সম্পাদকীয়ঃ
'আয়, আরো বেঁধে বেঁধে থাকি'
শঙ্খ ঘোষের এই অমোঘ পঙক্তি সংকটের সময়ে কেমন বীজমন্ত্র হয়ে বাজতে থাকে কানের ভিতর। দেশ কি শুধু মাটির নাম? দেশ হয়ে উঠতে গেলে ভালোবাসতে হয় পাশের মানুষটিকে, পাশের ধর্মটিকে। বুকে হাত দিয়ে কি আমরা বলতে পারি, কজন সত্যি করে ভালোবাসি আমাদের দেশকে? দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই বলে গলা ফাটানোর সময় কত সহজেই আমরা ভুলে যাই, আমাদের প্রতিদিনের কাজেকর্মেই আমরা দুর্নীতিকে জড়িয়ে ফেলেছি নিজেদের সঙ্গে। ধর্মের নামে লড়াই করতে করতে, পশুপ্রেমের নামে লড়াই করতে করতে, রাজনীতির নামে লড়াই করতে করতে কত সহজেই আমরা আমাদেরই দেশের মানুষকে অন্যায় ভাবে আক্রমণ করে বসি। দেশের ধারণাটাই বোধহয় আমাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। মানবতার এই বিপন্ন সময়ে ফিরে এলো তাঁর জন্মদিন, যিনি আজকের এই অন্ধকারকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন বহু আগেই। জীবনানন্দ দাশের এই কবিতা আমাদের আরও একবার মনে করিয়ে দেয়, কবিতার দৃষ্টিপথ সময়ের গণ্ডী পার হয়ে পৌঁছে যায় ঈশ্বরের কাছাকাছি।
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুনার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি,
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।
নক্ষত্র পতনের ঋতুতেই চলে গেলেন ভালোবাসার কবি মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (১১ জুলাই ১৯৩৬ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) ,যাঁকে আমরা মনে রেখেছি আল মাহমুদ নামে ।কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক্ভঙ্গীতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছিলেন। ৭১এর যুদ্ধে সক্রিয় সৈনিক মাহমুদের অসংখ্য কবিতা আপামর বাঙালির হৃদয়ে ঘর করে আছে। এই সংখ্যায় তাঁরই একটি কবিতা দিয়ে আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাব।
আল মাহমুদের কবিতা
কবিতা এমন
কবিতা তো কৈশোরের স্মৃতি। সে তো ভেসে ওঠা ম্লান
আমার মায়ের মুখ; নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটি
পাতার আগুন ঘিরে রাতজাগা ভাই-বোন
আব্বার ফিরে আসা, সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি–রাবেয়া রাবেয়া–
আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিণের ভেজানো কপাট!
কবিতা তো ফিরে যাওয়া পার হয়ে হাঁটুজল নদী
কুয়াশায়-ঢাকা-পথ, ভোরের আজান কিম্বা নাড়ার দহন
পিঠার পেটের ভাগে ফুলে ওঠা তিলের সৌরভ
মাছের আঁশটে গন্ধ, উঠানে ছড়ানো জাল আর
বাঁশঝাড়ে ঘাসে ঢাকা দাদার কবর।
কবিতা তো ছেচল্লিশে বেড়ে ওঠা অসুখী কিশোর
ইস্কুল পালানো সভা, স্বাধীনতা, মিছিল, নিশান
চতুর্দিকে হতবাক দাঙ্গার আগুনে
নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসা অগ্রজের কাতর বর্ণনা।
কবিতা চরের পাখি, কুড়ানো হাঁসের ডিম, গন্ধভরা ঘাস
ম্লান মুখ বউটির দড়ি ছেঁড়া হারানো বাছুর
গোপন চিঠির প্যাডে নীল খামে সাজানো অক্ষর
কবিতা তো মক্তবের মেয়ে চুলখোলা আয়েশা আক্তার।
প্রবন্ধ
কবিতার তৃতীয় শ্রেণির পাঠক
তৈমুর খান
কবিতার
সেকেলে ধারণা নিয়ে কবিতার তৃতীয় শ্রেণির পাঠক জন্ম নেয়। স্কুল-কলেজের
সিলেবাস মার্কা দৌড়, রাবীন্দ্রিক বলয়ের ঘুরপাক খাওয়া উপগ্রহ এবং কবিতা
চর্চায় নিজস্ব তৃতীয় শ্রেণির জগৎ তৈরি করে এরা বসবাস করেন। কখনও আঞ্চলিক
কোনও সংস্কৃতি কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে কূপমন্ডুকীয় ধারণায় এক কৃত্রিম
করিশমা জাহির করেন। সমস্ত পৃথিবী জুড়ে যখন কবিতা চর্চায় নানা
পরীক্ষা-নিরীক্ষার হিড়িক পড়ে গেছে ——তখন এই শ্রেণির পাঠক সংখ্যাই বেশি।
নিতান্ত খারাপ সময় বলেই কবিতায় মিশে যাচ্ছে ইগোটিজমের বিপুল অ-সাধনা।
এইসব কবিদের তৃতীয় শ্রেণির পাঠক কেন বলব?
