Friday, 2 February 2024

সোমা দত্তের কবিতা

 

 


নবজাগরণ

  

 

বলেছ অসুর, বলেছ রাক্ষস, বলেছ প্রেত, কালো নিগার–

সেই আঘাতের গর্ত ভরে, হিরণ্ময় আলো জ্বেলে,

হত্যার মন্ত্র গেয়েছ জন্ম থেকে জন্মান্তরে,

এক রং থেকে বর্ণাঢ্য প্রাকৃতিক দৃষ্টিহীনতায়।  

ভুলে গেছ নগর সভ্যতার আদিরস তাণ্ডব...!

অন্ধকার চিরে আলো জালিয়েছ আর্যসভ্যতার...!

ধ্বংসের আস্ফালনে স্ফীত রাজা তুমি

রক্তপথে বিজয়তোরন উড়িয়েছে তোমার মধুযামিনী।

কলিঙ্গফলকে তোমার বিলাপ শুনেছি রেশমের সংলাপে,

চাঁড়াল হৃদয় থেকে সরে গেছে চারণের গান–  

তবু ভালবাসা গাছের বুকে চাঁদের আলোর মতন জ'মে,

তবু ভালবাসা ক্ষীণ হাতে মায়ের শরীর ঢেকেছে কাপড়ে,

তবু ভালোবাসা পণ রাখে মুখোশের মুখটিকে দেবে শেয়ালের মুখে–

অতিগূঢ় লাঞ্ছনায় রক্তাক্ত শরীরে, শুরু হবে কৃষিকাজ।

 

 

Saturday, 4 November 2023

সৌ র ভ ব র্ধ ন

 




অতিশিখা

ধরো, এমন দাঁড়িয়ে আছি পাহাড়-প্রমাণ হয়ে!
মাটির মর্মোদ্ধার ----- সেও তো নজিরবর্জিত, স্বল্পপ্রাণ
ছেয়ে গেছে রূপ, তবু নিবেদন, অন্ধেতর পুষ্পের ন্যায়
এই বুঝি, অতিশিখা জ্বলে গেলো জীবনে...

একদিন ভালোবাসায়, ক্ষণকাল দীপ্ত মেধায়
আবদ্ধ পাগল হয়েছে গাছটা, এতো বাষ্পায়ন!
পরিচয় সেখানে বাহুল্য, বেদনা সেখানে উন্মুক্ত তার 
সশব্দ ঝরনার মতো অলকাবলি হৃদয়
কাঁপে, কাঁপে আর বিপাকে পড়ে যায় পড়ন্ত যুবক
তাকে ভালোবাসো, তার ভাবনার বীজ বড় গূঢ়
তার স্তনে ঠোঁট রেখে দ্যাখো 
সে পুরুষ এলোমেলো কিনা
কোন তলানিতে অধঃক্ষিপ্ত হয়ে সে আশায় আছে
এই বুঝি অতিশিখা ফ'লে গেলো জীবনে... 




Thursday, 2 November 2023

অমিতাভ দাশশর্মা

 



এলোমেলো 


মধ্যবর্তী আমাদের

তিরিশটি বছরের

ট্র্যাজেডি, তার

বিপুল ডানার

ঝাপটায়, মরু দ্বার খুলে,

 ধুলোঝড় তুলে

ঢেকে দিয়েদিল পথ,

আর--- ছোঁয়ার শপথ।

অনুভব--- শুধু অনুভবে

অরবে 

অনর্গল করে চৈতন্যের দ্বার।

তোমার --- আমার


লাবন্যের সংসারে

শিশু ও কিশোরে

ছিল সোনাঝরা

মধুক্ষরা 

দিন ও রজনী।

কিন্তু, প্রেমমণি?

খুঁজে ফিরে ফিরে যাকে

বাতুলতা পাকে

জড়িয়েছি নিজেকে নিজেই,

তার নাম গন্ধ নেই

সংসার লাবন্যে।

এ জন অরন্যে

নিজের জন্যে 

বাঁচা খুব প্রয়োজন।

তাই ,

তোমাকে পাবার এত

আয়োজন।


বুঝলে না!

ফেলে দিলে!

বিশ্বাস হয় না।

উপেক্ষা গয়না

যত পরাও আমাকে---

বাঁধো পাকে পাকে

প্রেমের বাঁধনে।

জানে

মন , যথাযথ জানে,

প্রেম কাকে বলে, তার মানে।






Wednesday, 30 August 2023

দেবশ্রী মজুমদারের অণুগল্প



 

 

  ক্রুশবিদ্ধ

 

