদ্গার
পেয়েছি অকূল ঘূর্ণি, চূর্ণী-জলঙ্গিতে

হাওয়ায় নিষাদ দাও, ওষ্ঠ দাও তুমি
জোনাকির আলো দাও, দাও কষ্ট ঢাকি।

মহম্মদ সামিম, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 

বাকি সব অকিঞ্চিৎ

রক্ত মাংসে, পাপে, অসুখে, নিভৃতে
যতটুকু বেঁচে আছি, বিশ্বাস করো
আগন্তুক কোনও ঘোরের উদ্দীপনায়
বিড়াল তপস্বীর মতো বসে থেকে
কত আর্ত ডাকের সরলতায় সাড়া দিই নি
কত চেনা মুখকে অচেনা করেছি নিমেষে,
বিনিময়ে কি পেয়েছি ?
আত্মসুখ ও রাতের গভীরে স্বৈর-উল্লাস
সবাই আঙুল তুলেছে এমন জীবনের দিকে
ধিক্কার ছুঁড়ে মেরেছে, বলেছে—
পৃথিবী ক্ষমা করবে না এই স্খলন...

খোলা আকাশের নীচে,
বেঁচে আছে সহস্র পথ ও চোরাস্রোত
সমস্ত দংশন-জ্বালা মেখে দাঁড়িয়ে আছি একা
কেউ খোঁজ রাখেনি এইসব যন্ত্রণার
যতটুকু বেঁচে আছি, নির্জন আত্মমগ্নতায়
আঘাতে, নীরবে এবং প্রত্যাখ্যানে।

সুবিৎ, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


সময় 


তারপর সেই প্রায় অন্ধকার কোণটায় আমরা গিয়ে বসতাম। আমি আর আমার বন্ধু। 
আজ যার মনে নেই চোখ , নাক , কান। 

সেখানে শিশুর গায়ের মত নরম সবুজ শ্যাওলা আমাদের পেছন ভিজিয়ে দিত। 
কাছেই জং ধরা রোড-রোলার , ঘটঘটাং। 

এইখানে মাঠ এবড়ো খেবড়ো এসেছে রাস্তায় । দূরে একটিমাত্র গাছ নিয়ে আমাদের , পরিচিত আমের বাগান। 
ভূতুড়ে হস্টেল। স্মিতি শপের প্রাচীন দেয়াল। কিছু বিক্ষিপ্ত ফার্ণ।

তারপর সেই প্রায় অন্ধকার কোণটায় 
বিশ বছর পর গিয়ে বসলাম আবার।

আমার বন্ধুর নাম এখন , নির্জন। 
আলোচনায় বিশুদ্ধ কবিতা , যেমন থাকত।
সঙ্গে কিছু ঠোঙায় দৈন্যের অনুপান 
কালচে বাদামী দুঃখিত কেলাস। 

খুললাম আমার
কালো খাতা , নীল হরফ , হলদে পাতা

আর ওর হাতে কেবল , সেই চিরপরিচিত বই  ....

আনিসুজ্জামান।


দেবযানী বন্যা, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০, ভাস্কর্যে রামকুমার মান্না,

 

 


দৃশ্য


নেভানো  মুঠোর থেকে

কতটুকু  দৃশ্য নিতে পার ! 

এখন যাপনবৃত্তে বাতাসিয়া 

লুপ  -দৃশ্যান্তরে যেতে পারো

কুয়াশা বা রোদ ব্যবধানে।


বটের প্রশস্ততল  জিরেন দুপুরে


যে বাউল নিদাঘ সহনে সুরে সুরে  

বেঁধেছিল পথ, 

দৃশ্যটুকু পড়ে আছে রোদার্ত বিরানে,

সে বৃক্ষ  পাখির ঠোঁটে উড়ে

ছায়াতল রেখে গেছে সন্ততি শরীরে।

 

আমাকে শীতলে রাখো , জলছিন্ন মীন- 

দৃশ্যান্তরে  হিমায়িত হব।

হাতফেরতা অটুট আদলে 

জনৈক অভিজ্ঞ শেফ দ্বিতীয় হননপর্বে এতটুকু  রক্তাভা পাবে না। 


সুদৃশ্য  ডিনারপ্লেটে  শালীন ছুরির চাপে

স্বাদু চোখ প্রেমিকাকে দিও,

বাঁ হাতের চঞ্চল হলে তীব্র জঙ্ঘায় 

অবাধ্য চারণকালে বোলো তাকে -

 ' তুমিই প্রথম.....'