কবিতা
যদি আনন্দের প্রকাশ হয় তা হলে সেই প্রকাশের মধ্যে একটা উত্তরণ খুঁজে পাওয়া
যায়। স্রষ্টা নিজেকে প্রকাশ করার মাধ্যম হিসেবেই কবিতাকে বেছে নেয়। কবিতা
ঘন্টা বাজিয়ে আসে না। কবিতার কোনও পূর্ব প্রস্তুতি নেই। অনুভূতির
স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ শব্দে প্রতিফলিত হলে লয়ে-মাত্রায় আন্দোলিত হলে কবিতা
হয়ে ওঠে। সুতরাং কবিতা বিষয়ের বিবৃতি নিয়ে কিংবা পথ-সভার শ্লোগান হয়ে ফেটে
পড়ে না। দুর্জ্ঞেয় মানসলোকের নিরন্তর পর্যবেক্ষণ থেকে দীক্ষিত হয়ে বেরিয়ে
আসে। সুতরাং ব্যক্তির স্বপ্নটি সেখানে মর্যাদা পায়। তার অন্ধকার দশা কোন্
আকুতি নিয়ে স্পন্দিত হতে চায়, আলোকিত হতে চায় ——তা কেবল স্রষ্টাই জানেন।
অতএব কবিতায় অধরা, অস্পষ্টতা, অসংলগ্নতা এবং অপ্রমেয়তা মিশে থাকেই। সেই
কারণে অনেক সময় বিষয় না-থেকে বাজনার ব্যাপ্তিটাই বড় হয়ে ওঠে।
তৃতীয় শ্রেণির কবিতা পাঠক কবিতার ভেতর যখন বিষয় খুঁজে পান না, কবির
অধরা, অপ্রমেয়তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারেন না, ব্যক্তির খোলসে যখন
নৈর্ব্যক্তিক অনুভূতির মিশেল ঘটাতে পারেন না ——তখন মুখ ফিরিয়ে পেছন দিকে
হাঁটেন। হয়তো ফিরে যান রবীন্দ্রনাথে, ফিরে যান সিলেবাসের নির্বাচিত
জীবনানন্দে। মোল্লার দৌড় ওই মসজিদ পর্যন্তই। আবৃত্তিকার - সাংবাদিক -
কবিরা ঘুরেফিরে জয় গোস্বামীর সাক্ষাৎকার নিতে এসে তিনটি কবিতার কথাই বারবার
বলেন ——
১. নুন
২. মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়
৩. মেঘবালিকার জন্য রূপকথা
বহুবার পঠিত। বহুবার আলোচিত এই কবিতাগুলি নিয়ে একই কথা বলতে শুনি। সেইসঙ্গে শুনি সুবোধ সরকারের “রূপম” কবিতাটির কথাও।
হে কবিতার পাঠক, কবি প্রতিভার কোনও একটি সময় এই সহজ কবিতাগুলি বেরিয়ে
এসেছে কবিদের কলমে। আবৃত্তিকারদের কণ্ঠ টপাস করে তুলে নিয়েছে এগুলিকে। আর
তাতেই এরা বিখ্যাত হয়ে গেছে। কিন্তু এই কবিদেরই আরও বহু কবিতা ছিল,
সেগুলির কথা একবারও ওঠে না। পাঠক যখন তার প্রকৃত মনন হারিয়ে ফেলে, কবিতায়
আত্মমগ্নতার ধার ধারে না, তখন সহজবোধ্য, বিবৃতিমূলক, শ্লোগানধর্মী কবিতাতেই
প্রতিভার দীপ্তি দেখতে পায়। নিজের দৌড়টুকু বোঝার ক্ষমতা থাকে না। ভাবে,
কবিতা হবে নজরুলের “সাম্যবাদী” লেখা আবেগের মতো। কবিতা হবে রবীন্দ্রনাথের
“দুই বিঘা জমি”র মতো। কবিতা হবে ভিয়েতনামের সৈনিকদের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার
মন্ত্রের মতো। শোষক ও শোষিতের বাস্তব চিত্র, কিংবা জীবনানন্দের
“রূপসীবাংলা”র মতো। ঘুরেফিরে সেই একই সিলেবাস, একই সাজেশন, একই নোটস্।
কবিতা তাদের কাছে বৈচিত্র্যহীন, আন্দোলনহীন, নতুনত্বহীন ডানাওয়ালা পিঁপড়ের
মতো, স্তিমিত, মৃত্তিকাগামী, গর্তচারী ।
মোটকথা তৃতীয় শ্রেণির পাঠক এক ঝাঁক পায়রার মতো গড্ডালিকা প্রবাহী
জাতক-সাঁতারু। এরা সমুদ্র নয়, নদী নয়, এঁদো পুকুরের পশ্চাৎগামী মননহীন
প্রাণী। জল ছিটিয়ে পাঁক মেখে চির শুভ্রতার গর্ব অনুভব করেন। শিক্ষক,
অধ্যাপক থেকে শুরু করে ছাত্র-কবি-সম্পাদক অনেকেই এই দলে থাকেন। তাদের চোখের
সামনে যখন তুলে ধরা হয় রবীন্দ্রনাথের “আরোগ্য” কাব্যের একটি কবিতা ——
“একা বসে সংসারের প্রান্ত জানালায়
দিগন্তের নীলিমায় চোখে পড়ে অনন্তের ভাষা।”
তখন
এই শ্রেণির কবিতা পাঠকরা “সংসারের প্রান্ত জানালা” কী তা জানেন না।
“দিগন্তের নীলিমায়”, “অনন্তের ভাষা”ও তারা পড়তে পারেন না। এরকম বহু পংক্তি
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ছড়িয়ে রয়েছে ——যা “দুই বিঘা জমি”র বাবু ও উপেনের
বেড়া ডিঙিয়ে অনন্ত সভ্যতায় মানুষের চিরন্তন বাণী হয়ে উঠেছে। ঠিক তেমনি
জীবনানন্দ দাশের “রূপসীবাংলা”র মৃত্যু এবং প্রকৃতির ধূসর ছায়া-মাখা থেকে
বেরিয়ে আর এক জগতের ঠিকানায় পৌঁছাতে পারলে তাঁকে জানার সুবিধা হত ——
“আমলকী গাছ ছুঁয়ে তিনটি শালিক
কার্তিকের রোদে আর জলে
আমার হৃদয় দিয়ে চেনা তিন নারীর মতন
সূর্য? নাকি সূর্যের চপ্পলে”
এই
