Saturday, 23 January 2021

বই আলোচনাঃ পৃথা চট্টোপাধ্যায়

 


 


 

 

নির্মাণ ও বিনির্মাণের এক অপূর্ব অনুভবের কবিতা


কবি ও গদ্যকার সৌরভ বর্ধনের কবিতার স্নায়ুতন্ত্র হল নির্মাণ ও বিনির্মাণ। এই তরুণ কবি প্রাত্যহিক জীবনের খুব সাধারণ বিষয় থেকে উপাদান সংগ্রহ করে লিখে ফেলেন 'বাস্ততন্ত্রের ইতিহাসে'এর মত কবিতা। "শুধু ঈশ্বরের প্রতি উদ্ভিদ হয়ে আকাঙ্ক্ষা ও উদাসীনতা্র কাছে এই বিস্ময় বরাবর" কবি অনায়াসে হেঁটে যান।
২০১৯ সালে কলকাতা বইমেলায় কবিতা পাক্ষিক থেকে প্রকাশিত হয় সৌরভ বর্ধনের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ "প্রসূতিকালীন পাঠ"। কবি সৌরভ মনে করে্ন , ধূম্র ও মদ্যপান না করেও অনায়াসে কবিতা লেখা যায়, আবার ফুলে ফুলে প্রফুল্ল সরষে খেতে দাঁড়িয়ে খাবি খাওয়া বাতাসকে তিড়িং পাখির মত চোখ মারা যায়। কবিতার প্রচলিত পথ থেকে সরে এসে ভিন্ন পথের সন্ধান করেন যে সব কবি, সৌরভ বর্ধনের কবিতায় তারই বনজ ঘ্রাণ আমরা পাই। "প্রসূতিকালীন পাঠ "এই কাব্যেগ্রন্থের কবিতাগুলি ছয়টি শিরোনামে সন্নিবেশিত এবং তাদের নামকরণ- বাস্ততন্ত্রের ইতিহাস, শুভরাগ ও বীর্যকথা,দ্বন্দ্বমূলক ছায়াবলোকন, স্ববিরোধ ও অপাবৃণু দিন,প্রসূতিকালীন পাঠ,হাড়মণি ও তঞ্চক লিপি কবিতার পাঠককে আকৃষ্ট করে ।
"মাটি ধরে নিলো আমি হাঁটছি/আমি ধরে নিলাম মাটি- এই ধরে থাকা চিরন্তন " বলেই কবি হাত ছেড়ে দেন । অনুভব করে্ন, "আমার ভিতর আছড়ে পড়ল কেউ"।মাটিতে হাত দিয়ে তিনি ছুঁয়ে দেখেন "বাস্ততন্ত্রের ইতিহাস"। "ফুল যখন ফোটে/আমি তার কেন্দ্রের দিকে চেয়ে থাকি" ফুলের কথা শোনার জন্য কবির রাত কেটে যায় আর তিনি অনুভব করেন এক অদ্ভুত "আমি থেকে আমার প্রসব।" কোনো কোনো নেতিবাচক সঙ্কেত কালের প্রবাহে বদলে গেছে ,সেকথা লিখে ফেলে্ন এই তরুণ কবি। যেমন " ...বুড়ো আঙুল দেখাই,অথচ/ সবাই খুশি, ভালোবাসে/ বিনিময় বিনিময়ে কাছে আসে।" সৌরভ বর্ধনের কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায় ভাবনার বহুমুখী উৎস ও শব্দের বহুরৈখিক বিস্তার। আবার অনেক সময় সামঞ্জস্যবিহীন এক শূন্যবাদী অস্তিত্বের সংলাপ বলে মনে হয় তাঁর লেখা ..." এভাবে সূর্য ডুবে গেলে আর কিছু বলার নেই আমার "...তখন আলো অন্ধকারের বৈপরীত্যে কবি নিজেকে অন্বেষণ করেন। তিনি বিশ্বাস করেন "চুম্বক ভাসতে ভাসতে একদিন এমন সময় আসবে " "একহাতে নিউক্লিয়াস অন্য হাতে সাইটোপ্লাজম/...সেখানেই স্বতন্ত্র একটি শ্বাস এসে পড়ে" আর তখন " অজস্র স্বাধীন উপন্যাস লেখা হয়"। কখনো কখনো পড়ে অদ্ভুত লাগে তাঁর কবিতার বিষয়হীন বিষয়টি। মনিটর বুকে নিয়ে ফসলের খেতে দাঁড়িয়ে কবি দেখেন "পেকে যাওয়া ধানখেতের ওপর দিয়ে/ক্যামেরা ছুটছে...অথবা বিস্তৃত কাশবনের চুল ছুঁয়ে ড্রোন" । আবার কখনো তিনি সান্ধ্য ভাষার বেড়াজাল ভেঙে চর্যাপদের শবরী মেয়ের ময়ূরপুচ্ছ ও গুঞ্জাফুলের মালা র সময় সময়কাল অতিক্রম করে এক অস্থির সময়ের মুখোমুখি হয়ে উচ্চারণ করে ফেলেন " ভেঙেচুরে ফ্যালা কাস্তের মধ্যে/উচ্চকিত জীবাণুর স্বাস্থ্যলাভ অবশ্যম্ভাবী ..." এইভাবে সৌরভ বর্ধনের "প্রসূতিকালীন পাঠ" এই কাব্যের কবিতার ভাব ও ভাষা পাঠকের অন্তরে অনুরণিত হয়।
কাব্যগ্রন্থ- প্রসূতিকালীন পাঠ।
প্রকাশক- কবিতা পাক্ষিক | দাম- ১০০ টাকা

2 comments: