সম্পাদকীয়
এখন পৌষ। সাহিত্য এখনের চতুর্থ সংখ্যায় অবশ্য শীতের কোন গন্ধ নেই। বরং কোন কোন লেখায় ক্রমবর্ধমান রোষের আঁচ টের পাওয়া যায়। জানিনা এই আঁচ আদৌ জীর্ণতাকে পুড়িয়ে দিয়ে নূতন স্বচ্ছতাকে ডাক পাঠাতে কতটা সক্ষম হবে। তবে আশা করতে দোষ কি?
এই সংখ্যা প্রকাশে একটু দেরী হয়ে গেল। তার জন্য মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি। আশা করি সংখ্যাটি আপনাদের ভাল লাগবে। ভাল কাটুক বছরের বাকি দিনগুলো।
মনের কথা(৩)
দেবশ্রী মিত্রআমাদেরও ছোটবেলা ছিল। আমরা যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি। জেঠতুতো, পিসতুতো দাদা, তাদের বন্ধু, মায়ের খুড়তুতো ভাই, কেউ আমাদের মলেস্ট করে নি। আমরা অনায়াসে পিতৃবন্ধুর কোলে চেপে তার বাড়ি গেছি, থেকেছি, খেয়েছি, ঘুমিয়েছি, কেউ আমাদের রেপ করে নি। আমার এক শিক্ষক ছিলেন, তিনি তাঁর এক বন্ধুকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। না বলায় আর কোনদিন সে কথা তোলেন নি। তাঁর কাছে তার পরেও পড়েছি, কোনদিন আলাদা করে ডেকে কথা অবধি বলেন নি। রেপ, মলেস্টেশন কী তবে মোটেই হত না? হত তো বটেই, তবে সংখ্যা অনেক কম ছিল। বাবা-মা, পরিবারও চেপে যেত, তবু সংখ্যা কম ছিল। আমি, ক্লাস থ্রি থেকে নিয়মিত খবরের কাগজ পড়া মেয়ে, প্রথম ধর্ষণ শব্দ পড়ি রাজনৈতিক দেওয়াল লিখনে। মনে আছে, কারণ স্কুলে যেতে যেতে বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আর বাবা আমার বয়সের যোগ্য ভাষায় মানে বুঝিয়ে দিয়েছিল। তবে হঠাৎ আমাদের কী হল? আমাদের মধ্যে হঠাৎ করে এরকম ধর্ষণ, যৌন অত্যাচার বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? এমনকি শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। এরা সব রাতারাতি কোথা থেকে এল? এক জেনারেশনে আমরা এত ধর্ষক আর ধর্ষকামী মানুষজন পয়দা করে ফেললাম?
উত্তরটা হচ্ছে হ্যাঁ। এক জেনারেশনে আমরা অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল হয়েছি, টেক-স্যাভি হয়েছি, ঘরে ঘরে ফোন, নেট, দুনিয়া আমাদের মুঠিতে, আর আমরা মানুষ হিসেবে পিছিয়েছি অনেক যুগ। আমাদের সমস্যা ভারী টিপিক্যাল। ছোটবেলায় পড়া এক রাজা আর তার বাঁদর রক্ষীর মত। রাজা ঘুমোন, তাঁর অতি বিশ্বস্ত বাঁদর রক্ষী হাতে তলোয়ার নিয়ে পাহারা দেয়। রাজার গায়ে মাছি অবধি বসতে দেবে না সে। এক মাছি এসে বসে রাজার গলায়, বাঁদর বড় ভালো রক্ষী, রাজার গায়ে মাছি বসা সহ্য হয় না তার। তলোয়ার তুলে কোপ বসায় রাজার গলায়। আমাদের হচ্ছে এই দশা। ফ্রি মার্কেটে আমরা জীবনসাথী ডট কম পেলে ছেলেপুলের বাবা মা তাতে অ্যাকাউন্ট খুলে ব্যাঙ্গালোর নিবাসী অতি আধুনিক ছেলের জন্য অ্যাড দেন, সুশীল সুশিক্ষিতা ফর্সা সুন্দরী গৃহকর্মনিপুণা দেবারি গণ শান্ডিল্য গোত্রের পাত্রী চাই। আধুনিক পরিবার। দাবী নাই। ফেসবুক হাতে পেলে গ্রুপ খুলি ক্যালকম আর পেজ খুলি বাঁকুড়া মীমস। আমাদের অতি সুভদ্র কন্যা সন্তানের পিতা ফেসবুক সেলিব্রিটিরা কোন মহিলার কজন কাস্টমার আর কোন মহিলার বুকের মাপ কত বড়, তাই নিয়ে প্রকাশ্যে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে "রবীন্দ্রনাথের গান" পেজ লাইক করা লোকজন হ্যাহ্যা হিহি করতে যান। আমাদের লাইফ খিল্লিময়, অল উই ওয়ান্ট ইজ খিল্লি। আমাদের দুশো চ্যানেলওয়ালা টিভিতে সিরিয়াল হয়, প্রোটাগনিস্ট একসাথে চারটে বউ রাখেন, বাড়ির মেয়েরা এর ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন, আর বরের হাতে মার খান। আমাদের শিশুরা স্কুলের প্রোগ্রামে আর পাড়ার ফাংশানে "শীলা কি জওয়ানি"র সাথে নাচে, আমরা তা স্মার্ট ফোনে রেকর্ড করে প্রভূত আনন্দ পাই। আমাদের ছেলেমেয়েরা বিভূতিভূষণ পড়ে না, বিকেলবেলা মাঠে গিয়ে বল পেটায় না, তাদের খালি নম্বর পাওয়ার তাড়া। আমাদের ছেলেমেয়েরা সবাই ফার্স্ট হয়। ভালো স্কুলে পড়ে। কেউ গল্প বলতে জানে না।
মোট কথা, আমরা রয়ে গেছি সেই ছুঁচিবাই পুরুষতান্ত্রিক পিসীমা, কিন্তু হাতে পেয়েছি সব আধুনিক অস্ত্র। আমাদের ছেলেরা আর ভয়ে ভয়ে নুন শোয়ে গিয়ে যৌনতা চেনে না, স্মার্ট ফোনের বাটন টিপলেই তা তার হাতের মুঠোয়। কিন্তু তাকে একথা শেখানোর কেউ নেই যে, যৌন সম্পর্ক শুধুমাত্র পারস্পরিক কনসেন্টের ভিত্তিতে হওয়া জরুরী। কারো অনিচ্ছায় তাকে ছোঁয়া অপরাধ। শিশুকে নিয়ে যৌনগন্ধী মিম বানানো অপরাধ। কারণ এসব অসভ্য কথা আমাদের সমাজে বাবা মায়ের বলার নিয়ম নেই। কাজেই ছেলে শেখে, বাঁকুড়া মীমের শিশুর ক্লিভেজই স্বাভাবিক যৌনতা। বড় হয়ে আরো বড় হনু হয়, কার স্তন ছবিতে কোন নায়িকার মত দেখাচ্ছে, তার চর্চা করে। আর এরা সব তাবড় তাবড় লোক, হ্যাঁ? ভারচুয়াল সমাজের মাথা। এই হচ্ছে সময়, এই হচ্ছে সমাজ।
আমার ছেলে হাতে কমপ্লেক্স সিনডাকটিলি নিয়ে জন্মেছিল। তাকে বহু ডাক্তার দেখিয়েছি আমরা। বেশিরভাগই এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছেন "সোনার আংটি আবার ব্যাঁকা?" মানে এটি তাঁদের কাউন্সেলিং এর অঙ্গ বলে তাঁরা মনে করেন। আমাদের শিক্ষা আমাদের মেয়েদের সমান বলে ট্রিট করতে শেখায় না। আমাদের বাবা মা আমাদের সুস্থ যৌন শিক্ষা দিতে লজ্জা পান। আমাদের কোন অবসর নেই, সেই অবসরে স্বপ্ন দেখতে শেখার চাবি হাতে তুলে দেওয়ার কেউ নেই। আমাদের যৌথ পরিবার নেই। যেখানে আমরা বৌদি-দেওর, ভাই-বোন বলেও যে সম্পর্ক হয়, তা শিখবো। আমাদের বৌদি মানে তাই দুপুর-ঠাকুরপো। বন্ধুর বোন মানে নীতু সিং। তার মেয়ে মানে আয়েষা টাকিয়া।
