Friday 25 October 2024

অমিত চক্রবর্তী

 মদালসার জন্যে চম্পূ না লিখে


লটারি জেতার সৌভাগ্য ক’বার হয় মানুষের, শুকনো কাঠি ঘষে আগুন মেপেছিল যে নারী, তার সন্ধান আমি তোমাতে পেয়েছি মদালসা, মনস্বিনী তুমি, মাধবী মুখার্জি চলন, তাই আজ আর কোনো চম্পূ নয়, আমার পদ্যভাষা প্রাচীন হয়ে যাচ্ছে, প্রাচীনতম, গ্রামীণ, গ্রামীণতম হয়ে যাচ্ছে, যাবেই, সামান্য বা অসামান্য উষ্ণতায়, না-অতি-শীত, এইভাবে মেঝেতে গড়াব আমরা, আলস্যে আর সোহাগে তন্ময়লাজ, সারাদিন মুখতৃষ্ণা, মুখতৃষ্ণা, সাহস কিংবা ইশারার এন্ডগেম, অনর্থক গুজবে মাতুক গৌড়বঙ্গ, নাস্তানাবুদ হোক পাড়াপড়শির থিয়েটার, পর্দাঢাকা দুপুর থেকে কৌতূহলী সন্ধ্যায় আমরা গলে গলে মিশে যাব, যেন কেউ নই, যেন দুরাশার অন্য পিঠ, সম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ।  

 

সুরেলা ভবিষ্যদ্বাণী, বৈধর্ম্য বিরুদ্ধমত, পরিবেষ্টন সুপরিসর। গাঢ় অথচ আলোড়ন তোলা। সে বলেছিল আমার কবিতার একটি মানে বই লিখছে। মানে নিশ্চয় আছে কোনো পতনের, সে ভেবেছিল, নিরাশার সঙ্গে তুমুল তর্ক করতেও রাজি ছিল সেদিন। আমি এখন দূর থেকে দেখি আমাকে, আমার বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম সব দেখি দূর লেন্সে, ছোট সাইজের নিষ্ঠুরতা, ঘোলাটে ফোকাস। পুরোনো রেকর্ডের দিন আজ, গতকাল বন্দনার অনুষ্ঠান। এমনই আচারপালন আমাদের। প্রথমেই অবশ্য বুক ছুঁয়ে বলে রাখা ভালো যে আমি একজন অপেক্ষার সম্রাট, বাদুড় যেমন গুপ্ত কারাকক্ষে, চোরাদরজা একটি ছাদের, অদেখা হয়ে থাকব আজ সারাদিন। শীতের লম্বা, ধারালো বাঘনখ নয়, আজ ভীষ্মদেব, মেদুর বরষা, আজ দৈলিপী চলন, লচক লচক বিজলী ঝলক।

 

আলো এখানে ভাঙা এখন, রাসিয়ান জিপসি গান যেমন, মনখারাপ আর স্পন্দনের মৈত্রী মেশানো, কখনো পিছিয়ে পড়ে সে, কখনো ক্লান্ত, এ প্রসঙ্গ একবার এসেছিল আমাদের প্রথম দেখায়, অর্কিড এবং আলো কে বেশি নীল হবে আজ, আমরা হয়তো জানতাম সেদিন। সুতরাং সময় কম, রূপোলি হয়ে আসছে বেণীবন্ধ, সে সত্য সঙ্গীত জানে, আমরা সঙ্কল্প নেব আজ, নিজেরা কি আলো হব যখন সবচেয়ে বেশি আতংকিত, যখন রূদ্ধশ্বাস? ঢেলে সাজাব আবার সেই নদীর পাড়, কুড়িয়ে নেব বিগত বা মুছে যাওয়া আলো, মাটি থেকে জল থেকে ঘেঁসে আসা আলো, আলেয়া, প্রতিফলন, যেটুকু অবশিষ্ট আছে তার, তাদের, আমরা পুরো অন্ধকারের আগে তলানি সরটুকু ছেঁচে নেব, সময়ের বাক্স থেকে, নুয়ে পড়া গাছ থেকে। ওই দ্যাখো আবার বৃষ্টি এলো।

 

Thursday 17 October 2024

বর্ণময় বাড়ৈ



রাক্ষস 

 

নদী সর্বভুক;

আমার মতন

 

সে আমায় খেতে চায় প্রকাশ্যে,

আমি গোপনে

নদী আমাদের জমি উঠোন পথ গিলতে গিলতে

হাত বাড়ায় ঘরের চালেসঞ্চয়ের ধানে

 

তবু তাকে ভালোবাসি

যে যন্ত্রণা দেয় তাকেও ভালোবাসা যায় প্রাণের অধিক;

যেন প্রসবযন্ত্রণার আর্তনাদে শিখিয়ে দিয়েছে মা...

 

শিখিয়ে দিয়েছে,

ভালোবাসার মানুষ রাক্ষস হলেও তাকে ভালোবাসা যায়,

নিজেকেই বেড়ে দেওয়া যায় তাঁর পাতেঅনায়াসে...

 

Wednesday 16 October 2024

গৌরব চক্রবর্তী

 


সুরা ও চুম্বনের কবিতা 



শূন্যতা কখনও সাদা হয়তো কখনও গাঢ় নীল

কে তাকে করেছে পান কে তাকে মেখেছে সারা গায়ে?

পূর্ণতার দেহ থেকে একদিন রং খসে যায়

কবিতার ছন্দ থেকে মুছে যায় সব অন্তমিল 


সন্দেহ কখনও শ্লথ আবার কখনও দ্রুতগামী 

বিষ ও বিষয় নিয়ে ভোগে মত্ত জীবন আমার

মেষলগ্নে ধনুরাশি নক্ষত্র অশ্বিনী শুক্রবার 

উপরে ওঠার পর ক্রমশ নিচের দিকে নামি


পশ্চাতে গোধূলি আর শীর্ষে সান্ধ্যকাল এসে থামে

দক্ষিণে শব্দের ঢল, পূর্বে প্রতিশ্রুতি পাহারায় 

চতুর্দিকে চতুঃপার্শ্বে কারা শুধু আসে, চলে যায়?

নিজেকে বিস্তৃত লিখে আমি পড়ে থাকি শিরোনামে


শব্দের রাখাল আমি শব্দ নিয়ে চরিয়ে বেড়াই

সশব্দে নীরবটুকু লিখতে লিখতে থেমে যাই