মধুবনী চ্যাটার্জী
Saturday 27 June 2020
মধুবনী চ্যাটার্জী , কবিতা , সাহিত্য এখন বর্ষা, ২০২০
মধুবনী চ্যাটার্জী
মৌমিতা পালের কবিতা 'আদর'
মৌমিতা পাল
দাঁতাল মাতাল আর কাঙাল শুয়োর ছত্রভঙ্গ হয়ে
একে অপরের চোখের ভেতর তুমুল নাদান
সুষম বণ্টনের আগে চিনে নাও প্রাথমিক সরলতা
পদ্মাবতী তোমার চোখে প্রেমিক চিনতে চায়নি
বলা ভালো , দেবতা সভায় বেহুলা
নেচেছিল ধ্যাবড়া কাজল চোখে
ফাতনা কাঁপলেও , রুই- কাতলার খবর নেবার
সাধ্য তেমন কই!
পদ্মাবতী প্রেমিক চিনেছিল যাকে ,
তাকে দেখতে দেখতে চোখ মটকাও গোছের
কোন সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখেনি সে
না তাকিয়েই বলেছিল-
' হাতখানা রাখো কপালের ওপরে'।
আদর তারই।
মৃণালকান্তি দাশের কবিতা 'চর'
অরুণাভ রাহা রায়ের কবিতা 'ডানা'
সঞ্জয় কর্মকারের কবিতা 'প্লাবন'
তোমার চোখে ভস্ম হতে পারি
অশ্রু জলে বাঁচিয়ে রাখি প্রাণ
তোমার ছোঁয়ায় গৃহস্থালির সুখ
সন্ধ্যাকালে হাস্নুহানার ঘ্রাণ।
তোমার ঘরে মুক্ত চড়ুই যত
জ্যোৎস্না নামায় অলীক ভালবাসা
তোমার কাছে পণ রেখে দিই মৃত্যু
পূরণ করি সর্বনাশের আশা।
রাতজাগা সব পতঙ্গদের ভিড়
একলা ঘরে নিঃস্ব যাপন রোজ
কূল ভাসানোর নেই তো কোন তীর।
পুস্তক আলোচনাঃ সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়
পুস্তক আলোচনা
সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়
নামঃ নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা
প্রচ্ছদঃ সৌজন্য চক্রবর্তী
প্রকাশকঃ ধানসিড়ি
মূল্যঃ ৪৫০ টাকা
নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা একটি ফিলোজফিক্যাল থ্রিলার। তবে শুধু তাইই নয়। বৌদ্ধ জীবনচর্চার এক যাত্রাপথও বটে। উপন্যাসটি আবর্তিত হয়েছে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জীবনপথকে কেন্দ্র করে। তবে উপন্যাসের মোচড় এখানেই যে, এখানে সময়কাল দশম একাদশ, ত্রয়োদশ ও একবিংশ শতাব্দীকে কেন্দ্র করে ক্রমশ বিস্তার লাভ করেছে। সেই সাথে বদলেছে ভাষার প্রয়োগ। তৎসম শব্দের প্রয়োগ ত্রয়োদশ শতকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ করেছেন লেখক সন্মাত্রানন্দ শোভন। যদিও দীপঙ্কর বা চাগ লোচাবা কেউই হয়ত এভাবে কথা বলতেন না। তবু সময়কালকে গুরুত্ব দিয়ে তাকে বাস্তবতা দান করার জন্যই লেখকের এই প্রয়াস।
প্রথমেই আসি নামকরণে। নাস্তিক কেন? সাধারণ ভাবে দার্শনিকরা মনে করেন বৈদিক প্রমাণকে যারা স্বীকার করেন না তারাই নাস্তিক কিন্তু এখানে নাস্তিক অর্থে ব্যাপ্তিকে অস্বীকার। পারমার্থিক দিক থেকে বুদ্ধ, ধর্ম, সঙ্ঘ সবকিছুকেই অস্বীকার করেন অতীশ। অথচ মানবতার গুণে অতীশের চেয়ে বড়ো আস্তিক বোধহয় কেও নেই। তবুও ইতিহাস তাকে এমনই ভূষণে অলংকৃত করেছে। লেখক হয়ত এই দুইভাবে অর্থাৎ খানিক বিদ্রুপাত্মক অর্থেও নাস্তিক শব্দের প্রয়োগের দ্বারা নামকরণ করেছেন উপন্যাসটির।
গল্প কেন্দ্রীভূত হয়েছে একটি পুঁথিকে ঘিরে। বাংলাদেশের বজ্রযোগিনী গ্রামে অনঙ্গ দাস নামে এক গরীব কৃষক মাটি খুঁড়তে গিয়ে চন্দনকাঠের এক বাক্স হাতে পায়। তাতে ছিল এক প্রাচীন পুঁথি, একটি মালা ও একটি বৌদ্ধ তারামূর্তি। এই পুঁথিকে ঘিরেই শুরু হয় আবিষ্কারের সন্ধান।