পাঠকেরা আমলকী গাছের খোঁজ রাখেন না। তিনটি শালিকের সঙ্গে হৃদয়ের তিনটি
নারী ——তারা সূর্য, নাকি সূর্যের চপ্পল পায়ে দিয়ে পৃথিবীতে এসেছে পাঠক
জানতে চায় না। যেখানে বিষয়ের সহজ লভ্যতা নেই, কিংবা যে কবিতা সিলেবাসে ছিল
না ——তা নিয়ে পাঠকের ভাবনার সময় থাকে না। সুতরাং আজকের কবিতা আন্দোলন এইসব
কবিতা পাঠকের দরজায় কড়া নাড়তে পারে না।
তেমনি জয় গোস্বামীর “নুন”, “মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়” এবং “মেঘবালিকার
জন্য রূপকথা”. ছাড়াও অনেক অনেক কবিতা আছে যেগুলির কথা উক্ত পাঠকদের মুখে
একবারও শুনি না। “ভুতুম ভগবান”, “ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা”, “ওঃ স্বপ্ন!”, “পাগলী,
তোমার সঙ্গে”, “বজ্রবিদ্যুৎ-ভর্তি খাতা”, “পাখি, হুস”-এর মতো দুর্দান্ত
কবিতাগুলি। এগুলিতে জয় গোস্বামীর প্রতিভা কতখানি বিস্ময়কর তার কিছুটা
নিদর্শন মিলবে। অথচ কাব্যের কবিতাগুলি আলাদা বৈশিষ্ট্যে ও মাধুর্যে সমন্বিত
ও উদ্ভাসিত। যেমন “বজ্রবিদ্যুৎ-ভর্তি খাতা” কাব্যের “ভোজবাজি” কবিতায়
লেখেন ——
“আর সাজাবো কানার পাশে খোঁড়া
আর দেখাব হাতপোড়া রন্ধন
আর মেলার সইপুতুলের জোড়া
মানবো না আর মানবো না বন্ধন
আর শোয়াব শিলের বুকে নোড়া
আর দেখাব বরবধূ রং-ঢং
মুড়িয়ে দেব হিংসে গাছের গোড়া
মানবো না আর মানবো না বন্ধন”
তখন
ছন্দ-লয়ের দোলায় আমরা কীরকম দুলতে থাকি তা পড়লেই অনুভব করা যায়। আমাদের
শত অসামঞ্জস্যতায়ও আবেদনের মাধুর্যের রেশ শেষ হয়ে যায় না। কারণ কবিতার শেষ
স্তবকে কবি বলেন ——
“আর নেভাব প্রেমের জ্বালাপোড়া
দেব তোমার আঘাতে চন্দন
ফেরাব ঢিল অন্ধকারে ছোঁড়া…”
এখানেই
কবিতাটির উত্তরণ ও মাহাত্ম্য প্রকাশ পায়। “পাখি, হুস” কাব্যের
“প্রেম”নামের একটি চার পংক্তির কবিতায়ও জীবনের আবেদন মারাত্মক ——
“আজ যেখানে রক্ত রাখো
কাল সেখানে তৃণ
কুড়িয়ে নিয়ে গিয়েছি সব
বলিনি একদিনও!”
কবি
তো নিঃশব্দে রক্ত এবং তৃণ দুই-ই কুড়িয়ে নিয়ে যান। প্রেম তো তাই-ই।
এভাবেই জয়ের কবিতার বিশাল সমুদ্র ছড়িয়ে থাকে। তার কয়েক বিন্দু
আবৃত্তিকারদের দৌলতে আমাদের কানে বাজে। আর সেসব নিয়েই তৃতীয় শ্রেণির কবিতা
পাঠকেরা তাদের জানার সীমানাকে সংকুচিত করে ফেলেন। বাকি কবিতা পড়ার প্রয়োজন
মনে করেন না।
সুবোধ সরকারের “রূপম” কবিতায়
“রূপমকে একটা চাকরি দিন” আবেদনটি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। বাস্তব দিক
থেকে কবিতাটি আমাদের মনের দরজায় করাঘাত করে ঠিকই, কিন্তু তাই বলে সুবোধ
সরকার একটিই ভালো কবিতা লিখেছেন এ ধারণা উক্ত পাঠকেরা কেন পোষণ করবেন? এর
কোনও সদুত্তর পাইনি। তা ছাড়া কবিতাটির ভেতর যে দর্শন আছে পাঠক কি তারও
ঠিকানা জানে? সুবোধ সরকার যখন “আড়াই হাত মানুষ” কাব্যের একটা ছোট্ট কবিতায়
বলেন ——
“ভালোবাসা কুয়াশায়, কুয়াশাকে পান করি, খাই
আমি যেন এ জীবনে কুয়াশাকে লিখে রেখে যাই।”
তখনই
মানবজীবনের জটিল ক্রান্তিকাল নির্দেশিত হয়। বাহ্যিক চাওয়া-পাওয়ার ভেতর
লুকানো থাকে সেই কুয়াশা যা হয়তো জীবনানন্দের কাব্যে “উটের গ্রীবার মতো”
আমাদের জানালায় এসে দাঁড়ায়। পাঠক খোঁজ রাখে না এই কুয়াশারও। এইভাবেই কিছু
কিছু কবিতা দুর্বল পাঠকের ভাললাগার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এদের শিল্পীর মানসলোক
বোঝার সামর্থ্য থাকে না। ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এমনকী সামাজিক অবক্ষয়ও
অনুধাবন করার বোধ গড়ে ওঠে না। ফুরফুরে বাতাস আর পোশাকের নান্দনিক
ঔজ্জ্বল্যে এরা হাইব্রিড প্রজন্মের কবি-পাঠক হয়ে সভ্যতার ক্রান্তদর্শী রূপে
নিজেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। কী তীব্র দহন আর নিঃসঙ্গের হাহাকার যখন
মানুষকে অস্তিত্বের ধ্বংসস্তূপে ঠেলে দেয়, তখন কবি কী লিখতে পারেন? যা
লিখতে পারেন তা শুধু আত্মিকসংকট থেকে বেঁচে থাকা তথা টিকে থাকার সংকটকেই।
অ্যালেন গিন্সবার্গ লিখেছেন ——
“I saw the best minds of My generation Destoeyed by madness, starving hysterical naked.”