একভাবে এতটুকু জায়গার মধ্যে কাঁহাতক আর শুয়ে থাকা যায়! এপাশ ওপাশ করলেও সস্তা কাঠের বাক্সটা ক্যাঁচকোঁচ শব্দ করে ওঠে। হাড়ের মধ্যেও ঠকঠক শব্দ হতে থাকে। তার চেয়েও মুশকিল হয়, বৃষ্টি হবার পর। বৃষ্টির জল আস্তে আস্তে মাটি ভিজিয়ে দেয়। কাঠের বাক্সটার উপরটা ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যায়। একটা অদ্ভুত বিদঘুটে দুর্গন্ধ বেরোতে থাকে। আর কতো ধরণের পোকামাকড় এসে আশ্রয় নেয় সব এখানেই। সব মিলিয়ে কেমন একটা গা ঘিনঘিনে ভাব। তার ভালো লাগে না। কোন কিছুই আর আগের মতো নেই। এই ছয়মাস ধরে এটাই এলিজাবেথের চিরস্থায়ী ঠিকানা। এর থেকে মুক্তির উপায় নেই। নাকি জীবন থেকে চিরতরে মুক্তি পেয়েই তার এই কবরস্থানে ঠাই হয়েছে? সে ভাবে, কিন্তু ভেবেও কূলকিনারা করতে পারে না।

  চার্চ থেকে বাড়ি ফেরার রাস্তা, রাস্তা থেকে পুলিস স্টেশন,সেখান থেকে হাসপাতালের পোস্টমর্টেম ওয়ার্ড। সেখানেও অনেকক্ষণ ধরে কাটাছেঁড়া । তারও একদিন পর তাকে এখানে আনা হয়। আর তারপর থেকেই একটানা এলিজাবেথ এখানেই থাকে।

হোলি ফ্যামিলি চার্চ এর ট্রেজারার ছিল এলিজাবেথ রোজারিও। থাকদাড়ি রোডের উপর মিশন বাজারে ছিল ছোট্ট এই চার্চটা।

সেদিনটার কথা এখনও মনে পড়ে তার। সেদিন পাম স্যাটারডের আগের দিন । ইস্টার, ক্রিসমাস এর আগে সব সময়ই এলিজাবেথের কাজের চাপ বেড়ে যেত। নতুন করে সব কিছু রঙ করা, সাজানো গোছানো, লাইট, ক্যাণ্ডেল কেনা সব খাতেই অনেক খরচ এবং একইসাথে চার্চের সদস্যদের চাঁদার হিসাব মেলাতে মেলাতে চার্চ থেকে বেরোতেই প্রায় দশটা বেজে গেছিল। একটু রাত হয়ে গেলেও সেদিন সে ভয় পায়নি। ছোটবেলাতেই যারা মা বাবাকে হারায়, তাদের বোধহয় কোন কিছু নিয়েই আর চিন্তা ভাবনা হয় না। জমা খরচের হিসাব মিলিয়ে মনের আনন্দে বাড়ি ফিরছিল সে। বাড়ি ফিরে চিকেন স্যুপ বানাবে,আর তার সাথে ভালো জমবে বলে একটা গার্লিক ব্রেড কেনার জন্য মিশন বাজারের কিন্স বেকারিতে ঢুকেছিল এলিজাবেথ।

তেত্রিশ বছরের যুবতী এলিজাবেথের মনটা সেদিন অকারণেই একটু বেশি রকমের ফুরফুরে ছিল। ইস্টারে তার কাজিন ভাই বোনদের জন্য কি কি কিনবে,মনে মনে সেই সব প্ল্যান করছিল। আচমকা তার খুব কাছ ঘেঁসে একটা আকাশী রঙের মারুতি ওমনি এসে দাঁড়াল। গাড়ির পেছনের দরজাটা খুলে দু-তিন জন মত্ত যুবক তাকে এক ঝটকায়  চলন্ত গাড়ির মধ্যে টেনে নিল।  এলিজাবেথ জীবনে প্রথমবার সেদিন একসাথে যৌবন আর মৃত্যুর স্বাদ পেল। তার মরে যাবার শেষ এক ঘণ্টার কথা সে আর মনে করতে চায় না। বেঁচে থাকতে মরণ যন্ত্রণা পাওয়া যেমন দুর্বিষহ, মরে গিয়েও জীবন যুদ্ধের তীব্র কিছু বেদনা ভুলে যাওয়াই ভালো।

  এলিজাবেথ ভাবল, এখন সে অনেক ভালো আছে। তার শরীরে এখন আর কোন মাংস নেই, মেদ নেই, স্তন নেই, যোনি নেই। শুধু আবছা আলো আঁধারে ঘেঁটে যাওয়া চেতনা বেঁচে আছে। সেজন্যই এখনও মাঝে মাঝে তার মন কেমন করে। অন্য কবরের সামনে যখন সে দেখে তাদের প্রিয়জনেরা এসে দুদণ্ড বসে, ভালোবাসে, চোখের জল ফেলে,কবরের সামনে ফুল রেখে চলে যায়,নির্জীব  হাড় সর্বস্ব এলিজাবেথের শরীরটার তখন কান্না আসে। শোভাহীন হয়ে পড়ে থাকে সে।

এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে এলিজাবেথ টের পায় হঠাৎ আকাশ কালো করে প্রবল ঝড়।  ঝড়ের তাণ্ডবে এলিজাবেথের কফিনটাতেও যেন কাঁপন লেগে যায়। কাছেই ছিল একটা তালগাছ । সেটার কয়েকটা তালপাতা এসে পড়ে এলিজাবেথের কবরের কাছে। পরম আনন্দে এবং দুঃখে এলিজাবেথের মনটা কানায় কানায় ভরে ওঠে। পাম সানডেতেই সে যে এখানে প্রথম এসেছিল।  

__________________________

 

 

 

 

Thursday, 3 August 2023

কাজরী বসুর কবিতা

 





চিঠি আর গিনি


খুলি না সে এঁটে রাখা মুখ।
সত্যি তো চিঠি নয়,যেহেতু জানি
তুমি ভাবো ছুঁড়ে দেওয়াটুকু খানদানি
জলসাঘরের মতো ঠিক
মোহর গিনি ও কিছু পারিপার্শ্বিক... 
আজন্ম ভাঁজে ভাঁজে ধুকপুক আর ধুকপুক।

ভাবি তাই,যদি
পরিচয় বদলেই নামহীন নদী...
নদীরাই যেতে পারে বয়ে
ফুলপ্রুফ গর্ভিণী বেনিয়া না হয়ে।

পাশাপাশি আরও কথা, বাদবাকি সব
বলে ফেলি যতটুকু বলা সম্ভব...
তোমার আর তোমাদের ক্ষয়
জলসাঘরের মতো হয়।
হারিয়েছে দু হাতের জোর
ছুঁড়ে দেওয়া সোনা রঙ গিনি ও মোহর।

খামেরাও উড়ে যায় ফের
আজও বুঝি পথ চেনে ডাকবাক্সের...
অথচ সে জরা আর খরা...
ইদানীং অদৃশ্য  ডাকহরকরা। 

চিঠি আসে,ফের ফিরে যায়।
বদল লিখেছে তার নাম ঠিকানায়।

Saturday, 22 April 2023

দেবশ্রী মজুমদারের গল্প

 




অপ্রয়োজনীয় 

 নীল রঙের চেক লুঙ্গিটায় পাক দিয়ে পেটের কাছে গুঁজতে গুঁজতে সাত পাঁচ ভাবছিলেন চিন্ময়বাবু । এই বাড়িটাতেই কেটে গেছে জীবনের বেশিরভাগ সময় ।  এক সময় বৌ, দুই মেয়ে, মা সবাইকে নিয়ে  একসাথেই কাটাতেন এখানে । অভাব, কম অভাব, বেশি অভাব – সব রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত সংসারের মতই সাদামাটা জীবন ছিল তাদের । একটা ধরা বাঁধা চাকরির শখ থাকলেও অকালে বাবা চলে যাওয়ায় বেশি দূর পড়াশুনা করতে পারেননি তিনি । অগত্যা সেজ কাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া একটা চায়ের দোকানের মালিক হয়েই সারাটা জীবন বেশ কাটিয়ে দিয়েছেন । সকাল বিকালে জমজমাট আড্ডা বসত তার দোকানে ।  অনেকসময়ই লোকজনের গল্প গুজবে কানে তালা লেগে যেত তার । কারো কারো গল্প শুনতে ভারি মজাও লাগত ।  একবার পাড়ার বৃদ্ধ সনাতন বাবুর একটা কথা এখনও খুব মনে পড়ে ।  ভোজনরসিক বুড়োকে একবার তিনি ডাবল ডিমের মামলেট করে দিয়েছিলেন ।  অন্যমনস্কতায় নুনের পরিমাণটা খানিক বেশি হয়ে গেছিল । মুখে দিয়েই সনাতন বুড়োর চক্ষু চড়ক গাছ । সেদিন তৎক্ষণাৎ তিনি বলে ওঠেন, “ওহে চিনু, তোমার থেকে বয়সে আমি অনেক বড়, তাই একটা উপদেশ দিই, ভালো করে শুনে রাখ ভায়া, সারা জীবন তা মেনে চলার চেষ্টা কোরো । প্রয়োজনের থেকে কোন কিছুই বেশি দিতে নেই, যদি দাও, তাহলে তা বিস্বাদ হয়ে যায় । কথাটা মনে রেখো । ”

          সেই সময় কথাটার পুরো মানে তিনি বোঝেননি । বুঝেছেন অনেক পরে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে । যাক গে, এসব ভেবে এখন আর কাজ কি ! দুপুরে খাবার পর চিন্ময়বাবুর কোনদিনও ঘুম আসে না ।    তার এই একার জীবনে পুরনো স্মৃতি হাতড়ে যা একটু সময় কাটে । এই করতে করতেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল, আর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে আসে । 

