Sunday, 2 April 2023
অনীল করমেলের কবিতা/ অনুবাদক লিপিকা সাহা// হিন্দি কবিতা
Saturday, 18 March 2023
শ্রীদাম বায়েনের গল্প
লুকোচুরি
( সুন্দরবনের ভাষায় সুন্দরবনের গল্প)
রাখাল,
নৌকা ঘোরা শীগগির…
বলেই রাধাখুড়ো তাড়াতাড়ি জল থেকে জালের শেষ প্রান্তটা হিঁচড়ে নৌকায় তুলে নিল|
আকাশে তখন কালো মেঘের ঘনঘটা| চারিদিক যেন ধীরে গিলে ফেলছে কামটের মতো|
খুড়োর হাঁকে রাখাল চমকে গিয়ে তড়িঘড়ি নৌকার হালটা হাতে নেয়…
কী যেন ভাবতে ভাবতে বলে…
"খুড়ো, আরেট্টু দেরি কুরে গেলি হুতো না? মাছ তো ভালুই পুড়তোলো…"
খুড়ো রাখালের কথাটা কানে শুনল বটে, কিন্তু তাকিয়ে রইল আকাশের পানে… তারপর বলল, "গতিক ভালো ঠিকতেছে না রে… সেবারো ধনাটাকে রাখে গেলাম এরাম লোভে পুড়ে রে… "
বলতে বলতে খুড়োর গলা ভারি হয়ে উঠলো……
ধনা আসলে ধনঞ্জয় খুড়োর বড় ছেলে| বেশ কয়েক বছর আগে মহল করতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়ে প্রান হারায়| সেবার ওরা বাপ-বেটা তিনজন গিয়েছিল মাছ ধরতে|
সুন্দরবনের ঘন জঙ্গলের খাঁড়িতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়| তবে সেখানে মাছের পাশাপাশি ঝুঁকিও আছে তেমন| ঘন জঙ্গলের খাঁড়িগুলিতে ওত পেতে বসে থাকে সুন্দরবনের পাহারাদার দক্ষিন রায়|
সদ্য বিয়েতে প্রচুর খরচের পর সংসার সামলানোর জন্য বাপ-বেটা ঝুঁকির পথেই সেবার পা বাড়িয়েছিল| আসলে সুন্দরবনের মানুষের সাথে এখানকার জলের কুমীর আর জঙ্গলের বাঘের লুকোচুরি খেলা এমনি করে চলতেই থাকে|
সেবার খুড়োদের নৌকা যখন বাড়ির ঘাটে ফেরে… তখন গোটা গ্রাম ভেঙে পড়েছিল নদীর পাড়ে|
ছোট ছেলে পরাণ হাল ধরে কাঠের পুতুলের মতো বসে আছে, আর খুড়োর কোলে আধ-খাওয়া ধনার মুণ্ডুহীন দেহ|
খুড়োর বুকফাটা কান্নায় সন্তান হারানোর যন্ত্রণা নিকড়ে নিকড়ে বেরোচ্ছিল… "ও ধনারে, তোর মাকে আমি কী জবাব দ্যাবো রে…
ও বাপ, তুই একবারডা ওঠ বাপ…
বাবা বুলে ডাক… ,
ও ধনা রে…… হা… হা… "
সে ঘটনা রাখালেরও মনে আছে| সদ্য লায়েক হয়েছে রাখাল… তাই কৌতূহল আটকাতে না পেরে বলল… "সেদিন কী হুয়োলো খুড়ো? এট্টুখানি বলবা?"
