Saturday 14 October 2017

নাট্য কথা ------ প্রতীক মল্লিক






সকাল বেলা উঠেথেকেই দেখছি মুখ ভার। টিপ টিপ, টিপ টিপ তালে পৃথিবী ভবিষ্যতে যাত্রা করছে। প্রকৃতি একেবারে কুম্ভক মেরে আছে। এমনিতে আজকাল লেখা টেখা কেমন শিকেয় উঠে, বসে বসে ভ্যাংচাচ্ছে। এমন হয় মাঝে মাঝে। আমিও প্রতি-ভ্যাংচামি দিচ্ছি সুযোগ পেলেই। হয় ঘেঁটি কাথ করে কাগজে পেন্সিল ঘসা চলছে, বই নিয়ে পড়ার ভান হচ্ছে, নাহয় অন্যের প্রোফাইল দেখা হচ্ছে, কে কেমন মুখকরে ছবি তুলেছে, - আর কিছু নাহলে চিৎপাৎ হয়ে শবাসনে সরাসরি অবচেতনে। এমন কি আর আসবে যাবে ব্রহ্মান্ডে, পাশ ফিরি না ফিরি একটা কিছুও কি এদিক ওদিক হবে? মোটা সোটা বস্তুবাদে মনে তো হয়না তবু আজ গোটা দিনটা একটু অন্যরকম গেল, সেইটই একবার ভাগ করবো।

আমার এক দাদা সুজনদা, তার সাথে কথা হয়ে গেলো যে আজকে একটা নাটক দেখতে যাওয়া হবে। থেটার আরকি, অ্যাকাডেমি তে সন্ধ্যে 'টা। আমি তো এদিকে বিনাকাজে বেশ রকম ব্যাস্ত। তবু কথা দেওয়া আছে, সুজনদাও তার এক বন্ধুকে কথা দিয়ে রেখেছে। বেরিয়ে পড়লাম ছাতা মাথায় করে। এর পর রাস্তা, - প্রগতিশীল বঙ্গে বরাবরই বর্ষাকালের সময়তেই রাস্তার কাজ করাটা নিয়ম। কাজেই গলির পুরোটাই কাদায় - জলে পা ফেলবার মত জায়গা কোথাও নেই প্রায়। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে নিজেকে মিঠুন মনে হয়। মনে হয় ব্যাকগ্রাউন্ডে কোথাও ডিস্কো ড্যান্সার বাজছে। এই করে করে গিয়ে .সি. যানে চড়িতেই দেখি অ্যাকাডেমি নিকটে। জায়গাটা পরিচিত, কিন্তু মানুষজন? জানিনা কেন মনে হয় কোন কোন চাহনি চিবিয়ে খাবো, গিলে নেবো এমন এমন নীতিবাক্য বলতে থাকে। নীল রঙা গান্ধীর কাগজ দিতে টিকিট পাওয়া গেল। নাটক কারু-বাসনা। আমি আবার কারুর থেকেও চারুর একটু বেশি। ইতি মধ্যে সুজনদার সেই বন্ধু বুবুনবাবু এসে পড়েছেন, দেখা হলো। আজ যে দলের পারফরমেন্স, উনি সেই দলের সামান্য পিছনের সারীর অভিনেতা, তেমনই বললেন। সবে সবে দলের সঙ্গে যুক্তো হয়েছেন। হাল্কা পসলা আলাপ চারিতার পর গেলাম হলের গেটের সামনে।