সুতরাং
ঐতিহ্য মুছে গিয়ে সময়ের স্বাক্ষর নিয়ে কবিতার সৃষ্টিধারা। কবিতা যেন
উৎসবের নয়, ভালো থাকার নয়, কবিতা যেন ধ্বংস আর কালবেলার ; ইতিহাস আর
রক্তের, মরণ আর জীবনের। কবিতার পাঠক আবেগের উদ্বেল কণ্ঠস্বরে কবিতাকে পেতে
চায় । যেখানে মনন নেই, ফ্রয়েড নেই, জীবনের একান্ত নিঃসঙ্গতার স্তব্ধতা নেই,
রূপক এবং সাংকেতিক বিনির্মাণে কবিতায় অসংলগ্নতা আসে না, ভাবের অস্পষ্টতায়
কুয়াশা সৃষ্টি করে না, মেধার ইন্টেলেকচুয়াল পরিচয় নেই ——সেই ধরনের কবিতা এই
শ্রেণির পাঠকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দুঃখের বিষয় এদের সংখ্যাই বেশি।
আর এই কারণেই স্রষ্টার সৃষ্টি এখনও সেই আলোয় আলোকিত হয় না।
আঞ্চলিক কবিতা
বিকাশ দাশ
ইটা কনু সুখের সময় লয়
" ইটা কনু সুখের সময় লয় হ্যে
ইটা কনু সুখের সময় লয়,। "
দুখের ডুংরি ডিঙ্গায় যিমন
দু-চ্যখে লদী বয়।
কতেক সুখে কতেক দুঃখে
আশা লিয়ে বুক বাঁধি
মরা ছায়ের সুহাগ লিয়ে
পা ছ' ড়ায় লিতই কাঁদি।
চুপ মারে সোব জুয়ান গুল্যান
আর কতক সবুর সয়?
ইটা কনু সুখের সময় লয় হ্যে
ইটা কনু সুখের সময় লয়।
দ্যাবতা নকি বাঁচে আছেক
ত ক্যামনে ইমন হয় দশা?
রকত ঢাল্যে ফসল ফলাই
গতর লিয়ে লাঙ্গল চষা।
খাটেও ক্যানে খাবার নাই
কি জানি ক্যামনে ইমন হয়?
ইটা কনু সুখের সময় লয় হ্যে
ইটা কনু সুখের সময় লয়।
ঝুপড়ি ঘরে জোসঠার আল্য
ছায়ের পারা হাসছ্যে
যিমন লইতন বউ মরদটাকে
বেদম ভাল্য বাসছে।
বইশাগ মাসের চ্যাঁদড় রদে
ফাটে গ্যাছে মাটি
পাহাড়ের পারা দুখ্যু লিয়ে
কি করে কাল কাটি।
কাঁসাই লদী শুয়্যে কাটায়
কনু কম্মের লয়।
ইটা কনু সুখের সময় লয় হ্যে
ইটা কনু সুখের সময় লয়।
আগুন জ্বলে মনের ভিতরে
যিমন মাদল্যে তাল দিছ্যে
মরব ; না হয় মারব ইবার
নাহ্ লে বাঁচা মিছ্যে।
কাঁড় বাঁশ আর টাঙি গুল্যান
তেমন কথাই কয়।
ইটা কনু সুখের সময় লয় হ্যে
ইটা কনু সুখের সময় লয়।।
দুটি কবিতা
মিঠুন চক্রবর্তী
মুক্তি
চোখের ফুঁ-তে অন্ধকার নেভালে যখন
আমি আঁকছি বরফের চূড়ো,
হেসে, আঙুলে বিল্লি কেটে নামিয়ে আনলে পঞ্চনদী
নিমেষেই ভাসল আমার টেবিলে রাখা ঋণের খাতা
এবার কি করে যে বাজারে ঋণমুক্তি হবে আমার !
হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি যখন....
সবজির আড়ৎ থেকে বলে উঠলে, মুকুব
মাছের আড়ৎ থেকে বলে উঠলে, মুকুব
আরও কোথা থেকে কোথা থেকে যে বলে উঠলে,
মুকুব.... মুকুব....
