সম্পাদকীয়
পলাশের
মনখারাপ,শিমূলের মুখ ভার। বসন্তের যাবার সময় হয়ে এল।যাবার আগে সে উজাড় করে দিয়ে
যাবে সম্বৎসরের ভালোবাসার রঙিন সিন্দুকখানা। প্রকৃতি কার্পণ্য শেখেনি। কার্পণ্য
শুধু আমাদের অন্তরে। আমরাই মনের ভিতর কাঁটাতার দিয়ে রাখি, হারিয়ে ফেলি ভালোথাকার মূল্যবান
চাবিকাঠি।
এই যে এত
তোমার আমার বলে দড়ি টানাটানি, এত ঘর গুছিয়ে রাখার ধূম... এর কতটুকু সাথে যাবে? কী
দিয়ে যাব আমরা পরের প্রজন্মকে? আমরা অভিভাবক, আমরাই ভাল বুঝি- এই বলে আর জাঁক করতে
পারব কি? খবরের কাগজ খুললে, টিভির চ্যানেল খুললে বারবার ছোটদের সামনে মাথা নত হয়ে
আসে কেন? কেন ওদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারি না?
এবার ভাবার
সময় এসেছে বললে আসলে খুব ভুল হবে। ভাবার সময় এসেছিল অনেকদিন আগেই। আমরা ভাবিনি।
অথবা ভেবেও করিনি কিছুই। নিজেদের গণ্ডীর মধ্যেই কেটেকুটে সীমাবদ্ধ করে রেখেছি
আমাদের ভাবনার শাখাপ্রশাখা। আমাদের কবিতায়,গল্পে, প্রবন্ধে সাময়িক ভাবে উঠে এসেছে
এসব প্রসঙ্গ।ঘৃণার শিকড় খুঁজে তাতে লাগাতার আঘাত করার শক্তি অর্জন করতে পারিনি।
নতুন বছর
আগত প্রায়। নতুন করে শপথ নেবার দিন আসছে। সর্বশক্তি দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে হবে আমাদের
এই ঘর, এই উঠোন। সাহিত্য এখনের পাতায় তারই স্পন্দন শোনা যাচ্ছে। বন্ধু,শুনবেন কি?
শ্যামশ্রী রায় কর্মকার
মনের কথা (৭)
আরো কত প্রজন্ম?
মৈত্রেয়ী সরকার
আমার ঠাকুরদাদা যশোহরের নড়াইলের
চিত্রা নদীর পাড়ের মানুষ ছিলেন।নোয়াখালি দাঙ্গার সময় ভিটেমাটি দেশ ছাড়েন।আমার মা
সাতক্ষিরার মেয়ে,একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে লিগ আমলীগের হত্যা দেখেছে,যুদ্ধের তান্ডবে এগারো বছর বয়সি মায়ের কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো কিছুকাল।তারা
লীগের হুমকি খেয়ে তিন দিন তিন রাত নৌকায় চেপে প্রাণ নিয়ে ইন্ডিয়ার ক্যাম্পে চলে
এসেছিলো।তারপর ফিরেও গেছিলো স্বাধীন দেশে।কিন্তু সত্যিই কি ওই হিন্দু পরিবার
স্বাধীনতা পেয়েছিলো? দাদুর বিবাহযোগ্য পাচ মেয়ে মা বাবা বাড়ি
ছেড়ে ইন্ডিয়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে বাড়িতে থেকেছে, কি নিদারুণ ভয়
ছিলো তাদের চোখে লুঠ হয়ে যাওয়ার।আমি ছেলেবেলায় বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সময় দেখেছি
মায়ের চোখে কি নিদারুণ ভয়।বাংলাদেশে মা ভাইরা বেচেঁ থাকতে পারবে তো? আমার ক্লাসের সাবিনা ইয়াসমিনের চোখে ভয় দেখেছি সেই বারবির সময়।তাদের নাকি
ভারতবর্ষে থাকতে ভয় করে,বিশেষ এক সরকার ভোট পেয়ে ক্ষমতায়
এলেই তাদের ভয় বাড়ে।গুজরাটের দাঙ্গার সময় আমাদের এক দূর সম্পর্কের দাদা নিখোঁজ হয়