এখোনও হলের সদোর খোলা হয়নি। বাইরে গিজ গিজ বিজ বিজ করছে সকলের মাথা। কেউ কেউ নাটকের সরঞ্জাম আনা নেওয়া করছে ওই ভীড়ের মধ্যেই। আর কি সাজ পোষাকের ঘটারে বাবা। মহিলাদের কাউকে কাউকে দেখে মনে হচ্ছে স্বর্গ টর্গ বেশি দুর নয়। পুরুষদের কারুর কারুর সাজ দেহ ছাড়িয়ে মস্তকে এসেছে। তবে দৃষ্টি বা আচরণে কাউকেই এলেবেলে ভাববার যো নেই। একজন জেঠু গোছের, ভীড়ে ভালো করে চলতেতো পাচ্ছেইনা লাঠিটাও কোথায় ফেলবে তা নিয়ে সংসয়ের ভাষা চোখে মুখে ফুটে উঠছে। ভীড় সামান্য পিছনে রেখে একটু ফাঁকা জায়গায় লাঠি ফেলতেই আমার সঙ্গে চোখাচোখি হল। অমনি সংসয়ের চোখ মুখ পাল্টে অন্যরকম হয়ে গেল, মনে হল বেশ বড় মাপের কেউ হবেন হয়তো এবং সেই সম্ভ্রমের ভাবও আমার মধ্যে ফুটিয়ে তোলাটা আমার কর্তব্য। তারপর একজন একটা পেল্লাই কাঠের বাক্স নিয়ে আমার গায়ের কাছে এসে বলল 'সাইড প্লিজ' ইংরিজিতে সরতে তো পারিনা, আবার আমার পিছনে একজন ভদ্রলোক বুকে পেটে জগদ্দল পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, এক ইঞ্চি পিছনে যাওয়া যাবেনা। আবার ওনার পাশেই এক বিরাটকায় মহিলা, চুড়িদার পিসি দাঁড়িয়ে আমি কোনোরকমে পিসি সরকার হয়ে যতটা পারি অদৃশ্য হলাম।যিনি সাইড চেয়েছিলে তিনি চলে গেলেন। বুবুনবাবু এবার দেখালেন নাট্য জগতের একজন নামকরা ব্যক্তিত্বকে। হ্যাঁ, আমারও চেনা চেনা লাগলো বটে। টিভিতে দেখেছি কয়েকবার মনে হচ্ছে। অদ্ভূত, অবিকল মানুষের মতনই! সব হতে হতে দেখলাম একসময় দরজা খুলেছে। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল হয়ে আমরা সবাই মিলে এবার ভিতরে যাবো আর কারু-বাসনার সামনা সামনি হবো।

দরজার বাইরে লাইনটা বেঁকে গেছিল চোখে পড়েনি। আমি ভাবলাম বুঝি এভাবে ঢুকলেই হয়েযাবে। নামকরা অভিনেতার পাশাপাশি ঢুকলে কিছু নাহোক নিজের কাছে নিজেই একটু হোমড়া নাহয় চোমড়া হতুম। পথের পাশে হাঁটলে যদি পথিক হয় তবে নামের পাশে হাঁটলে সুনাম হবেই। তো জি কের ব্যাপার। কিন্তু লাইন গেল এগিয়ে , সবাই বেশ সভ্য সভ্য নিয়ম মাফিক, মাপা মাপা পা ফেলতে হবে - রেজিমেন্ট মার্চ করে এগোচ্ছে। লাইনের পিছনটা ধরে ভিতরে প্রবেশ করলাম।