এখন আমি চোখে কিচ্ছু দেখতে পাই না, আকাশ ছাড়া
দোতারার অধিকার
বোধন এবং বিসর্জনের মাঝেও দু'লছে তৃতীয় নয়ন-নৌকা।
আলোর পিছনে অস্ফুট ক্ষতে রাত্রি জেগেছে চৌকাঠ....
অথচ, তুমিও হামাগুড়ি দিয়ে জল থেকে উঠে দাঁড়িয়েছ এক শেকড়ে,
বৃক্ষ বেঁধেছে দোতারার ভাষা নারী-পুরুষের ভেতরের।
দিয়েছি তোমাকে ফুলের পাহাড়, এঁকেছি তোমাকে নরম,
মানুষ বলতে পুংলিঙ্গই, দেবীত্ব নাও বরং।
'নমস্তস্যৈ...' বলেছি অনেক, বলো, চেয়েছ কি নমস্কার ?
পাশের বাড়ির বোনটি চেয়েছে ভাইয়ের মতো অধিকার।
দুটি কবিতা
পিনাকী দত্ত গুপ্ত
এসো বিদ্রোহ করি
আজকে শৈত্যপ্রবাহের দিন, তবুও রক্ত ফুটছে শিরাতে শিরাতে,
গোলাপের কাটা বিঁধেছে হৃদয়ে, বেলা ও অবেলা ভালোবাসা খেলা মিথ্যে,
আজ নয় চোখ, মুখ বেঁধে রাখি কালো কাপড়ের লজ্জায় ভেজা মোড়কে,
রাজার আদেশ উপেক্ষা করে শানিত অস্ত্র তুলে নিক হাতে ভৃত্যে!
সাহিত্য-সভা মূলতুবি রাখো, ছিঁড়ে ফেলো মেকি লগ্নভ্রষ্ট সম্মান;
সমকাল কবি, আজ তোমাদের কলমে ঝরুক বজ্রকঠিন মন্ত্র,
সাজি ভ'রে ফুল তুলে রাখো, দিতে হবে সেনা'দের ছিন্নভিন্ন চরণে,
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, হাতে তুলে নাও অগ্নি-মূখর যন্ত্র
মৃত্যু না! নবজন্মের পথে না হয় ঝরুক তরতাজা কিছু রক্ত;
তবু কেন বলো বুক পেতে নেবো বুলেটের ধোঁয়া, অর্বাচীনের স্বর্গে?
প্রতিশ্রুতির মিথ্যা প্রচারে কলঙ্কময় বিকলাঙ্গেরা হাসছে,
ভূমিহীন শিশু, নগ্ন যুবতী, জাতীশ্বরেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে মর্গে!
মৃত্যু-মিছিলে হয়ত তুমিও, হয়ত আমিও, হয়ত মৌন ঈশ্বর!
রাষ্ট্রনেতারা, কান খুলে শোনো! সময় এসেছে, জবাব চাইছি আমরা!
আফিঙের ঘোরে আর কত কাল ভুলিয়ে রাখবে প্রাদেশীকতার মোড়কে?
প্রস্তুতিহীন বেলা বয়ে যায়, বারুদের তাপে এবার পুড়ুক চামড়া |
স্পষ্ট বলছি, এ কবিতা নয়, শাপমোচনের সময় এসেছে সমুখে,
বাজছে দামামা, বুঝে নেবো আজ অধিকার, তবু বারুদে পুড়ুক চামড়া...
কোনো কথা নেই
তোমাকে বলার মত আজ আর কোনো কথা নেই ;
এখন গভীর রাত... ঘুমের আড়ালে জাগে চোখ!
বিসন্ন তারা-গুলো টুপ টুপ টুপ ঝ'রে পড়ে,
অনিশ্চিতের সাথে কিছুটা সময় দেখা হোক |
দেখা হোক... ফিরে দেখা, একা একা বড় রাস্তায়..
কুয়াশায় ভিজে যাওয়া আবছা অবশ অবয়বে,
কিংবা গলির মোড়ে যেখানে ছায়ারা খেলা করে,
যেখানে সময়-সাঁকো ভেঙে গেছে, ভেঙে গেছে সবে!
দেখা হোক ভিনদেশি সেই ডাক-পিয়নের সাথে
যার কাছে গচ্ছিত ছিলো কিছু সাময়িক চিঠি,
কিংবা আগুন ঘিরে রাত-ভোর বসেছিলো যারা,
তারপর... অরণ্যে ফিরে গিয়েছিলো গুটিগুটি...
তারপর ... তারপর... কত দিন, রাত কেটে গেছে...
বৃষ্টিতে ভিজে গেছে জোষ্ঠের বুক ফাটা মাটি,
বুনোফুল, চোরকাটা, ভাঙা বেড়া, কাঠালের পাতা,
হেঁসেলের টুকিটাকি, টোল খাওয়া ঘর, ঘটি, বাটি;
এখন গভীর রাত, দেয়াল ঘড়িতে টিক টিক...
শুনশান পথ ঘাট, দরজাটা খিল দিয়ে আটা;
বাকি শব্দেরা আজ ধুম জ্বরে ঘুমিয়ে পড়েছে,
পেনিসিলিনের ঘোরে তাই কিছু আঁকিবুকি কাটা!
