Tuesday, 30 June 2020
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা, সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা, ২০২০
তাপসী লাহার কবিতা, সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা, ২০২০
গ্রিক কবি কিরিয়াকা কারসাম্বার কবিতা ,অনুবাদক উজ্জ্বল ঘোষ ,সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা,২০২০
কিরিয়াকি কারসাম্বা
এখন আর কিছুই আশা করি না আমি।
মন দিয়ে শুনি সব।
জীবন সামনে আসে হাজার রূপে:
প্রকৃতি, মানুষ, জীবজন্তু, পাখি,
সুগন্ধী, সূর্য, বৃষ্টি আরও কত কী!
নানা তথ্য, কান্না, হাসি
অপরিচিতের চোখে ঐশ্বরিক ঝলক,
ঘাতক, বিচারকের অপ্রত্যাশিত করুণা,
প্রিয় কিছু চিরতরে হারিয়ে ফেলা,
ব্যাখ্যাতীত ঘটনাসমূহ,
সহযাত্রীর মুখ-ঝামটা—
এ সবই জীবনের ভিন্ন ভিন্ন রূপ।
হীন ও মহান প্রিয় সব মানব,
ভালোবাসা, নৈঃশব্দ্য—
সকলই কড়া নাড়ে জীবনের দ্বারে।
একমাত্র সাক্ষী
সন্দেহ-সংকটের উৎসে পৌঁছাতে
আমাকে সবকিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
নিজেকে যথাযথ সম্মান জানাতে
এছাড়া উপায় ছিল না আর!
যদিও তুমি জানতে, আমিই ছিলাম
সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষী, আর
আমাকে ছাড়া শেষ সিদ্ধান্ত
থেকে যেত অধরা।
অন্য কেউ উপলব্ধিই করতে পারবে না
আমার কাছে এই যাত্রা কতটা আত্মমর্যাদার ছিল।
(গ্রন্থ: প্রায় সত্যের মতো উলঙ্গ, আথিনা ২০১৮)
[ কবি পরিচিতি: পেলোপনিসসের (দক্ষিণ গ্রিস) কালামাতা শহরে ১৯৪৬ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি এশিয়া মাইনর (বর্তমানে তুরস্ক) থেকে আগত এক উদ্বাস্তু গ্রিক পরিবারে জন্ম কবি কিরিয়াকি কারসাম্বা-র (Κυριακή Καρσαμπά)। গ্রিসের আরিস্ততেলিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি চিকিৎসা-বিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। গত ৩৪ বছর ধরে তিনি চিকিৎসা করে চলেছেন গ্রিসের নানা প্রতিষ্ঠানে। রক্ত-বিজ্ঞান (Hematology) নিয়ে তাঁর লেখা গবেষণা-গ্রন্থ অনূদিত হয়েছে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়। তাঁর মানুষ তথা জীবন দেখার চোখ স্বভাবতই আমাদের থেকে একটু আলাদা। এসব অভিজ্ঞতার আলোকেই রচিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "প্রায় সত্যের মতো উলঙ্গ" (Σχεδόν Γυμνή Σαν Την Αλήθεια / স্খেদন গিমনি সান তিন আলিথিয়া) প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে।]
Sunday, 28 June 2020
মৌপ্রিয়া গাঙ্গুলির কবিতা , সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা, ২০২০
অনুপম দাশশর্মার কবিতা 'জলময় প্রণয়' ,সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা, ২০২০
মন্দিরা ঘোষের কবিতা 'পৌরাণিক' ,সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা, ২০২০
আমাদের পৌরাণিক মাটির বর্ণমালা,
ফুলের গর্ভচক্র, পাখিদের ঔরস থেকে