 দিনের অনেকটা সময়ই এভাবে কেটে গেল । এবার তাহলে একটু লিকার চা করে খাওয়া যাক । ঢিলে হয়ে যাওয়া লুঙ্গিটা আবার একটু প্যাঁচ দিয়ে ঠিক করতে যাবেন, ঠিক তখনই দরজায় কে যেন একটা আলতো টোকা দিল । এ সময় কে আবার এলো রে বাবা ! বড় মেয়ে তো মালদায় থাকে। তার আসার প্রশ্নই নেই । আর ছোট মেয়ে পাশের পাড়াতে থাকলেও ও সবসময় দিনের বেলাতে এসে ঘণ্টা খানেক থেকেই বিদায় নেয় ।  এসব  ভাবতে ভাবতে চিন্ময়বাবু দরজাটা খুললেন ।  খুলে তো অবাক হয়ে গেলেন । “আরে হরি, তুই অ্যাদ্দিন বাদে ! আরে আয় আয় , ভেতরে ঐ চটি পরেই চলে আয় । ” তাড়াতাড়ি করে একটা স্টিলের ফোল্ডিং চেয়ার পেতে হরিকে বসতে দিলেন ।




- “আসলে এদিক দিয়ে ভাইপোর বাড়ি যাচ্ছিলাম, ভাবলাম তোর সাথে একবার দেখা করে যাই । কি খবর বল তোর ? আছিস কেমন ? ”

হরি চিন্ময়ের অনেক পুরনো বন্ধু । তার চায়ের দোকানে আগাগোড়া সে হরির কাছ থেকেই নেতাজী বেকারির কেক, বিস্কুট , পাউরুটি নিত । শীত, বর্ষা, গরম -যাই হোক না কেন রোজ সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে পৌনে সাতটায় ও ঠিক চলে আসত । তারপর  চা খেয়ে চটজলদি একটু গল্প সেরে আবার বেকারির ভ্যান চালিয়ে চলে যেত অন্য পাড়ায় । 

-“কি রে কি এত ভাবছিস ? তোর মেয়েদের খবর কি ? দাদুভাই, দিদিভাইরা কেমন আছে ? ”

-“কিছুই তেমন ভাবছি না রে ।  তুই বরং বল, তোর সেই নেতাজী বেকারির মালিক, কি যেন লোকটার নাম ? তার কি খবর ? ”

-“আর বলিস না, সে তো কবেই ঐ বেকারি বিক্রি করে দিয়ে দেশে চলে গেছে । তারপর আর খোঁজ রাখি না ।  শোন এবার উঠি তাহলে, ভাইপোর সাথে দেখা করে বাড়ি ফিরতে হবে । এখন আর অন্ধকারে তেমন ঠাহর করতে পারি না । তুই একবার আসিস আমার বাড়ি । মিনিট দশেকের তো হাঁটা পথ । ”

                 দিন তিনেক পরে চিন্ময়বাবুর কুমড়োশাক খাওয়ার ইচ্ছে হল । ভাবলেন সকাল সকাল বাজারে গিয়ে একবার দেখা যাক , যদি মনমতো টাটকা শাক একটু পাওয়া যায় । ছোট একটা বাজারের থলি হাতে অশক্ত শরীরে বাড়ি থেকে বেরোলেন । আজকাল আর আগের মতো রোজ বেরোতে পারেন না । একটু হাঁটার পরই গলির মুখে দেখা হয়ে গেল হরির ছোট ছেলের সাথে । দেখামাত্র সাইকেল থেকে নেমে পড়ল ও । কি যেন ওর নামটা ? অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই মনে পড়ল না । হরি অনেকসময় ছুটির দিনে ওকে নিয়ে আসত তার চায়ের দোকানে । ডিমের পোচ খেতে ভারি ভালবাসত ছেলেটা । 

                                             ছেলেটা এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়াল । বলল, “ কাকা একটা খবর আপনাকে জানানো হয়নি । আপনার বাড়ি ক’দিনের মধ্যেই যেতাম । আসলে আপনার শুনলে খুব খারাপ লাগবে । আজ দশদিন হল, বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন । প্রায় একমাস বিছানায় পড়ে ছিলেন । ওই ওখানেই পেচ্ছাপ, পায়খানা সবই করতেন । আসলে বাবা বলে বলতে খুব খারাপ লাগছে । ওভাবে বেঁচে থাকা, চোখে দেখা যায় না । একদিকে ভালোই হয়েছে । ”

                                              চিন্ময় বাবুর মাথার ভেতরটা তোলপাড় করতে লাগল । অনেক কথা একসাথে বলতে চাইলেন । তাহলে গত পরশু নাকি তার আগের দিন হরি যে এল, গল্প গাছা করল । কিন্তু ওর ছেলে একি কথা বলছে ! সবকিছুই কেমন তালগোল  পেকে যাচ্ছে । একটা শব্দও তার মুখ থেকে বেরোল না । ছেলেটা আরও কত কি বলে চলল কিছুক্ষণ । সে সবের বিন্দু বিসর্গও তার কানে ঢুকল না । ওখানেই আরও কিছুক্ষণ হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থাকলেন তিনি । কি যেন একটা কেনার জন্য বেরিয়েছিলেন , তাও মনে করতে পারলেন না । বাজারের থলিটাকে কোনভাবে খামচে ধরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার পথ ধরলেন । হরিকে বসবার জন্য একটা স্টিলের ফোল্ডিং চেয়ার বার করে দিয়েছিলেন । বাড়ি পৌঁছে ওটা এখনও ওখানেই আছে কিনা তা দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলেন তিনি । 

                                                     ________________

Sunday, 16 April 2023

মিঠুন চক্রবর্তীর কবিতা

 





একটি স্বপ্ন এবং বসন্ত


অনুপমা, শ্বাপদের নখে তোলপাড় হয়ে ওঠা
রাতের  সেই লালডিহি অরণ্যের ঘন বুকে 
যেমন করে জেগে ছিল পূর্ণিমার নীল চাঁদ

তেমনি কাল সারারাত তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি....