লেবার শ্রেনীর কাজ করতে গিয়ে।তার মা আজো অপেক্ষায় বসে থাকে তার ছেলে ফিরে আসবে এই
আশায়।আমার এক ছাত্র সাইফুল একবার আমার আর এক ছাত্র পলাশদের বাড়ি আমার সাথেই
লক্ষ্মী পুজোর প্রসাদ খেতে গিয়েছিলো। পলাশের দাদুর সাথে আলাপচারীতায় সাইফুল তার নানার
পরিচয় দিতেই জানতে পেরেছিলো ওই বিরাট বিরাট পুকুর বিঘা বিঘা সম্পত্তি একসময় তাদের
ছিলো,দাঙ্গার সময়,মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়ার
সময় প্রাণ
ভয়ে তারা সব ছেড়ে হিজলির মতো
শ্মশান ভাগাড়ে গিয়ে তখন সবাই আস্তানা গড়েছিল।সাইফুলদের মুখে মুখে এখনো সেই
যন্ত্রনার কথা ঘুরে বেড়ায়।
আমার ঠাকুরদাদা নোয়াখালি দেখেছে,মা মাসিরা একাত্তর
দেখেছে,আমি সেই শিশুকালে বাবরি দেখেছি, গুজরাট দেখেছি,এখন বাদুড়িয়া দেখছি,দত্তপুকুর দেখছি,রানীগঞ্জ দেখছি।জানি না আমার পরের
প্রজন্ম আরো কি কি দেখবে! হে ভগবান! ওরা বোধহয় এই দেখাগুলো
নিয়েই ওদের মতো করে দেশকে চিনবে,যেখানে রাম রহিম নিয়ে যুদ্ধদিন খবরে
রোজনামচায় থাকবে।আর কতদিন এই অভিশাপ বুকে নিয়ে বেড়াবো আমরা? আরো
কতো প্রজন্ম?
মনের কথা(৮)
হ্যাপি ডে
পারমিতা মালী
এবার শুরু করছি । ধরুন যারা কাগজপত্রে লেখালেখি করেন, মানে লেখাটা যাদের
বাধ্যতামূলক কাজ বা পেশা, তাঁরা সবাই কিন্ত বাধ্যতামূলক ভাবুকও। শুধু তারাই নয়, আমরাও, যারা কি বোর্ড এর সামনে বসতে পারি অন্তত , আমরাও অল্পবিস্তর
ভাবি। আমরা সবাই স্তরে স্তরে
বিস্তর ভাবনা চিন্তা করি। সাপ, ব্যাঙ, কড়া ও শর্করাধর্মী, স্নেহরস ও পিত্তরসধর্মী বিচিত্র সব আইডিয়া ঠিক সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ছুটে ছুটে আসে,আর ভেঙে পড়ে আমাদের মগজে। তা এইসব করতে গিয়ে আমাদের প্রচুর মানসিক পরিশ্রম
হয়, তাই আমাদের মাথা টাথা ধরে। আমরা ঘন ঘন চা খাই, সিগারেটে টান দিই, এস্পিরিন খাই, প্যারাসিটামল গিলি । কেউ কেউ আবার এইসান টেনশন খায়, যে
খাবার টাবার খেতেই ভুলে যায়। তারপর সেইসব ভাবনা টাবনা জমলে আমরা লিখতে বসি। সাপ,
ব্যাঙ, হাতি, ঘোড়া যাহোক
কিছু একটা লেখা দাঁড়ায়। এবার সেইসব ভাবনাতেও টান পড়ে একসময়। তাই নিত্যনতুন ভাবনার সন্ধানে
মনের মধ্যে মৃগয়া করতে হয়। হাতে তীরধনুক নিয়ে বন জঙ্গল,পাহাড়,
পর্বত হাতড়ে বেড়াতে হয়,তারপর যা দু চারটে
আইডিয়া বেরোয়! সুতরাং, এই পুরো ব্যাপারটা কিন্ত খুব
শ্রমসাধ্য প্রজেক্ট,এই আর কি!
এখন ব্যাপার হচ্ছে, যা
কিছু চর্চাই চলুক না কেন,তা যদি অনর্গল চলে, তাহলে তো ভাঁড়ারে টান পড়বেই! চব্বিশ ঘন্টা ধরে যদি সাতশো খানা চ্যানেল চলে,অনলাইন দুনিয়ায় অনন্ত পোষ্ট পড়তেই থাকে দিবারাত্র তাহলে চিন্তাধারায় তো কমতি পড়বেই। রোজকার থোরবড়িখাড়ার মধ্যে এত
খবর আসবেই বা কোত্থেকে! এত কি এমন ঘটে চারপাশে যে রাবণের চিতা জ্বলতেই থাকবে?
