সম্পাদকীয়
কবিতা কখনো এক নরম ভাস্কর্য, কখনো বা
‘অগ্নিসম্ভবা’, কখনও ঐকান্তিক, কখনো সমাজদর্পণ। সাহিত্য এখন পত্রিকার জুলাই সংখ্যায়
কবিতার আশ্চর্য পরত একটু একটু করে ধরা দেবে পাঠকের চোখে। এবারেই প্রথম সাহিত্য
এখনের পাতায় প্রকাশিত হল আঞ্চলিক কবিতা। এছাড়া রয়েছে ছোটগল্প, রম্যরচনা এবং ভ্রমণ।
আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের। শুধু একটা অনুরোধ। পত্রিকাটি পড়ে আপনার মূল্যবান
মতামত জানান পত্রিকার কমেন্টবক্সে। কবি, কথাকার ও পাঠকের যোগসূত্র দৃঢ়তর হোক।
শুভেচ্ছা সতত।
রম্য রচনা
অথ ঢেকুর কথা
সোমা ব্যানার্জী
আমার উনি আবার আমার leg pulling খুব
ভালো করতে পারতেন....
আগে
শুনেছি চাটুজ্যেরা বায়ুরোগ গ্রস্ত হন । তা আহারের পরে সবাই কম বেশি ঢেঁকুর তোলে
।আমার পিত্রালয়ে আমার পিতৃদেবও ঢেঁকুর তুলতেন।তবে সেটা শুধু খাবার পর একবারই । আর
যেমন মানুষে সাধারণভাবে ঢেঁকুর তোলে সেভাবেই । আর আমার বাবা হলেন দারুণ মিতাহারী ।
ফলে সারাদিন আর কখনও ঢেঁকুর তুলতেন না।
বিয়ের পর আরও একটি আজব জিনিসের সঙ্গে পরিচিত হলাম। সেটি হল বিচিত্র আওয়াজ করে
ঢেঁকুর তোলা। একেই এরা চাটুজ্যে । বায়ুর ধাত।সারাদিন ধরে কেউ না কেউ ঢেঁকুর তুলেই
চলেছেন।এক একজনের এক এক রকম আওয়াজ।শ্বশুরবাড়িতে আমার ঘর দোতলায়।আমার পাশের ঘর
দিদার মানে শ্বাশুড়ী মা'য়ের মা থাকতেন।আর একটি বসার ঘরও ছিল আরেকপাশে । ওপরে মানে
তিনতলায় মা আর বাবা থাকতেন । আর থাকত তারাদা। তারাদা অনেকদিনের লোক।দিদা আর আমি
ছিলাম দুই সখী।দিদা মাঝে মাঝেই আমায় ডেকে নিয়ে গল্প করতেন।অবশ্য অনেক ভালোবাসার
অত্যাচারও সহ্য করতে হত।যেমন দিদার নাতিবাবুটি সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরার ঠিক আগে দিদা
আমায় সাজাতে বসতেন।নানারকম খোঁপা বেঁধে দিতেন।আর দিদার একটি আর্মলেট ছিল খুব
শখের।সেটি জোর করে পরাতেন।আর আমি আর্মলেট দুচক্ষে দেখতে পারিনা।কিন্তু কিছুই করার
থাকতনা।দিদার কাছে আমাকে হার স্বীকার করতেই হত।যাইহোক যে গল্প আসলে করতে বসেছি সেই
কথায় আসি।যেদিন থেকে কত্তামশাই আর আমার একসাথে একঘরে থাকা শুরু হল সেদিন থেকেই
লক্ষ্য করলাম যে লোকটা মাঝে মাঝেই কেমন যেন অ্যাই অ্যাই করে ডাকে।একটু অবাকই হতাম
কারণ ওর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ঠিক ওমন অ্যাই অ্যাই টা মানাতো না।কিছু বলতেও পারতাম
না।কারণ অনেকটা বড়ও বটে আর সম্পূর্ণ অপরিচিত।কি আর করব ডাকলে সাড়াও দিতাম।আসলে তখন
বুঝিনি যে ওটা ওর ঢেঁকুর তোলা।আর তিনিও সুযোগটার পূর্ণ সদব্যবহার শুরু
করলেন।একবারও বুঝতে দিলেন না ওটা ওনার ঢেঁকুর তোলা।ফলস্বরূপ দিদা হয়তো ডাকছেন
" সোমাআআআআ....একবারটি আয় ভাই"..আমার সাড়া.."যাইইইই
দিদা"...ঠিক তখন পিছনে "অ্যাই ইইইই"...আমি তখন ব্যতিব্যস্ত হয়ে
পড়তাম যে আগে কাকে attain করব।আর এখন বলতে লজ্জা নেই যে নতুন বউ বলে আগে বরের
ডাকেই সাড়া দেবার ইচ্ছেটাই হয়।ওদিকে দিদাও ডেকেছেন। সে কি ভয়ংকর বিপত্তি।আবার
কোনোদিন হত শ্বশুরমশাই মানে বাবা ওপর থেকে ডাকছেন
"বউমাআআআআআআআ"....আমি" যাইইইই বাবা"...ঠিক তখন পিছনে
"অ্যাই ইইইইইই" ....আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে "কি গো"...ওপর থেকে বাবা
ভাবলেন তাঁকেই ওরকম করে বলছি... প্রচণ্ড অবাক হয়ে বললেন..."না মানে তুমি
একবার ওপরে এসতো মা"...আরি বাপরে বাপ..সৈ কি বিপত্তি।বহুদিন সময় লেগেছিল
কত্তাটির ওই বদমাইশি ধরতে।আর সেও বুঝে নিয়েছিল আমার অজ্ঞতাটা।ফলে রহস্যটা উদ্ঘাটন
না করে আমার পিছনে লেগেই থাকতো ভালমানুষির মুখ করে।আজ বলতে বাধা নেই যে বাবাই আমার
উদ্ধার কর্তা।খুব গম্ভীর আর রসিক মানুষ ছিলেন।তিনি ই আমার ওই অসহায়তা বুঝতে পেরে
সবটা খুলে বলেন.. অনেকদিন আগের কথা.. কিন্তু ভাবতে বসলে বেশ লাগে....
ভ্রমণ
নিদ্রাহারা_রাতের_এ_গান
মণিমেখলা মাইতি
(আইসল্যাণ্ড)
05/06/2018
পর্ব-2
উড়ানে আসার সময় জানালার বাইরে বরফ জমে যাচ্ছিল। তাপমাত্রা ছিল --57 ডিগ্রি
সেলসিয়াস। অনেক অনেক দীর্ঘপথেও এমন বরফ জমতে দেখিনি। একটু একটু করে বোধহয় আভাস
পাচ্ছিলাম এই কদিন যে উষ্ণতা পেয়েছি তার বোধহয় ব্যত্যয় ঘটবে। এবারের ইওরোপ আশাতিরিক্ত
উষ্ণ। বার্গেনে
রাত পৌনে বারোটায় যখন আমরা দুজন রডোডেনড্রনের ছবি তুলে হোটেলে ফিরছিলাম, একটু
আমলকি ডালের চমকানির মত গা টা শিরশির করছিল। নাহলে কোথাও ঠাণ্ডা জামাকাপড় চাপানোর
মত অবস্থা হয়নি। ইওরোপে এমন সময়ে এটি অনভিপ্রেত। এয়ারপোর্টের
মধ্যে তো আর বোঝার উপায় নেই কত তাপমাত্রা বাইরে। এয়ার ইন্ডিয়া নিয়মিত
গন্তব্যস্হলের বাইরের তাপমাত্রা ঘোষণা করে। কিন্তু ইওরোপে এটা হয়না। তাই গুগল
আঙ্কেলের ওপর ভরসা ছাড়া গতি নেই।
আইসল্যাণ্ডিক
ভাষায় arrivalকে বলে ' komur'। আমরা komur থেকে
চললাম মালপত্র নিতে। সেখান থেকে 'utgangur' বা সাদা ভাষায়
exit। উত্তর মেরুর এই জলবেষ্টিত দেশে ট্যুরিজম এক অন্যতম আয়ের মাধ্যম এবং আমাদের
কোন ধারণাই ছিলনা যে আইসল্যাণ্ড এত ট্যুরিস্ট-ফ্রেণ্ডলি। আমরা বরাবর নিজেদের
উদ্যোগেই বিদেশে আসি। তাই আমরাই ট্যুর ম্যানেজার, আমরাই গাইড। প্রথমে কেপলাভিক থেকে
ছেচল্লিশ কিলোমিটার দূরের রিইকাভিক যেতে হবে। আবার পরের দিন আইসল্যাণ্ডের অন্যতম
আকর্ষণ গোল্ডেন সার্কেল ট্যুরে যেতে হবে। তাই এয়ারপোর্টেই এসবের বন্দোবস্ত করলাম।
পরপর সব বাসের কাউন্টার-- Airport Direct, Fly Bus, Grey Line ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরাই বাসে রিইকাভিকের সেন্ট্রাল বাসস্ট্যাণ্ডে পৌঁছে সেখান থেকে ওদের গাড়িতে
হোটেলের কাছে নামিয়ে দেবে। আগামীকাল সেখান থেকেই তুলে নেবে গাইডেড ট্যুরের জন্য
আবার এয়ারপোর্টে ফেরার দিন নামিয়ে দেবে। আইসল্যাণ্ডে ট্যাক্সির প্রচলন একটু কমই।
কাউন্টার থেকে অভ্যেসবশত রিইকাভিকের এক সিটি ম্যাপ তুলে নিয়ে কাউন্টারে বসা
সুন্দরী মেয়েটির কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ নিয়ে নিলাম। মেয়েটি বলে দিল সূর্য
হয়তো ভোর দুটো বা তিনটে নাগাদ অস্ত যেতে পারে। তবে অন্ধকার কখনো হবেনা। সারারাত
ঘুরে বেড়ালেও ভয়ের কিছু নেই আইসল্যাণ্ডে। আইসল্যাণ্ডে
পুলিশ
দেখিনি শহরে।
চমৎকার ইংরেজি বলে স্ক্যানডিনেভিয়ার সবাই। তাই খুব সুবিধে হয়। নাহলে যা সমস্ত
ভাষাবিভ্রাট হয়েছে মাঝে মাঝে জার্মান, রুশভাষীদের মধ্যে যে ল্যাজেগোবরে হয়ে গেছি।
এই ম্যাপই আমাদের ভ্রমণ নির্দেশক। ইওরোপে এই ম্যাপ ধরে চলতেই আমরা বেশি
স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। ম্যাপে যেমন সারা শহরের গলি ঘুঁজি, রাস্তা, দ্রষ্টব্যস্হান
পরিষ্কারভাবে নির্দেশ থাকে তেমনি থাকে যানবাহনের নির্দেশ। কোন বাস কোন ট্রাম
কোনদিকে যায় আর মেট্রো থাকলে মেট্রোর ম্যাপ। ফলে প্রত্যেকটি ম্যাপ স্বয়ংসম্পূর্ণ
এবং বেজায় সুবিধাজনক। প্রত্যেকটা রেলস্টশনে, বিমানবন্দরে প্রত্যেকটি শহরের ম্যাপ
বিনামূল্যে পাওয়া যায়।তাই তথাকথিত ট্যুর গাইডের প্রয়োজন অন্তত আমাদের পড়েনা শহরে
ঘুরেবেড়ানোর জন্য। আমরা বাদলমেঘের মত ঘুরে বেড়াই।
কেপলাভিক
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরোনোমাত্র হাতটা সুড়ুৎ করে স্যাচেলে চলে গেল।
কোনরকমে ওভারকোটটা চাপিয়ে নিলাম। সূর্যদেব মেঘের আড়ালে চলে গেছে। এতদিনের ঝকঝকে
ভাবটা উধাও। বাতাসে একটা কনকনানি। ছোটবেলায় ধারণা ছিল আইসল্যাণ্ড মানেই
বরফাবৃত
এক দেশে আমুণ্ডসেনের বিজয়গাথা। ধারণাটা পরে ভুল জেনেছি।
কমলা
রঙের Airport Direct এর বিলাসবহুল বাসটি যখন যাত্রা শুরু করল রিইকাভিকের উদ্দেশ্যে
তখনো বুঝিনি কী বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে। যেদিকে চোখ যাচ্ছে দিগন্ত বিস্তৃত
লাভাগঠিত রুক্ষ ভূমি। তার কোন সীমাপরিসীমা নেই। এর শেষ কোথায় তাও দেখা যাচ্ছেনা।
মনে হচ্ছে পৃথিবী ওপারেই গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। বোধহয় মাঠ পেরোলেই উত্তর মেরু। কোন
গাছের লেশমাত্র নেই। একখাবলা দু খাবলা ঘাস গ্রীষ্ম বলে কোথাও কোথাও ভুল করে মাথা
তুলেছে। কেমন একটা অস্বস্তি কাজ করছে। এ কোথায় এলাম রে বাবা। মনের মধ্যে তখন
জীবনানন্দ দাশের দুটো লাইন --" কেউ নেই, কিছু নেই সূর্য ডুবে গেছে"।
মাঝে অতলান্তিক একটু দেখা দিয়ে আস্বস্ত করছে। এমন শ্যাওলাটেমার্কা
পরিবেশে নীল অতলান্তিক ও যেন ধূসর। দূরে দূরে বরফঢাকা পাহাড় সব গম্ভীরভাবে
ধ্যানমগ্ন। একটা গাছও না দেখে ভেতরটা কেমন তোলপাড় হচ্ছিল। মনে হল চাঁদে এলাম না
মঙ্গলগ্রহে!! একটু যেন কান্না দলা পাকিয়ে গেল ভেতরে। এ কান্না কিন্তু হতাশা বা
মনখারাপের নয়, বিস্ময়ের অভিব্যক্তিও হতে পারে বা কবিগুরুর কথায় '' অকারণ বেদনার
ছায়া'' ।কোনদিকে ক্যামেরা তাক করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। দুজন দুদিকে বসে ছবি নিয়ে