এই ভরা গ্রীষ্মের দুপুরেও তাই
শুকনো ঠোঁটের পাতাতে আমার
                         লেগে আছে জ্যোৎস্নার মায়া স্বাদ

আমি তো গাছের কাছে শিখেছি
শীতের রুক্ষতা আর গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যিখানে
বুকের ভেতর যত্নে ভাঁজ করে রাখা একচিলতে বসন্ত
সবারই থাকে, আমারও আছে.... আমারও আছে....

কেবল সব জায়গার মাটিতে রাঙা পলাশ ফোটে না। 



Friday, 7 April 2023

দেবদাস রজকের কবিতা

 



প্রেত




আজ কি প্রেতেদের সম্ভাষণ হবে?

আমি এসেছি ভোররাত্রে হৃদয় অকেজো হয়ে।


দেহ এখনও কবরের নিচে, শিয়াল কুকুরে খায়নি সবটা

মায়া নেই কোনও, যাক ছিঁড়ে পিত্তথলি, গুঁড়োহাড়, যাক সব


আজ কি প্রেতেদের সম্ভাষণ হবে? 

আমি এসেছি ভোররাত্রে নিজের এলাকায় 


শুধু দেখি দূরে বহুদূরে কেউ টেবিলল্যাম্প জ্বালিয়ে

কবিতা লিখছে যার আয়নার ভেতর কোনও দেহ নেই 

Sunday, 2 April 2023

অনীল করমেলের কবিতা/ অনুবাদক লিপিকা সাহা// হিন্দি কবিতা






কবিতাগুচ্ছ 

নারী 


অনেক কিছু থাকা সত্বেও

ব্রহ্মাণ্ড সুন্দরী
তুমি কার জন্য কী করতে চাও ?
তুমি কার প্রতিনিধি ?
একমাত্র দেহ ছাড়া তোমার কাছে
আর কিছুই তো নেই
আর আমাদের কাছে, আমাদের শরীরটুকুও অবশিষ্ট নেই ।


আর এই সময় তোমার ভগিনীরা

দ্রৌপদী, তারা পাঁচজন আর তুমি একেবারে একলা
তুমি পাঁচজনের সমান ছিলে
তোমার মধ্যে তাদের সমগ্র মান
তাদের সমগ্র মান ছিল তোমার মধ্যে নিহিত

তারা দাঁড়িয়েছিল নগ্ন হয়ে.

দ্রৌপদী, ওরা পাঁচজন তোমারই তো ছিল
আর এই সময় তোমার বোনেরা ?


কোনও নারী তো বলেনি

তসলিমা !
কে বলেছে ঢোল পশু নারী এক সমান
কে বলেছিল শ্রদ্ধা* সবসময়ই নারী
কারা বলেছিল 
ত্রিকালদর্শী ত্রিকালগামীরাও জানে না স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম
কে বলেছে ধর্মের ধ্বজ নারীর যোনিতে পোঁতা হয়

তসলিমা, কারা বলেছিল এই কথাগুলো ?
এটুকু তো নিশ্চিত যে কোনও নারী বলেনি ।
*বৈবস্বত মনুর প্রথম স্ত্রী

তাঁরা রঘুবংশী

সীতা !
সেইদিন কোনও ধনুর্ভঙ্গ হয়নি
সর্বাধিক  দর  হাঁকা হয়েছিল
যুদ্ধ হয়েছিল তোমার দেহকে এসপার-ওসপার করে
তোমার জাতের ছিল কৈকেয়ী আর মন্থরা
ধোপার বউও ছিল তোমারই জাতের
তোমার জাতের ছিল না, তোমার ওই চোখের দুই মণি ।


বড়ই দুর্ধর্ষ প্রাণ তুমি

ভঁওরি !
তুমি এটাই জানতে বেরিয়েছিলে না
কত মেয়েদের রজস্বলা হওয়ার আগেই
বীর্যপাতের সম্মুখীন হতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়

দেখে নিলে তুমি
তোমার বোনেরা উৎসবে কত করে মঙ্গলগান গাইল
তোমাকে তো ধন্য করেছে মন আর শরীরের ওপর 
হতে থাকা গণধর্ষণ
তুমি মরোনি
দাঁড়িয়েছ সেই শিশ্নগুলোতে লাথি মেরে
কোন দুনিয়ায় থাকো তুমি ভঁওরি
বড়ই দুর্ধর্ষ প্রাণ তুমি ।