ভাস্কর্যে রামকুমার মান্না

সোনালী মিত্র, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


ভূগোল

আমার পড়ার টেবিলে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত গ্লোব ছিল
চেয়ারে বসলেই ইচ্ছে হত, বিশ্ব জোরসে ঘুরিয়ে দিই ।

সেই ঘূর্ণন শুরু... সময় প্রথম হাত ছুঁইয়ে চিনিয়ে ছিল-
হাভাতে ইথিওপিয়া ,মা সময় পেলেই
বুঝিয়ে দিত গ্লোবের কোথায় থাকে মহাসাগর ।
একটু একটু করে সবে গ্লোবে চড়ে বসতে শিখেছি
সেই মুহূর্তে আমার প্রথম প্রেমিক
এভারেস্ট এ পা রাখা চেনাল..
রেডলাইট অন্ধকার-কন্যা দেখিয়ে দিল আফ্রিকার সিংহ !
আর শেষতম প্রেমিকের কাছে মারিয়ানা খাদে পড়ে
রপ্ত হল না গিরিপথ ভেঙে উঠে আসার কায়দাটা।

এখন আমি ভূগোল পড়াই , পৃথিবীর গঠন আত্মস্থ
গরম-শ্বাসের মুহূর্ততক চোখে থাকে গ্লোব
ক্লাসের মেয়েদের মহাদেশ দেখাই
ভোর রাতে ঘুমের মধ্যে গ্লোবে নিজের গ্রামের নাম খুঁজি...

Sunday, 18 October 2020

মানসী কবিরাজ, অণুগল্প, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 


 

সাহস

 

সবার সব ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু তাই বলে ইচ্ছাও জাগবে না তেমন তো নয় । অনুপমের মনেও  ইচ্ছাটা বাসা বেঁধেছে বেশ কিছুদিন  শুধু অনুপমই  ইচ্ছার গোড়ায় সার জল কিছু দেয়নি। কে আর খাল কেটে কুমীর আনতে চায় যেচে ! প্রথম প্রথম কিন্তু শুভ্রা মানে অনুপমের এক এবং অদ্বিতীয় বউ  বেশ রসেবশেই দাম্পত্যালাপ চালাত । বিয়ে যত পুরানো হচ্ছে  রস তো নয় আস্ত কর্পূরের ড্যালা  উবে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।  শুভ্রার এখন কথায় কথায়  খোঁটা ।  অনুপমের নাসিকা গর্জনের ঠ্যালাই পাড়াতে নাকি চোরের উপদ্রব কমে গেছে , অনুপম প্লেটে ঢেলে বিশ্রী শব্দে চা খায় ( আগে তো এটাই  শুভ্রার জারা হট্ কে টাইপ লাগত ) , বাজারের যত কানা বেগুন পাকা ঢ্যাঁড়স নরম পেটের মাছেরা  অনুপমের থলিতেই ঝাঁপিয়ে এসে পড়ে ! নেহাতই শুভ্রার হাতের ক্যারিশ্মা  রান্নাগুলো এত সুস্বাদু হয় । অভিযোগের তালিকা শ্রাদ্ধের ফর্দের চেয়েও লম্বা ।

    যদিও বচনবাগীশ হিসাবে অনুপমের  নামডাক আছে কিন্তু  যাবতীয় পুরুষ- সিংহের মতো অনুপমেরও বউয়ের কাছে সব বোলচাল পুরো ঘেঁটে- ঘ । কিন্তু সহ্যেরও একটা সীমা নিদেনপক্ষে একটা  এক্সপায়ারি ডেট থাকে তাই শেষ অবধি শান্তি চুক্তি ভেঙে অনুপম একদিন বোমাটা ফাটিয়েই ফেলল। স্লগ ওভারে সপাটে ছক্কা হাঁকিয়ে বলে দিল ঘুমের সময় শুভ্রার মুখ বোয়াল মাছের মতো হাঁ হয়ে থাকে , আগে ছিল  আটাশ ইঞ্চির তন্বী কোমর এখন ছেচল্লিশের কুমড়োপটাশ  , গলার স্বর শুনলে রাস্তার কুকুর অবধি ঝগড়া থামিয়ে দেয় আর রান্নার কথা না তোলাই ভালো জেলখানার চেয়েও খারাপ অনুপমের মতো ঋষিতুল্য মানুষ বলেই সেসব গলধঃকরণ করে । অনুপম বেশ আত্মপ্রসাদের সঙ্গে ভাবল জব্বর একখানা চাল দিয়েছি , একেবারে কিস্তিমাৎ ! যাক এবারে আয়েশ করে সিগারেটে একটা টান দেওয়া যাক ।  যেই অনুপম লাইটার জ্বালাতে গ্যাছে ওমনি আঙুলে এক মোক্ষম ছ্যাঁকা , দূর থেকে ভেসে আসছে  অমোঘ বচন ‘ আর কখন ঘুম থেকে উঠবে কুম্ভকর্ণের বংশধর ? বলি এরপর কি দোকান বাজারের ঝাঁপ গুটাতে যাবে !”  ধড়মড় করে উঠে  অনুপম দেখে , কখন যে চায়ের কাপ রেখে গেছিল শুভ্রা ঘুমন্ত অবস্থায় সে ঐ গরম চায়েই আঙুল ডুবিয়েছে