যাচ্ছি। দু একটা গাড়ি বিক্ষিপ্ত ভাবে মসৃন রাস্তাবরাবর ছুটে যাচ্ছে। বেশ কিছুদূর
যাওয়ার পর দু একটা বাড়িঘর চোখে পড়ল। কাঠের ছোট ছোট ইউরোপীয় ধাঁচের বাড়ি বিক্ষিপ্ত
ভাবে ছড়ানো। তবে সেগুলো অতলান্তিকের প্রায় গা ঘেঁষে একাকী দাঁড়িয়ে। এমন ভূমিরূপ
কোথাও দেখিনি বাবা। সত্যি কথা বলতে একটা দেশ শুধুমাত্র লাভা দিয়ে গঠিত ভাবতেই
বিস্ময় জাগে। আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত ওই দগদগে লাভা টিভির পর্দায় দেখে এসব কি আর
বাহ্যজ্ঞান হয়?। ইতালির সরেন্টো থেকে তাপসের তুলে আনা ভিসুভিয়াস আর তার মুখগহ্বরের
ছবি দেখেছি। এ অভিজ্ঞতা আমার কাছে একদমই নতুন।
যত
রিইকাভিকের দিকে এগোচ্ছি একটু একটু গাছপালা, জনপদ চোখে পড়ছে। গাছ বলতে মাঝারি
উচ্চতার বার্চ। বোঝা গেল সবই সম্প্রতি লাগানো। এখানে কোন প্রাকৃতিক বনভূমি নেই।
তাই আইসল্যাণ্ডের এখন সবচেয়ে বড় কর্মসূচী বনসৃজন। রিইকাভিকে এসে মনে হল মরুদ্যানে
এসে পৌঁছলাম। সাদা, লাল। সবুজ, নীল, কালো রঙের বাড়িঘর চোখে পড়ছে। রংবেরং এর বড়বড়
টিউলিপ ঝোপের এদিক ওদিক দিয়ে উঁকি মারছে। দূরে তটরেখা। খুব সুন্দর এ শহরে অনেকটা
সুইৎজারল্যাণ্ডের রুচির ছোঁয়া পেলাম। সূর্যদেবও তার
লুকোচুরি থামিয়ে একটু একটু যেন মুখ দেখাবার চেষ্টা করছে। বাস এসে থামল সেন্ট্রাল
বাসস্ট্যাণ্ডে। কয়েকটা বাস দাঁড়িয়ে সেখানে। আমাদের এবার একটি মাঝারি ট্যাক্সিতে
উঠতে হবে। ড্রাইভার বেশ মজার লোক। আমাদের মালপত্র ওঠাতে নামাতে নিজেই হাত লাগিয়ে
দিলেন। আমার স্যুটকেসটা যথারীতি আকারে পেল্লায় আমার বপুর মত। ওজন হয়তো অতটা নয়।
ওটায় হাত দিয়েই হাসতে হাসতে বললেন --" Oh! You have brought everything from
home. Next time don't forget to keep something there" বলেই অট্টহাসি।
ট্যাক্সির দরজাটা একটু লাগতে সমস্যা হচ্ছিল। উনি বললেন--" In Iceland we need
magic everywhere. So beware of us". স্ক্যাণ্ডিনেভিয়ার লোকজন খুব ভালো,
অন্তত খিটখিটে জার্মানদের মত নয়। এ অবশ্য আমার একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত।
বাস নামিয়ে দিল রিইকাভিকের অন্যতম দ্রষ্টব্যস্হান, শহরের কেন্দ্রস্হলে মাথাউঁচু
করে দাঁড়িয়ে থাকা আধুনিকতম গীর্জা Hallsgrimkirkja র সামনে। এ গীর্জা নাকি তৈরি
করতে পাক্কা একচল্লিশ বছর লেগেছে। গীর্জার একদম ওপরে উঠে রিইকাভিককে 360 ডিগ্রি
কোণে দেখা যায়। ভেতরে অতীব ক্ষুদ্র দুটি ক্রুশ আর আছে এক পেল্লায় সাইজের প্রায়
5200 পাইপযুক্ত
অর্গান। প্রায় প্রতিদিন কোননা কোন সঙ্গীতানুষ্ঠান হয় এই গীর্জায়। গীর্জার মধ্যে
লেখা আছে অকাতরে দান করার জন্য যাতে এই এতসংখ্যক পাইপকে ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হয়।
রিইকাভিকের যে কোন প্রান্ত থেকে এই Hallsgrimkirkjaকে দেখা যায়। বাস ড্রাইভার
বললেন -- রিইকাভিকে আপনি যদি হারিয়ে যান তাহলে মাথাটা একটু ঘুরিয়ে এর চূড়াটা দেখে
নিয়েই সোজা গীর্জার দিকে হাঁটবেন।
আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট গীর্জা থেকে কয়েক পা দূরে। আইসল্যাণ্ডে এমনিতে লোকজন কম।
আমাদের যদি দেরী হয় এই ভেবে অ্যাপার্টমেন্টের মালিক বাড়িতে ঢোকার কোড মেল করে
দিয়েছিলেন। অবশ্য তার দরকার পড়েনি। রিসেপশনে যেতেই ওরা চাবি দিয়ে দিল। অন্যান্য
জায়গায় পাশপোর্টের জেরক্স দিতে হয়। এখানে ওসব বালাই নেই ক্রাইম নেই বলে।
এয়ারপোর্টে ও ঢুকতে টিকিট দেখাতে হয়না। অবশ্য সেটা ইওরোপের কোন এয়ারপোর্টে লাগেনা।
সুন্দর সাজানো অ্যাপার্টমেন্ট।
ইওরোপের যেমন ফার্নিশড অ্যাপার্টমেন্ট হয়। বিশেষ করে ফুল ফার্নিশড রান্নাঘর। সমস্ত
সরঞ্জামে সাজানো। সবকিছু ঝকঝকে তকতকে। আমার চোখ আটকে গেল পাশের সবুজ বাড়িটায়। এতো
ঠিক অ্যাণ্ডারসনের রূপকথার বাড়ি। ছোট্ট সবুজ বাড়ি তার গাঢ় নীল রঙের মায়াবী দরজা।
দরজার সামনে ছোট্ট দুটো বেগুনীফুলের সাজি। দুধসাদারঙের দুটো কাঁচের জানালা, একটা
ছোট্ট ল্যাম্পশেড আর সুচারুভাবে বাড়ির নম্বর লেখা। টবে কতরকমের ফুল। ইওরোপীয়ানদের
সৌন্দর্যজ্ঞান মাত্রাতিরিক্ত রকমের ঈর্ষণীয়। সুন্দরকে যেমন এরা বরণ এবং ধারণ করতে
জানে তেমনি পরিমিতিবোধটাও চমকে দেবার মত। ঠিকই করলাম এই উত্তর মেরুতে এসে রাতে
রান্না করেই খাব, বাইরে খাবনা যদিও গীর্জার সামনে Loki নামক এক traditional
Icelandic Restaurant দেখে বড্ড লোভ দিয়েছি। ঠিক হল ফেরার সময় ওই রেস্তোঁরা য়
ট্রাউট খেয়ে ফিরব। হেলসিঙ্কির সমুদ্রের ধারে আর এস্তোনিয়ার রাজধানী টালিনে ভারতীয়
রেস্তোঁরা মহারাজায় স্বর্গীয় রকমের সুস্বাদু স্যামন খেয়েছি। ঠিক করেছি ট্রাউট না
খেয়ে আইসল্যাণ্ড ছাড়বনা। চটপট ক্যামেরাগুলো কাঁধে বেরিয়ে পড়লাম। শরীরের ওজন কিন্তু
ততক্ষণে ত্রিস্তরীয় পোশাকে অনেকটাই বেড়ে গেছে। উত্তরে হাওয়া দেখলাম আমাদের এই
খাঁদা নাকগুলোকে ডার্টবোর্ডের মত টার্গেট করছে। তবে এ ঠাণ্ডা সালজবুর্গের সেই
হাড়হিমকরা ঠাণ্ডার কাছে কিছুই না। সে গপ্পো নয় পরে করব একদিন।