আমাদের এইই নিয়তি।
পুনঃ সমাধান চাইলে নিজে শোধরান আগে। নোংরা পেজ, নোংরা গ্রুপ, নোংরা মানুষ, নোংরা সঙ্গ, এদের তোল্লাই দিয়ে নিজের সন্তানের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যায় না। যায় নি কোনদিন। আর হ্যাঁ, বাচ্চারা শেখালে শেখে না। আপনার ব্যবহার দেখে শেখে। এটা পরীক্ষিত ইউনিভার্সাল সত্যি। আপনি যিনি চারবেলা মহিলাদের চরিত্র নিয়ে খিল্লি করা পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করেন, যিনি বউ পেটান, যিনি সুযোগ পেলেই "মেয়ে তোলেন", নিশ্চিন্ত থাকুন আপনার সন্তানের রেপিস্ট গোকুলে বাড়ছে। হাতে মোমবাতি পোস্টার নিয়ে আর কুম্ভীরাশ্রু বইয়ে তাকে আটকানো যাবে না।
মনের কথা(৪)
মোহর ভট্টাচার্যকঠোর কথা শুনতে খারাপ লাগবে। তাও বলি, কারণ বলা দরকার।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যৌন-আবেদন-মূলক যেসব পোষাক হয়, সেগুলো পরিয়ে যখন বাচ্ছাদের টিভি শোয়ে, লাইভে, মঞ্চে নাচতে পাঠানো হয়, তখন মনে পড়ে না কেন কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে? কেন তারা ব্যাকলেস চোলি- লেহেঙ্গা পরে যে স্তন গড়েই ওঠেনি তাকে দোলানোর ইমিটেশন করে, কেন তাদের চোখ টিপতে, বিলোল কটাক্ষ করতে শেখানো হয়? কেন হাততালি পড়ে, উল্লাসে দর্শক ফেটে পড়ে যখন "মুন্নি বদনাম হুয়ি" বা "শীলা কেজোয়ানি"র তালে ৪ থেকে ১০ বছুরেদের শেখানো শারীরিক বিভঙ্গ দেখতে পাওয়া যায়?
কেন সব চেয়ে দাম বেশি চাইল্ড পর্ন আর রেপ পর্নের? দুটো যোগ করুন, দাম আকাশ ছোঁবে। চাইল্ড গোর/ স্নাফ পর্ন হলে তো বিক্রেতা পলকে লক্ষ-ডলার-পতি।
কেন নাম করা অনলাইন শপিং কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনে বাচ্ছাদের ব্যবহার করে, "অ্যাডাল্ট" সাজিয়ে?
আসলে আমরা বাচ্ছাদের খাই। রোজ। সবাই। নানারকম সুদৃশ্য মোড়কে ঢেকে-রেখে, চকচকে বাক্সে, ঝকঝকে ব্রান্ডিং-এ। নরম তুলতুলে অপাপবিদ্ধ মাংস। আহহ। কেউ কেউ একটু বেশি চিবিয়ে খাচ্ছে, তাই শব্দ হচ্ছে।
এই প্রজন্মের শিশুদের তো আমরা প্রায় কিছুই দিতে পারিনি। জল বাতাস পলিউটেড, আলোয় ইউভি, খাদ্যের অভাব নয়ত ভেজাল, বাসস্থান সংকটে, ক্লান্ত রুগ্ন অসুস্থ পৃথিবী। তিলে তিলে আরো দু'তিন প্রজন্ম ধরে মারার চেয়ে বরং আসুন, খেয়ে ফেলি। খেয়েই ফেলি।
কবিতা
গল্প
পরিচয় প্রধানপ্রেম কি এমনই হয় ?