ভিতরে আলো আঁধারী পরিবেশ, আঁধারটাই বেশি। সবাই বেশ টান টান হয়ে বসে আছে, যেন ডাক্তার খানা। অনেককে দেখলে আবার ভয় হয়।বড় বড় দাড়ি, ঝুঁটি, ম্যাগির মতন চুল, তায় আবার কতরকম নক্সা, ছেলেদেরও হেয়ারব্যান। সেই দেখেছিলাম মৌটুসি- মাথায়, ক্লাস ওয়ানে। আর কলেজে ওঠার পর থেকে দেখছি। ওসব মাথার সোসাল- ইকোনমি কন্ট্রোলার। ওসব মাথায় দিলে বুদ্ধি খোলে, ওজন বাড়ে। শুধু তাই নয়, মেকাপ করা মণি, ফুরফুরে গাল, ফরফরে অঙ্গভঙ্গি, আর কি ধারালো দৃষ্টি রে ভাই। এঁদের চেনা চেনা লাগে। এই ফেসবুকের দৌলতে, সমাজটা গ্যালিলিওর দূরবীন মতন হয়েছে। লগইন করলেই মনেহয় চাঁদে এসেছি। সবাই নয় তবে সংখাটা বেশির দিকেই। এঁরা পৌনে-ইন্টালেকচুয়াল, স্ব -এর চেতন এর চাইতে সচেতন, স্বাধীন এই শব্দ গুলো বেশি প্রোয়োগ করে, নিজেদের ফ্যান মন্ডলীর দলের বাইরে কারুর সঙ্গে কথা বলেনা, আর কিছুনা হলে দেওয়ালে দুম দুম করে স্ল্যাং ছাড়বে। কি ছোঁড়া কি ছুঁড়ি। ওটা ফ্যাশান , সহজ প্রচার আর আধুনিক হবার  ব্রহ্মাস্ত্র।

তা যা হোক এসব হতে হতে দেখি মঞ্চের দুদিকথেকে দুজন অভিনেতা প্রবেশ করলেন। মুখে সংলাপ দিচ্ছেন - "  স্বপ্ন নয় শান্তি নয়, ভালোবাসা নয়, / হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়"  তা হবে হয়তো, এতো খরচ-পাতি করে বলছেন যখন। আবার বলছেন - " সহজ লোকের মত কে চলিতে পারে! / কে থামিতে পারে এই আলোর আঁধারে / সহজ লোকের মত!......... স্বপ্ন নয়, শান্তি নয়, কোন এক বোধ কাজ করে / মাথার ভিতরে! " সে আপনার মাথা, আপনার - ''কার , অসম্ভব হবে কেন, হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে এই ঢপের বাজারে জীবনানন্দ! মানে প্রেসার নরমাল তো? তার পর সেখানে হেম বলে এক দুর্ভাগা কবি, কবিতা লেখে। দেখছি সে তার গিন্নীর সঙ্গে কথোপকথন কচ্চে। দু-আনা দামের দুধ কিনে কে খাবে এই নিয়ে চাপা দোনামনা, একে অপরকে খেতে বলছে। আমার কেমন ফিক করে হাসি পেয়ে গেল। দুশোটাকার টিকিট কেটে এসে আমরা দুআনার শোক দেখছি, ভাবাযায়। আসলে প্রদর্শন তো, কনসেপশনে কন্ট্রাস্ট ভালো যায় আরকি? ওই যেমন বাইরে যে আদুর গায়ে বসে আছে, তার ছবি গ্যালারিতে দেখছে সুট-টাই। মানুষটা মর্কট, তার ছবিটা মার্কেট। আর আর্ট ফিল্ডে মার মার কাট কাট। নাটক এগিয়ে চলে, মাঝে মাঝে বাংলার এক নামকরা কব্যকার বিজয় গোস্বামী ঢুকে পচ্ছেন, আর একটা একটা করে জীবনান্দ আওড়াচ্ছেন। আগাগোড়া ওনার ভূমিকাটা পরিস্কার হচ্চেনা, কেন অমন গ্যালোপিন লোকালের মত যাতায়ত কচ্চেন কে জানে। গোটা নাটকের বিষয়বস্তু এরকম, - হেম নামে এক কবি তার পরিবার। বড়লোক কাকা তার বাড়িতে এসেছে। কিন্তু হেম এখনও বেকার। তার অভাবের সংসার দেখে কাকু বিদ্রুপ করছে। কিন্তু হেম লুচির মত ফুলছেনা, গোটা ব্যাপারটাকে কাটিয়ে উঠে সে কালের গোলপোস্টে গোল করেছে। বলছে সচ্ছলতা না থাকলে তুমি বাবা যাই জানো যাই বোঝো না কেন ঠিকানা - বিসর্জনের গঙ্গা মাটি, আর ভাষাণের ব্যান্ড পাটি। কিন্তু অর্থ থাকলে সমাজ তো পোষ্য, মান সম্মান আগাছার মত গজিয়ে উঠবে, নারী হাতের পুতুল মনে হবে ইত্যাদি। তা কথা কিন্তু ভুলভাল হলেও যুক্তির ব্যাপারটা বেশ টনটনে। তোমার মানা না মানায় থোড়াই কিছু আসে যায়? তবে অভিনয়ে, উপস্থাপনায় বেশ একটা দুঃখ টুখ্য দেবার নিরলস চেষ্ঠা।তবে আমার মতো স্থূল অসামাজিককে কাবু করতে পারেনি। আমার পাশের লোকটির  ওপাশে এক মহিলা দেখি পিক মোমেন্টে হঠাৎ একটু নাকের মধ্যে ফ্যাঁচ করে আওয়া করলো, ভাবলুম জিজ্ঞেস করবো উনি পিঁয়াজ কেটে ভুলেগেছিলেন কিনা। সব শেষে সে দারিদ্রতা দেখেই হোক বা কাব্যের ফুলঝুরিতেই হোক কিম্বা অভিনেতাদের উদ্দেশ্যেই হোক হাত্তালির রোল উঠলো ভালোই।

