Tuesday, 13 October 2020

পার্থজিৎ চন্দ, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 



 

চিৎপুর


চমৎকার সব দৃশ্য নামিয়ে চলেছেন পরিচালক। বাংলার গ্রামে দক্ষিণ রায়ের খাসতালুকে সরলবর্গীয় গাছ। অরণ্যের ভেতর বরফ-জমাট হ্রদ, দূরে ইগলুর ছায়া, ডবল-সাইক্লোরামার ধুঁয়াধার খেল…পাইপের এক মুখ দিয়ে যমুনার জল ঢুকে অন্য মুখ দিয়ে গঙ্গাজল হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। একদিকে শক্তি কাপুর তো অন্য মুখে অনুপম খের, পরিচালকের শিল্পবোধ বিলক্ষণ আছে, না-হলে হঠাৎ কেন মৌসুমী হাওয়ায় হাওয়ায় সমুদ্রের মতো ফুলে উঠছে তাঁবুর-জরায়ু! জীবনানন্দের ছায়ার পাশে স্থির হয়ে আছে ব্যাঙ্কোর ভূত। চমৎকার সব দৃশ্য নামিয়ে গ্রিনরুমে বসে ঘন ঘন সিগারেট টানছেন পরিচালক, পায়চারি করছেন, তার ডানদিকে শ্বেতাম্বর তো বামদিকে দিগম্বর, সামনে হীনযান ও পিছনে মহাযান। তামাম চিৎপুরের ভবিষ্যৎ তার হাতে, অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে ভবিষ্যতবাণী ঝকঝক করছে খুদা বক্স বাই লেন…প্রমোদে ঢালিয়ে দিনু মন

সেন্টার-স্টেজে সযত্নে শোভিত বরফ-মানুষ, জিভ গলে ঝরে পড়া জল অবিকল গণ-প্রস্রাবাগার থেকে উপচানো মুত্রপ্রবাহ

প্রায় জলের দরেই এমন একটা জিনিস নামিয়ে ঘন ঘন চমকে উঠছেন ডায়রেক্টর

 

সর্বাঙ্গসুন্দর বিকলাঙ্গদের নিয়ে, ইনফ্যাক্ট, চিৎপুরে এ-প্রথম যাত্রাপালা এল

 

বিনয় মজুমদার

 

লেখার ভেতর অপদেবতার ছায়া পাকিয়ে উঠছে

ধাতব গুহার মুখে সারাদিন পাতা ঝরে ছিল

পাতাদের উড়িয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে ধাতুবাতাসের ঘূর্ণি

 

দূরে বিদ্যুতের জালে উঠে আসছে মাছ

 

বিনয় মজুমদার, আপনার লেখার সামনে বসে

দেখি ক্ষতস্থানে একটি দু’টি করে রোম

ইঁটচাপা ঘাসেদের মতো অবিকল গজিয়ে উঠেছে

 

এ শহরে, প্ল্যাসিবো শুশ্রূষায় মাঝরাতে ফিরে আসে চাকা। লঝঝড়ে গাড়িটির কাছে

সাক্ষাৎকার , কার্তিক মোদকের মুখোমুখি শুভদীপ রায়, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,

 



মুখোমুখি কার্তিক মোদক

 

 

বাংলা সাহিত্যের ষাটের দশকের কবি হিসাবে তিনি সমধিক পরিচিত।
নিরলস সেবা করেছেন লিটিল ম্যাগ আন্দোলনের প্রচার প্রসারের জন্য। সম্পাদনা করেছেন (সীমান্ত সাহিত্য ) নামে স্বনামধন্য সাহিত্য পত্রিকা।
সারাজীবন কবিতাকে আঁকড়ে থেকেছেন। তাই তার কলমে ধ্বনিত হোয়েছে - " চিরকাল বেঁচে থাকা যায়"। তিনি প্রখ্যাত কবি কার্তিক মোদক।
সেই কবিতাপ্রাণ মানুষের সঙ্গে একান্ত আলাপ পর্বে সাংবাদিক শুভদীপ রায়


জন্ম : ৭ই জানুয়ারি ১৯৩৮
মৃত্যু : ১৮ ই জানুয়ারি ২০১৯

নালিশ জানাবো কার কাছে/
জন্মলগ্নে অমাবস্যা/
চাঁদ জ্বেলে দেওয়ার মত শিশিতে তেল ছিল না!/

             কার্তিক মোদক


শুভদীপঃ  নমস্কার , আপনাকে স্বাগত জানাই আজকের আলাপপর্বে। প্রথমেই জানতে চাই - আপনার শৈশব কোথায় কেটেছে, কীভাবে কেটেছে একটু যদি জানান --

  কার্তিক মোদকঃ  আমার শৈশব কেটেছে বনগাঁ শিমুল তলায়, মতিগঞ্জ। বনগাঁ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্ডার , সীমান্ত এলাকা। ছেলেবেলা থেকেই গাড়াপোঁতা- বনগাঁর বিভিন্ন জায়গায় পদচারণ করতাম, সেখানে নদী ইছামতি, বোর্ড ব্রীজ, ভাসমান-টলমান নৌকো, তার উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, সেই নিয়ে আমার কাছে একটা বিস্ময় জাগতো শৈশব কৈশোরে। যখন বাতাসে দুলে উঠতো প্রকৃতি, আমি ভাবতে পারতাম না যে আমি এখানে থাকি। অবাক হোতাম। আর লিখতে মন চাইতো..