কিছু বুঝে ওঠার আগেই
তুমি শুরু করলে মুক্তিকুটির রূপকথা
আত্মময় গল্প শুনতে শুনতে
কখন যে ঘুম এল চোখ জুড়ে
কেউ শঙ্খ প্রলম্বিত বাজিয়ে জানালো এবার রাত্রিকাল শুরু
আমাকে ঘুমিয়ে রেখে
এত সংগোপনে তুমি চলে যেতে পারো ?
এত দ্রুত জ্বালাতে পারো বিম্বিত প্রলয়ের শিখা ?
শুধুই আগুন আজ
ধোঁয়ার কুণ্ডলী অন্তিম পাক খেয়ে ঊর্দ্বগামী
তোমাকেই ছুঁতে চায়
এতই সহজ ! প্রেম কি কখনো ছোঁয়া যায় ?
আমার ঘরভর্ত্তি সাদা পাতায়
অতনু টিকাইৎতোমায় নিয়ে কবিতা লিখতে বসলেই
আমি কলম হাতে ভাবতে থাকি।
তোমায় নিয়ে এক পৃথিবী কবিতা লেখার ইচ্ছে আমার
আকাশ দেব, নদী দেব, থাকবে পাখি
কিন্তু কলম আমার থমকে থাকে
আমি ভাবতে থাকি
ভাবতে থাকি
ভাবতে থাকি।
তোমায় নিয়ে কবিতা লিখতে বসলেই
আমার সাদা পাতা সাদায় থাকে।
আমার খাতাভর্ত্তি সাদা পাতায়
তুমি আছো, কেউ জানেনা
আমার ঘরভর্ত্তি সাদা পাতায়।
আহাম্মক
বিশ্বজিৎ মাইতিবড়রাস্তা পেরিয়ে আজ বাড়ি ফেরা সম্ভব নয়,
টিভিতে বলেছে উৎসব চলবে সারারাত।
অগত্যা ফুটপাথ ধরে আমি হেঁটে চলেছি বাঁহাতি-
শহরের এদিকটা বেশ নির্জন,
অনেকটা সেকেলেও বলতে পারেন;
নাকে রুমাল না চেপে হাঁটা যায় না মোটেও,
ভাঙা ল্যাম্পপোস্ট ঘুরে একটা এঁদোগলি
লুনি নদীর মতো হারিয়ে গেছে যেন কোথায়-
তবে সাঙ্কেতিক চিহ্নের মতো জলের কলটি আছে ঢোকার মুখেই,
ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ছে-
বোঝা গেল ওটা এখনো সচল।
আচমকা শুনে যা মনে হয়,
ওটা কোন বিষাক্ত নখ দাঁতওয়ালা কুকুরের চিৎকার হবে-
পায়ে পায়ে এগিয়ে দেখি,
অনেকটা ঠিক বিজনবাবুর নাটকের কায়দায়-
খাবার নিয়ে একটা কালো কুকুরের সাথে
লড়াই করছে একটা রুগ্ন লোক,
আমি চুপিচুপি লোকটার কানেকানে গিয়ে বললাম,
“জিতেছে বাংলা আমাদের রসগোল্লা”
ছন্দ মিলিয়ে আরও কি যেন ভেবেছিলাম,
লোকটা আটকালে আমায় আহাম্মকের মতো,
বললে, “আর ভাত?"