রিইকাভিক
ছোট্ট পরিচ্ছন্ন শহর। পায়ে পায়ে ঘোরা যায়। ইওরোপের
বেশিরভাগ শহরই পায়ে পায়ে ঘোরার উপযুক্ত। শহরকে অনেক বেশি আপন করে নেওয়া যায় । তার
রাস্তাঘাট, লোকজনকে। সারা ইওরোপে পোষা কুকুরের বেশি চল। তারা ট্রামে,
বাসে, ট্রেনে, মেট্রোয় দিব্যি চলাচল করে। রিইকাভিকে দেখলাম বাড়ি বাড়ি মোটা মোটা
থলথলে সব পোষা বিড়াল। কোনটি বাদামী, কোনটা কালো। তারা ঘরের চারিদিকে সুন্দর বকলস
গলায় বেঁধে ঘোরাঘুরি করছে। রাস্তার ধারে একজনের বাড়িতে অপূর্ব লাল টিউলিপ ফুটে
থাকতে দেখে আর লোভ সামলাতে পারিনি। ট্যাবটা নিয়ে যেই এগিয়ে গেছি দেখি সামনে এক
এত্তবড় মোটা মেনি। ভয়ে ভয়ে কোনরকমে বেরিয়ে এলাম। সোজা হাঁটতে লাগলাম
সেই ঢেউখেলানো রাস্তা বরাবর যা সোজা সমুদ্রকে গিয়ে আলিঙ্গন করেছে।
(
ক্রমশ)
ছোটগল্প
ক্ষত
কেকা সেন
'এই শর্মি, তুমি কি গড়িয়ার আনন্দ নিকেতনে যাবে আজ? তাহলে এই পেন পেন্সিল আর বইগুলো সাথে নিয়ে যেও।' ' হ্যা সাধনদা, আজ যাব, হাতের কাজগুলো সেরে নিয়েই বেরোব। আর কিন্তু ফিরব না এখানে আজ, হিসাবপত্রের খাতা দেখতে দেখতে অনেক দেরী হবে আমার। '
' শর্মিষ্ঠা, ওখানে যখন যাচ্ছই তখন দেখে নিও তো, মালা বলছিল, ওখানে নাকি গেটের সামনে একটা পাগল এসে রোজ বসে থাকছে বাচ্চাদের স্কুল থেকে ফেরার সময়। বাচ্চারা খুব ভয় পাচ্ছে। দেখে এস তো ব্যাপারটা। '
' ঠিক আছে সাধনদা।' কথাগুলো বলে শর্মিষ্ঠা নিজের কাজে চলে গেল। সব কাজ সেরে বেরোতে পুরো তিনটে বেজে গেল শর্মিষ্ঠার।
রোদের তাপ নেহাত কম নয় আজকের। কে বলবে এখন আষাঢ় মাস। প্রকৃতিও যেন মানুষের আচরনের বদলা নিচ্ছে। মাথা থেকে মুখ, সবটাই ওড়না দিয়ে ঢেকে নিল শর্মিষ্ঠা। রোদের তাপটা বেশীক্ষণ আজকাল চামড়ায় নিতে পারে না শর্মিষ্ঠা। মুখের পোঁড়া ক্ষতটা বড্ড জ্বালা করে তার। চটপট করে একটা এসি বাসে উঠে পড়ল সে। জানালার পাশে একটা বসার জায়গাও পেয়ে গেল আবার। একটু বেশীই খরচ করে ফেললাম আজ। যাক একদিন বইতো নয়। নিজের মনেই কথাগুলো বলে গেল শর্মি। ঠান্ডা আমেজে রাস্তার পাশে সারি দেওয়া কৃষ্ণচূড়ার লালগুলো আজ অনেকদিন পর শর্মিষ্ঠার বুকের বাঁদিকের লালটাকে নাড়িয়ে দিল। পাশের সিটে বসা একজোড়া ছেলে-মেয়ে হাতে হাত রেখে ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে কথা বলে চলেছে। আলতো নজরে তাকিয়ে শর্মিষ্ঠা চোখ দুটো বন্ধ করে। মনে মনে পৌছে যায় নিজের কলেজের দিনগুলোয়। ইকনমিকস এর ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী ছিল সে। গান- বাজনাতেও মন্দ ছিল না, সেই সূত্রে কলেজের পরিচিত মুখ ছিল শর্মিষ্ঠা। শর্মি বলে একবাক্যে সকলে চিনতো তাকে। জীবন তৈরীর সিঁড়িতে যখন ধাপে ধাপে শর্মি এগিয়ে চলেছে, ঠিক তখনি স্বরূপ নামের এক দুরন্ত হাওয়া তার জীবনটা ওলোটপালোট করে দিয়ে যায়। ইতিহাসের ছাত্র স্বরূপ, পড়াশুনায় তেমন ভালো না হলেও গানের গলা ছিল ভারী মিষ্টি। সেই সূত্রেই শর্মির সাথে তার পরিচয়, তারপর ভালোলাগা। তারপর এক শ্রাবণী দুপুরে ভিক্টোরিয়ার সামনের ফুটপাতে শ্রাবণধারায় দুজনের ভেসে যাওয়া। ' চল শর্মি, বিয়েটা দুজনে করেই ফেলি। '
' কি বলছ তুমি জানো! আমাদের পড়াশুনা এখনও শেষ হয়নি! বাবা - মায়ের অনেক আশা আমায় নিয়ে!'
' আর আমার আশাগুলো শর্মি! আমি তো এখন গান গেয়ে ভালই রোজগার করছি। সামনে ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট বেরোবে। আর তুমিও কিছু একটা কাজ পেয়ে যাবে। তারপর তুমি পড়াশুনাটা আর আমি গানটা ভালোই চালিয়ে যাবখন। তবু একসংগে থাকা তো যাবে! '
অনেক ভাবনাচিন্তা করে, শেষ পর্যন্ত বিয়েটা করেই ফেলে শর্মি। রাগে দুঃখে বাবা-মা তার সংগে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়।
বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই শর্মি বুঝে যায় কি প্রচন্ড এক ঝড়কে সে তার জীবনে আহ্বান করে এনেছে। খামখেয়ালি আর বদমেজাজি রক্ত স্বরূপের শিরায় শিরায় বইছে তখন। প্রতিদিন শর্মির উপর চলতে থাকে অমানুষিক শারীরিক আর মানসিক অত্যাচার। সবকিছু মুখ বুজে সয়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সংসার করতে থাকে শর্মি এই আশায় যে একদিন সে তার ভালোবাসাকে আগের রূপে ফিরে পাবে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার সব আশার আলোকে নিভিয়ে দিয়ে নেমে আসে সেই অন্ধকার রাত।
' শর্মি এই শর্মি! এই শালা শর্মি শুনতে পাচ্ছিস না তুই! দরজাটা খোল তাড়াতাড়ি! ' কথাগুলোর সাথে প্রচণ্ড লাথি চলতে থাকে দরজায়।
' ভদ্রভাবে কথা বল স্বরূপ!' দরজা খুলে আস্তে করে বলে শর্মি।
' তুই আমাকে ভদ্রতা শেখাচ্ছিস! তুই কি করছিস ওই ছেলেটার সংগে? '
' ছিঃ ছিঃ, লজ্জা করে না তোমার, রূপক আমার থেকে কত ছোট, ভাইয়ের মত। আমি ওকে ডেকেছিলাম, কারন আমি আবার পড়াশুনা শুরু করব। এম.এ তে ভর্তি হব। ফর্ম এনে দিয়েছে রূপক আমাকে।'
' কি, কি বললি? বাইরে বের হবি তুই? একবার বেরিয়ে দেখ, তোর কি অবস্থা করি আমি!'