কোত্থেকে জুটবে এত জ্বালানি!...সুতরাং একটাই সলিউশন। খবর যদি
ফুরিয়েই যায়, নিজেকেই জ্বালাও! অন্তত কিছু একটা দিয়ে আগুনটা
জ্বালাও!
মাথাটা কেন গরম হলো তা বলি। আজ নাকি হ্যাপি ডে ! বাপের
জন্মে শুনিনি হ্যাপি ডে বলে কোনো ডে থাকতে পারে ! হ্যাপির ও আবার ডে রাখতে হবে! এত
হ্যাপি আসে কোত্থেকে !
আরে বাবা এন্টারটেইনমেন্ট এর ও তো একটা লিমিট আছে রে বাবা
! আর এতো বুদ্ধিহীন এন্টারটেইনমেন্ট দেখবই বা কেন ! পড়াশোনার ঝামেলা
নেই, বুদ্ধিবিবেচনার দরকার নেই, দিবারাত্র
মাড়ি বের করে পাগলের মতো হি হি করে হেসে গড়িয়ে পড়ো! তবেই নাকি তুমি খুব হ্যাপি! কোনো
মানে হয় এসব ছেলেমানুষির!
ছোটবেলায় সিনেমা দেখে ভাবতাম, হিরোইনদের চুলে
বুঝি জট পরে না, গায়ে ঘামের গন্ধ হয় না। বিজ্ঞাপনের সংসারে
ময়লার লেশমাত্র নেই। চাদর টাদর সব টানটান করে পাতা থাকে। দুঃখকষ্ট সেখানে ঢোকেই
না। ঝকঝকে জামাকাপড়, ফটফটে দাঁত, আর
ফুরফুরে চুল নিয়ে তারা খালি হেসেই যায়,হেসেই যায়। কারণে
অকারণে এ ওর গায়ে হেসে গড়িয়ে পড়ে! বড় হয়ে তো সবাই বুঝেছি, এতো
হাসির কোনো কারণ নেই। এতো ফুর্তির দুনিয়ায় কেউ বাস করে না। সক্কলকে ধাক্কা খেয়ে
খেয়ে, রক্তাক্ত হয়ে হয়ে,তবে এগোতে হয়। আচ্ছা, তারা নাহয় হাসার জন্য পয়সা পায়, কিন্তু গোটা আন্তর্জাল জুড়ে কেন এত অকারণের হাসাহাসি! কেন এমন ক্লাউন সাজা?
পরীক্ষায় ফেল মেরেছ?.হেসে গড়িয়ে যাও। বউ
ভেগেছে?.সে তো আরো হাসির ব্যাপার! প্রেমিক ডিচ করেছে?.. নো প্রবলেম, ডিজে ভাড়া করে, একটা ব্রেকআপ পার্টি দিয়ে দাও! তারপর
ধেই ধেই করে নেচে তুমি প্রমাণ করো যে, তোমার কোনো কষ্টই
হয়নি। তোমার হাসি আর ধরছে না মুখে। এ কি অর্থহীন হাসি রে বাবা!
সব্বাই বিজ্ঞাপন সেজে বসে আছে ! কেন?..
কে পয়সা দেবে আমাদের?.কি এতো দায় অনন্ত ভালো
থাকার বিজ্ঞাপনের?..এই ভালো থাকাথাকির বাধ্যতা তো বড্ড হাঙ্গামার
ব্যাপার মশাই !
আসলে আমরা কেউ তেমন অসাধারণ কিছু ভালো নেই।
সব্বাই হরেদরে একই রকম আছি। বছরের তিনশো দিনই দুর্ভোগ, দুশ্চিন্তা,
অপমান নিয়েই কাটাই সকলে। সকলের সেই একই কাহিনী। কি ভাবছেন?. বাকিরা সব তুমুলভাবে বেঁচে আছে, আর হাসির হররা ছুটিয়ে দিচ্ছে?....
ধুর্.....সব গুল। অত হেসে কাজ নেই। চলুন,বরং জুকুদাকে সবাই মিলে একটা কবিতা গিফট করি....