বিনু নামের মেয়েটি
জগন্নাথদেব মণ্ডলবিনু নামের মেয়েটি অাসলে ডাইনি।ভীষন বিপরীত সঙ্গম পছন্দ করে ও।শক্ত পুরুষমানুষ দেখলেই ছিবড়ে করে দেয়।
ও এখন চাষীমেয়ের মতোন নদীর ধারে দাঁড়িয়ে অাছে।ওর অাঁচলে বাঁধা অাছে চালভাজা অার ঢ্যাপের খই।নদীতে ফুটে অাছে নীল পদ্ম।ফুলের মৃণালে গোখরো সাপের বাসা।
ওই যে নাও ভাসিয়ে এগিয়ে অাসছে কালো শরীরের ঘামেভেজা ভুবনমাঝি।ওর বাড়ি বকুলখোলা গ্রামে।
মাঝিকে দেখে গান ধরল চাষীমেয়ে-
" অাঁকড় ধানের হুড়ুম দিমু পানের সাথে গুইয়া
খাওন দাওন শ্যাষ করিয়া ডিঙায় যাইও নাইয়া"
মাঝি নাও ভিড়ালো।ভূতে পাওয়া মানুষের মতো স্পর্শ করলো বিনুর বাড়িয়ে দেওয়া হাত।ছ্যাঁকা লাগল হাতে।এ হাত যেন জ্বরে পাওয়া মানুষের।
নির্জন বাবলাবনের ভিতর সেগুন পাতা বিছানো হল।সাপের মতো মাঝির শরীর বেয়ে উঠে গেল বিনু।শঙ্খলাগা সাপ যেন।শীৎকার ধ্বনিতে বাতাস ভেঙে চুর।ছড়িয়ে পড়ল ঢ্যাপের খই।এতক্ষনে জিওল গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্য অস্ত গেল।
সঙ্গমশেষে ডাইনিমেয়ে অতল ঘুমে ঘুমিয়ে অাছে।বাতাসে বেহায়া কামিনীগাছ ঢেলে দিয়েছে সবটুকু গন্ধ।
শৈশবে তুকতাক জানা বকুলখোলার ভুবন, সন্তানস্নেহে বিনুর ডান স্তন স্পর্শ করল।তারপর চুপিচুপি পালিয়ে এল ভুবনমাঝি।
এরপর থেকে বিনু অার ডাইনিমেয়ে নেই।
এখন ঘামেভেজা কালো পুরুষ দেখলেই বিনুর স্তনযুগল টসটস করে স্তন্যভারে।
বিনুর শরীরে জেগে থাকে মা মা ভাব...
একশতম আনন্দের দিন
রুদ্রশংকরতখন আমার উঠতি বয়স, তখন আমার একশতম আনন্দের দিন।
সর্বক্ষনের সঙ্গী বলতে আলিভাই, তিমিরকান্তি আর দুষ্টু মারুফা
কফি হাউস ছেড়ে মাঝে মধ্যে ডিসুজাও আসত আমাদের আড্ডায়।
এইভাবে দিন যেত, এইভাবে প্রেম পিপাসায় জমে উঠত গল্পঘর,
মাথায় উঠত লক্ষ্মীছাড়া বদনাম।
তবু এক অতল আলোর চোখে আবিষ্কার করি
আমাদের শরীর থেকে শূন্যতায় ফোটে নতুন শষ্যের আভা।
তোমাকে বলছি সভ্যতা, তোমাকে বলছি দেশ
জন্মের সুতোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আমাদের কেউ তখন
হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান হতে শেখেনি।
এক নির্ভেজাল ধর্ম-নিরপেক্ষ ছিলাম আমরা
আমাদের রক্তে একই হিমোগ্লোবিন, স্নায়ুতন্ত্রে একই নিউরোন।
তখন আমার উঠতি বয়স, এক মশকীর জন্য কঠিন অসুখ হল মারুফার।
সেদিন ভবিষ্যৎ বাঁচাতে তিন বোতল রক্ত দিয়েছিল তিমিরকান্তি।
বছর ঘুরতে না ঘুরেতেই হেমন্তের হলুদ পাতা যেমন লুটিয়ে পড়ে
তেমনই নির্জীব উত্থানহীন লুটিয়ে পড়ল ডিসুজা,
সমস্ত রোমশ ভয় শুঁড় দিয়ে টেনে সেসময় রক্ত দিয়েছিল আলিভাই।
শুধুমাত্র এক জাতি হয়ে বেঁচে থাকার জন্য
শুধুমাত্র মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য
হিন্দুর রক্ত, মুসলমানের রক্ত, খ্রিষ্টানের রক্ত মিশে গেল শরীরে।
তোমাকে বলছি দেশ, জীবনের উল্টে যাওয়া বয়সগুলোয়
আমাদের খাবারের কোন নিষেধ ছিল না,
তোমাকে বলছি সভ্যতা, আমাদের নিষেধ ছিল না পানীয়র;
প্রকৃতির মহান বিবর্তন আমাদের সর্বভুক করেছিল।
তাতে আমাদের ক্ষতি হয়নি কিছু, সমাজেরও ক্ষতি হয়নি একবিন্দু
তখন আমার উঠতি বয়স, তখন আমার একশতম আনন্দের দিন।
গল্প থেকে ঈশ্বর
পিনাকী দত্ত গুপ্তঅনেক বার কাটাছেড়া করার পরও গল্পটা দাঁড়ালো না।
একটা আদিম রিপুর তাড়নায় ছুটে চলছি এঘর থেকে
ওঘর। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে কপালে।
অথচ জানি, দুর্গা প্রতি রাতে কড়া নাড়ে আমার দরজায়।
আমার বাড়ির কাজের মেয়েটার নামও দুগ্গা।
একদিন ওকে ডেকে বললাম, তোর বাপের নাম কিরে ?