বাইরে বেরিয়ে বুবুনবাবু প্রশ্ন করলেন - কিছু বুঝলে? আমি বললুম - হেম কি ডিওডোরেন্ট নাকি বেলজিয়াম গ্লাস?
-
কোনটিই নয়
-
যদি জীবনানন্দের ছদ্মনাম হয়, আর যদি তিনি কবিতা লিখে থাকেন প্রকৃত জীবনের আনন্দে, তা হলে বুঝিনি।
তারপর অনেককেই জিজ্ঞেস করেছেন যে তাঁরা বুঝেছেন কিনা। এমন এমন উত্তর তিনি পেয়েছেন বলে শুনলাম আমার আরও গুলিয়ে গেল। ডিমের ডেভিলকে সত্য ডেভিল মনে হল। যারা আয়না বেচলো জেনে বেচলো? দেখে বেচলো? যারা কিনলো তারা দেখে কিনলো? দেখলে কিনতোযারা কষ্ট পেল তারা বেশ রসিক। হেমেরা এসে প্রতিক্ষণে যেন বলবে - কিছু মনে করবেন না, একটু ইয়ার্কি মারলুম। জন্মেগেছি তো, আর কি বা করবো করবার মতন বিশেষ কিছু দেখছি না যে। এদিকে দিন দিন ইয়ার্কি মারবার জায়গাও তো বিস্তর বাড়ছে। তাই........

এক পশলা মুহূর্ত/পার্থসারথি


পাহাড়ী রাস্তার পথে যেতে যেতে আবিষ্কার করলাম
তোর প্রতিটা মনের বাঁকে আমার জন্য জমে থাকা
বিন্দু বিন্দু তিস্তা
গাড়ির ঝাকুনিতে আমার কাঁধ ছুঁয়ে যাওয়া তোর প্রতিটা নিশ্বাস উল্টে যাচ্ছিল
আমার জন্য জমে থাকা তোর
মন খারাপের পৃষ্ঠা
কাঞ্চনজঙ্ঘা আজ বরফের রাজমুকুটে সেজেছে
এত সুন্দর আগে কখনো দেখিনি
আমি জানি তোর চোখ বন্ধ,
এক অদ্ভুত অনুভূতির চাদরে তোর জড়ানো মন আমার কাঁধে শোয়া
আমার বর্ণনা তোর মনে ছবি এঁকে চলেছে
তুলির ঐকান্তিক নিষ্ঠা
পাহাড়ে বৃষ্টি হিসাব কষে হয় না,
আমি জানি আমার কাঁধে এক পশলা বৃষ্টি শুধু সময়ের অপেক্ষা
তোর তিস্তার বুক জুড়ে আজ ছড়িয়ে দিলাম আমার ভালোবাসার নুড়ি
বৃষ্টি শেষের আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে
ইচ্ছেমতো তুই কুড়িয়ে নিস্ তা