বলেই রাখাল নৌকার হালে মোচড় দিয়েছে… নৌকা বাঁক নিয়ে জঙ্গলকে পিছনে ফেলে এগোতে শুরু করেছে…
খুড়ো তখনো আকাশের দিকে চেয়ে…… ওদিকে ঘন কালো মেঘের বুক চিরে মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানি চলছে…
খুড়োর চোখের জলে চিবুক চিক চিক করে উঠলো… খুড়ো বলতে শুরু করেছে…… "সেবার বোশেখ মাসে ধনাডার বে দেলাম|
পাঁচ জনের সংসার ছ' জোন হুলো… বে তে বেশ খরচ হুয়েলো…
বে-শাদি মিটলি, ধনা বুললো- 'বাবা, চলো নৌকা নে বার কতক জঙ্গলে যাই| আমাগো ধার-দেনা মিটে গেলি আর যাতি হবে না|'
মনডা শুনেই কু গায়্যে উটলো… তবু সংসারে যা অবস্থা, তা ভাবে রায় দেলাম|
দু-তিন বার যাবার পর ধার-দেনা মিটে গেলো|
ধনা বুলল- 'বাবা, এবারডা গে, আর যাবো না| এবারে যা হবে বৌডার জন্যি এট্টা গয়না দ্যাবো,
ওরে তো বের সময়ও কিচ্চু দিতি পারিনি আমরা|' সত্যিতে বৌডাকে কিচু দিতি পারিনি ভাবে ধনার কথায় সায় দেলাম|
সেদিন মাছ ধরা প্রায় শেষের পতে, হঠাৎ আকাশ ছায়্যে গেলো ঘন কালো মেগে…..
আমি বললাম- 'ধনা গতিক ভালো না রে বাপ| চল যা হুয়েচে, তা নে রওনা দেই…'
ধনা বুলল, 'বাবা, আরেট্টু থাকে যাই, জালডা সবে দিচি| খানিক্ষন পরেই তুলে নিচ্চি……'
বুলে ওৎ পাতে বুসে রুলো…
হঠাৎ বৃষ্টি নামলো,
চারিদিকে জলে জলাকার……
দুম-দাম বাজ পড়তি লাগলো……
কারো কতা কেউ শুনতি পাচ্চি নে…
ধনা জাল গুটাতি শুরু কুরেছে| এমন সময়……… ওর জালের দড়ি গেলো আটকে…
ও আমার হাতে জালডা ধরিয়ে দে জলে নামে গেলো…… এগুতে এগুতে সামনের গামো গাছের ঝোপের তলায় যেই গেছে, "বাবা গো" বুলে চিল্লে উঠলো…
ঝপাত করে জলে ঝাপিয়ে পুড়ে চকির সামনে দে ধনাডারে তুলে নে যাচ্চে সে……
আমি...আমি... আমি… কিচ্চু করতি পারলাম না রে রাখাল… কিচ্চু করতি পারলাম না… পরাণ লগি নে লাপ দে জঙ্গলে ডুকোলো ওর দাদারে বাঁচাতি……… আমার ধনা আর ফিরলো না…… "
বলতে বলতে খুড়োর দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে চলেছে………
হঠাৎ নামা বৃষ্টির জলে আজ একাকার খুড়োর বুকফাটা কান্না,
সদ্য লায়েক হওয়া রাখাল তার গভীরতা কতখানি বুঝেছে, তা জানি না…
কিন্তু আকাশে ততক্ষণে রেফারি লুকোচুরি খেলার বাঁশি দিতে শুরু করেছে… কড়্ কড়্ কড়াৎ
Monday, 13 March 2023
নিতাই ভট্টাচার্যের গল্প
Monday, 6 March 2023
সুবিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
হড়কা বান
তোকে দেখলেই বোঝা যায়
তুই অচানক বৃষ্টি নামাস পাহাড়ভাসি ঝোরায়।
মেঘ!
ভাই প্লিজ রাগ কর আর ঝাল
এখনই সটান ভারত ভেঙে ভাগ কর দেখি
কন্যাকুমারিকার থেকে ভোপাল।
বিমান কুমার মৈত্র
Thursday, 17 November 2022
subodh sarkar সুবোধ সরকার
পবিত্র সরকার
পবিত্র সরকার
শ্যামলকান্তি দাশ
শ্যামলকান্তি দাশের কবিতা
Thursday, 20 October 2022
শ্যামাচরণ কর্মকার, ঋতু
গ্রীষ্ম
গ্রীষ্ম এলে গনগনে রোদ যায় না পথে চলা
গাছের ছায়ায় জিরোয় পথিক,শুকিয়ে আসে গলা।
খটখটে মাঠ, শুকনো মাটি, জলহারানো পুকুর
কোথায় তবে কাটবে সাঁতার? মনটা খারাপ খুকুর।
বৃষ্টিকে চায় পুকুর - ডোবা, ব্যাঙ - ব্যাঙানি, হাঁস
গ্রীষ্ম এলে স্বস্তি হারায় গরমে হাঁসফাঁস।
.........