এখন যেখানে তারা

বেরিয়ে আসবে কতবার
কত দফা পালাবে ঘোর আঁধার থেকে
আর কত পথ চলবে
সন্ত্রস্ত কাঁপতে থাকা হাতে নিজের গোলাপি উষ্ণতাকে জড়ো করে
কত বরফ গলতে থাকে ওতে
কত রাত ঠাণ্ডা পড়ে থাকে
পাথুরে হয়ে যায় কত পথ
কত চোখে ফিরতে থাকো
ঘোরো কত হাতে
 কত হাত ঘোরে এই ছোট্ট বয়সে
ওই ছোট্ট শরীরে

এখানে লিপিবদ্ধ আছে  আমার সময়ের গভীর কালো অন্ধকারে
এখন তারা যেখানে আছে ।



Saturday, 18 March 2023

শ্রীদাম বায়েনের গল্প

 




লুকোচুরি

 

( সুন্দরবনের ভাষায় সুন্দরবনের গল্প)


রাখাল,

 নৌকা ঘোরা শীগগির…

 বলেই রাধাখুড়ো তাড়াতাড়ি জল থেকে জালের শেষ প্রান্তটা হিঁচড়ে নৌকায় তুলে নিল| 

আকাশে তখন কালো মেঘের ঘনঘটা| চারিদিক যেন ধীরে গিলে ফেলছে কামটের মতো|


 খুড়োর হাঁকে রাখাল চমকে গিয়ে তড়িঘড়ি  নৌকার হালটা হাতে নেয়… 

কী যেন ভাবতে ভাবতে বলে…

 "খুড়ো, আরেট্টু দেরি কুরে গেলি হুতো না? মাছ তো ভালুই পুড়তোলো…"

 খুড়ো রাখালের কথাটা কানে শুনল বটে, কিন্তু তাকিয়ে রইল আকাশের পানে… তারপর বলল, "গতিক ভালো ঠিকতেছে না রে… সেবারো ধনাটাকে রাখে গেলাম এরাম লোভে পুড়ে রে… " 

বলতে বলতে খুড়োর গলা ভারি হয়ে উঠলো…… 


ধনা আসলে ধনঞ্জয় খুড়োর বড় ছেলে| বেশ কয়েক বছর আগে মহল করতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়ে প্রান হারায়| সেবার ওরা বাপ-বেটা তিনজন গিয়েছিল মাছ ধরতে| 

 সুন্দরবনের  ঘন জঙ্গলের খাঁড়িতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়| তবে সেখানে মাছের পাশাপাশি ঝুঁকিও আছে তেমন| ঘন জঙ্গলের খাঁড়িগুলিতে ওত পেতে বসে থাকে সুন্দরবনের পাহারাদার দক্ষিন রায়| 




 সদ্য বিয়েতে প্রচুর খরচের পর সংসার সামলানোর জন্য বাপ-বেটা ঝুঁকির পথেই সেবার পা বাড়িয়েছিল| আসলে সুন্দরবনের মানুষের সাথে এখানকার জলের কুমীর আর জঙ্গলের বাঘের লুকোচুরি খেলা এমনি করে চলতেই থাকে| 


সেবার খুড়োদের নৌকা যখন বাড়ির ঘাটে ফেরে… তখন গোটা গ্রাম ভেঙে পড়েছিল নদীর পাড়ে| 

ছোট ছেলে পরাণ হাল ধরে কাঠের পুতুলের মতো বসে আছে, আর খুড়োর কোলে আধ-খাওয়া ধনার মুণ্ডুহীন দেহ| 

খুড়োর বুকফাটা কান্নায় সন্তান হারানোর যন্ত্রণা নিকড়ে নিকড়ে বেরোচ্ছিল… "ও ধনারে, তোর মাকে আমি কী জবাব দ্যাবো রে… 

ও বাপ, তুই একবারডা ওঠ বাপ… 

বাবা বুলে ডাক… , 

ও ধনা রে…… হা… হা… "  


সে ঘটনা রাখালেরও মনে আছে| সদ্য লায়েক হয়েছে রাখাল…  তাই কৌতূহল আটকাতে না পেরে বলল… "সেদিন কী হুয়োলো খুড়ো? এট্টুখানি বলবা?"  

বলেই রাখাল নৌকার হালে মোচড় দিয়েছে… নৌকা বাঁক নিয়ে জঙ্গলকে পিছনে ফেলে এগোতে শুরু করেছে… 

খুড়ো তখনো আকাশের দিকে চেয়ে…… ওদিকে ঘন কালো মেঘের বুক চিরে মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানি চলছে… 

খুড়োর চোখের জলে চিবুক চিক চিক করে উঠলো… খুড়ো বলতে শুরু করেছে…… "সেবার বোশেখ মাসে ধনাডার বে দেলাম| 

পাঁচ জনের সংসার ছ' জোন হুলো… বে তে বেশ খরচ হুয়েলো…

 বে-শাদি মিটলি, ধনা বুললো- 'বাবা, চলো নৌকা নে বার কতক জঙ্গলে যাই| আমাগো ধার-দেনা মিটে গেলি আর যাতি হবে না|'