শুভদীপঃ শৈশবে শরৎ উৎসব এলে আপনার কী ধরনের ভালোলাগা কাজ করতো?

  কার্তিক মোদকঃ শৈশবের শরৎ উৎসব ছিল আলাদা মর্যাদার । আন্তরিকতা, ভাবনা, শ্রদ্ধা সম্পূর্ণ আলাদা রকমের। তখন ছিল অন্য সময়, এই সময়ের মতন নয়, ফলে শৈশবটা আমি আবার খুঁজে বেড়াই। আমার প্রিয় শৈশব যা হারিয়ে গেছে, সেই হারানো শৈশবকে ধরে রাখতে চাই , যার জন্যে বাংলা কবিতায় আমি স্মরণীয় করে রাখতে চাই আমার শব্দ কয়েন, শব্দ দিয়ে গাঁথা যেসব অর্থ, সেগুলো আমি তুলে রাখতে চাই, পারিনা..! তবু চেষ্টাটা করতে দোষ কি!

শুভদীপঃ
     আপনার লেখালিখির প্রারম্ভিক পর্যায় কেমন ছিল, সে সম্পর্কে একটু জানান 

  কার্তিক মোদকঃ অনেক ছোট থেকে লিখতে শুরু করি, তখন ওই গাড়াপোঁতায় শৈশব কেটেছে, গাড়াপোঁতা আমার অরিজিনাল বাড়ি ছিল , সেখানে পোদ্দার বাড়ি এবং মোদক বাড়ি । বাবার নাম ছিল বিষ্ণু মোদক , আমাদের হাজারী মোদকের খাবারের দোকান ছিল। ওখান থেকে এসে পরবর্তীতে রানাঘাটে স্থায়ী বাড়ি এখন। আমার মায়ের নাম যশোদা রানী মোদক। আমাদের যেভাবে বাবা-মা মানুষ করেছেন সেটা ভুলবার কথা নয়! বাবা খাবারের দোকানে ভিয়েন করতেন । আমাদের দোকান ছিল বেশ বড়। হাজারী মোদকের খাবারের দোকান ছিল খুব বিখ্যাত। সেটা ছিল বনগাঁ থেকে একটু দূরে । সেখানেই লেখালিখির সূত্রপাত।

শুভদীপঃ আপনার লেখালিখির প্রথম অবস্থায় কাদের লেখা , মানে কোন কোন কবি সাহিত্যিকদের লেখা পড়তেন বা আপনি মুগ্ধ হতেন! কাদের লেখা আপনাকে বেশি টানতো ?

  কার্তিক মোদকঃ বিশেষ করে জীবনানন্দ দাশ খুব টানতো।  আমার বাড়িতে, আমার সৌভাগ্য প্রখ্যাত কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় , সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সুভাষ মুখোপাধ্যায় সবাই আসতেন এক সময়। কারণ কি বনগাঁ বাংলাদেশ হয়ে গেছে, স্বাধীন হয়ে গেছে, ভারতের থেকে কোথাও যেতে গেলে বনগাঁর উপর দিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশে, ফলে আমার বাড়িতে বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য যারাই আসতেন নদী পেরোতে সবাই খোঁজ করতেন কার্তিক মোদককে। বা ঠাকুরদার দোকান হাজারী মোদককে। এবং দেখাও পেতেন। আমার পক্ষে যতটা সাহায্য করার আমি সেই সব মানুষকে করতাম। কবিতায় দুই বাংলার এক ধ্বনি খুঁজতাম। তখন রবি ঠাকুরের সোনার বাংলা মনে আসতো।

শুভদীপঃ আপনি যে পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন অর্থাৎ সীমান্ত সাহিত্য পত্রিকার কথা বলছি,  সেটা শুরুর বিষয়ে কিছু বলুন

  কার্তিক মোদকঃ সীমান্ত সাহিত্য পত্রিকা সেই ছোট বেলা থেকে করে আসছি। আজকে সেটি দুর্লভ। বাংলা সাহিত্যের সকল ধরনের লেখক লিখেছেন এখানে। আমিও চেষ্টা করেছি এক একটা সাহসী উচ্চারণ খুঁজে বার করার। আসলে কবিতা খুঁজতে খুঁজতে কবিকেই আবিষ্কার করতে হয়। সীমান্ত সাহিত্য এটাই করে এসেছে। শুরুতেই সীমান্ত সাহিত্য পত্রিকার উদ্দেশ্য ছিল নতুন প্রতিভা অন্বেষণ। লিটিল ম্যাগের এটাই বড় অভিপ্রায় থাকা দরকার।

শুভদীপঃআপনার স্ত্রী শোভা মোদকের ভূমিকা কতখানি আপনার সাহিত্য জীবনে ?