' স্বরূপ, তুমি এখন তোমাতে নেই। ড্রিংক করে বেহাল। কাল সকালে এই বিষয়ে কথা হবে।'
' বেশ করেছি ড্রিংক করেছি! তোর বাপের পয়সায় করেছি? কাল সকালে কেন এখনি কথা হবে!'
' ছিঃ, কি মুখের ভাষা তোমার? তুমি কত টাকা রোজগার কর? অসুস্থ মায়ের পেনশনের টাকায় ফুর্তি করতে লজ্জা করে না তোমার? একবারও গিয়ে দেখেছ পাশের ঘরে তোমার পঙ্গু মা কেমন আছেন?'
' এই, তোকে কি করতে বিয়ে করেছি তাহলে? শুধু আদর করার জন্য তো বিয়ে করিনি আমি তোমায় চাঁদু!'
' সেটা আর বুঝতে বাকী নেই আমার। মাঝে মাঝে নিজের ওপর ঘেন্না হয় আমার, একটা আস্ত শয়তানকে ভালোবেসেছি বলে'
' কি? আমি শয়তান?'
' হ্যা, তুমি অনেক বড় শয়তান! যে নিজের পঙ্গু মায়ের আঙুলের ছাপ নিয়ে পেনশন তোলে কিন্তু তাঁকে ছিঁটেফোটাও ওষুধ কিনে দেয় না, সে একটা আস্ত শয়তানই। নেহাত আমি আছি বলে মানুষটা এখনও নিঃশ্বাস নিচ্ছেন।'
' এই, মাগি, তুই মুখ সামলে কথা বলবি। নয়তো..'
' নয়তো কি করবে তুমি? কি ক্ষমতা আছে তোমার শুধু নোংরা নোংরা কথা বলা ছাড়া?' মূহুর্তের উত্তেজনার বশে দুহাতে ঠেলে দেয় শর্মি স্বরূপকে। পাশে রাখা কেরোসিন জারে মুখ থুবরে পড়ে স্বরূপ। মাথার ভিতরে সবকিছু ওলোটপালোট খেলা চলতে থাকে স্বরূপের। একনিমেশে কেরোসিনের জারটা তুলে সব তেল ছুঁড়ে দেয় শর্মির গায়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বারুদের কাঠিটা দুরন্ত গতিতে ছুটে আসে শর্মির দিকে।
খুব জোরে বাসটা ব্রেক দেওয়ায় শর্মিষ্ঠা চোখ খুলে তাকায়। সামনের বয়স্ক মহিলা টাল সামলাতে না পেরে শর্মির গায়ের উপর এসে পড়ে। তাড়াতাড়ি ধরে নিয়ে শর্মি তাঁকে নিজের জায়গায় বসতে দেয়। কি অদ্ভুত! স্বরূপের মায়ের সাথে মহিলার মুখের অসামান্য সাদৃশ্যতা শর্মির চোখ টানে। কি জানি মহিলা এখনও বেঁচে আছেন কিনা আর বেঁচে থাকলেও কি অবস্থায় আছেন! আর স্বরূপই বা কেমন আছে? সব রকম পুলিশ কেসই তো তুলে নিয়েছিলাম আমি। ও ওর মতো ভালোই আছে নিশ্চয়! মনে মনে ভেবে যায় শর্মি। পাশের সিটের যুগলবৃন্দের দিকে চেয়ে বাঁকা হাসি টেনে নিজের গন্তব্যে নেমে পড়ে সে। আকাশটায় ছড়ানো ছিটান মেঘ সূর্যের দাপটকে একটু হলেও করায়ত্ত করেছে। যেমন সে নিজে তার জীবনের সকল ঝঞ্ঝাকে মুঠি বন্দি করে এগিয়ে চলেছে পুরোদমে। বাবা মারা গেছেন দুবছর হল। মাকে নিয়েই নরেন্দ্রপুরে তার ছোট্ট আবাস। NGO এর চাকরী আর নতুনভাবে পড়াশুনো এগিয়ে নিয়ে যেতে কোন অসুবিধাই আর হচ্ছে না তার। যদিও নিজেকে সামলে নিয়ে নতুনভাবে পথ চলতে তার জীবনের বেশ খানিকটা সময় হারিয়ে গেল। বাসস্টপ থেকে হাঁটাপথেই ' আনন্দ নিকেতন ' অনাথ আশ্রম। দূর থেকেই শর্মি একটা লোককে আশ্রমের গেটের সামনে বসে থাকতে দেখল। কয়েকটা বাচ্চা স্কুল থেকে ফিরে গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতে যাবে তখনই লোকটা ওদের সামনে এগিয়ে গেল আর বাচ্চাগুলো যেযার মত ছুট্টে ভিতরে ঢুকে গেল। দারোয়ান লছমন বেড়িয়ে এসে হাত-পা নেড়ে কিসব বলে চলেছে। কাছে আসলে শর্মিকে দেখতে পেয়ে লছমন বলতে লাগলো- 'দেখো তো শর্মিদি পাগলটা কেমন কিছুদিন ধরে আমাদের জ্বালাতন করছে। বারবার আশ্রমের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে আর বাচ্চারা ভয় পাচ্ছে।'
' দাঁড়াও আমি দেখছি, কথা না শুনলে এবার পুলিশ ডাকতে হবে' -- বলে পিছন ফিরে লোকটার দিকে তাকাল সে। উষ্কখুষ্ক আধ ছেঁড়া ময়লা কাপড়ের লোকটাকে দেখে শর্মির মনে হল আগেরদিন সে যখন এখানে এসেছিল তখন ফেরার পথে বাসস্টপে দেখেছে তাকে। কাছে গিয়ে জোরাল গলায় পাগলটাকে শর্মি বলে উঠল-- ' এখান থেকে চলে যাও, নয়তো পুলিশ ডাকব!' কথাটা বলে নিজেই ভাবতে লাগলো, একি আদোও কিছু বুঝবে। এর থেকে বরং পুলিশ ডাকাই ভালো। লছমনকে নিয়ে ভিতরে ঢোকার মূহুর্তেই দশ বছর আগের সেই পাগল করে দেওয়া কন্ঠস্বরটি ভেসে এল। ' শর্মি! ' এক মূহুর্তের জন্য বুকের সমস্ত লালকে শুষে নিল সে ধ্বনি। এক ঝটকায় পিছন ফিরে তাকাল শর্মি। এলোমেলো চুল আর অবিন্যস্ত গোঁফদাড়ির মাঝখানে ভাসা ভাসা মায়াময় চোখদুটো চিনে নিতে অসুবিধা হল না শর্মির। বুকের মধ্যের সমস্ত স্রোতকে দমবন্ধ ফুসফুসে বন্দী করে শর্মিষ্ঠা বলে ওঠে, ' কে শর্মি? আমি শর্মিষ্ঠা বটে! তবে আপনি যাকে খুঁজছেন সে নই। ' কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই লছমনকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেটে তালা লাগিয়ে দেয় সে। সংগে সংগে পুলিশকে ফোন করে । পুলিশ যখন জোর করে টেনে হিঁচড়ে স্বরূপকে নিয়ে যায় তখন বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। আর জানালার এপারে দাঁড়িয়েও অনবরত বৃষ্টি মাখছে শর্মিষ্ঠার পোড়া ক্ষতের দাগ।