মনডা শুনেই কু গায়্যে উটলো… তবু সংসারে যা অবস্থা, তা ভাবে রায় দেলাম| 

দু-তিন বার যাবার পর ধার-দেনা মিটে গেলো| 


ধনা বুলল- 'বাবা, এবারডা গে, আর যাবো না| এবারে যা হবে বৌডার জন্যি এট্টা গয়না দ্যাবো,

 ওরে তো বের সময়ও কিচ্চু দিতি পারিনি আমরা|' সত্যিতে বৌডাকে কিচু দিতি পারিনি ভাবে ধনার কথায় সায় দেলাম| 

সেদিন মাছ ধরা প্রায় শেষের পতে, হঠাৎ আকাশ ছায়্যে গেলো ঘন কালো মেগে…..

আমি বললাম- 'ধনা গতিক ভালো না রে বাপ| চল যা হুয়েচে, তা নে রওনা দেই…'

 ধনা বুলল, 'বাবা, আরেট্টু থাকে যাই, জালডা সবে দিচি| খানিক্ষন পরেই তুলে নিচ্চি……'

 বুলে ওৎ পাতে বুসে রুলো… 


হঠাৎ বৃষ্টি নামলো,

 চারিদিকে  জলে জলাকার…… 

দুম-দাম বাজ পড়তি লাগলো…… 

কারো কতা কেউ শুনতি পাচ্চি নে… 

ধনা জাল গুটাতি শুরু কুরেছে| এমন সময়……… ওর জালের দড়ি গেলো আটকে… 

 ও আমার হাতে জালডা ধরিয়ে দে জলে নামে গেলো…… এগুতে এগুতে সামনের গামো গাছের ঝোপের তলায় যেই গেছে, "বাবা গো" বুলে চিল্লে উঠলো…

 ঝপাত করে জলে ঝাপিয়ে পুড়ে চকির সামনে দে ধনাডারে তুলে নে যাচ্চে সে…… 

আমি...আমি... আমি… কিচ্চু করতি পারলাম না রে রাখাল… কিচ্চু করতি পারলাম না… পরাণ লগি নে লাপ দে জঙ্গলে ডুকোলো ওর দাদারে বাঁচাতি……… আমার ধনা আর ফিরলো না……  "


 বলতে বলতে খুড়োর দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে চলেছে……… 

হঠাৎ নামা বৃষ্টির জলে আজ একাকার খুড়োর বুকফাটা কান্না, 

সদ্য লায়েক হওয়া রাখাল তার গভীরতা কতখানি বুঝেছে, তা জানি না… 

কিন্তু আকাশে ততক্ষণে রেফারি লুকোচুরি খেলার বাঁশি দিতে শুরু করেছে… কড়্ কড়্ কড়াৎ

Monday, 13 March 2023

নিতাই ভট্টাচার্যের গল্প

 


অভয়ের আপদ



অশীতিপর অভয়ের অনিদ্রাব্যাধি। বাতের ব্যথা বাতাস দিয়েছে তাতে। অনেক লড়াইয়ের পর সেই মাঝরাতে ঘুম আসে। নিদ্রা পুষ্ট হয় ভোরে। তাই বেশ বেলাতেই সকাল হয় অভয়ের। এইভাবেই দিন যাচ্ছিল চলে। ছন্দপতন হঠাৎ। কারণ জার্সি গরু।

অভয়ের ঠিক পাশের বাড়ির লোক নাড়ু ঘোষ। দুগ্ধ ব্যবসায়ী। 

কারবারে জোয়ার আনতে নাড়ু খাটাল-রতনের কাছ থেকে জার্সি গরু কেনে,এবং খাল কেটে কুমির আনে। 
নতুন পরিবেশে গাভীটি তখনও মানিয়ে নিতে পারেনি, শিং নেড়ে দেয় হুংকার। কাছে ঘেঁষে সাধ্য কার!
একদিন গো-দোহনের জন্য নাড়ু জার্সি গরুটির কাছে যায় এবং চাঁট খায়। ক্ষুরাঘাতে ক্ষত গভীর, প্রাণ যায় যায়। চিন্তিত নাড়ুর মা স্মরণ করে কুলগুরু অঘোর চন্দ্রকে। সশিষ্য গুরুদেব হাজির নাড়ুর বাড়িতে। বলে, নাড়ুর কালসর্প দোষ। তাই ভীষন বিপদ। প্রতিকার চাই। এখনই।

অর্ধনিমীলিত চোখের পাতায় বাহ্যজ্ঞানটুকু ঝুলিয়ে কাতর কন্ঠে নাড়ুর মা জিজ্ঞাসা করে, উপায় কিছু নেই বাবা? অঘোরচন্দ্র বলে, উপায় আছে মা। হরিনামে পাথর যায় গলে। তাই একমাস হরিনাম নিলে মুখে, নাড়ু থাকবে সুখে। সংকীর্তন শুনে গাভীটিও শান্ত হবে। দুশ্চিন্তা যাবে ঘুচে।