শিখে নিতে হবে জারজ জন্মের ভূমিকা
শিখে নিতে হবে অনার্য রমণীর ভাষা
তাদের সুমেরুশিখরে ফুটে থাকা বনের আলো
উদ্ধত পুরুষাঙ্গে শাসনের দাসখত
এখনো ডিঙি নৌকার ঘামে
হেসে ওঠে রঙিন বালিমাছ
চতুরতাহীন জলাশয়ে নেমে আসে
ভোরের মেখলা
ওইসব পাথুরে সমাজের গন্ধ
ইতরের ধুলোস্নান মেখে নিতে
জলীয় বাতাস ডাকো
আদিম আয়োজনে উল্কির মতো
শিশুদাগ গাঁথো
এসবই অন্ত্যজ বিকার ভেবে ফিরিও না চোখ
আমাদের উলঙ্গ বিছানায় সঙ্গমের
নড়বড়ে সেতু
পেরোতে পেরোতে জন্ম ছিঁড়ে যায়
আজো খাজুরাহো বেয়ে নেমে যায় দ্রাবিড়ের ঘাম
কুর্চির স্নেহে ডুবে আছে বক্ষজ আঁধার
শিশুর গায়ে সোনালি রোদের জামা
জ্যোৎস্নাঠোঁটে একা একা কিশোরী কুড়োয় মেঘ
সমস্ত নক্ষত্র বুকে রাত রাত সাহসী পুরুষ
দূরে ফসলের আলোয় ডুবে আছে
ঘরনীর সাধ
এসবই নৈমিত্তিক প্রলয়ের রং
এ বৈদিক ঘুম ভেঙে গেলে
যজ্ঞঘরে খাক হোক মহাবৃত্তের কূটখতিয়ান
অরণ্যা সরকারের কবিতা , সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা, ২০২০
অরণ্যা সরকারের কবিতা
বর্ষা সংখ্যার কবিতা
কিছুই সহজ করে নয়
চলে যাওয়া নিয়ে, ফুরোনো নিয়ে, নিরাময় নিয়ে
এই যে আয়না বসানো, ঘাড় ধরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া
সবই প্রকল্প অধীন
ক্রীতদাসদের স্বপ্ন থেকে ছিটকে আসা ফুলকি
যতবার ফলনের গল্পে নিয়ে যায়
ইঁদুরের অভিজ্ঞ গর্ত থেকে উঠে আসে গোয়েন্দা দৃষ্টির সিলেবাস
ফুল সেদ্ধ করতে করতে খুঁজি ক্যাচলাইন
পাখি কিনি, ঘরে ফিরি, বাগান করি
‘কদম, আহা কদম’ বলে নিভৃত সাজাই
বৃষ্টির কুহক লিখবো ভাবতেই
তথ্যসূত্র হাতে এসে দাঁড়ায় আবহদপ্তর
নেই
কাদা প্যাচপ্যাচ স্কুল রাস্তায় সেই কবে
হারিয়ে গেছে ভেজা পেন্সিল
একটানা স্নানে গাছেদের সর্দিলাগা দিন,
কচুপাতায় ঢাকা মাথা, ছিটকাপড়ের ফ্রকে
কাদার বন্দিশ নিয়ে চলে গেছে শ্রাবণসংকেত
‘চলতহি অঙ্গুলি চাপি’ সে আমার রাধিকাবসত
শুকনো দোপাট্টায় মুছে রাখে ডানার ব্যাকরণ
মেঘ শুধু সূর্যের না ওঠা, ভ্যাপসা গৃহস্থালি
এই আমি ইচ্ছেমত একান্ন টুকরোয় বাঁচি
তোয়াক্কা করি না
মেনোপজে লকেট করি অ্যাণ্টিক উর্বরতা
বাতিল সেফটিপিনে শুধু কিছু অভিমান
সেইসব থৈথৈ এর দিব্যি
শ্যামশ্রী, আর কোন বর্ষাম্যাজিক নেই
কেকা সেনের গল্প 'জলছবি' , সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা, ২০২০
রণজিৎ সরকারের গল্প 'আবুবেন আদম' , সাহিত্য এখন বর্ষা সংখ্যা,২০২০
আবুবেন
আদম
রণজিৎ সরকার
বদন মিত্র রাজ্যের ডাকসাইটে মন্ত্রী, দোর্দণ্ড প্রতাপ। হাই-কম্যান্ডের পরেই যার নাম উচ্চারিত হয়।ফলে দিন দিন নতুন দায়িত্ব, নতুন কাজের চাপ ক্রম বর্ধমান।তিল তিল করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন কাজের ছেলে কাছের ছেলে হিসেবে। তার ওপর হাই-কম্যান্ডের অগাধ বিশ্বাস। ওঁর মর্যাদা রাখার জন্য সে সদাই তৎপর। যতই তিনি ওনার কাছের মানুষ হয়ে উঠছেন ততই তিনি নিজের ভেতর একা হয়ে যাচ্ছেন। এত লোকের মধ্যে থেকেও একা। এত স্তাবকের ভীড়ে তিনি মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে উঠছেন ক্রমশ।