  কার্তিক মোদকঃ অনেকখানি। ব্যাপার হচ্ছে কি জানো, সবচেয়ে বড় জিনিস আমি তো থাকতাম কবিতা পাগলের মত,  ওরা ( কবি বন্ধুরা) কেউ বাড়িতে আসলে  তখন রান্না বান্না দেখাশোনা শোভাকেই করতে হোতো। দায়িত্ব নিয়েই করতো সে। সকলে এলে তাদের সেবা করতো ভীষণ আন্তরিকতায়। আমিও কবিতার জগতে সময় দিতে পেয়ে যেতাম প্রশ্রয়।

শুভদীপঃ আপনার পত্রিকায় তো জয় গোস্বামী  প্রথম লেখেন সিলিং ফ্যান নিয়ে, কীভাবে তাকে আবিস্কার করলেন!?

  কার্তিক মোদকঃ আমি কবিতা শুনতে বরাবর ভালবাসতাম। এখনও বাসি। তখন কবিতা শুনতে শুনতে যেন মনে হয়েছিল যে, বাংলা কবিতার একটা নতুন কয়েনেজ খুঁজে পাচ্ছি। তখনই জয়কে সীমান্ত সাহিত্য পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের তাগিদ অনুভব করি। আজ সে কবিতায় খ্যাতি পেয়েছে। তাই আমি বারবার তরুণ কবিদের খুঁজতাম। তাদের কবিতা শুনি আজও। শুনে সেগুলোকে গ্রন্থনা করার চেষ্টা করি।

শুভদীপঃকোথায় প্রথম দেখা বা আলাপ হোলো জয় গোস্বামীর সঙ্গে!!? তার সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি বর্তমানে!?

  কার্তিক মোদকঃ নদিয়ার রানাঘাটে, আবার পরবর্তীতে  কখনো বনগাঁতে। সে তো নদিয়ায়ই বড় হয়েছে।
  এখন ব্যাপার হচ্ছে কি সকলেই কর্মব্যস্ত এবং লেখালিখির জগতে প্রতিষ্ঠিত, সেভাবে হয়তো তারা যোগাযোগ রাখতে পারে না। । এখনও তার পুরনো লেখা সংরক্ষিত রয়েছে আমার কাছে। বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছি সুনীল গাঙ্গুলি , শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সাগরময় ঘোষ সবার কাছে নিয়ে গিয়েছি সময়ে সুযোগে।
সুবোধ সরকারও আসতো একসময়। সেও কবিতায় নাম করেছে। ছোটো বেলা থেকে জয়ের মা আমাকে বলেছিল ছেলেটিকে দেখবেন তো , বালিশের তলায় ছেলেটি কবিতা লিখে রাখে!
তারপর সাক্ষাতে আমার সত্যিই ভালো লাগে। আমি বললাম হ্যাঁ লিখুক। তারপর যতখানি চেষ্টা করা যায় আমি করবো।

শুভদীপঃ একজন ছোট পত্রিকা সম্পাদকের কি করণীয় বলে আপনি মনে করেন ?

  কার্তিক মোদকঃ ছোট পত্রিকা সম্পাদকদের জন্য বলবো   - তরুণদের বেশি করে ছাপা দরকার। শুধু ছাপা হলে চলবে না, সেই লেখাগুলো কতখানি সমৃদ্ধ বা অারও ভালো করা যায়, সেটাও সম্পাদক হিসাবে সেগুলি ছাপার যোগ্যতা আছে কি না, সেটাও দেখে নিতে হবে। সব ছেপে দিলাম আমি সম্পাদনা সেটা  নয় !

শুভদীপঃ কবি কি সহজাত প্রবৃত্তি ! নাকি কবি তৈরি হওয়া যায়!?

  কার্তিক মোদকঃকবি তৈরি হওয়া যায় না বোধ করি ! কেননা আমার এখানে প্রচুর যশ প্রার্থী মানুষ এসেছে, তাদের সই ঠিকানা পর্যন্ত রয়েছে, কবে এসেছে, কি লিখেছে সেগুলি লিপিবদ্ধ আছে। এবং অনেক ডকুমেন্টস আছে। উচ্চকিত আওয়াজ করলেই কবি হওয়া যায় না! নিবিড় পাঠক হতেও হয়। গভীর অধ্যবসায় দরকার

শুভদীপঃ এই যে সারাজীবন কবিতা নিয়ে থাকলেন, কি পেলেন কবিতার কাছে!?