বর্ষা
আকাশের মুখ কালো মেঘে যায় ঢেকে
রেগে বলে, বর্ষাটা এলো কোত্থেকে?
সারাদিন টুপ টাপ, বৃষ্টির সুর
পথঘাট থই থই, ভেজে কাছ - দূর।
গাছ হাসে, ফুল হাসে, হাসে মাঠ, চাষী
ব্যাঙ বলে, বর্ষাকে কে না ভালোবাসি?
........
শরৎ
শরৎ মানেই নীলচে আকাশ সোনা রোদের হাসি
সাদা মেঘের পানসি ছোটে, শরৎ বাজায় বাঁশি।
শিউলি, টগর, জুঁই, মালতী ঘুমোয় না কেউ আর
দিঘি-ঝিলে পদ্ম - শালুক ছড়ায় শোভা তার।
হিমেল হাওয়ায় আগমনি, দোলে কাশের বন
দুগ্গা আসে শহর - গাঁয়ে, ফুরফুরে প্রাণ - মন।
.........
হেমন্ত
কুয়াশার আঁকিবুকি আকাশটা ধোঁয়া
হেমন্ত উঁকি দেয় পাই তার ছোঁয়া।
শিশিরের ভাসাভাসি লতা ও পাতায়
মাঠেতে নতুন ধান ঢেউ তুলে যায়।
চাষীদের হাসিমুখ লক্ষ্মীর বরে
নবান্ন খুশি এঁকে দেয় ঘরে ঘরে।
..........
শীত
দেয় কাঁপিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়ায় শিরশিরিনি হাড়ে
শীতের হাতে জব্দ সবাই গরম পোশাক বাড়ে।
শীতটা এলে কাঁপতে থাকি তবু লাগে ভালো
নলেন গুড় ও পিঠে ছড়ায় মনে খুশির আলো।
রাখাল - বাঁশি, একতারা - সুর হাতছানি দেয়, ডাকে
বইমেলা ও সার্কাসে যাই , তাই খুঁজি শীতটাকে।
.........
বসন্ত
কৃষ্ণচূড়ার ঘুম ভেঙে যায় শিমুল - পলাশ জাগে
বসন্ত এলে ঘুমিয়ে থাকতে কারও বুঝি ভালো লাগে?
আমের মুকুলে ভোমরার সুর, কোকিলের কুহুতান
বসন্ত এলে দুলে ওঠে মন, জেগে ওঠে সব প্রাণ।
রঙের ছোঁয়ায় জাত ভুলে যাই, এঁকে দিই সম্প্রীতি
হোলির সুরেতে ভেসে যায় দেশ গায় মিলনের গীতি।
...........
Thursday, 19 May 2022
ঋণ/ দেবজ্যোতি দাশগুপ্ত
জন্মের পর জেনেছি,
এক পৃথিবী ভাব বন্ধক রয়েছে আমার।
অক্ষর থেকে শব্দ , শব্দ থেকে বাক্য হয়ে জমেছে তার সুদ।
চক্রবৃদ্ধি হারে সময় জুড়েছে তাতে।
একটু একটু করে বুঝেছি সবাই যে যার নিজের ঋণে জর্জরিত।
শিক্ষা ও শোধের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে কেউ।
কেউ সাহায্যের নামে ঝড়িয়েছে রক্ত।
তাই হাল ছাড়বো না !