ও চুপ করে রইলো। ভাবলাম নিচু জাতের মেয়ে।
বললাম, তোর বিয়ে হয়েছে? ও মাথা নেড়ে বলল – না।
যদিও মাথায় সিঁদুর, হাতে শাঁখা।
এখন গভীর রাত। নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে নেমে আসছে
আকাশের তারা। দূরন্ত ঝড় নিয়ে আমি বসে আছি।
হঠাৎ কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলে দিতেই দেখি
দাঁড়িয়ে আছে কাজের মেয়ে ‘দুগ্গা’। শতচ্ছিন্ন কাপড়ে
শরীরটা ঢেকে ও বলে উঠল, ‘বাবু, আমায় থাকতে দিবি?
একটা আদিম রিপুর টানে আমি আজ ‘ঈশ্বর’ হয়ে গেছি।
এখন আমার দুই ছেলে। নাম রেখেছি ‘অপু’ আর ‘অমল’।
ওদের মায়ের নাম ‘দুগ্গা’ নয় ...'দুর্গা' ।।
আজো কাঁদছে গান্ধারী
মতিউল ইসলামযুদ্ধের জয়োদ্ধত সৈনিকের হুঙ্কার নাকি
পরাজিত পুত্রহারা মায়ের অভিশাপ?
ক্ষমতার পাহাড়চূড়া,না শোকাতুর
মায়ের বিলাপ?
সাক্ষী মহাভারত,
ভুলে গেছ মুষল পর্ব?
ভুলে গেছ শাম্বর লোহা প্রসব,
সেই লোহা দিয়েই তৈরি জিরুর তির,
যে লোহার অণু পরমাণু তে
তোমাদের দুর্বিষহ অহংকার,
ঠিক যেন তোমাদের ক্ষমতার
অপব্যবহার.
নৈরাজ্যের সমুদ্র স্রোতে
তখন ডুবছে যাদব কূল,
ঠিক তখনই ঝলসে উঠলো
জিরুর তির,
বিদ্ধ হলো শ্রীকৃষ্ণ,
কুরুক্ষেত্রের চালক
যার মুখ গহ্বরে খেলা করে
বিশ্ব ব্রম্ভান্ড.
এর পরেও বলবে অবলা রমণী গান্ধারী?