  কার্তিক মোদকঃ এখনও একটি কবিতার সুর খুঁজে পাইনি! একটাও কবিতা পাইনি খুঁজে!
এখনও খুঁজে চলেছি, কত অারও ভালো লেখা যায়, কীভাবে একটি কবিতা খুঁজে পাওয়া যায়! 
আসলে কবিতায় যেটা পেয়েছি সেটা হোলো কবিতার কাছে যাওয়া শিখেছি....। মানুষের কাছে যাওয়া শিখেছি....।

(মানুষের কাছে  যাওয়া চাঁদের কাছে যাওয়ার থেকে বড়....)

শুভদীপঃ তার মানে আপনি বলতে চাইছেন কবিতার মাধ্যমে মানুষের কাছে যাওয়া যায় , তাই তো!?

  কার্তিক মোদকঃ হ্যাঁ ঠিক তাই! এটাই তো কঠিন বিষয়...

শুভদীপঃ আপনার ব্যক্তিগত জীবনে বাংলা সাহিত্যের প্রতি কোনো আক্ষেপ থেকে গেলো কি!?

  কার্তিক মোদকঃ না । আমার তেমন নেই...., আমি আমার টুকুই চেষ্টা করেছি। করে যেতে চাই। একটাও কবিতা আসলে লিখতে পারিনি। খুব আক্ষেপ হচ্ছে এখানেই !  বাংলা কবিতার  জগতে একজন পাঠকের কাছে একটি কবিতা মনে থাকা অনেক বড় ব্যাপার।

শুভদীপঃ তরুণ প্রজন্মের কবিতা চর্চার প্রতি আপনার মতামত জানতে চাইছি

  কার্তিক মোদকঃ এখনকার তরুণরা রাতারাতি ভাবতে চায় কবি হওয়া যায় ! কিন্তু প্রকৃত কবি হতে গেলে পড়াশুনা এবং অধ্যবসায় দরকার। যার কবিতা নিয়ে আমি গবেষণা করবো, দেখবো , ভাববো তাকে নিয়ে পড়াশুনা করা। তার কাছে যাওয়া। তাকে অধ্যায় করা, সেরকম এখন করছেনা .. ! তবে এখন ভালো কবিতাও হচ্ছে। সেগুলি আমরা আবিষ্কার করতে পারছি না  । পৌঁছাতে পারছি না।

শুভদীপঃ আপনার সমসাময়িক বন্ধুদের মধ্যে কার কার কথা মনে পড়ছে!?

  কার্তিক মোদকঃ কার কার কথা বলি..!

এই মুহূর্তে মনে পড়ছে কালিকৃষ্ণ গুহ , দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরুণ চক্রবর্তীও রয়েছে। কাকে বাদ দেই! তারপর কাকেই বা বাদ দেবো বলো ! সকলেই প্রিয়।

শুভদীপঃ একটি সহজ জানতে চাওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না পেলে একজন কবি  ব্রাত্য থেকে যান কি ?.

  কার্তিক মোদকঃ
স্বীকৃতি সময় দিয়ে বোঝা যায়। মানুষই প্রকৃত স্বীকৃতি দেবে.....
কবিতার জন্য কবিতার বই পড়া দরকার খুব। কিন্তু সেই পড়াটা ঠিক হচ্ছে না। নিজেকেও জানা চাই..!

শুভদীপঃ (নালিশ জানাবো কার কাছে ..) এই কবিতার নেপথ্য ঘটনা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে প্রকাশ করছি, একটু যদি নিহিত বেদনা সম্পর্কে জানান --

  কার্তিক মোদকঃ সমস্যা ছাড়া কখনও বাঁচা যায় না, বুঝলে ... !!সকল জায়গায়ই সমস্যা থাকে। কখনো পারিবারিক সমস্যা, কখনো অর্থনৈতিক সমস্যা, কখনো সামাজিক সমস্যা। এগুলি থেকেই কবিতার উৎপত্তি। তখন ছিল দারুণ জীবন সংগ্রামের দিন। বেঁচে থাকার লড়াই। নিজেকে প্রকাশের জায়গা খুঁজি..., আজও..... হয়তো... তাই নালিশ জানাবো কার কাছে .....!!!

শুভদীপঃ আপনার জীবনের প্রিয় দুঃখ কি!?

  কার্তিক মোদকঃ আমার জীবনের দুঃখ খুঁজে বেড়াচ্ছি এখনও!!
সেভাবে কোনো জিনিস নিয়ে আফসোসও করিনা। আফসোস আক্ষেপ করলেই অন্য জিনিস এসে যায়...!

শুভদীপঃ আপনি  নিজের খাদ্যাভ্যাস ,রুচি সম্পর্কে কিছু যদি জানান, মানে কেমন ধরনের খাওয়া দাওয়া করতে ভালোবাসেন!?