একদিন ঠিক সব ঋণ শোধ করে দেবো বাংলা ভাষা দিয়ে।
Thursday, 20 January 2022
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাৎকারঃ প্রভাত চৌধুরী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাৎকারঃ প্রভাত চৌধুরী
Monday, 13 September 2021
Sunday, 1 August 2021
তুলসীদাস ভট্টাচার্য, কবিতা,
কাগজের নৌকা
Wednesday, 7 July 2021
শ্যামশ্রী রায় কর্মকার, বাংলা গানের লিরিক
ছাদবৃষ্টির প্রহরে
শহরের ছাদে বৃষ্টিরা আসে, ফেরে না
ছাদের গল্পে পাদটীকা হয়ে থেকে যায়
সিঁড়ির জ্যামিতি শিখে নেয়,বুকে হাঁটতেও
তোমাকে গোপনে আরেকটু ভালবাসতেও
এই শহরের বুলেভার্ড জানে, প্রতিদিন
রোদ্দুর কার পাশে হেঁটে হল বেদুইন
হাওয়া কাদেরকে ভেজা চোখ দিয়ে ছুঁয়ে যায়
কাকে বৈশাখে একলা করেছে ইশারায়
কতদিন আগে ছেড়ে এসেছিলে বাসস্টপ
ঠোঁটের প্রহরে থমকে দাঁড়ানো হার্ড রক
গ্রুপ থিয়েটার, কথার বাক্সে রাখা মন
স্ট্রবেরি বিকেল, সুমনের গানে গ্লাসনস্ত
সময়টা হোক মার হাতে বোনা সোয়েটার
শ্রাবণের মেঘে রশিদ খানের বন্দিশ
শঙখ ঘোষের কবিতার মতো চুপ-রঙ
জলের ওপরে দু এক লহমা গাঙচিল
Wednesday, 23 June 2021
রাজদীপ ভট্টাচার্য/ ব্যক্তিগত গদ্য/মাছ ধরা
মাছ ধরা
হুইল ছিপে মাছ ধরা বাঙালির সুবর্ণযুগ দীর্ঘকাল আগেই গত হয়েছে। বাড়িতে বাবাকে দেখতাম একসময়। ছুটির দিন মানেই হয় অমুকের বড় শালা, নয় তমুকের মামাশ্বশুরের পুকুরে দলবেঁধে মাছ ধরতে যেত। যাওয়ার সময় কত উৎসাহ, তোড়জোড়। আর ফেরার পরে মায়ের মুখে অমোঘ প্রশ্ন, "কিনে আনলে?" সকালের সেই উদ্দীপনা ততক্ষণে বাবার মুখ থেকে উধাও!
সেইসময় বাবা মামারবাড়ি যাওয়া মানেই মাছধরার বিরাট আয়োজন। হাড়িয়ার পচা ভাত, পাঁউরুটি, চারের মশলা ইত্যাদি যোগাড় হয়ে যেত অবিলম্বে। বাগানে খুঁজে খুঁজে জামরুল গাছের মগডালে ঝুপসি পাতার ভিতর থেকে পেড়ে আনা হত পিঁপড়ের ডিম। আড়ালে পরখ করে দেখেছি অবশ্য সেই পচা ভাতের মতোই সাদা সাদা ডিমও বেজায় টক। তাই আমার বদ্ধমূল ধারণা ছিল মাছেরা টক স্বাদ বোধহয় পছন্দ করে। যাইহোক দুপুরে খাওয়ার পাট সেরে তিন-চারটে হুইল পাতা হল পুকুরে। আমার কাজ যোগানদারের। জল আনা, পান আনা, এইসব।
আয়োজনের শুরুতেই পুকুর ঘাটে কাঁকড়া ধরে এই মার খাই কী ওই মার খাই! প্রথমে কাঁকড়া দর্শন নাকি চরম অশুভ। এদিকে সময় বয়ে যায়, মাছ আর টোপ গেলে না। সবাই মিলে আমাকেই কালপ্রিট সাব্যস্ত করে বসল। অবশেষে কেজি দেড়েকের রুই মাছ ধরা পড়ল ঘন্টাখানেক বাদে। দু'হাত দিয়ে কানকোর কাছে জাপটে ধরে পুকুরপাড় দিয়ে নিয়ে আসার সময় সেই মাছ যে আমাকে নতুন করে বিড়ম্বনায় ফেলবে তা আগে বুঝিনি। যখন মালুম হল ততক্ষণে সেই পিছল রুই ঝটকা মেরে হাত ফসকে জলের গভীরে ভাগলবা। এরপরে আমার কর্ণযুগলের মর্মবেদনার কথা আর সর্বজনসমক্ষে না বলাই শ্রেয়।