ঘুম নেই দুই চোখে, ছায়ারা শিশিরে ভিজে গেছে,
হেটেছি অনেক পথ, বাকি আরো অনেকটা হাটা ||
দুটি কবিতা
জ্যোতির্ময়মুখার্জি
নেই বেহারা। নেই বেহারা
বহুবার অপেক্ষার কাছে এসে দাঁড়িয়েছি
দেখলাম, সে আহারে ব্যস্ত। চামড়ার আশেপাশে
ভাঙতে ভাঙতে গড়িয়ে পড়ছে চাঁদ
আর আমি ভাবছি সন্ধ্যা হল
এভাবেই চাঁদগুলো সব একগুঁয়ে হয়ে যায়
আর আমরা ছাতা গুটিয়ে এসে বসি পাল্কীর ভিতর
‘পাল্কী চলে
পাল্কী চলে
দুল্কি চালে
নৃত্য তালে’
নেই বেহারা। নেই বেহারা
রান্নাঘরেও কবিতা থাকে
রান্নাঘরেও কবিতা থাকে
তোমার পাঁচমিশালী হেঁশেলে
দিন আনি
দিন খাই
ক্ষতি কী?
ঘি, মাখন যে হতেই হবে এমনতো নয়
তুমি ভাত বাড়ো
আমি এসে বসি পাতে
ছনছন চুড়ির শব্দ
আর তোমার আনাগোনায়, দেখো
ভাতগুলো’ও ঠিক কবিতা হয়ে যাবে
দুটি কবিতা
সুব্রত মণ্ডল
ছেড়ে চলে গেলে
জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পরে বন্দরে পড়ে থাকে একাকিত্ব শুধু। দুটো চোখ বন্ধ করে দুটো পাড়। মাঝরাতে ফিরে আসে নেশাতুর ঢেউ।
পাটাতনে শুয়ে থাকে যাবতীয় হিসেবের ছক। পুরোনো মাস্তুল।
অভিমানী সন্ধ্যার গন্ধ বুকে বন্দর ভরে যায় জলে। ভেসে যাই মাছেদের মতো। ঠিকানাবিহীন।
অভিমানী সন্ধ্যার গন্ধ বুকে বন্দর ভরে যায় জলে। ভেসে যাই মাছেদের মতো। ঠিকানাবিহীন।
তুমিও কি চাঁদ দেখো? তারাদের নাম করো সারারাত জেগে?তারা কেউ বেঁচে নেই আর। নোঙর করতে করতে একদিন দেখা হবে জেনে ভালো আছে অভিমানী নদী।
এখন পাড়ে বসে তারাখসা দেখি। তোমার চোখে সেই খসা তারা।আলো
জ্বলে। তারপর দপ করে নিভে যায় বন্দরের ঘুম। জাহাজ ছেড়ে গেলে সেও তো একা
হয়ে পড়ে। তোমার মতো ।একদম একা।
ক্ষিদে
গালিচা বেয়ে চমৎকার উঠে এলো
গায়ে হলুদের মত দিন
উপুড় হয়ে শুয়ে আছে সহস্র অসুখ গায়ে
গায়ে হলুদের মত দিন
উপুড় হয়ে শুয়ে আছে সহস্র অসুখ গায়ে
এইসব নীল নীল যন্ত্রণা থেকে মুক্তির কথা লিখে গেছে কুয়াশাচ্ছন্ন ঘুম
কেবলই স্রোতের টানে মিশে গেছি কচি লাউ খাড়ায়
সবুজে আচ্ছন্ন পরিপাটি সেই চুল কেবলই স্রোতের টানে মিশে গেছি কচি লাউ খাড়ায়
নিদ্রাহীনভাবে ঢুকে গেছে বালিকা বিদ্যালয়ের গেটে
যেনো সৌভাগ্যরা কতকাল অনাহারে বসে আছে পথের ধূলোয়
দুটি কবিতা
গৌতম কুমার গুপ্ত
সান্নিধ্য
ধোঁয়া
গড়াতে না গড়াতেই রহস্যাবৃত হল প্রাণাধিক হৃদয়।ভালবাসা সেঁকে নিচ্ছে
আগুন।রুটির মতো লুফে নিচ্ছে মাংসের তাল।আপ্লুত হচ্ছে স্নায়ুসন্ত্রাস উষ্ণ
সান্নিধ্যে।
একটি ত্রিকোণ
ক্ষেত্র কেন অহরহ ঘুরে বেড়ায়? ধরা যায় না।প্রতুল হাওয়া আর ধোঁয়া কুন্ডলী
পাকাতে পাকাতে চলে যাচ্ছে জ্বালায়।যন্ত্রণায়।বিষাদমন্দ্রে ।
সে
কি এতোই অধরা মাধুরী ? কবে থেকে অভ্যাসে দিয়েছি মন, প্রযত্নের কারুকাজ,
শস্যের বিবিধ তোলপাড়।মাটি ও জল ও বাতাস ও সার সব সব কিছু।অধ্যবসায়
অনির্বাণ।
ক্রমে ক্রমে
ঘুরে আসছে স্রোতস্বিনী। প্লাবিত উপলে জলবাহিকা হয়ে আমার মধ্যে জন্ম নিচ্ছে
নিরুচ্চার তটিনীবৈভব।আকাশে ছযলাপ এক নীলিমা কন্যা।
তখন
ডানা মেলে উড়ে এল চন্দ্র নক্ষত্র রোহিণী।আনকোরা গন্ধে টের পেলুম এই আমার
বাসন্তী শাল্মলী,ফাগুনসাটের মলয় চন্দন।আমার সবিশেষ ওৎ আমাকে পেতে দিয়েছে
ভালবাসা।
বইমেলায়
বইমেলায় ঘুরতে ঘুরতে আমি তো তোমাকেই পড়ছিলাম।
তোমার চোখ ছিল সিগনেটের শঙ্খ সুনীলে
কখনো জয় সুবোধে
আমি সুধীর শ্রীজাত পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে
তোমাকেই পড়ছিলাম।
দেখছিলাম তোমার অনুপ্রাস ব্যতিহার অলংকার
শরীর সংরাগে উপত্যকা বহুল অমিত্রাক্ষর
অভিন্ন মাত্রাবৃত্ত আমাতে মিশে যাচ্ছিল।
অথচ আমার কাঠিন্যে বেভুল ছন্দ
বানান ভুলের মুখসিঃসৃত বাক্যবাণ ছিল।
অগত্যা আমি তোমার পৃষ্ঠায় ছন্দ শিখে নিলাম
তোমার সুঠাম পদ্যরীতি অভিরাম প্রচ্ছদ
লিথোগ্র্যাফি আমাকে মুগ্ধ রাখছিল ক্ষণে ক্ষণে
তুমি জানলে না বুঝলে না তোমার অজান্তে
আমি '---তুমি' বইটা কিনে নিয়ে
আমার পেপারব্যাকে বাড়ি ফিরলাম।
পশ্চিমে তখন সাঁঝবাতির মৃদু আলো ফুটছিল।
দুটি কবিতা
পার্থসারথি
আমার আমি
আমি জানি আজ কারা আমাকে ঘিরে সর্বক্ষণ
আমি জানি আজ কোথায় দাঁড়িয়ে রাজনীতি দর্শন
আজকে বিবেক কোথায় করেছে আত্মসমর্পণ
কোন সুরে আজ গান বাধা হবে? কোন গালে চুম্বন?