আঞ্চলিক কবিতা
ভগমান
; তর বিচার বঠে
বিকাশ দাশ
অ্যাকট মানুষ লটর পটর
কান্দে বেদম সারা বছর
ভকেই মরে পুড়্যে।
অ্যাকট মানুষ রাজার পারা
দুখ ছু্ঁয়ে নাই বছর সারা
ফুত্তি
গতর জুড়্যে।
অ্যাকট ছা ত কান্দেই মরে
ভাত নাই খ ছেঁদা ঘরে
বেদম
ঢ্যাঙা ; কাল্য ;
অ্যাকট
ছায়ের খাবার গাদা
কম্ম খালি খাওয়া ; লাদা
ঘরে জোসঠার আল্য।
অ্যাকট ছানা রুখা শুখা
উদম থাকে বেদম ভকা
গেঁড়ি
গুগলি খায় গতর ভরে
অ্যাকট ছানা সুখের বঠে
গাদ্যে ভাল্য খাবার জুট্যে
লাচে লাচে দ্যাখায় ঘুইরে ঘুইরে।
অ্যাকট ঘর ছেঁদা ঝুপড়ি
দ্যাখতে লাগ্যে শোহোর খুপড়ি
দিনে সুয্যি ; রাইতে চাঁদের আল্য
অ্যাকট ঘর বড় দালান
কত হুড়কা কত খিলান
সোব লকের লজরে লাগ্যে ভাল্য।
টুকচু তুমি বিচার কর
ভকা প্যেটে খাবার ভর
হে ভগমান টুকচু লজরে
ভাল্য
আলগ তুমি করলে ক্যানে
সোবাই সমান তুমার ঠিনে
ঝুপড়ি ঘরে জ্বলুক ক্যানে আল্য।
কবিতা এখন
কবিতা এখন
মেরিলিন
মনরোকে চুমু খেয়েছিলুম
মলয় রায়চৌধুরী
মুম্বাই বিমানবন্দরে আপনার
হাতে সাড়ে সাত মিনিট সময় ছিল
আরনেস্তো কার্দেনাল, কথা
বলার জন্য, হ্যাণ্ডশেক করার, জড়িয়ে ধরার
গ্রাসিয়াস সেনর, গ্রাসিয়াস
সেনর, শুনে বুঝে গেলেন, এবার ইংরেজিতে
সরকারি অতিথি আপনি, আমার
এনসিসির পুরোনো বেরেট টুপিটা দিলুম
আপনি মাথায় পরে হাসলেন,
আপনার স্যাণ্ডিনিস্টা হাতে কড়া পড়েনি, নরম
মেরিলিন মনরোকে নিয়ে কবিতা
লিখেছিলেন, বললুম, জানেন, আমি একবার
চুমু খেয়েছিলুম মেরেলিন
মনরোকে, টিভির কাচে ওর ঠোঁটের ওপরে
মুর্গির মাংস রেখে, চোখ
বুজে, যেমন আপনি বিমানবন্দরে পোপের সামনে
নতজানু হয়েছিলেন, আমিও
টিভির সামনে নতজানু, অ্যানার্কিস্ট
বংশের দোষ, আমার দাদুর
বাবাও অ্যানার্কিস্ট ছিলেন, বিধবা বিয়ে করেছিলেন
আপনার হাতে চুমু খেলুম,
মুর্গির মাংসের মতনই ঠাণ্ডা, আপনি একজন মন্ত্রী
পাদ্রি, কবি, মেরিলিন
মনরোকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন, আপনার দাড়ি যখনই
চোখের সামনে ভেসে ওঠে,
মেরিলিন মনরোকে চুমু খাবার স্মৃতি, আহ, ঠাণ্ডা, নরম
এনার্কিস্টদের চুমু খাবারও
জ্ঞানগম্যি নেই, চোখ বুজে, মেরিলিনকে দেখি
অপরিবর্তনীয়া,
অপরিবর্তনীয়া, অপরিবর্তনীয়া, এনার্কিস্ট ঠোঁট
আরনেস্তো, শেষ পর্যন্ত
স্যাণ্ডিনিস্টাদের ত্যাগ করলেন, পোপ আপনাকে
ক্ষমা করে দিয়েছেন, আমি
কিন্তু মেরিলিনের চুমুকে ত্যাগ করিনি
সন্ধ্যা
নেমে আসে
উত্থানপদ বিজলী
সন্ধ্যা নেমে আসে ক্রমে
ক্রমে
দিবানিদ্রা শেষে কোটরের পেঁচা
উড়ে এসে বসে শিরিষের ডালে
ডানা ঝাড়ে চামচিকা
নদীতীরে চিতাবহ্নি জ্বলে ওই কার
ভূলোকের কর্ম সেরে সুরলোকে কেবা চলে যায় !
আকাশের
তারাগুলো সাজিয়েছে রাতের পসরা
এ সময় কোন সদাগর
যাত্রা করে দূর দরিয়ায়,
সত্য শেষ
মিত্রের মতন
কে যেন ওখানে প্রজ্বলিত চিতার সুমুখে ?
অন্ধকার রাতে হিম নামে
বেদনারা
ঝরে পড়ে
ব্যাধির,,,বিঘ্নের,,,বিচ্ছেদের,,,বিয়োগের,,,,
লবণ-জলধি যাত্রায় চলে গেল কেউ
ঝাউবন ফিসফাস কী যে অতো কয় !
একটি না হয়ে ওঠা কবিতা
সুশান্ত ভট্টাচার্য
খাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে রাত
আর তুমি মৃত্যু ভয়ে অসংলগ্ন বুদবুদে
মিশে যাও।
অসম্পূর্ণতার খন্ড পাথরে কেন এতো
মৃত্যুগীত
তবে কি পাখিদের কাছে আমাদের জন্মরহস্য
সব ফাঁস হয়ে গেল।
ক্ষতি কি
কবি খ্যাতির ময়লা কাগজে
ফেলে দেওয়া টিউশানির জীবন
অবজ্ঞায় উপেক্ষায় অপমানের আগুনে পুড়ে
শুকনো খড়খড়ে হয়।
ক্ষতি কি
আমি রোজ হারতে হারতে জিতে যাই
মরতে মরতে ভয়ংকর ভাবে বেঁচে উঠি।
প্রতিদিন বারুদ উৎসের দিকে
হেলে যাচ্ছে গার্হস্থ্য সন্ন্যাস
প্রতিদিন বেঁচে থাকার ভেতর
থিতু হয়ে মৃত্যুবোধের অসংযমী পাথর।
আসলে ক্ষতি তো কিছুই নেই
কিছুই কি আর আগের মতো
তেমন আর ঠিকঠাক আছে।
যেমন হাওয়ার ভেতর থেকে সরে যাচ্ছে হাওয়া
ঘট থেকে আমের পল্লব
নারীর ভেতর থেকে নারী।
ক্ষতো তো খাদের মতোই সংসার আগলে বসে
আছ
তুমি যতো খুশী পোড়াও
জ্বালাও
অসংযমী পাথর
রোপণ
শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়
যুদ্ধবন্দি সে এক সৈনিক
জীবনের উপান্তে ফিরেছিল ঘরে।
কিনেছিল কত খাঁচা ভরা পাখি
ফিরিয়ে দেবে বলে আকাশের নীড়ে!
