জীবন
জীবন
অশ্রু খুশি
ভোর হলেই আমি চোখ ফিরে পাই।
ধুলোর উড়ে যাওয়া দেখি, গ্রামের পথ জুড়ে
আর পাখি শব্দের হই।
আমার সমস্ত বালক-জীবন ,ধান ক্ষেতের মধুর উল্লাসে যেন নেচে নেচে ওঠে!
রবীন্দ্রগানের সুর ভেসে যাই, আর রঙিন হয়ে পড়ি।
স্মৃতি কিছু উসকে না-দেখাই ভালো ।
বুকের উপর দিয়ে পিষে যাওয়া চাকার গাড়ি
আমাকে রাস্তা দেখায়। সেই রাস্তায় আমি পথ হাঁটি।কবিতা ওড়াই। কষ্ট পাই খুব । আর
নোনা সময়ের সেই কষ্টেের ভিতর দিয়ে, হাসতে গিয়েও দেখি, অশ্রু-খুশির আমার জল নেমে আসে।তাই সময় পেলেই তোমাকে লিখি।
ভেতরের সমস্ত অন্ধকার কথাগুলি আমার ,
সত্যের পাথরে ঘষে - মেজে মস্তিষ্কে তুলে রাখি। আর কখন একটা নিজস্ব আলোর হয়ে যাই জীবন ।
ব্যথার জ্যোৎস্না
যদি আসো তোমার পাশে বসি
আমি তো সেই তোমার চেনা পড়শি।
এতদিনের জানাশোনা সব কি
হতে পারে এমনতর মেকি!
যদি আসো তোমার পাশে বসি
আগের মত গল্পগাছা করি,
সেই যে গেলে আর না কভু ফিরলে
দুঃখ নিয়ে তোমাকেই যে স্মরি।
সুজন আমার বন্ধু আমার, তুমি
ফিরে এসো আমার উঠোন পরে,
গলা ধরে গানের স্রোতে ভাসি
স্মৃতির ঘন্টা অন্ধাকারে নড়ে।
হাওয়া বয় পাতা খসে যেন
সময় শুধু পুরাতন হয় কেন?
বুকের মধ্যে কারা নড়ে চড়ে
আবছা সব ঠাওরে না পড়ে।
তোমার কথা তোমার ছবি জাগে
আমার সকল আকুলতার মাঝে,
শিউলি যেন অবহেলায় ঝরে
আমার শূন্য একলা উঠোন পরে।
তুমি এসো ফিরে এসো বুকে
আরোগ্য হও কঠিনতর অসুখে।
আমার পরান তোমার জন্যে কাঁদে
তুমি আমার ব্যথার জ্যোৎস্না চাঁদে!
লকডাউনের কবিতা
১
গেড়ু একটি বাবার নাম। গেড়ুর একটি হাত নেই। গেড়ুর ঘরে বৃদ্ধ বাবা, বৌ আছে। লকডাউনে গেড়ুর সামান্য বেতনের কাজটা নেই। খিদে কি বোঝে লকডাউন? বাড়িতে মেয়ে-ছেলে না খেয়ে তাই গেড়ু এখন রাস্তা-ধারে বড় মহুল গাছটার নীচে বসে ফুল কুড়ায়। এক ব্যাগ মহুল ফুল কোন একজনকে দিলে সে গেড়ুকে কিছু টাকা দেয়।
২.
মৈনি ক্ষেপি। একজন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা; নামোপড়ায় থাকে। মানসিক ভারসাম্যহীন। মাচিস বাক্সর মতো একটা ঘরে বেঁচে আছে মৈনি। ঘরভর্তি পুটুলি। মৈনি সারাদিন পুটুলি বানায়। মানুষের কাছে হাত পেতে পেট চলে।
লকডাউনে রাস্তা-ঘাটে মানুষ নেই। খিদে পেলে মৈনি কার কাছে হাত পাতবে?
উল্লাস
বৈভবের আশ্চর্য প্রতিবেদন সাজিয়ে
রাখছে কেউ আর একটা দুটো
মানুষ ঘুরছে
আর ঘুরছে
তুমি কি ছুঁয়ে ফেলতে চাইছো আকাশ?
তাহলে ভালোবাসতে পারো আমার জেঠুর ছেলেকে!
শেষ রাতে
শেষ রাতে তার ঘরে ঈশ্বর এসেছিলেন
তখন সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন
তাই তাঁকে বসতে দিতে পারেনি
কিছুই দিতে পারে নি
কেন না তিনি ঈশ্বর
তাঁকে বসতে দেওয়ার মতো পবিত্র অলঙ্কার
তার;
শেষ রাতেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল
রাবার জমিয়েছি চামড়ার নীচে
দু’টি কবিতা
একটি কবিতার জন্মকথা
টেবিলে বসতেই, ঠিক সামনে
শাদা কাগজের ওপর
হাঁটু মুড়ে বসল ফেরারি যুবক৷
বুকে সম্মোহনের অঙ্গার,
হাতে অদৃশ্য নীলমণি ক্ষত...
মুখ তুলে হঠাৎ সে হাসল–
সে-হাসি লক্ষ কান্না দিয়ে বাঁধা৷
তারপর বেশ খানিকটা সময়
কথাবার্তা চলে – স্মৃতিচারণ ও
ভাবের আদান-প্রদান৷
এইসব চলতে চলতেই আচমকা
সে উধাও হয় আর আমি
অবাক হয়ে দেখি, শাদা কাগজটি
ভরে উঠেছে ভেজা ভেজা অক্ষরে৷
একটি স্বপ্নের জন্মকথা
শ্বেতপদ্মের মতো মায়াবী মাতল গ্রীবা
গ্রীবায় ছোঁয়ানো আঙুল পুড়ে হয় ছাই
ছাই দিয়ে সাজানো এই জীবন-গরাদ
গরাদের মাঝে উড়ে বেড়ায় প্রাণপাখি
পাখির চোখের সিন্দুকেই আছে মুক্তি
মুক্তির উন্মথনগুলি মুছে যায় অশ্রুতে
অশ্রু একমাত্র সত্য, অশ্রু সত্য মুকুর
মুকুরে লুকনো আছে আরেকটি মুকুর
অভ্যেস উঠে আসবেই জল পেরিয়ে
যেন কেউ নেই, আর কেউ নেই...
এমন ভাবাবেগে তুমি সাজাও বাক্য-ব্যবহার
তীব্র শ্লেষে গৃহহীন করে দিচ্ছ অপছন্দের লেখাসমূহ
এই দৃশ্যের কাছে কবিতা চোখের জল ফ্যালে
তুমি যে ঝোপঝাড় অতিক্রম করে এসেছ
সেখানে আহার্য পায় না আর পাখিদের দল
পুড়িয়ে ফেলেছ খসড়া পান্ডুলিপির
তাও আমি বসে থাকি অক্ষরের ঘরে
ধারণা থেকে ঘুমন্ত কবিতা থাকে কয়েক কদম দূরে