সময় যেখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। অমিতায়ুধ থেকে চাগ্ লোচাবা কিংবা চাগ লোচাবা থেকে চন্দ্রগর্ভ। এই চন্দ্রগর্ভ হল দীপঙ্করের পূর্বনাম। গল্পে শাসন করে তিন নারী স্বত্ত্বা। এরা যেন একই কায়া, একই ছায়া। তবু ভিন্ন সময়ে এদের অবতরণ। জাহ্নবী থেকে কুন্তলা, আবার কুন্তলা থেকে স্বয়ংবিদা এরা পরস্পর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা একই নারীর তিনরূপ। যার অদৃশ্য পরিচালনায় বয়ে চলেছে যেন অতীশের জীবন। সময়ের তিনপর্বেই প্রয়াণাসক্ত তরুণীরা কোথাও অপেক্ষায় অবহেলায় ধৈর্যে সংযমে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। তারা পরিণতি চেয়েছে প্রিয় মানুষের কাছে। তারই রেশ থেকে যেন বারবার জন্ম। অবশেষে জাহ্নবী, মর্যাদা পেয়েছে স্ত্রীর। গল্পের নায়ক একবিংশ শতকের অমিতায়ুধ বিবাহ করে তাকে। এও কি কোথাও পূর্বের অসম্পূর্ণ মিলন নয়? উত্তর থাক পাঠকের কাছে। পাঠক বুঁদ হয়ে থাকে গল্পের বিস্তারে।
কখনো বজ্রযোগিনীতে অতীশের ভিটা,কখনো কলকাতা, কখনো তিব্বত, কখনো নেপাল ঘুরে ফের বাংলাদেশে ফিরে আসা। কলকাতায় এসে সমাপ্ত হয় এই যাত্রা। উপন্যাসের ভিতরে, উপন্যাস লিখেন শাওন বসু নামের এক চরিত্র। সেই শাওন বসুই আসলে লেখক সন্মাত্রানন্দ নিজে। চরিত্ররা ক্রমশ ঘিরে ধরেছে যেন তাকেই।
আমরা দেখি দীপঙ্করের বাল্যকাল, শিক্ষা, তার বাল্যবন্ধবী কুন্তলা, তার আত্মহত্যা, আবার নানা ভাবে নানা যুগে তাদের ফিরে আসা। এর মাঝেই চন্দ্রগর্ভের দীপঙ্কর হয়ে ওঠা, বিহার পরিচালনা, নেপাল যাত্রা। ত্রয়োদশ শতকে চাগ লোচাবার অবতরণ। অতীশকে নেপাল হয়ে তীব্বতে নিয়ে চলে সে। সময়ের আস্তরণে জড়ানো এই চরিত্রের সাথে সাক্ষাত হয় স্বয়ংবিদার। যিনি দীক্ষা দেন তাকে। সবশেষে
দেখা দেয় অমিতায়ূধ। বর্তমান শতাব্দী। অমিতায়ূধ এক আর্কিওলোজিক্যাল রিসার্চার। যে বাংলাদেশের বজ্রযোগিনী গ্রামে আসে হাজার বছরের সেই পুরোনো পুঁথি নিয়ে গবেষণার জন্যে। সেখানেই তার পরিচয় জাহ্নবীর সাথে, যে এ শতাব্দীতে অনঙ্গ দাসের কন্যা।
উপন্যাসটি অবশ্যই একটি গবেষণা কেন্দ্রিক উপন্যাস। লেখকের ভাষায়, প্রত্যাখ্যানের কবিত্বের মুগ্ধতায় পাঠকও যেন ক্রমশ এগিয়ে চলে সেই যাত্রাপথ্ যেখানে হয়ত লেখকের কলমে কোথাও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে অতীশের জীবন।
পরিভাষামুক্ত দর্শনের প্রকাশ লেখক ঘটিয়েছেন তাঁর সুদক্ষ লিখন ভঙ্গিতে। সেই সাথে একাকার হয়ে গেছে জীবনের আকস্মিকতা অর্থাৎ থ্রিলার এলিমেন্ট। অন্তর্জীবনে বৌদ্ধতারামূর্তির প্রণয়ে নিজেকে নিবেদন অথচ বর্হিজগতে সেই আস্তিকতাকেই অস্বীকার- এ দ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটেছে গল্পের সর্বত্র। অতীশের জীবনে কুন্তলার অবস্থান কি এরই বহিঃপ্রকাশ নয়?
স্তরে স্তরে আচ্ছাদিত একটি টিলা যেন ভেঙে যাচ্ছে ক্রমশ কালের বহমানতায়। মিশে যাচ্ছে এক সময়কাল অপরের সাথে। মিশে যাচ্ছে অহং, অস্তিত্ব। এক চরিত্র রূপ নিচ্ছে আর এক চরিত্রের সাথে। এ যেন দুটি নদীর মিলনপথ। সমস্ত আবহটিকে লেখক সাজিয়েছেন বাংলার প্রকৃতির অসাধারণ বর্ণনায়। এ কালের ভাষা মিশে গেছে পলিমাটির মতো নদীর গর্ভজলে। নিঃসন্দেহে উপন্যাসটি একটি সার্থক সাধনার ফল। পাঠক হৃদয় ছুঁয়ে যার বিস্তার আদি অনন্তকাল।
লুইস গ্লাকের কবিতাঃ সুজিত মান্না
ভাষান্তরঃ সুজিত মান্না