আমিও যুদ্ধবন্দি নগরসৈনিক!
উপড়ে তুলে নেব তোর
বনশাই সবুজ শরীর
য্ত টবের খাঁচা থেকে!
ফিরিয়ে দেব তোর পায়ের জমিন।
যত খুশি আলো যত খুশি মাটি
যত খুশি জল যত খুশি হাওয়া
গায়ে পায়ে মেখে ছড়া চারিদিকে …
আলগা মাটিকে বাঁধ শিকড়-নিগড়ে।
আমি যে হাঁটতে চাই শক্ত ডাঙায়
তোরই হাত ধরে …
কবিতাগুচ্ছ
মতিউল ইসলাম
১. জান্নাত
বাসিভাতের সালুনে বেহেস্তের সোয়াদ,
তোর কাকুয়ে নারকেল তেলের
গন্ধে পারিজাতের সুঘ্রাণ।
মাটির উসারায় লেপনের গন্ধে
ছেলের মুখের গন্ধ,
তোর শরীরে আখায় জলন্ত আগুন,
এই ছেড়ে কোথায় যাব
কোন দুযোগের বেহেস্তে?
এই তো আমার জান্নাত।
২. আলো
পৃথিবীর সব আলো নিভে গেলে
যে কবিতার প্রসব ঘটে খোলা মাঠে,
তাঁর গায়ে অমাবস্যার নিকষ অন্ধকার।
কবি বললেন আলো জ্বালো,
কবিতা জ্বলে উঠলো কোজাগরী হয়ে,
আলোকিত হলো পৃথিবী।
৩. স্বপ্ন স্মৃতি
পায়রার ডানাতে মন খারাপের ভিজে মেঘ,
রামধেনুতে তোমার সিঁথির সিঁদুর,
কোথায় লুকাবো স্মৃতির বৃষ্টিভরা মেঘ?
উত্তর আর দক্ষিণ মেরুতে তোমার নগ্ন
অবয়ব।
চলে গিয়েও প্রকৃতি জুড়ে তুমি,
স্মৃতির বুদবুদে বসন্তের কোকিল
মোনালিসার বিমূর্ত হাসি,
রক্তাক্ত গোলাপে প্রেমের সলীলসমাধি,
তবু বাউল হবার স্বপ্ন আমার আজন্ম।
বিষদষ্ট
জগন্নাথদেব মণ্ডল
হাতে-খড়ির পরেরদিন থেকে অক্ষরপাঠ
শিখিয়েছেন চন্দ্রিমা দিদিমণি।মাধ্যমিকের সময় ছেঁড়া একটা মনসামঙ্গল দিয়েছিলেন।একটু
বড়ো হয়ে অঙ্ক কষতে যেতাম সন্ধ্যাবেলা।ওদের শীতকালের দুপুরবেলার ছাতে একবার পিকনিক
হয়েছিল।
যেহেতু মাংস খাই না তাই দিদিমণি পরম
যত্নে সয়াবিন রেঁধে দিয়েছিল।অার মুসুর ডাল।সঙ্গে ইয়াবড়ো হাঁসের ডিমের বড়া।
দিদিমণির জন্য একবার বর্ষার জঙ্গলে
খারকোল পাতা অানতে গিয়েছিলাম।অানতে গিয়েছিলাম ভাদ্র মাসের তাল।
শরীরে তালপাতার শিরশিরানি বুঝতে
পারছিলাম।তারপর তো চন্দ্রবোড়া কামড়াল।
রাধাষ্টমীর দিন বিষ-অাঙুল ঠেসে দিলাম
জ্বলন্ত প্রদীপশিখায়।কতোবার যে মাছ অানতে গিয়ে জলঢোঁড়া সাপ এনেছি জিইয়ে রাখব বলে
তাঁর ইয়াত্তা নেই।
এখন অামার নীচের দিকটা সরু, পিচ্ছিল,
মসীবর্ণ, রাগী এবং শঙ্খপ্রিয়।জিভ তবু চেরা নয়।
অাবার তালবনে-তালবনে ঘুরে বেড়াই।খর
এবং ধারালো তালপাতা জিভে রেখে ঘষি।চিরে যাক মনুষ্যজিভ।
তারপর দিদিমণির কাছে যাই।তিনি স্নান
সেরে, ফনীমনসা পুজো করে, নতুন ঝাঁপি হাতে বসে অাছেন।
অামাকে বলছেন-ইহা গচ্ছ,ইহা গচ্ছ,ইহ
তিষ্ঠ।
দূরে বোধহয় গঙ্গাপুজো।নিবিড় জামগাছের
ডালের কাছে মেঘ ডাকছে।মেরুদণ্ডের ভিতরেও অাশ্চর্য সর্প।ডিম ফাটবে এবার...
মন
চিরদীপ সরকার
কত পাপ, কীট খুঁড়ে রেখেছে মন,
সব জেনেও বেঁচে আছে প্রিয়গাছ
যা আমার অপ্রিয় গোপন
আগাছার মতো বেড়ে উঠছে আজ।
রাস্তা থেকে হারিয়ে গেছে পথ,
অলিগলি বেয়ে নিজের চোখাচোখি,
সৎ-অসৎ এ আটকে নিজের মত
ভুল বোঝানো মনেরই বুজরুকি।
তোমার অনুপস্থিতিতে
মিঠুন চক্রবর্তী
তোমার অনুপস্থিতিতে
আমার বাগান তো সাদা ক্যানভাস,
সেখানে অপেক্ষার গাছ থেকে ঝরে যায়
টুপ...
টুপ...
এক একটি বৃষ্টিহীন হলুদ দিন।
তোমার অনুপস্থিতিতে
এখানে মেঘ আসে না,
আলো
আসে না
অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকি ধূসর ফসিল।
তোমার আলোর ঘন্টায় ফোটে শব্দের ফুল,
আমার
সাদা ক্যানভাস জুড়ে
সারাদিন বয়ে যায় গোলাপি পংক্তিমালার ঢেউ...
আমি তো সামান্য শব্দচাষী,
অনুপমা আমার আকাশে তুমি বৃষ্টি হয়ে আছো ।
প্রেম গন্ধ গায়ে মেখে
অমৃতা মুখোপাধ্যায়
তোমার সঙ্গে সমুদ্র স্নান করব একদিন
ভীষণ ঢেউয়ে যদি নাকাল হই হাত টা ধোরো
কল্পনা কর তুমি আমার প্রথম প্রেমিক
আর আমি ও
চেষ্টা কর সে অনুভূতি আসবে ঠিক
ধর আমার বয়স আঠার
তোমার ঊনিশ
অনেক গুলো বছর পিছিয়ে
যাই
চল
আমরা দুজনে বিছিন্ন পথে মিলিত হয়েছি
মনে স্বপ্ন বুকে আশা
গল্পের খাতিরে ভাষাটাও মেঠো করে নি
ইচ্ছে দুজনে নাওয়া....