যাইহোক, সে সময় গ্রীষ্মের ছুটি মানে সব মাসতুতো ভাই বোনেদের জমায়েত মামারবাড়িতে। গাছ থেকে আম-কাঁঠাল-নারকেল পাড়ানো হত। পুকুরে জাল দেওয়া হত। এই জালে মাছ ধরা দেখা আর এক আনন্দের স্মৃতি। মেজমামা আগের দিন জেলেদের সাথে কথা ফাইনাল করে এসেছে। তাই ভোর না হতেই তাদের আগমন। জলের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে চালের কুঁড়ো, সাথে বোধহয় আরও কিছু। এতে জলে অক্সিজেনের পরিমান দ্রুত কমে আসে। ফলে একটু পরেই উপরে ভেসে উঠতে থাকে মাছ। পাড়ের কাছে এসে খাবি খায়, ছটফট করে। এবার জালটানার কাজ শুরু। গলা অবধি ডুবে চারদিক থেকে জেলেরা জাল গুটিয়ে আনে ক্রমশ। মাঝখানে আটকে পড়া মাছেদের ছটফটানি চোখে পড়ে।
জেলেরা পুকুর ছাড়তেই আমাদের অপারেশন শুরু হয়। আনাচে কানাচে ঝোপঝাড়ের আড়ালে ঠিক কিছু খাবি খাওয়া মাছ রয়েই যায়। খুঁজে পেতে সেগুলো ধরার মাঝেই তখন আমাদের চরম আনন্দ। জীবনের পরম সার্থকতা।
এদিকে জেলেরা ততক্ষণে সব মাছ এনে ফেলেছে উঠোনে। ভাগাভাগি শেষে যা থাকে তাও যথেষ্টর চেয়ে অধিক। কিছু জ্যান্ত মাছ বড় গামলায় জলে জিইয়ে রাখা হয়। সেসময় ফ্রিজ নেই কোথাও। ফলে তেলে ভেজে দিন দুয়েক রাখা যায়। আর এরমধ্যে গুষ্টিশুদ্ধু গান্ডেপিন্ডে অবিরাম মাছভাজা খাওয়া চলতে থাকে।
মাঝে মাঝে গ্রীষ্মের নির্জন দুপুরে ছোটো হাতছিপ নিয়ে কেঁচো কিংবা ময়দার ডেলা বঁড়শিতে গেঁথে সেই বিরাট পুকুরের ঘাটে আঘাটায় অনুশীলন চালাতাম। প্রায়ই ফাৎনা নড়ে উঠত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টোপ খেয়ে বঁড়শিকে কলা দেখিয়ে কেটে পড়ত মাছ। আবার ট্যাংরা, পুঁটি কিংবা চারাপোনা ধরাও পড়ত অনেক সময়। তবে মাছ উঠলে এক দৌড়ে পুকুর ছাড়িয়ে বাগান পেরিয়ে চলে যেতাম বাড়ির ভিতরে। কারণ বিশেষ করে কাঁটাওলা মাছ বঁড়শি থেকে ছাড়ানোর সাহস তখনও রপ্ত করিনি।
সেইসব নিরালা দুপুরে বাগানের বুকে থমকে থাকত জমাট ছায়া। কোনো ঝাঁকড়া গাছের পাতার আড়ালে বসে ক্রমাগত ডেকে চলত বসন্তবৌরী পাখি। কালো দাঁড়াস সাপ সামান্য খসখসে আওয়াজ তুলে পেরিয়ে যেত পায়ে চলা পথ। একটা জাম গাছ ঝড়ে হেলে পড়েছিল পুকুরের জলে। শীতের দিনে নিস্তরঙ্গ দ্বিপ্রহরে জাম গাছের জল ছুঁয়ে ফেলা কাণ্ডের উপর রোদ পোয়াতো কয়েকটা গোঁয়াড়গেল আর শ্যাওলা রঙের কচ্ছপ। আমি দূর থেকে চুপিচুপি দেখতাম। আমার শৈশবের উপর শীতের শেষ বেলার অপার্থিব রোদ্দুর চুঁইয়ে পড়ত ফোঁটা ফোঁটা।
অলংকরণ - স্বরূপ দাস
Sunday, 6 June 2021
শর্বরী চৌধুরীর কবিতা
জীবন
Saturday, 22 May 2021
সুপ্রভাত মেট্যার কবিতা
অশ্রু খুশি
ভোর হলেই আমি চোখ ফিরে পাই।
ধুলোর উড়ে যাওয়া দেখি, গ্রামের পথ জুড়ে
আর পাখি শব্দের হই।
আমার সমস্ত বালক-জীবন ,ধান ক্ষেতের মধুর উল্লাসে যেন নেচে নেচে ওঠে!