Friday 13 October 2017

চোখ/পরিচয় প্রধান


অন্ধকারে ভেসে ছিল বিবশ আকাশ
শূণ্যে ডুবে ছিল দুই পা ।
প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল যে সত্যে
তার হাতেই ছিল অনুচ্চারিত গুপ্তমন্ত্র
সেই মন্ত্রে জেগে উঠল দুটি পাতা ।
হঠাৎ কেউ খুলে দিল বন্ধ দুয়ার
জ্বলে উঠল সম্মোহিনী আলো !
মঞ্চ জুড়ে শুরু হ’লো অভিনব নাচ
ঘুম রঙে পাথরের স্হির নৃত্য
কি আশ্চর্য্য ! তেরে কেটে ধা !
আকাশের জন্য বোবা নীল আর
সাগর সুনীল বিরহে হোক উথাল পাথাল
সবুজ ঝাউবন কাঁপুক সোনালী বালির ঝড়ে
রাজহাঁস উড়ে যাক সাদা রঙ মেখে ।
গাছে গাছে কত নরম রঙের ফুল !
আমি জানি, ফুল কি জানে সেই কথা ?
তুমি মেলে ধরলে মহামন্ত্র ছটা
যত ঈশ্বর ঈশ্বরী সার বেঁধে দাঁড়লো আলোয় ।
তোমারই কটাক্ষে যাকে
অন্ধকারে ঠেলে দিলে সে ছিল অলক্ষ্যে রসাতল ।

আমি যে অন্ধ হয়ে ব’সে আছি আজীবন
একবার তাকাবে না ?
শোনাবেনা, কোন্ মন্ত্রে সাজালে জীবন ?

মুখ ফোটা/আর্যতীর্থ


শুকনো কিছু করছি জড়ো ভাবনা কুটো
সুযোগ বুঝে মন সেঁকতে আগুন দেবো,
আনাচকানাচ খুঁজছি কথা একটা দুটো
ভাবনা দিয়ে তপ্ত কথার সুবাস নেবো।

কথা এখন দিব্যি বেরোয় ভাবনা ছাড়া
হ্যাঁয়ে হ্যাঁ মিলিয়ে দেওয়াই চলতি প্রথা
ঠেকে ঠেকে শিখে গেছে জিভ বেচারা
মগজটাকে ঘামিওনা যথাতথা।
না বলাটা কঠিন জেনো চিরকালই
হ্যাঁয়ের গায়ে না ঘষলেই লড়াই বাঁধে
আমরা তো চাই দুধেভাতে থাকতে খালি
বিনমগজেই হ্যাঁ বলে দিই সে আহ্লাদে।
তলে তলে সেই সুযোগে ঘুণ ধরেছে
অন্যলোকে বলছে কথা আমার হয়ে
ইচ্ছেমতো বিভাজনের রং চড়েছে
নির্বিবাদে আমিও সেসব যাচ্ছি সয়ে।
'আমরা'এবং 'ওরা' বলে লাইন টানায়
লাভ হয় শুধু তক্কে থাকা দখলদারের
'ওরা'এবং 'আমরা' যখন অস্ত্র শানায়
আলো তখন খোরাকি হয় অন্ধকারের।
কথাগুলোয় এবার দেবো ভাবনা আগুন
চুপ থাকাটা এখন যে কাজ অপরাধের
আমরা ওরায় বিভেদকামী জেনে রাখুন
রামধনুরং সবকটাতেই দেশ আমাদের।