পিছনের দিকে তাকাতে চাই না, স্মৃতির রোমন্থন
রং তো আমি বদলাতে পারি, পেলেই সমর্থন
সকল ক্ষেত্রে বক্তব্য আছে, অবাধ বিচরণ
আদর্শ? ওই বাজে কথা রাখো, ওসব বিসর্জন
এই দক্ষতা কাজে এসে গেছে, যা কিছু অর্জন
মিডিয়া আমাকে উপাধি দিয়েছে, আমি বিদ্দ্বজন
বিপণন
বহুচর্চিত প্রসঙ্গগুলো কে নিরপেক্ষ দৃষ্টি তে দেখার প্রহসন
আসলে আমি সব কিছু নিজের দৃষ্টিতেই দেখি
আর নীচে সাবধান বাণী শুনিয়ে রাখি
প্রতিষ্ঠাতত্ত্বে খারিজ হয়ে যাওয়া বাণীগুলি কে বক্তার নিজস্ব মতামত বলে
আমি কখনো এগিয়ে থাকি কখনো এগিয়ে রাখি
এপক্ষ ওপক্ষ প্রতিপক্ষ কে নিয়ে আপনার ভাবনা চিন্তা কে
সহস্র যোজন পিছিয়ে দেই
গৌরব বৃদ্ধির কৌশল বাড়াতে এক মুহূর্ত দ্বিধা করি না
আমি নিয়ন্ত্রণ করি পরাজিত মধ্যবিত্ত র অন্দরমহল
নিমেষে পৌঁছে যাই আমার সস্তার ঝুলি নিয়ে
আস্ফালন করি আমার শক্তির
আর উল্লাস করি আপনার নিশ্চিত পরাজয়ের
আপনি অবগত তথ্যের বিকৃতি আর অসত্যতা বিষয়ে
কিন্তু আপনি শ্রোতা, দর্শক
সচেতন মনে আপনি আটকাতে পারেন না
ঘন্টাখানেক আমার মগজ ধোলাইয়ের পারদস্তম্ভ
আমি আপনি সবাই নিশ্চিত ছাদের তলায় নিদ্রায়
কারণ সীমান্ত প্রহরায় অবিচল আমাদের সেনারা
আমি অবলীলায় টেনে নামাই তাদের
তাদের কৃতিত্ব কে খাটো করে পণ্য হিসাবে বাজারে বেচি
কিন্তু কোথায় কবে কার কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে
তার চুলচেরা বিচার আমার কাছে
সোনালী জগতের তীব্র নেশায়
চোখ তুলে তাকানোর সময় নেই কফিনের দিকে
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে আমি কাশ্মীরের সেনাকে উপহাস করি
কারন আমার কাচের ঘরে কেউ পাথর ছোড়ে না
উৎকণ্ঠার রাত কাটায় না আমার পরিবার
রাতের নিরাপত্তায় আমি ঘরে ফিরি, কফিন নামে না আমার দরজায়
দুটি কবিতা
সৌমী শাঁখারি
ঠিক কেউ না কেউ ভালো রাখে
ঠিক কেউ না কেউ ভালো রাখে
নদীর মতো ছেড়ে গেলো যারা..
বুকের মধ্যে ভালোবাসার শোক নামিয়ে
দেখেনি বন্যায় ভাসা চাঁদের খোঁজে তারা..
মাঝরাত্তিরে ঘুমঘোরে দেয় চোখের স্তব্ধতা কাঁপিয়ে!
বুকের মধ্যে ভালোবাসার শোক নামিয়ে
দেখেনি বন্যায় ভাসা চাঁদের খোঁজে তারা..
মাঝরাত্তিরে ঘুমঘোরে দেয় চোখের স্তব্ধতা কাঁপিয়ে!
একলাই তো আমি অনেকদিন দৃষ্টিছাড়া..
সোপানে এঁকে রেখেছি কান্নার জলছাপ
ফাগুন কোথাও অকালেই লুব্ধ বসন্তে পথহারা..