লজ্জার খাতিরে কেউ
রা কাড়ছি না
পেটে খিদে মুখে লাজ
ভেব না এ খিদে সে খিদে
এ খিদে কাছে যাওয়ার
বুকের গন্ধ শোঁকার
বুক দুরু দুরু মন সড়সড়
কথার খেই হারিয়ে যাওয়া
দুজনেই আশা নিয়ে নামলুম জলে
আসতে আসতে কাছে চলে এলুম
মনটায় সে কি আকুলি বিকুলি
এত চাট্টিখানি কথা নয়
তুমি পুরুষ সাহসটাও বেশি
তুমিই এগিয়ে এলে
ধীরে ধীরে হাতটা ধরলে
লজ্জা ফেলে নিজেও সজাগ হলুম
বুকে তখন বাঘের গর্জন
সেকি হালুম -হুলুম
বাঘকে সরিয়ে এবার স্বাভাবিক হওয়ার
চেষ্টা
ঢেউয়ের তালে যখন একদম
কাছাকাছি দুজনে
আবার দাদ্রুম দুদ্রুম
হেসে হেসে দুজনেই আরো
স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা
এবার গলনাঙ্ক শুরু
লীনতাপ চাই
ক্রমে কাছে আরো কাছে
তেষ্টা আরো তেষ্টা...
তারপর জড়াজড়ি
যেন অমৃতসুধা
এমন অমৃত পান করছি যখন
কানে 'মা মা' ডাক
মুখের সামনে চৌদ্দ বছর
বুকটা ধড়াস
'মা এখনো স্বপ্ন দেখ ?'
না চাইতেও চোখে জল
সত্যিই তো !
ক্ষয়
গৌতম বিশ্বাস
কালো রাত ছুঁয়ে নেমে এলে নীরবতা,
বুকের গভীরে মাথাচাড়া দেয় ক্ষত।
ঘুম ঘুম চোখ তবু নির্ঘুম জাগে,
বাদবাকি সব ঘুমোয় নিজের মত।
স্মৃতিগুলো এসে দরজায় কড়া নাড়ে,
নিজেকে হারাই কোথায় যেন বা সেই।
রাত জাগা পাখি ডেকে ওঠে একা একা,
এবার একটু ঘুমোবো ভেবেছি যেই।
রাত্রি গভীর শুনি পৃথিবীর শ্বাস,
অক্টোপাসেরা জড়ায় হাজার শুঁড়ে।
ঘুম ঘুম চোখে নিঝুম রাত্রি জাগি,
তোমাকে কেবল নিয়ে আসি স্মৃতি খুঁড়ে।
কবেকার কথা,হিসেবে সে আজ নেই,
দুইচোখ জুড়ে ছবি শুধু ছবি আর--
বুকের গভীরে তীব্র দহন জ্বালা,
শ্বাস প্রশ্বাসে বেড়ে চলা হাহাকার।
তুমি নেই,তবু আছো আজও স্মৃতি মাঝে,
এখন তোমার কি জানি কী পরিচয়।
ওপরে ওপরে জীবনটা ঠিকই আছে,
তলায় তলায় ধরে গেছে মহাক্ষয়।।
আমরা
প্রত্যূষ কর্মকার
দীর্ঘ উড়ে যাওয়া পাখির ডাকের মত কোনো প্রীতিকর সময়ে
তোমাকে নিয়ে দাঁড়িয়েছি প্রবহমান অন্ধকারে
আমাদের অস্থির পায়ের কাছে মুড়ে আছে অনন্ত অপেক্ষার ডানা
আমরা ওকে অপরের চোখে তাকিয়ে অন্ধকারেও দেখতে পাই স্মৃতিকথা
আমাদের সংসারের হারিয়ে যাওয়া বাসন কোসনের টুংটাং শব্দ
নিস্তব্ধতা ভেঙে ছড়িয়ে যায় মাথার ভেতর
কোনো পার্থিব মায়া অপলক উল্লাসে আকাশের মত বিস্তৃত হয়ে
থাকে
সমস্ত শিরা উপশিরায়,রক্ত প্রবাহে
আমরা অনু পরমানুতে ভেঙে ভেঙে মিশে যাই
পরিযায়ী পাখির একনিষ্ঠ ডানায়
দম্পতি
শ্যামশ্রী রায় কর্মকার
অরুণ আর ওর বউ হাত ধরাধরি করে বাড়ি ফেরে
ওদের ফেরার ওপর টুপটুপ করে সন্ধ্যা নামে
হাস্নুহানা ফুটে ওঠে অরুণের বউয়ের শাড়িতে
খোঁপায় বসে একটি ল্যাজঝোলা পাখি গান গায়
অরুণের বউয়ের চুড়িতে নকশা
ঝিলমিল করে
ঝিরঝির করে
ঝুমঝুম করে
অরুণ
ঝিলমিল জড়িয়ে ওম খোঁজে
ঝিরঝির বেয়ে উঠে যায় মেঘবিস্তারে
ঝুমঝুম বেয়ে ফিরে আসে ভাতের থালায়
অরুণের বউ স্নানঘরে নৌকা বাঁধে
চন্দ্রোদয়ে বিছিয়ে দেয় পদ্মের গর্ভফুল
বালতির জলে ভিজিয়ে রাখে শুকতারা
অরুণ নিবিড় হলে বউ ভরা গ্রীষ্মের আমের মঞ্জরি
থুতনির আজন্ম তিল তুলে ধরে আকাশের দিকে
ওদের আদিম ছায়া পাড়ি দেয় বারো নদী তেরো বন্দর
গোপন বুদবুদেরা উড়ে যায় বিনম্র স্তোক পার হয়ে
দম্পতি
শ্যামশ্রী রায় কর্মকার
অরুণ আর ওর বউ হাত ধরাধরি করে বাড়ি ফেরে
ওদের ফেরার ওপর টুপটুপ করে সন্ধ্যা নামে
হাস্নুহানা ফুটে ওঠে অরুণের বউয়ের শাড়িতে
খোঁপায় বসে একটি ল্যাজঝোলা পাখি গান গায়
অরুণের বউয়ের চুড়িতে নকশা
ঝিলমিল করে
ঝিরঝির করে
ঝুমঝুম করে
অরুণ
ঝিলমিল জড়িয়ে ওম খোঁজে
ঝিরঝির বেয়ে উঠে যায় মেঘবিস্তারে
ঝুমঝুম বেয়ে ফিরে আসে ভাতের থালায়
অরুণের বউ স্নানঘরে নৌকা বাঁধে
চন্দ্রোদয়ে বিছিয়ে দেয় পদ্মের গর্ভফুল
বালতির জলে ভিজিয়ে রাখে শুকতারা
অরুণ নিবিড় হলে বউ ভরা গ্রীষ্মের আমের মঞ্জরি
থুতনির আজন্ম তিল তুলে ধরে আকাশের দিকে
ওদের আদিম ছায়া পাড়ি দেয় বারো নদী তেরো বন্দর
গোপন বুদবুদেরা উড়ে যায় বিনম্র স্তোক পার হয়ে
No comments:
Post a Comment