রবীন্দ্রগানের সুর ভেসে যাই, আর রঙিন হয়ে পড়ি।
স্মৃতি কিছু উসকে না-দেখাই ভালো ।
বুকের উপর দিয়ে পিষে যাওয়া চাকার গাড়ি
আমাকে রাস্তা দেখায়। সেই রাস্তায় আমি পথ হাঁটি।কবিতা ওড়াই। কষ্ট পাই খুব । আর
নোনা সময়ের সেই কষ্টেের ভিতর দিয়ে, হাসতে গিয়েও দেখি, অশ্রু-খুশির আমার জল নেমে আসে।তাই সময় পেলেই তোমাকে লিখি।
ভেতরের সমস্ত অন্ধকার কথাগুলি আমার ,
সত্যের পাথরে ঘষে - মেজে মস্তিষ্কে তুলে রাখি। আর কখন একটা নিজস্ব আলোর হয়ে যাই জীবন ।
Friday, 21 May 2021
পল্লব তেওয়ারী
রবীন বসুর কবিতা
ব্যথার জ্যোৎস্না
যদি আসো তোমার পাশে বসি
আমি তো সেই তোমার চেনা পড়শি।
এতদিনের জানাশোনা সব কি
হতে পারে এমনতর মেকি!
যদি আসো তোমার পাশে বসি
আগের মত গল্পগাছা করি,
সেই যে গেলে আর না কভু ফিরলে
দুঃখ নিয়ে তোমাকেই যে স্মরি।
সুজন আমার বন্ধু আমার, তুমি
ফিরে এসো আমার উঠোন পরে,
গলা ধরে গানের স্রোতে ভাসি
স্মৃতির ঘন্টা অন্ধাকারে নড়ে।
হাওয়া বয় পাতা খসে যেন
সময় শুধু পুরাতন হয় কেন?
বুকের মধ্যে কারা নড়ে চড়ে
আবছা সব ঠাওরে না পড়ে।
তোমার কথা তোমার ছবি জাগে
আমার সকল আকুলতার মাঝে,
শিউলি যেন অবহেলায় ঝরে
আমার শূন্য একলা উঠোন পরে।
তুমি এসো ফিরে এসো বুকে
আরোগ্য হও কঠিনতর অসুখে।
আমার পরান তোমার জন্যে কাঁদে
তুমি আমার ব্যথার জ্যোৎস্না চাঁদে!