ক্রীড়নক/মতিউল ইসলাম


দরজা খোলা রেখেছি,
হাড়িতে সেদ্ধ হচ্ছে মানবিকতা,
তুমি আসলেই ছিপি খুলে পান করবো
ধর্মীয় সুরা.
রঙিন নেশায় মৌতাতে বাজি ধরবো
প্রিয়ার সারল্য,
কিংবা হোলি খেলতে ও পারি
আত্মজের রক্তে,
দরজা খোলা আছে শুধু তুমি আসলেই
পূর্ণ হয় ষোলকলা.
লালসা কামনা আর যৌনতার মিশ্রনে
তৈরী আছে রাতের খাবার,
হৃদয়ের আলিন্দে পেতেছি বিছানা
নীলয়ে পূর্ণ আছে হাজার গরল.
ঠিক যেমনটি চেয়েছিলে,
ঠিক যেমনটি চাও.
দরজা খোলা আছে
তুমি আসলেই নিঃশব্দে বন্ধ করে দেব
হৃদয়ের সমস্ত আগল.

দান /প্রত্যূষ কর্মকার


নির্জন দুপুরের থেকে তাপ ঝরে গেলে অনায়াসে লেখা যায় নিবিড় রহস্যে মোড়া ঘুম অথবা জন্মের ইতিহাস ফুটে ওঠে পাখির বাসার মত ঘরে,তবুও কখনও কখনও এই
গভীর ঘুমে অচেতন শরীর থেকে উঠে আসে
ভূমিহীন শিশুদের দল,স্বপ্নে ঘুম ভেঙ্গে দেখি
ওদের চোখ দুর্গা আরতির ধোঁয়ায় জ্বালা করে ওঠে,ঠোঁটের কোনে জমে ওঠে শরতের মেঘের মত পেঁজা পেঁজা ফেনা,বাজনার তালে তালে বুক ঢিপঢিপ করে,মাথা তুলে নগ্ন মুখে জিজ্ঞেস করে এই এত আলোর থেকে আমি কতটুকু নিয়েছি আলো?স্বপ্নের ভেতর কেঁপে ওঠে আমার শিরস্ত্রাণ,আমার সাম্রাজ্য,
আমার বুকের খুব ভেতরে শিরশিরে অন্ধকারে থইথই করে ওঠে ঘুমানোর ছল
ওদের পায়ের কাছে জমে ওঠে আমার আরও একটু ঋণ
তারপর ওদেরই বুকের কাছে মাথা নীচু করে খুঁজে নিই ক্ষমা
হে নিরন্ন শিশু,আর কত ঢেলে দিবি অপাত্রে দুর্বহ ক্ষমাশীল দান?

আশ্বিন / শ্যামশ্রী রায় কর্মকার


ভোর ভোর ঘণ্টা বাজে জোড়া গীর্জায়
যেন ঈশ্বর যাবার আগে ডাক দিয়ে যায়
যেন শেষের সেদিন
নীলমাথা পুরনো দোকানে ময়লা স্যাণ্ডো পরা লোক
একমনে কবেকার গ্রামাফোন সারে
বাজায়,আবার খোলে পুরনো ইস্ক্রুপ
অপূর্ব মোহময় সুরে
কে যেন আলোর স্বর বাজায় সেতারে
পাখিরা ডানার ভাঁজে আড় ভাঙে
ছোট ছোট লাফ দেয় উড়বার আগে
আমাদের ছোট ছোট আনমনা পাপ
ধুয়ে যায় জলের ঝাপটে
সমস্ত আশ্বিন জুড়ে আকাশে ছড়িয়ে থাকে দেবতার নীল
সংবৎসরের যত শিহরণ কাশ হয়ে ফুটে থাকে উন্মুক্ত মাঠে।

আলোকিত/ শ্যামশ্রী রায় কর্মকার


পায়ের পাতা গুটিয়ে নিচ্ছে সময়
আমি টের পাচ্ছি
তোমার গভীর স্রোতে
যবে থেকে ছুঁয়েছি আঙুল,
অন্ধকার সরে যাচ্ছে সমস্ত বিপন্নতা থেকে
ছুটে আসছে হরিণ রঙা রোদ।