  কার্তিক মোদকঃ আমার তো মুখরোচক খেতে ভালোলাগে। আর বিভিন্ন জায়গায় গ্রাম-গঞ্জে যখন ঘুরতাম তারা মুড়ি নিয়ে আসতো। ভাজাভুজি দেখলে ওরা নিয়ে আসতো , কারণ জানতো আমি সেটা পছন্দ করি। আর বাড়িতে মাছের ঝোল ভাত, একটু চচ্চড়ী, আর শাকটা খাই রেগুলার।

শুভদীপঃ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই বিশেষ মুহূর্ত দেওয়ার জন্য এবং আপনার জীবনের একান্ত স্মৃতিগুলি ভাগ করার জন্য। আপনাকে প্রণাম

  কার্তিক মোদকঃ তোমাকেও আশীর্বাদ করি, অারও এগিয়ে যাও, বাংলা কবিতার ভালো হোক। লিটিল ম্যাগ সমৃদ্ধ হোক...

পলিয়ার ওয়াহিদ ,কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০, ওপার বাংলার কলম,

 





কান্নার সংগীতে আরাকান আরাকান


মহুয়া; পহেলা শোনো—না ঘুমানো রাতের গল্প। সারারাত চঞ্চল আর স্পর্শাতুর আঙুলের তলায় গম্ভীর কেঁদে উঠলো বাঁশি। চারদিকে মর্মন্তুক চাপা কান্নার সংগীত—যেন কোনো একলা পাখির বারে বারে পাখাঝাপ্টানো। সে কি পৌছাতে চাচ্ছে—কোনো নিরাপদ নৌকো-হৃদয়ের ডেরায়। নিঃশব্দ এক কফিন যাত্রা সঙ্গী তাদের! জলে থেকে ইচ্ছে করলেই হাঙর থেকে দূরে থাকা যায়—কিন্তু ডাঙায় মানুষই হাঙর আজ! দ্যাখো—মায়ান সেনাদের গায়ে জড়ানো উলঙ্গ মানব! আর দূর থেকে ছিন্ন লম্পটরা গাইছে—আরাকান! আরাকান!! 



একত্রে মৃত্যুর সঙ্গী


মানুষের মৃত্যুর পর যে খেলা শুরু হয়ে যায়—সেখানে আমাদের প্রবেশ নিষেধ। তবু গল্পগুলো আমাদের কাছে অপরিচিত নয়। যেমন মহুয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি ওর দেহের ভেতর ঢুকে পড়ি। আমরা চেয়েছিলাম—একত্রে আমাদের মৃত্যু হোক। তা হলোও আমরা আলাদা কবরে শুয়ে পড়ছি কেন?







উর্ণনাভ ,কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০,


 

দালাল

 

মাঝরাতে ঘড়ি এবং টিকটিকির স্বমেহন শুনতে শুনতে

ভদ্রলোক উঠে কড়কালেন দেওয়ালটাকে

অতঃপর জানালেন —

অন্তত একজোড়া পায়রা — কিংবা মেঠো চিল

ঘাতকের মত নির্ভীক সজ্জন সেজে  — প্রলুব্ধ আলাপ,

মাড়োয়ারি তিল আর ফুসফুসের নীচে লুকিয়ে রাখা

একটা সযত্ন ক্ষুর — বের করে আনতেই হয়।

 

তারপর মাথাটা ঝাঁকিয়ে চেতন এবং অবচেতন খোপরের থেকে

ক্যালানে ফ্যাতাড়ুর মত ঘাড় গলিয়ে দেখে নিতে হবে

অদ্বৈত কেউ ছিপ ফেলে বসে আছে কি না;

যদি না থাকে —

দে বুড়ি গঙ্গা জলে ঝাঁপ!

শ্রাবণের রাতের গভীর অন্ধকারে — একখানা স্যুইট লিজার্ড ছেড়ে দিয়ে

সিম্বলিক ব্যাঙ, কিংবা আস্ত একটা খরগোশ

মুখে নিয়ে বলতে  চাইলেন — এখানে আমার দালালি চলে বটে!

 

কমলেশ কুমার, কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০

 

 

 
অভিযাত্রা


মুহূর্তের আগলঘেরা আত্মকথায় ছুঁয়ে থাকি ঘর
লুকোনো চিলেকোঠা, সান্ধ্য রূপকথা যেন পরস্পর —
সনাক্তকরণ শেষে ধ্রুবকান্তির স্পর্শে দীর্ঘকায়
অস্পষ্ট পৃথিবীজুড়ে ক্রমশ বৃষ্টি হতে চায় —
অনন্ত শূন্যতার যত মায়ামেঘ, আমি তাকে দেখেছি একাকি

 তাকে তুমি খুঁজে নিও, হে আমার 
                                            বিষাদের পাখি...