হাজার গান্ধারী কাঁদছে,
শুধু মনে রেখ
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে বারংবার।
তুমি ও নক্ষত্রের দিন
প্রত্যূষ কান্তি কর্মকারআমি দাঁড়িয়ে আছি বিকেল থেকে আমাদের খেলার মাঠে
কখন সন্ধ্যে আসবে,শীতের ঝলসানো রূপো রঙের সন্ধ্যে
আর আসবে তোমাকে ছুঁয়ে আসা পরিব্রাজক কুয়াশা
তার সাদা চাদরের কোঁচড়ে মুড়ে দেব আমার যা কিছু
সন্ধ্যের এক থালা চাঁদ,কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়া পাখিদের ডানা ভরা সোনা রঙ আলো
কার্নিশে ঝুলে থাকা মেঘভাঙা স্বপ্নের ভ্রূণ
আর এসব নিয়ে যাবে ভেসে ভেসে পৌঁছে যাবে তোমার কাছে-
এগুলো সবই গল্পকথা,এরকম হয়না আসলে কখনও
ঘাসের ভেতর দিয়ে গুঁড়ি মারা পোকারাও জানে এসব আসলে ছেলেভোলানো কথা
গত বছর বসন্ত আসবার আগেই আমাদের চুম্বন আসবার কথা ছিল
তোমার বুকের মাঝখানে আমি প্রাসাদ দেখেছিলাম,বসন্তের সন্ধ্যা, কুয়াশার ভোর আর
তোমার আমার প্রেমের সৌধে সশ্রদ্ধ প্রণামে সাজানো প্রাসাদ অলিন্দ
তুমি আসোনি বলে ঠোঁটের বাসা ছেড়ে চুম্বন উড়তে পারেনি সেই দিন,অন্ধ পাখির দেওয়ালে ধাক্কা খাওয়ার মত আমার বাড়ানো হাতের সঙ্গম পিপাসা আছড়ে পড়েছে
তোমার গভীরতর স্বপ্নের চৌকাঠে
তাই সিদ্ধান্তে আসি তুমি আমার জন্য নও
তোমার কাছে আমি নগণ্য হলেও আমার নিজস্ব নক্ষত্রের দিন এখনও বাকি আছে।
কী আর বলব তোমাকে
শ্যামশ্রী রায় কর্মকারকী আর বলব তোমাকে!
সমস্ত পুরনো বই জমা পড়ে গেছে
সিলেবাস শেষ
চশমা হাতে দাওয়ায় দাঁড়িয়েছি
হাওয়ায় তুষ উড়ছে
পাশাপাশি উড়ে যাচ্ছে নীতিবাক্য,সমাস, প্রত্যয়
কানে হেডফোন গুঁজে বাইকে সওয়ার হয়ে উড়ে যাচ্ছে স্কুলের প্রাক্তনী
আমি কিছু শেখাতে পারছি না
গোঁফ মুচড়ে মুচকি হাসছেন রবীন্দ্রনাথ, টলস্টয়,ও হেনরি
আমার শেখানো শব্দ গুটখার ছেঁড়া প্যাকেটের সাথে
আকুলিবিকুলি গড়িয়ে যাচ্ছে সকাল থেকে সন্ধ্যে,
মাস থেকে বছর,বছর থেকে যুগসন্ধিকাল,
আমার হাতের তালুর ফাঁকে গলে যাচ্ছে সরস্বতীর হাঁস
কী যে করি আমি!
কিছুতেই ধরে রাখতে পারছিনা
আমি প্রাণপণ চীৎকার করছি
বাক্যের আগে শব্দ,শব্দের আগে বর্ণ,বর্ণের আগে মূল্যবোধ
আমার সমস্ত চীৎকার ঝাঁপ দিচ্ছে ইশকুলের ক্লাসঘরে
সাইকেলের গ্যারাজে, মাঠেঘাটে, ট্রামে বাসে ট্রেনের দরজায়
আমার হাত থেকে ফস্কে পড়ে যাচ্ছে চক ডাস্টার ছাত্রের মনোযোগ
ধড়াম করে আছাড় খাচ্ছে শ্রদ্ধাভক্তি
হোঁচট খেয়ে ভাবতে বসছি ভুলটা কোথায়
সাতসকালে খবর দেখে চমকে উঠছি
মাঝের পাতায় মায়ের মত মেয়ের মত মানুষগুলো
উপড়ে যাচ্ছে থেঁতলে যাচ্ছে
বাবার মত ভাইয়ের মত ছেলের মত মানুষগুলো
পিছলে যাচ্ছে লোভের ফাঁসে লটকে যাচ্ছে
কী যে করি ভাবতে ভাবতে
তলিয়ে যাচ্ছি, হাঁচড়পাঁচড় বাঁচতে চেয়ে ঘনিয়ে উঠছি
অবিশ্বাস্য গড়িয়ে যাচ্ছি সব মানুষের চোখের কোণায়