" না আছে তার মুন্ডু
মাথা
না আছে তার মানে,
তবুও তোমায় হাসতে হবে
তাকিয়ে বুড়োর পানে!!! "☺
কবিতা
পৃথিবীটা কোনোদিন
পৃথিবীটা কোনোদিন
কান্তিময় ভট্টাচার্য
পৃথিবীটা সোজা হোতে পারলো না
আর মানুষগুলো বেঁকে-চুরে জানোয়ার হোয়ে গ্যালো
কেউ হাত ঢুকিয়ে দিলো সৈনিকের জোব্বায়
কেউ নুলো হাতে আঁকড়ে ধরলো চেয়ার
বারবার বুকের মধ্যে ভর্তি কোরতে থাকলো
সোনা, ফ্ল্যাট, গাড়ি আর অবৈধ যাপন
পৃথিবীটা কোনোদিন কমলালেবুর মতো ছিলো
এখন মানুষের ফুঁয়ে সেটা তেরছা-লম্বা-ডিম্বাকৃতি
ধরে নিন ফুঁয়ে বিষ, ফুঁয়ে লোভ, ফুঁয়ে ধর্ষণ, দেদার
মিথ্যাচার
দেদার ফাটল,
ফুঁয়ে ফুঁয়ে বিষোদ্গার-ভাষণ
লালসার বাজারে বিকিকিনি হোচ্ছে বিষাক্ত চুম্বন
আলিঙ্গনের ছিদ্রপথে ঢুকে যাচ্ছে লুন্ঠনের ব্যভিচার
আর আমরা আঁকড়ে ধরছি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া
লুঠতরাজের সিংহাসন, বিভীষিকা-অন্ধকার,
অট্টালিকা-জংগল
পৃথিবীটা ক্রমশঃ জংগল আর মৃত জলাশয়
হোয়ে যাচ্ছে যে
অপরজন্ম-6
জাতবেদা মিশ্র
আদিগন্ত সর্ষে ক্ষেতের ভিতর হলুদ আলো
নাকফুল ছোটবেলা হারিয়ে গেছে
আলু ক্ষেত জুড়ে ব্যস্ততা ফসল তোলার
মাটি খুঁড়লে বেশ কিছু পাওয়া যাবে অবশেষে
পাকা দালানে রঙ বেরঙের গরম রোদ খায়
খোঁটা উপড়ানো গরু আচমকা জমিতে
হেই হেই হ্যাট হ্যাট অবুঝ অবলা জীব।
বাতাস খুশি বিলোয় ধানসেদ্ধর মিষ্টি গন্ধে
কেমন দুধ উথলানো গন্ধের মতো লাগে
নাক উঁচু করে শুঁকলেই মুখ ভর্তি কাঁচা জল
বড় খিদে আর জাড় লাগে, মাগো
ঘরে ঘরে নবান্ন করছে কারা!
তারপর, চরাচর জুড়ে নামে শীত
টায়ার পোড়া গন্ধে এখন বাতাস ভারি
কোঁচড়ে কুড়নো আলু আগুন খোঁজে
কচি ধান দাঁতে চিপলে দুধের স্বাদ জাগে জিভে
কবে আবার ধান রুইবে?
শীত কবে শেষ হবে? মাগো!
তালা ও চাবি
রুদ্রশংকর
ছোটবেলায় তালা ও চাবির সঙ্গে
আমার তোলপাড় সম্পর্কের কথা কাউকে বলিনি
এমনকি রূপকথাকেও নয়
রূপকথা এও জানতোনা জীবনে অঙ্ক মেলানোর থেকে
মধুসাহিত্যে আমার বেশী আকর্ষণ ছিল
তাই অঙ্কের মাস্টারমশাইরা এখনো
আমার ফোকলা অস্তিত্বের কাছে ফিসফাস করে
অনেক পরে যখন পথিক রায়ের সঙ্গে পরিচয় হল
আমার শোয়ার ঘরে তখন জঙ্গলের গাঢ় অন্ধকার
অরুনিমার চলে যাওয়া
তলাপাত্র দিদিমনির বস্তুরূপ
শল্যচিকিৎসকের মতো আতঙ্কের ছুরি কাঁচি নিয়ে
টুকরো টুকরো করত মুখ-থোবড়ানো ভবিষ্যৎ
ধীরে ধীরে সবুজ ইজ্জতের জন্য হাঁটতে শিখলাম
যেখানে আমার মাত্রাহীন মৌনতার শক্তি ছিল
ঠিক সেখানেই ঘর্ষণে ও সংঘর্ষে এখন বুঝতে পারি
এক নির্জন তালার জন্য মসৃণ চাবির প্রয়োজন হয়।
মৃতের নগরী
জলিল সরকার
আমার পরিপার্শ্বে ভয়াবহ এক মৃতে নগরী পড়ে আছে
আমি বেঁচে আছি এক মহাসিন্ধু ধ্বংসস্তুপ বুকে নিয়ে,
শ্রাবণের বৃষ্টিতে থামেনা পোড়া অনল,
বাতাসের কাছে,
বৃষ্টির কাছে, ঝর্ণার প্রবল বর্ষণের কাছে
মুক্তি নেই আমার,
আমায় পুড়তেই হবে আকাশের নীলাদ্রি নীলে,
মনু কাকা একদিন বলেছিলেন,
পোড়া মানুষের কপাল এমনিতেই পোড়া হয়
সেদিন বুঝেনি আজ বুঝেছি সত্যি বলেছিলেন মনু কাকা
আমি আর সইতে পারছিনা এ পোড়া চাঁদের আলো,
দমবন্ধ হয়ে আসে আমার,
কোথাও কেউ নেই!