সৌমী গুপ্ত , দুর্গাপুজো, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০




 ছেলেবেলার দুগ্গিপুজো'


'পুজো আসছে' এই কথাটা বলার আগেই সমগ্র ধরিত্রী যেন সেজে ওঠে পুজোর সাজে। তাই নতুন করে আগমনীর আগত সময়কে উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না। ভোরবেলায় নরম রোদের আদর মেখে সবুজ ঘাসের ডগায় প্রথম শিশিরকণা মনে করাতো পুজো আসছে। গ্রামের বাড়ির উঠানের একপাশে মৃদু গন্ধ মেখে শুয়ে থাকা কমলা টিপ পরা সাদা দুধের মত কোমল ছোট্ট শিউলির তাকিয়ে থাকা মনে করাতো মা আসছেন। কিংবা হলুদ স্কুল বাসের জানালা থেকে উঁকি মেরে রাজ পথের দু'পাশে বাঁশের তৈরি প্যান্ডেলের কাঠামোর প্রথম প্রস্তুতি বুকের ভেতর উৎসবের আনন্দ জাগাতো।  পাশাপাশি ঢাকের বোল এর পাশে মনের তাল ঠুকতে ঠুকতে  কখনো আবার মন কেঁদেও উঠতো ঢাকির পাশে বসা জীর্ণ পোশাক পরিহিত শ্যাম বর্ণের ক‍্যাংলা ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে ।তালটা মিলে গিয়েও কোথাও যেন কেটে যেত। নদীর ধারে মৃদুমন্দ হাওয়ায় পালতোলা নৌকার মতো সাদা কাশের মাথা গুলো মনে করাতো অপু দুর্গার ছোটবেলার পুজো—"অপু আমায় একদিন রেলগাড়ি দেখাবি?" তারপর নরম হাওয়া আর  আলতো রোদকে  সরিয়ে চিড়বিড়িয়ে  উঠত বেলা বাড়ার সাথে মেঘ ভাঙ্গা রোদ। নীল ত্রিপল টাঙ্গানো নীল আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া সরের মত মেঘ। রোদ রোদ ছায়া, ছায়া ছায়া রোদ। মাঝে মাঝে আবার ধূসর পায়রার ডানার রং এর মতো ভাসা মেঘ থেকে দু-এক পশলা ঝির ঝিরে বৃষ্টি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে ঝুপ করে বেলাটা শেষ হয়ে আসতো— বোঝা যেত দিনের দৈর্ঘ্য কমতে শুরু করেছে । তারপর পড়ন্ত রোদ্দুর এর শেষ কিরণ মাখা ছেঁড়া ছেঁড়া নিঃসঙ্গ মেঘ। একেবারে কালো সন্ধ্যা না হওয়া অবধি মেঘের কোলে সোনালি আভা দেখা যায়।  একফালি চাঁদের পাশে মিষ্টি হাওয়ায় ভেসে ভেসে চলা —মাকে মর্তে‍্য আহবান করার অপেক্ষায়!
পুজো মানেই মিত্তির দের দালান বা মুখার্জিদের দুর্গা মন্ডপে একমাটি ,দুমাটি এবং রং এর গন্ধ, মাটির গন্ধ! মহালয়ার আগে প্রায় সমাপ্তির পথে কাজ! মানে মা দুগ্গি ছেলেপুলে নিয়ে আসার জন্য একেবারে প্রস্তুত ।শুধু রাস্তা দেখানোর জন্য চক্ষুদানের অপেক্ষায়।
নীল আকাশের সন্ধে‍্য না হওয়া অবধি ঘুড়ির রেষারেষি তারপর কোনো একটা ঘুড়ির ভোকাট্টা খেয়ে ঘাড়, মাথা নামাতে নামাতে কার্নিশে গিয়ে আটকানো, মনে করায় বিশ্বকর্মার আসতে আর বেশি দেরি নেই— তার মানে পুজোর কটা দিন আর বাকি হাতে গোনা যাবে এবার! ছোটবেলায় গোটা ঘর তোলপাড় করে ঝাড়পোঁছ করা আর তার সাথে ন্যাপথলিন মাখানো জামাকাপড় এবং জীবাশ্ম পড়া শাড়ির মাদুরে রোদ্দুর খাওয়া মানে পুজো ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে জোর কদমে। তারপর একটা মস্ত ফর্দ বানিয়ে ঠিক করে ফেলা হতো কর্তা-গিন্নি মিলিয়ে কার জন্য কি কি বরাদ্দ! উৎসুক মনে কান খাড়া করে নিজের নামটা শোনা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। সেই ফর্দ থেকে লাল পাড় সাদা থান শাড়ি মা দুর্গার জন্য সবার আগে লেখা হতো— সাথে পুজোর গামছা। সঙ্গে লটকনের দোকানে যাবার ফর্দটিও স্বমহিমায় হাজির হয়ে যেত বেশ জারিজুরি নিয়ে! শপিং মল ,অনলাইন মারকেটিং এর আধিপত্য তখনও ছিল না। আর কে কে আসছে বছরশেষে দেশের বাইরে থেকে! গলদঘর্ম হয়ে কচিকাচাদের নিয়ে পুজোর মার্কেটিং এবং নিজেদের চেয়ে একসাইজ বড় জামাটাই বেছে বেছে কেনা হতো। আসার সময় মাতৃ মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে টক, মিষ্টি চাটনি সমেত সিঙ্গারা আর রসগোল্লা! ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ তখন বইপত্তর গুলোকে চরম শত্রু ভাবতো। বিজয় দর্প তখন বরাদ্দ থাকত একেবারে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত। সে এক হই হই রই রই ব‍্যাপার‌। গোটা দশেক নারকেল কোরানো হতো পড়ন্ত বেলার ধূলিকণা মাখা রোদ্দুরে বসে অলস দুপুর এর শেষে! পিতলের বা কাঠের এত্ত বড় রেকাবিতে ঘি মাখিয়ে রাখা হতো গোলাকার অমৃত সমান সাধের নাড়ু। মোটেই তার উপর হামলে পড়া চলতো না কিন্তু। সেসব ছিল বিজয়ার জন্য তোলা। তার আগে বড়জোর শেষ তলানিটুকু  চেঁচে পুঁছে মোটামুটি একটা গোল আকৃতি দিয়ে সৌভাগ্যবানের  লোভী চোখে অনেকক্ষণ ধরে তাকানো ছেলেবেলার হাতে এসে পৌঁছাতো। তাতেই আনন্দে আহ্লাদে আটখানা। গোটা ঘর নাড়ুর গন্ধে মম করতো।