Wednesday, 28 April 2021
না দেখা শঙখ/ সুপ্রতিম কর্মকার
না দেখা শঙ্খের শব্দ গুচ্ছ
সুপ্রতিম কর্মকার
যেমন ভাবে ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’ অনুভবে আপন হয়ে ওঠে, ঠিক তেমন এই লেখার সুর বাঁধা রইল আমার, "আমার শঙ্খ ঘোষ" - এই শব্দত্রয়ের বন্ধনে। যে বৃত্তান্তের বৃত্তের মধ্যেই দেবেশ রায় থাকেন। ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’-র লেখক।কোভিডের আক্রমনে তিনিও মারা যান। কোলকাতায় বেশির ভাগ সময় আস্তানা ছিল বাগুইহাটির বিনোদিনী সিনেমাহলের উল্টোদিকের গলিতে। দেবেশ রায়ের ফ্ল্যাট বাড়িতে। আমি গেলে খুব খুশি হতেন তিনি। আমি গেলে কলকাতা শহরের নানা প্রান্ত থেকে আসতেন অনেক গুলো মানুষ, আমাদের দুজনার সাথে দেখা করতে, এক সাথে। আসল লোভের বিষয়টা ছিল নদী নিয়ে নানা আড্ডা। আর ‘সেতু বন্ধন’ পত্রিকার জন্য নতুন লেখার প্রস্তুতি।পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন দেবেশ রায় নিজে।
এমন এক দিনেই দেবেশ রায় আর শঙ্খ ঘোষের কথপোকথন শুনেছিলাম।টেলিফোনে। আমি একা নয়, আরো কয়েকজন ছিলেন সেখানে। দেবেশ রায়ের থেকে একটু বয়সে বড় ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। তাই দেবেশ বাবু দাদা বলে সম্বোধন করতেন শঙ্খ বাবুকে।
শঙ্খ ঘোষ আমার ঘরে এসেছিলেন আমার কোন এক জন্মদিনে। এক প্রিয় মানুষের হাত ধরে। উপহারের রূপ নিয়ে। প্রণবেশ সেন স্মারক বক্তৃতা দিয়েছিলেন শঙ্খ বাবু। সেই বক্তৃতা ছাপা অক্ষরে বেরোয় ‘অন্ধের স্পর্শের মতো’ এই শিরোনামে গাংচিল থেকে। পাতলা চটি বই।সেই চটি বই পাল্টে দিিয়েছিল একটা মন।
সময়টা ১৫১৭-২০ সালের মধ্যে। ঠিক হলফ করে বলা যায় না। মার্টিন লুথারের লেখা একটা একটা পাতলা নরম পুস্তিকা। সেটা ছাপা হয়েছিল। আর ছড়িয়ে গিয়েছিল সারা পৃথিবী জুড়ে।নাড়িয়ে দিয়েছিল চার্চ আর রোমান সাম্রাজ্য নামের দুই সর্বশক্তিমান প্রতিষ্ঠানকে। '৯৫ থিসিস' নামে পরিচিত সেই পুস্তিকাটি। সম্ভবত বিশ্বের প্রথম চটি বই। চটি বই বিপ্লবের সেই সূচনা। যাক সে সব কথা।
চারিদিকের অভিজ্ঞতা একই সঙ্গে নানা ব্যক্তির মধ্যে সঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু তার প্রকাশ হচ্ছে একজন বা দুজনের মধ্যে দিয়ে।তারা হয়তো জোর দিয়ে ‘আমি’ শব্দটাকে উচ্চারণ করতে পারে। বক্তাকেই বুঝতে হয়, যে 'আমার' পরিসর যত ছোট হয়ে আসবে, তাঁর দেশও হবে তত খন্ডিত।
রবীন্দ্রনাথের ঘরে বাইরে উপন্যাসের কথা মনে আছে? নিখিলেশ আর সন্দীপ। প্রতিদিনের এই চেনা চরিত্র দুটোকে আমরা উপন্যাসে পাই। একাধিকবার আমরা দেখি, নিখিলেশ চুপ করে থাকেন। নীরবতারও একটা ভাষা থাকে। সে ভাষা পড়তে ভুলে যাই আমরা। অনেক সময়ই ভুলে যাই।শুধু যে আমরা পড়তে ভুলি, তা নয়। তার ব্যবহারেও আমাদের ভুল হয়ে যায় ।আমরা ভুলে যাই, ‘নীরবতা একটা সামর্থ্য’।
এমন সময় পাখার বাতাসে উল্টে যায় রবীন্দ্র রচনাবলীর পাতা গুলো। চোখ যায় ‘কণিকা’-র দুটি লাইনে।
‘দয়া বলে, কেগো তুমি মুখে নাই কথা?
অশ্রুভরা আঁখি বলে, আমি কৃতজ্ঞতা’।
পারি না হয়তো। কিন্তু খুঁজে যেতে হয়। তবু খুঁজে যেতে হয় কৃতজ্ঞতার এক অভ্যন্তরীণ স্পর্শ।সেখানে বেজে ওঠে না দেখা শঙ্খ, একটি পাতলা বইয়ের মধ্যে অবিরাম বাজতে থাকে তাঁর বাণী ।