ব্যবস্থা হল তেমন। রোজ অষ্ট প্রহর হরিনাম-বর্ষন। টানা একমাস। অভয়ের নাভিশ্বাস।




ভোর বেলায় গভীর ঘুমে অভয়। দখিনা বাতাসে অঘোর চন্দ্রের হরিনাম ভেসে অভয়ের কর্ণকুহরে প্রবেশে, মরমে আঘাত হানে। ব্যস। ভোরের নিদ্রা চৌপাট। মেজাজ টং। 

এমনিতেই হরিনামে এলার্জি। সেজন্য নাড়ু ঘোষের পূর্বপুরুষই দায়ী। সারা জীবন অভয় সয়েছে যন্ত্রণা কারণ উঠতে বসতে ঘোষেদের ' হরিস্মরণ ' । অভয় দিয়েছে গালি, বলেছে আপদ মরণ। ইদানিং বন্ধ ছিল সব। তাই ভোরের ঘুমে ছিল শান্তি। টিকল না আর। এসেছে গুরু অঘোর। ঘোষ বাড়ি যেন বৈকুণ্ঠধাম। অভয়ের অশান্তি। টানা একমাস।

এখন ফাঁড়া - মুক্ত নাড়ু। হরিনাম শ্রবণে জার্সি গরু মেনেছে বশ। বালতি উপচে দুধ। ফিরে গেছে গুরু। খুশি অভয়। আবার ঘুম জমাট। চনমনে শরীর। 

আজ বিধি বাম। ভোর বেলায় ঘুম চটকে শেষ। ছি, হায় রাম!

 ভোরে নিদ্রামগ্ন ছিল অভয়। হরিনামের হ্যাঁচকা টানে ঘুম ঘেঁটে ঘ। প্রথমে ভেবেছিল আতঙ্কের স্বপন। পরে দেখে না, সত্যি। সেই সুর যন্ত্রণা। অভয় হাঁটা দেয় নাড়ুর বাড়ি। অবাক কাণ্ড সেখানে। গোয়ালে ব্যস্ত নাড়ু। অভয় দাঁড়িয়ে উঠানে।

--- কী হল কাকা, এত সকালে?
--- আবার কেন নাড়ু? অনিদ্রায় মরবো যে অকালে!
--- আসলে...। শুরু করে নাড়ু।

খাটালের গরু। গান শুনিয়ে গো-দোহন নিয়ম। অভ্যাস তেমনই। রতন নাড়ুকে বলেছিল আগেই। আমল দেয়নি নাড়ু। এই একমাস মধুর হরিনাম শুনে শান্ত ছিল গাভীটি। নাড়ুর অজান্তেই। অঘোরচন্দ্র ফিরে যেতেই বন্ধ হরিনাম।স্বমহিমায় গরু। আবার শিং নাড়ে। নাড়ুর ভয়। তাই খাটাল-রতনের ডাক পড়ে। সব শুনে বুদ্ধি দেয় রতন। সেইমত রেকর্ড করে নিয়ে এসেছে নাড়ু গুরুদেবের কণ্ঠে হরিনাম সংকীর্তন। বাজানোর ব্যবস্থাও করেছে জব্বর। আবার শান্ত হয়েছে গরু। বালতি উপচে দুধ। তাই নাড়ুর সংসারে ফিরেছে সুখ।
সব কিছু দেখে বিমর্ষ অভয়। চোখে মুখে আতঙ্ক। মনে সেই পুরাতন অনিদ্রার ভয়।





Monday, 6 March 2023

সুবিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

 




হড়কা বান


তোকে দেখলেই বোঝা যায় 

তুই অচানক বৃষ্টি নামাস পাহাড়ভাসি ঝোরায়।


মেঘ! 


ভাই প্লিজ রাগ কর আর ঝাল

এখনই সটান ভারত ভেঙে ভাগ কর দেখি

কন্যাকুমারিকার থেকে ভোপাল।




বিমান কুমার মৈত্র

 



বসন্ত বন্দনা

মাত্র কয়েকটি বৌদ্ধিক শব্দের 
দরোজায় সারারাত কড়া নাড়া
এক টুকরো সাদা রঙ নিয়ে 
হে আমার আজন্ম লালিত 
ক্ষুধার্ত বসন্তবন্দনা
তোমার অ-বন্দিত আকাঙ্খার

নিবেদন ---ওই দেখো  
ক্রমশ নির্বাণগামী নিস্পৃহ গ্রাহক 
এখনও তোমার জন্য 
ভিখারি-ক্ষুধায় অস্থির 
তোমার বেলাগাম প্রত্যঙ্গগুলিকে 
এখানে দাঁড়াতে বল 

হে বসন্ত, তুমি না দাঁড়ালে 
সেই আরবাঁক কথাগুলির 
চতুর্মাত্রিক দর্পণবিদ্ধ বর্ণমালারা 
উন্মোচিত হবে না কখনও।