শুন্যতার ভিতর ডুবে গেছি আমি,
আমার ভেতর পোড়া লাশের গন্ধ নাড়িভূঁড়ি শুদ্ধ জ্বালিয়ে পুড়ি খাক করে দেয়
সমস্ত অনুভুতির ডাল-পালা,
আমি বয়ে নিয়ে যেতে পারছিনা জগদ্দল পাথরে মোড়া মৃতের কফিন,
নগরীর চারপাশজুড়ে মৃত মানুষের দল,
জিঘাংসার অনলে পোড়ায় সাহারা মরুভূমি,
তবুও নক্ষত্রের ভিতর রক্তাক্ত শব বয়ে বেড়ায় রাতের আঁধার,
কেবলই যেদিকে তাকাই জীবনের কালোমেঘ তুলোর মতো ধেয়ে আসে শ্রাবণের
বৃষ্টির ভেতর,
তবু, রাতের আঁধার গ্রাস করে রাতের মতো,
আর, আমি মৃতের নগরীতে পড়ে আছি হাজার বর্গমাইল জুড়ে
এখন আর কেউ চেনেনা আমায় আগের মতো।
চলো আমরা আকাশ হয়ে যাই
আক্তারুজ্জামান-মিন্টো
নীল খামে ধুপ জ্বেলে
ফেরারি প্রাণের লীন হাওয়ায়
বৈকাল হ্রদের উপর দিয়ে
চলো আমরা আকাশ হয়ে যাই।
নিমগ্ন ফল্গুর বারতায় চমকিত বৃষ্টি রচনায়
কাননে কাননে পুষ্পরঞ্জিত গালিচায়
টলমল নদীর তরঙ্গায়িত জলে শূন্য ডানায়
চলো আমরা আকাশ হয়ে যাই।
আকাশ হওয়া সোজা ভীষণ সোজা
বাষ্পকণা তরল করে গাঙচিলের ঠিকানায়
দু'ঠোটে সাদা মেঘ উড়িয়ে
চলো আমরা আকাশ হয়ে যাই।
দৃশ্যমান..
ভাস্কর পাল
দৃশ্যত তোমায় ঘৃণা করবো বলেই
আজ এই চৈত্রে আহ্বান করেছি ঝমঝমে বর্ষা গোধূলির সূর্য পট
আকাশের খোলা পাতায়
বার কয়েক লিখেও কেটেছিলাম
তোমার নাম ......
ভেবেছিলাম ভাল যেহেতু বেসেছিলাম
হয়তো নিজের চেয়েও অনেক বেশি
আঁকতে চেয়েছিলাম ঘৃণার রঙ কে মনের
রঙ মিশিয়ে কবিতা লিখতে
যেভাবে তোমায় আমি ঘৃণা করি
সে তো ঘৃণা নয়ই-বরং ভালবাসা !
সময় ফুরোচ্ছে
গত 'সময়ে'র কাছে বর্তমান 'সময়'টা বেচে দিয়ে
আমিও ফুরোবো ভাবছি.........
আকাশ ছোঁয়া লোকটা
আর্যতীর্থ
যে লোকটা কালকেও পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে আকাশের সাথে আড্ডা মারছিলো,
সে আজ দুম করে নেই হয়ে গেলো।
বলা নেই কওয়া নেই, মৃত্যু পাঠালো তাকে আচমকা হাতচিরকুট,
‘
চলে এসো বাছা! গোধূলির আলো দেখো মিলিয়ে যাচ্ছে রাতের কালোতে,
চলে এসো,
আলো থেকে ঠাঁই নাও ঢেউহীন অনন্ত অন্তআঁধারে, যার
পরে আর কিছু নেই ।’
সেই চিরকুট পড়ে পাহাড়ের মতো লোকটা আকাশকে বললো,
‘
যাই রে! এইটুকু মনে রাখিস, কেউ তোকে ছোঁয়ার
স্পর্ধা করেছিলো!’
