পুস্তক আলোচনা
নারী ও পুরুষ
লেখকঃ অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
আলোচনায় মনীষা শেখ
এই লকডাউনে আমাদের মন এখন বিষাদগ্রস্ত। কবে পৃথিবী স্বাভাবিক হবে, কবে ছেলেমেয়েদের কলকাকলিতে ভরে উঠবে স্কুল প্রাঙ্গণ, কেউ জানে না। হাতে অঢেল সময় পাওয়াতে ভাবলাম বইয়ের আলমারি গোছানোর কাজটা করে রাখি। আর এই গোছাতে গিয়েই পেয়ে গেলাম একটা অসাধারণ বই। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নারী ও পুরুষ।
বইখানি আগে পড়েছি। তবে সময়ের ধুলোবালি পড়ার ফলে অনুজ্জ্বল হয়ে গেছিল ছবিটা। এখন এই মধ্যবয়সে এসে বইটা নতুন করে পড়লাম এবং আবারও মুগ্ধ হলাম। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় আমার খুবই প্রিয় লেখক, প্রিয় মানুষও। মানুষটির কথা ভাবলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। ছিন্নমূল হয়ে ভারতে এসে জীবিকা ও জীবিকা অর্জনের জন্য কি না করেছেন! কখনো কখনো জাহাজের ডেকে নাবিক হয়ে সারা পৃথিবী পর্যটন, কখনো কোন কারখানার ম্যানেজার শিক্ষক সাংবাদিকের ভূমিকা পালন। সব ভূমিকাতেই তিিনি সমান উজ্জ্বল ।
এখন বইটার কথা বলি। মানুষের মনের বিপন্নতার নানা দিক তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর অসামান্য সব উপন্যাসে আমরা সবাই তা জানি। কিন্তু ভারতবর্ষে নারীদের যে সমস্যা বর্তমানে আমাদের প্রত্যহ হতাশ্ ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ করে , এমনকি লকডাউনের ভারতেও যে পাপ আমাদের ছেড়ে যায় না, সেই ধর্ষণের কথাই বলছি।
নারী ও পুরুষ গল্পটি ধর্ষণের প্রেক্ষাপটে লেখা। এক বন্ধের দিনে একটি খুন হয়। ধর্ষিতা মেয়েটি আশ্রয় নেয় অনিল তথা মেজদার বাড়িতে। এখান থেকেই লেখক বুনতে থাকেন তার স্বপ্ন। সে স্বপ্ন আমাদের আচ্ছন্ন করে দেয়।
নিজেদের অজান্তেই আমরা ঢুকে পড়ি মেজদার সহেলী কুঞ্জে, যে কুঞ্জে আছে সারি সারি পর্যটন কুটির ।আছে শাল, সেগুন, পিয়ালের সারি, আছে অজস্র ফুলের সমারোহ। মেজদার লাগানো কৃত্রিম বনাঞ্চল। মাঝে সরু সরু রাস্তা, বড় পুকুর্ মনোরম ঝিল, দেশি-বিদেশি গাছের সমারোহ। একবার চেয়ে সহজে এসেছে সে বারবার না এসে পারে না মনে হয় স্বপ্নের পৃথিবী। অনিল তথা মেজদা সারাদিন এই কুঞ্জে ঘুরে বেড়ায় । কীভাবে কোথায় কোন গাছ লাগালে, কোন ফুল ফুটলে প্রিয় হয়ে উঠবে এই কথা মাথায় অনবরত পাক খায়। তাকে দেখলে মনে হবে সে যেন জীবনভর এক ঘোরের মধ্যে আছে।
একটি ধর্ষিতা মেয়েকে জীবনে ফিরিয়ে আনার এই কাহিনী পড়লে মনে হয় এইতো! পুরুষ তো এমনই হওয়ার কথা। এই বইয়ে অনেক চরিত্র । সেঁজুতি, অমিয় কপালী, ধীরে্ লোকনাথ কাকা , সুশান্ত, শ্রাবণ্ পল্লবী- সব বলতে গেলে লেখাটা বিরাট হয়ে যাবে। মেজদারও বিপন্নতা আছে। সেই বিপন্নতার নাম সহেলী। আমরা সবাই কোন না কোন সহেলীর জন্য বড় হয়ে উঠছি। আমরা লেখাপড়া করছি। সাইকেলে জ্যোৎস্নায় মাঠ পার হয়ে যাচ্ছি , বালির চড়ায় নির্জন রাতে তার কথা ভাবতে ভাবতে আকাশের নক্ষত্র গুনছি । বইটি পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে মনে হয় উপন্যাস নয়, কোনও কবিতা পড়ছে বুঝি।
উপন্যাসের শেষে মেজদা তথা অধীর সেঁজুতিকে বলেন, "বোঝা যা , সবকিছু আমাদের বয়ে নেবার সুযোগ দিয়ে দেখ না, পারি কিনা !" পুরুষের এমন কাম্য ছবিই তো মেয়েরা গোপনে লালন করে। এমন নরম উষ্ণতার কথাও নারীকে শেষ পর্যন্ত পুরুষই বলতে পারে। পুরুষ ছাড়া কে আছে নারীর, যার পাশে গাছ হয়ে ফুল হয়ে ফুটে থাকা যায়!
মানুষের ভালোবাস্ মানুষের প্রতারণা , নারী-পুরুষের আশ্চর্য এক সম্পর্কের কথা বলেছেন লেখক। একইশরীর, একই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ , একই কামনা। অথচ কখনো মিলন মধুর, কখনো পাশবিকতার স্মৃতি। এই উপন্যাসে নারী পুরুষের সম্পর্কের উপর নতুন করে আলো ধরেছেন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। তুলে ধরেছেন জীবনের ইতিবাচক দিকটিকেও।
উপন্যাসের শেষে মেজদা তথা অধীর সেঁজুতিকে বলেন, "বোঝা যা , সবকিছু আমাদের বয়ে নেবার সুযোগ দিয়ে দেখ না, পারি কিনা !" পুরুষের এমন কাম্য ছবিই তো মেয়েরা গোপনে লালন করে। এমন নরম উষ্ণতার কথাও নারীকে শেষ পর্যন্ত পুরুষই বলতে পারে। পুরুষ ছাড়া কে আছে নারীর, যার পাশে গাছ হয়ে ফুল হয়ে ফুটে থাকা যায়!
মানুষের ভালোবাস্ মানুষের প্রতারণা , নারী-পুরুষের আশ্চর্য এক সম্পর্কের কথা বলেছেন লেখক। একইশরীর, একই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ , একই কামনা। অথচ কখনো মিলন মধুর, কখনো পাশবিকতার স্মৃতি। এই উপন্যাসে নারী পুরুষের সম্পর্কের উপর নতুন করে আলো ধরেছেন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। তুলে ধরেছেন জীবনের ইতিবাচক দিকটিকেও।
No comments:
Post a Comment