Saturday, 14 October 2017

এক পশলা মুহূর্ত/পার্থসারথি


পাহাড়ী রাস্তার পথে যেতে যেতে আবিষ্কার করলাম
তোর প্রতিটা মনের বাঁকে আমার জন্য জমে থাকা
বিন্দু বিন্দু তিস্তা
গাড়ির ঝাকুনিতে আমার কাঁধ ছুঁয়ে যাওয়া তোর প্রতিটা নিশ্বাস উল্টে যাচ্ছিল
আমার জন্য জমে থাকা তোর
মন খারাপের পৃষ্ঠা
কাঞ্চনজঙ্ঘা আজ বরফের রাজমুকুটে সেজেছে
এত সুন্দর আগে কখনো দেখিনি
আমি জানি তোর চোখ বন্ধ,
এক অদ্ভুত অনুভূতির চাদরে তোর জড়ানো মন আমার কাঁধে শোয়া
আমার বর্ণনা তোর মনে ছবি এঁকে চলেছে
তুলির ঐকান্তিক নিষ্ঠা
পাহাড়ে বৃষ্টি হিসাব কষে হয় না,
আমি জানি আমার কাঁধে এক পশলা বৃষ্টি শুধু সময়ের অপেক্ষা
তোর তিস্তার বুক জুড়ে আজ ছড়িয়ে দিলাম আমার ভালোবাসার নুড়ি
বৃষ্টি শেষের আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে
ইচ্ছেমতো তুই কুড়িয়ে নিস্ তা


Friday, 13 October 2017

চোখ/পরিচয় প্রধান


অন্ধকারে ভেসে ছিল বিবশ আকাশ
শূণ্যে ডুবে ছিল দুই পা ।
প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল যে সত্যে
তার হাতেই ছিল অনুচ্চারিত গুপ্তমন্ত্র
সেই মন্ত্রে জেগে উঠল দুটি পাতা ।
হঠাৎ কেউ খুলে দিল বন্ধ দুয়ার
জ্বলে উঠল সম্মোহিনী আলো !
মঞ্চ জুড়ে শুরু হ’লো অভিনব নাচ
ঘুম রঙে পাথরের স্হির নৃত্য
কি আশ্চর্য্য ! তেরে কেটে ধা !
আকাশের জন্য বোবা নীল আর
সাগর সুনীল বিরহে হোক উথাল পাথাল
সবুজ ঝাউবন কাঁপুক সোনালী বালির ঝড়ে
রাজহাঁস উড়ে যাক সাদা রঙ মেখে ।
গাছে গাছে কত নরম রঙের ফুল !
আমি জানি, ফুল কি জানে সেই কথা ?
তুমি মেলে ধরলে মহামন্ত্র ছটা
যত ঈশ্বর ঈশ্বরী সার বেঁধে দাঁড়লো আলোয় ।
তোমারই কটাক্ষে যাকে
অন্ধকারে ঠেলে দিলে সে ছিল অলক্ষ্যে রসাতল ।

আমি যে অন্ধ হয়ে ব’সে আছি আজীবন
একবার তাকাবে না ?
শোনাবেনা, কোন্ মন্ত্রে সাজালে জীবন ?

মুখ ফোটা/আর্যতীর্থ


শুকনো কিছু করছি জড়ো ভাবনা কুটো
সুযোগ বুঝে মন সেঁকতে আগুন দেবো,
আনাচকানাচ খুঁজছি কথা একটা দুটো
ভাবনা দিয়ে তপ্ত কথার সুবাস নেবো।

কথা এখন দিব্যি বেরোয় ভাবনা ছাড়া
হ্যাঁয়ে হ্যাঁ মিলিয়ে দেওয়াই চলতি প্রথা
ঠেকে ঠেকে শিখে গেছে জিভ বেচারা
মগজটাকে ঘামিওনা যথাতথা।
না বলাটা কঠিন জেনো চিরকালই
হ্যাঁয়ের গায়ে না ঘষলেই লড়াই বাঁধে
আমরা তো চাই দুধেভাতে থাকতে খালি
বিনমগজেই হ্যাঁ বলে দিই সে আহ্লাদে।
তলে তলে সেই সুযোগে ঘুণ ধরেছে
অন্যলোকে বলছে কথা আমার হয়ে
ইচ্ছেমতো বিভাজনের রং চড়েছে
নির্বিবাদে আমিও সেসব যাচ্ছি সয়ে।
'আমরা'এবং 'ওরা' বলে লাইন টানায়
লাভ হয় শুধু তক্কে থাকা দখলদারের
'ওরা'এবং 'আমরা' যখন অস্ত্র শানায়
আলো তখন খোরাকি হয় অন্ধকারের।
কথাগুলোয় এবার দেবো ভাবনা আগুন
চুপ থাকাটা এখন যে কাজ অপরাধের
আমরা ওরায় বিভেদকামী জেনে রাখুন
রামধনুরং সবকটাতেই দেশ আমাদের।