পুজোর গানের একটা আলাদা ক্যাসেট বের হতো। সকালবেলার সংস্কৃত শ্লোক চললেও হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বেলাতে জায়গা করে নিতেন। গোটা দুপুর বিকেল শ্রীকান্ত আচার্য বা নচিকেতার পুজোর গানের ক্যাসেট। সে এক অনাবিল আনন্দ। তারপর সন্ধ্যেবেলা হলে কুমার শানুর হৃদয়ে রক্ত ছলকানো গান' ধীরে ধীরে সে মেরে জিন্দেগি মে আনা'' শুরু করে "বাদা রাহা সনাম 'থেকে' ,'তু প‍্যায়ার হে কিসি অউর কা'! কেউ প্রেম করবো না ভাবলেও এই গানগুলো প্রেমের ভরা পুকুরে হাবুডুবু খেতে বাধ্য করতো এই পুজোর সময়েই। পুজোর প্রেমটা ছিল একেবারে অন্যরকম ,মাখো মাখো! এই চারটে দিন ছিল সাতখুন মাপ। অতএব বীরদর্পে বলে দেওয়া যেত  মনের কথা! মাদুগ্গির সামনে পাপ হতো না তখন! ভরা শরতেও বসন্তের রঙ মেখে প্রজাপতি নাচতো চোখের সামনে। চোখে চোখে কথা হলেও মুখে কিছু বলার প্রয়োজন হতো না ।নিজেকে স্পেশাল দেখানোর জন্য প্রত্যেকটা দিন নির্ধারিত হত পরনের পোশাক। নতুন প্রেমের ইতিহাস তখন পঞ্চাশ ভাগ পুজোর সময় রচিত হত। বাদবাকিটা সরস্বতী ঠাকুর নিজের জিম্মায় তুলে রাখতেন।
মহালয়া ছিল বিশেষ আনন্দের দিন। আগের দিন ঘড়ির কান মুলে পরের দিন সকালে ওঠার সময় ঠিক করা ছিল  অনর্থক! কারণ সারারাত ভালো করে দুচোখের পাতা এক হতো না উৎসবের আনন্দে, উত্তেজনায়। পরের দিন যে বাবার ঠিক করা রেডিওতে বীরেন্দ্র কিশোর ভদ্রের কন্ঠে দুরুদুরু বুকে প্রহর কাটিয়ে ভোরের আলো দেখব আমরা! ভোর রাতের শিশির ভেজা হাওয়ায় সূর্যের প্রথম কিরণ মেখে ঘরে ঘরে ভেসে আসত 'আশ্বিনের শারদ প্রাতে!" বুকের উপর দামামা বাজিয়ে হাতুড়ি মেরে কেউ বলত পুজো আর ছটাদিন বাকি! চক্ষুদানের সময় নিজের অজান্তেই নয়ন জলে ভেসে আসতো।তারপর বেলা বাড়তো। সকালের জলখাবার এর পাতে বলের মত আটা ময়দা মেশানো একান্নবর্তী পরিবারের লুচি পাশে জ্বলজ্বল করা সোনালি বর্ণের তেল ভেসে আসা আলুর দম। দুপুরের পাতে বাটি ভর্তি লালচে কালো জলে ডুবে থাকা পাঁঠার মাংস আর অর্ধচন্দ্রাকৃতি আলু। আঙুল ডুবিয়ে আঁচ করতে হতো কার ভাগে কটা জুটল —তারচেয়েও আশংকা হতো নলির পিসটা বাদ পড়ে যায় নি তো! তখন থেকে জানা হতো এখন থেকে পুজোর মেনু গুলো হাতছানি দিয়ে ডাকছে! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য অষ্টমীর ভোগ ছিল স্টেটাসে অগ্রগন্য—মানে অমৃত সমান! পাঁচ রকম ভাজার সাথে এক চিমটে চাটনি আর পায়েস সংযোগে বাসন্তী রঙের খিচুড়ির স্বাদ কোন রান্নাঘর থেকে আবিষ্কৃত হতো না। এদের স্বয়ং অন্নপূর্ণার অন্ন ব্যঞ্জন! নাঃ স্ট্যাটাস মেইটেইনের চোখরাঙানি তখন ছিল না । সবাই পাত পেড়ে খেতাম একসাথে। নদীর পাড়ে বস্তিবাড়ির ভুলুও সস্তার জামা পড়ে নির্দ্বিধায় বসে গল্প জুড়তো হাপুস হুপুস করে গরম খিচুড়ি গলাধঃকরণ করতে করতে!
দেখতে দেখতে দশমীর বিষাদ সন্ধ্যা জানান দিতো একটি বছর আবার হাপিত্যেশ করে বসে থাকো! বিসর্জনের পর ফাঁকা অন্ধকার মন্ডপ, তারও পরে প্যান্ডেলের কঙ্কালগুলো বুকের মধ্যে ফাঁকা ধুধু মন খারাপের প্রান্তর নিয়ে বসে থাকতো বেশ কিছুদিন! আকাশে ভাসমান ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘগুলোকে টিমটিমে জাজ্বল্যমান তারাদের পাশে কি যে নিঃসঙ্গ লাগতো তখন! গোল কাঞ্চনবর্ণা চাঁদের পাশে মৃদুমন্দ বাতাসে গাছের মাথাগুলো রাতের ছায়ায় মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে দোলাতো !মনে হতো এমন টা হতো যদি  'ওগো নবমী নিশি' কখনো' না হইও অবসান"!