আর এই অবসাদ কাটানোর জন্য নারীর কোমল স্পর্শে নিজেকে সপে দিয়েছেন। তাঁর শারীরিক সুখ চাই। নিজের উদ্যমকে আরো আরো বাড়িয়ে নিয়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছতে হবে। এই তীব্র আকুলতা নিরসনে বেছে নিয়েছেন টলিউডের প্রতিষ্ঠা পেতে চাওয়া নায়িকাদের। চিত্রনির্মাতারা তাদের ব্যবসার স্বার্থে বদনবাবুর গোপন ইচ্ছের আয়োজন করে সরকারী নানান সহযোগিতা পেয়েছেন। আর টলি পাড়ার মেয়েরা গলে গিয়ে বদনবাবুর কামাগ্নি নিভিয়েছে। বদন বাবুর কৃপা হলে তারা একের পর এক সিরিয়ালে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছে, এমন কি সিনেমার নায়িকাও হয়েছে কেউ কেউ।
নাথিং সাকসিড লাইক সাকসেস। পর্দার আড়ালের অন্ধকার কেউ দেখে না। প্রচারের স্পট আলোর ঝলকানির স্বাদ অনেক। একটুখানি কমপ্রোমাইজে কী আসে যায়! শরীরের এটুকু ক্লেদ মেখে যদি দিনের শেষে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছনো যায় ক্ষতি কী!
ইদানিং এই নরম শরীরগুলো নিংড়ে তিনি যেন আর আনন্দ পান না ।তবুও অভ্যাস বশে ওদের পাশবালিশ করেন বিছানায়। ঘুম আসে না। পেগের মাত্র বাড়ে। বাড়ে আচ্ছন্নতা। এইমাত্র মেগা সিরিয়াল "অনন্ত আকাশ"এর নায়িকা এরিনা ইয়াশমিনের শরীরে গলানো লাভাস্রোত ঢেলে দিয়েছেন।আজ যেন একটু অন্য আমেজ পেলেন তিনি।অস্ফুট আনন্দ শীৎকারে বলে উঠলেন, ও মাই ডারলিং ইয়াসমিন।
------ইয়েস স্যার।
-----নো স্যার, স্যার বলবে না ডারলিং।
-----কী বলব তবে? ইয়াসমিন বুকের কামনা ক্ষতে ওড়না ঢেকে বিছানায় উঠে বসল।
-----নো নো নো ডিয়ার, এনিথিং এলস ইয়ু ক্যান। তুমি তো অভিনেত্রী, ইজ ইন্ট ইট!
-----আমি তো সংলাপ বলি না।জীবন খুঁজতে এসে জীবন হারিয়ে ফেলেছি।
-----অও নটি, হাউ ফানি ইয়ু আর।তুমি এমন অসহায়ের মত কেন ফিল করছ ডিয়ার। ভগবানের কাছে এলে কেউ অসহায় ফিল করে? তুমি আমার কাছে এসেছ সোনা।
ইয়াসমিনকে ফের বুকে জড়িয়ে ধরে ওর বর্ণহীন ফ্যাকাশে ঠোঁটে যন্ত্রণাদায়ক চুম্বন রাখলেন। শীতল প্রশান্তি অনুভব করছেন তিনি।মনে হচ্ছে আজ ঘুম হবে।ঘুমিয়েও পড়লেন।
রাত কত তিনি জানেন না এখন। হঠাৎ করে তার ঘুমের চটকা ভেঙ্গে গেল। অন্ধকার ঘর। কে যেন হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে।
----কে? ইয়াসমিন!
হাত দিয়ে তিনি সুতোশূন্য পেলব শরীরের স্পর্শ পেলেন। এই তো ইয়াসমিন। তবে কে ইনি?
খুট করে আওয়াজ হল। হালকা নীল আলোয় ঘর ভেসে গেল। আলখাল্লা পরিহিত একটি মানুষ টেবিলে ঝুঁকে পড়ে কী যেন লিখছেন।
বদনবাবু সভয়ে অস্ফুটে বললেন, কে আপনি?
ছায়ামূর্তি ঘুরে দাঁড়ালো, বলল,আমি আবুবেন আদম।
ঈশ্বর আমায় পাঠিয়েছেন। পৃথিবীর সমস্ত চরিত্রহীন মদ্যপ দুর্নীতিপরায়ণ মানুষদের একটি তালিকা প্রস্তুত করছি। আপনিই যোগ্যতম। সহযোগিতা করুন!