আকাশ তাকে সযত্নে পরিয়ে দিলো তারার মুকুট, মেঘ দিয়ে
পরিপাটি করে মুছিয়ে দিলো জীবনের ঘাম,
তারপর, খুব মৃদুস্বরে বললো, ‘ যাই বলতে নেই, বলো আসি।’
পাহাড়ের মতো লোকটা দেখতে দেখতে মিলিয়ে গেলো অন্ধকারে, ক্রমে তার
মুকুটের তারাগুলোও আবছা হতে শুরু করলো,
সময় যথারীতি দুহাতে ঢেকে দিলো তার বাকি যাত্রাপথ।
আকাশ অনেকক্ষণ চেয়ে রইলো তার যাওয়ার দিকে, তারপর কালো
মেঘেদের বললো,
‘
ঝমঝম করে বৃষ্টি নামা বাবারা, আজকে পৃথিবীর
ডুকরে কাঁদার দিন!’
তারপর, চারদিক কালো করে খুউউউব বৃষ্টি নামলো, আর ছলো ছলো আকাশ পৃথিবীকে উদাসীন স্বরে বললো,
‘
জানিস, আসি বললেও, চলে
যাওয়া মানুষগুলো আর কোনোদিন ফিরে আসেনা!’
বৃষ্টি পড়েই চললো, ঝমঝম, ঝমঝম......
উৎসব
প্রত্যূষ কর্মকার
আস্ত একটা গোলাপ
বাগান তোমাকে দিয়ে যাবো বলে
বসরা থেকে আনিয়েছিলাম
খাস গোলাপের বীজ
সদ্য ডিম থেকে বেরোনো
পাখিকে বলেছিলাম
জমিয়ে রাখো ওম,তোমার
রঙীন চঞ্চলতা,
আমার গর্ভবতী বাগানে
গোলাপের ভ্রূণ এলে চাইবো উপহার
বাগানটা তোমাকে দেবো
বলে ঝর্নার সাথে চুক্তিপত্র লেখা হল
ঝর্না জল ছেটাবে
গোলাপ বাগানে
বিনিময়ে ঝর্নাকে
দেবো আদিম স্বাধীনতা
তোমার জন্য গোলাপের
কাছে বসেছি প্রার্থনায়
হে আদিগন্ত গোলাপ
বাগান,
আমার প্রিয়ার কাছে
জড়ো হও আজ
ওকে দেখাতে চাই গোলাপের
পাপড়ি থেকে কিভাবে হয়ে ওঠা যায় উড়ন্ত কার্পেট কিভাবে গোলাপের গন্ধে ভরে ওঠে মনখারাপের
উঠোন গোলাপ,
তোমার অন্তরের কুসুমটুকু
দিও
আজ আমার দেওয়াল ভাঙ্গা
রাজবাড়িতে বসন্ত উৎসব
ভালোবেসো
শ্যামশ্রী রায় কর্মকার
এমন মায়াবী এই জীবন
আঙুল ছোঁয়ালেই বেরিয়ে
পড়ে মুখবন্ধ খামের গোপন কথা
সূর্যাস্তের হলুদ
ঝরে যায় কমলালেবুর বাগানে
শালিখের ডানা থেকে
নেমে আসে বেকাবু কুর্ণিশ
মায়োপিক মেঘমালা
চশমার রোদ মুছে নিয়ে
আনমনে ঢুকে পড়ে বৃষ্টির
ঘরে
এইসব অতলান্ত, থই
না পাওয়ার সুগহীন
আর কার সাথে ভাগ
করে নেব বলো!
এই যে চড়াইয়ের পথে
হাত ধরে হেঁটে হেঁটে যাই
হাঁপ ধরে গেলে দুদণ্ড
হেলান দিই পাইনের গাছে
তুমি নিচু হয়ে ঝর্ণা
দেখালে আমি ঝুঁকে পড়ি অকস্মাৎ
ভাঁড়ের চায়ের থেকে
শুষে নিই মাটির গন্ধ
সন্ধ্যা এলে ঝিম
হয়ে শুনি পাহাড়ি অন্ধকারের উপকথা
শুনি আর ভাবি,ভাবি
আর লিখি
ভালোবেসো, ভালোবেসো
তুমি ভাবো এসবই কবিতা
সত্যি বলছি,জানো!
আমি যাপনের কথা লিখি।