Monday, 12 October 2020

উদয় শংকর দুর্জয় ,কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০

 

সবই ছায়া হয়তো আবছায়া
 

সেপথ অনেকটা দূর পার করে এসে দ্যাখে, 
এক আকাশ মায়াচ্ছন্ন ছায়া ফেলে গ্যাছে ভুলো পাখি। সব ছায়ারই একটা 
আলাদা গল্প থাকে। একটি অস্তিত্বের বাহ্যিক অবয়ব 
যাকে আমরা ছায়া মনে করে পায়ের নিচে পিষে ফেলি। 
তা আদতে একটি অস্তিত্ব, একটি সৃষ্টির প্রকাশ। 
একটি রঙের আড়ালে আরেকটি রঙ।

চাঁদ যেমন পাশাপাশি হেঁটে যায় ঠিক ছায়াও। 
আলোরা নেমে আসে ঝর্নামাদলের দল নিয়ে, 
ছায়ারা লুকিয়ে যায়া উতসবের আড়ালে। বিহবলের 
বৃষ্টি নামলে বৈধব্যের রঙ মুছে আবার নামে ছায়ান্ধাকার। 
শোকেরও তাপ থাকে, মেঘের অনুযোগ থেকে 
পাতায় ভর করে ছায়াপরাগ নামে। 

মৃত্যুর হয়তো কোনো ছায়া নেই, আবছায়া আছে। 
কোনো বর্ণ নেই, কিন্ত নিবিড় কলতান আছে। 
কোনো কিছু অতিক্রম করার নেই। শুধু পড়ে থাকে 
অস্পষ্ট হ্রদ দীর্ঘ ছায়ার মতো, যেখানে পারা ওঠা আয়নায় 
লেগে থাকে ঝাপসা চোখ। 



বাপ্পাদিত্য রায়বিশ্বাস ,কবিতা, সাহিত্য এখন শারদ ২০২০

 

 

সংক্রমণ

যদি চোখের শাপলাঘাটে 
এক অনাবিল ফুঁয়ে 
উড়িয়ে দিই পড়ে থাকা খড় ,  
                                       তোমার অসুখ হবে? 
যদি ন্যুড লিপস্টিক ছুঁয়ে ফেলা কর্ডলেস মাইক 
হাতে তুলে জানতে চাই কেমন আছ, 
             আমার ফুসফুসে ঘনিয়ে আসবে মেঘ? 
শুনতে না পাওয়ার অছিলায় 
কতবার মুখের কাছে এগিয়ে এনেছ গাল,  
আমায় সিরামের গন্ধে বুঁদ ক'রে  
 পালক-পায়ে চষে ফেলেছ 
                                 লবঙ্গ-দারচিনির বাগান
সে কি সংক্রমণ নয়? 
ক্যানভাস কাপড়ের চলমান চাঁদোয়াটা 
যদি শ্রাবণের প্রথামতো ঘিরে নেয় জলের দেয়ালে,  
তুমি কিওস্কে ঢুকে এসো 
চোখে চোখ রেখে আমাদের 
                          শুরু হোক শ্বাসরোধী খেলা...
কখনও তো এ খেলায় 
                  বাঁচামরা নিয়ে তুমি 
                                           দু'বার ভাবোনি !