ক্রীড়নক/মতিউল ইসলাম


দরজা খোলা রেখেছি,
হাড়িতে সেদ্ধ হচ্ছে মানবিকতা,
তুমি আসলেই ছিপি খুলে পান করবো
ধর্মীয় সুরা.
রঙিন নেশায় মৌতাতে বাজি ধরবো
প্রিয়ার সারল্য,
কিংবা হোলি খেলতে ও পারি
আত্মজের রক্তে,
দরজা খোলা আছে শুধু তুমি আসলেই
পূর্ণ হয় ষোলকলা.
লালসা কামনা আর যৌনতার মিশ্রনে
তৈরী আছে রাতের খাবার,
হৃদয়ের আলিন্দে পেতেছি বিছানা
নীলয়ে পূর্ণ আছে হাজার গরল.
ঠিক যেমনটি চেয়েছিলে,
ঠিক যেমনটি চাও.
দরজা খোলা আছে
তুমি আসলেই নিঃশব্দে বন্ধ করে দেব
হৃদয়ের সমস্ত আগল.

দান /প্রত্যূষ কর্মকার


নির্জন দুপুরের থেকে তাপ ঝরে গেলে অনায়াসে লেখা যায় নিবিড় রহস্যে মোড়া ঘুম অথবা জন্মের ইতিহাস ফুটে ওঠে পাখির বাসার মত ঘরে,তবুও কখনও কখনও এই
গভীর ঘুমে অচেতন শরীর থেকে উঠে আসে
ভূমিহীন শিশুদের দল,স্বপ্নে ঘুম ভেঙ্গে দেখি
ওদের চোখ দুর্গা আরতির ধোঁয়ায় জ্বালা করে ওঠে,ঠোঁটের কোনে জমে ওঠে শরতের মেঘের মত পেঁজা পেঁজা ফেনা,বাজনার তালে তালে বুক ঢিপঢিপ করে,মাথা তুলে নগ্ন মুখে জিজ্ঞেস করে এই এত আলোর থেকে আমি কতটুকু নিয়েছি আলো?স্বপ্নের ভেতর কেঁপে ওঠে আমার শিরস্ত্রাণ,আমার সাম্রাজ্য,
আমার বুকের খুব ভেতরে শিরশিরে অন্ধকারে থইথই করে ওঠে ঘুমানোর ছল
ওদের পায়ের কাছে জমে ওঠে আমার আরও একটু ঋণ
তারপর ওদেরই বুকের কাছে মাথা নীচু করে খুঁজে নিই ক্ষমা
হে নিরন্ন শিশু,আর কত ঢেলে দিবি অপাত্রে দুর্বহ ক্ষমাশীল দান?

আশ্বিন / শ্যামশ্রী রায় কর্মকার


ভোর ভোর ঘণ্টা বাজে জোড়া গীর্জায়
যেন ঈশ্বর যাবার আগে ডাক দিয়ে যায়
যেন শেষের সেদিন
নীলমাথা পুরনো দোকানে ময়লা স্যাণ্ডো পরা লোক
একমনে কবেকার গ্রামাফোন সারে
বাজায়,আবার খোলে পুরনো ইস্ক্রুপ
অপূর্ব মোহময় সুরে
কে যেন আলোর স্বর বাজায় সেতারে
পাখিরা ডানার ভাঁজে আড় ভাঙে
ছোট ছোট লাফ দেয় উড়বার আগে
আমাদের ছোট ছোট আনমনা পাপ
ধুয়ে যায় জলের ঝাপটে
সমস্ত আশ্বিন জুড়ে আকাশে ছড়িয়ে থাকে দেবতার নীল
সংবৎসরের যত শিহরণ কাশ হয়ে ফুটে থাকে উন্মুক্ত মাঠে।

আলোকিত/ শ্যামশ্রী রায় কর্মকার


পায়ের পাতা গুটিয়ে নিচ্ছে সময়
আমি টের পাচ্ছি
তোমার গভীর স্রোতে
যবে থেকে ছুঁয়েছি আঙুল,
অন্ধকার সরে যাচ্ছে সমস্ত বিপন্নতা থেকে
ছুটে আসছে হরিণ রঙা রোদ।