কেউ পড়ে দেখেনি পড়ন্ত মনের রুগ্নতাপ!
সোপানে এঁকে রেখেছি কান্নার জলছাপ
ফাগুন কোথাও অকালেই লুব্ধ বসন্তে পথহারা..
কেউ পড়ে দেখেনি পড়ন্ত মনের রুগ্নতাপ!
জোয়ারের সাথে পা বাড়িয়ে হাঁটি..
স্রোতের ঘরকে দ্রুততার সাথে বাঁধি
যদি পাওয়া যায় স্নেহমাটি খাঁটি?
সকালের বোবা রোদ্দুরকে সহস্র অনুনয়ে সাধি!
স্রোতের ঘরকে দ্রুততার সাথে বাঁধি
যদি পাওয়া যায় স্নেহমাটি খাঁটি?
সকালের বোবা রোদ্দুরকে সহস্র অনুনয়ে সাধি!
নদীর মতো ছেড়ে গেলো যারা..
বোঝেনি বিস্তর বোঝাপড়া বাকি থাকে
সুখ,অসুখেরও থাকে জড়ানোর অব্যাহত ধারা..
ঠিক কেউ না কেউ ভালো রাখে!!
বোঝেনি বিস্তর বোঝাপড়া বাকি থাকে
সুখ,অসুখেরও থাকে জড়ানোর অব্যাহত ধারা..
ঠিক কেউ না কেউ ভালো রাখে!!
ভালোবাসা কারে কয়
তুমি ছুঁয়ে না ছুঁয়ে সেই অনুভূতির বিকিরণ করেছো সূর্যালী প্রতিটি রোমকূপে,
যাকে বেলা অবেলার অস্তমেঘের আলয়রা নিশ্চিন্ত কোল বলে জানে।
তুমি বেদান্ত পারের ফেলে আসা স্মৃতি তলে হেঁটে যাওয়া সেই পূরাতন পথিক,যার দীপ্তিতে চিরউজ্জ্বল কবেকার সড়কের পদচ্ছাপ।
যাকে বেলা অবেলার অস্তমেঘের আলয়রা নিশ্চিন্ত কোল বলে জানে।
তুমি বেদান্ত পারের ফেলে আসা স্মৃতি তলে হেঁটে যাওয়া সেই পূরাতন পথিক,যার দীপ্তিতে চিরউজ্জ্বল কবেকার সড়কের পদচ্ছাপ।
তুমি সহস্রাব্দের পাথরে ক্ষয়িত সেই ইতিহাসের বানী,যার
অতল খুঁড়ে কেউ দেখতে চেয়েছে সৌম্যপুরুষের মুখ।গভীর অসুখে ছেয়ে গেছে
অস্তশেষের রাঙ্গা আলো,
তুমি ঝড়বেগে সেই পাখিটির শিরশিরে কাঁদতে থাকার কাঁপন,যা দেখা
যায় না চোখের আলোছায়া জড়ানো তটে।অথচ তার সিক্ততা ভিজিয়ে দেয় সামুদ্রিক
হৃদয়ের জলরাশির ঢল।
তুমি নিয়ত জ্বলে থাকা একলা তারার নামহীন গীতিকবিতা,যার লেখনীর আঁচড়ে কবি লিখে রেখেছে মরমের যন্ত্রণার স্তুতি।
তুমি নিয়ত জ্বলে থাকা একলা তারার নামহীন গীতিকবিতা,যার লেখনীর আঁচড়ে কবি লিখে রেখেছে মরমের যন্ত্রণার স্তুতি।
অনেক,অনেক কালঘুম পেরিয়ে,হৃদয় বিকিকিনির হাটে তুমি আবার এসে দাঁড়ালে নিশ্চিন্ত নীরবতায়।
জন্মের আগেও,জন্মের পরেও ঠিক তেমনি।
আমি কি চিহ্নিত করতে পারলাম আমার চিরচেনা
শঙ্খচূড় শব্দের যৌবন?
জানলাম, কাকে বলে ভালোবাসা?
জন্মের আগেও,জন্মের পরেও ঠিক তেমনি।
আমি কি চিহ্নিত করতে পারলাম আমার চিরচেনা
শঙ্খচূড় শব্দের যৌবন?
জানলাম, কাকে বলে ভালোবাসা?
একটি কবিতা
সন্দীপ ভট্টাচার্য্য
প্রিয় তপস্যা
ধানসিঁড়িটির নীরব স্রোতের ধারায়
অন্যরাতের আঁধার কথা বলে,
বুকের গভীর সেথায় শুধু হারায় -
যেথায় তোমার স্বপ্নেরা শুধু ঢলে ।
গগনচুম্বী স্মৃতির আকাশ জুড়ে
একফালি মেঘে মাতাল নাভিশ্বাস,
খণ্ডিত প্রেমে নির্বাক চোখ ভরে -
প্রাণদাহী বুকে শুধুই তোমার বাস ।
বেহাগ ছুঁয়েছে প্রিয় বাতাসের হাসি
মুঠোতে ধরেছি অবিরাম অভিমান ,
বিশ্বাসে ভাসে শুধু জীবনের রাশি -
দৈন্যতা তবু বাড়ায় প্রেমের দান ।
উদাসীন সুখে শুধু এক-আলো ঋণ
দিনযাপনের পরিযায়ী ভাষা ভাসে,
দুরন্ত চোখে বাড়ে ছায়াসৃত দিন -
নির্বাধ স্রোতে আগামীরা শুধু হাসে ।।
No comments:
Post a Comment